ফের ক্যাম্পাসে ধর্ষণ! এবার কসবা! অভিযুক্ত কারা, ঠিক কী ঘটেছিল?

Law Student Gang-Raped : মূল অভিযুক্তর ফেসবুক প্রোফাইলে তৃণমূলের ছাত্র পরিষদের পরিচয় রয়েছে। সেখানে উল্লেখ রয়েছে তিনি দক্ষিণ কলকাতা জেলা টিএমসিপির সাংগঠনিক সম্পাদক।

আরজিকর-এর পর আরও একবার শিক্ষাঙ্গনে 'ধর্ষণ'। ছাত্রীকে গণধর্ষণের অভিযোগ উঠল ক্যাম্পাসের মধ্যেই। অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে কসবা থানায়। পুলিশ জানিয়েছে, নির্যাতিতার অভিযোগের ভিত্তিতে দুই ছাত্র-সহ তিন জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তদন্ত এখনও চলছে। অভিযুক্তরা কারা? 

বুধবার তরুণী নিজেই কসবা থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। সাউথ ক্যালকাটা ল'কলেজে এই ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। ২৫ জুন সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা থেকে রাত ১০টা ৫০ মিনিটের মধ্যে এই ঘটনা ঘটেছে। কলেজ ক্যাম্পাসের ভিতরেই তরুণীকে ধর্ষণ করে বলে জানা গিয়েছে। তরুণীর অভিযোগের ভিত্তিতে তিন জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তাদের মধ্যে একজন কলেজরই প্রাক্তন ছাত্র। বাকি দু’জন কলেজের বর্তমান পড়ুয়া। অভিযোগের ভিত্তিতে তরুণীর শারীরিক পরীক্ষা করানো হয় পার্ক সার্কাসের ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজে।

পুলিশ জানিয়েছে, দু’জনকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যে গ্রেফতার করার পর তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে রাত সাড়ে ১২টা নাগাদ তৃতীয় অভিযুক্তকে বাড়ি থেকে আটক করা হয়। তিন জনেরই মোবাইল ফোন নিয়ে নেওয়া হয়েছে। পুলিশ তরফে জানানো হয়েছে, ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়েছে এবং বর্তমানে সেই স্থান ঘিরে রাখা হয়েছে। সেখানে পর্যাপ্ত নিরাপত্তারও ব্যবস্থা করা হয়েছে। দ্রুত সেখান থেকে ফরেন্সিক নমুনা সংগ্রহ করা হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

আরও পড়ুন-কালীগঞ্জ: ঠিক কী ঘটেছিল ভোটগণনার দিন?

দাবি করা হচ্ছে, মূল অভিযুক্ত তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সদস্য। তৃণমূলও পাল্টা দাবি করছে অভিযুক্তরা সংগঠনের কোনও পদে নেই। এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ সমাজমাধ্যমে লিখেছেন, ‘‘এ সব জানোয়ারকে মেরে পিঠের চামড়া গুটিয়ে দেওয়া উচিত। পুলিশ এদের সর্বোচ্চ শাস্তির ব্যবস্থা করুক।" 

আবার সাউথ ক্যালকাটা ল'কলেজের অধ্যক্ষ নয়না চট্টোপাধ্যায় ২৭ জুন সকালে আনন্দবাজার অনলাইন-কে জানিয়েছেন, ‘‘আমি বিষয়টি জানতাম না। সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টে পর্যন্ত আমাদের ক্লাস চলে। এই ঘটনা ঘটেছে তার অনেক পরে। এখন আমি কলেজে যাচ্ছি। তারপর বিষয়টি দেখছি। তবে এই ধরনের জঘন্য ঘটনার দায় কলেজ কোনও ভাবেই এড়িয়ে যাবে না। আইন অনুযায়ী যা শাস্তি হওয়া উচিত, তার ব্যবস্থা করা হবে।’’ পরে তিনি জানিয়েছেন, মূল অভিযুক্ত সাউথ ক্যালকাটা ল'কলেজের অস্থায়ী কর্মী। জিবি রেজলিউশনের মাধ্যমে তাঁকে নিয়োগ করা হয়েছিল। শুধুমাত্র ৪৫ দিনের জন্যই তাঁকে নেওয়া হয়েছিল। তিনি জানান, জিবি প্রেসিডেন্টকে পুরো ঘটনাটি জানানো হয়েছে।

আরও পড়ুন-মীরা নায়ারের পুত্র, মোদি সমালোচক— নিউ ইয়র্ককে দিশা দেখাবেন ভাবী মেয়র মামদানি?

ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসার পরই বিবৃতি জারি করে মহিলা কমিশন। জানানো হয়েছে, এই মর্মান্তিক ঘটনায় স্বতঃপ্রণোদিতভাবে পদক্ষেপ করা হয়েছে। কলকাতার পুলিশ কমিশনার মনোজ বর্মার সঙ্গেও কথা বলেছে মহিলা কমিশন। নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, এখনও পর্যন্ত এই ঘটনায় যা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, তা যেন বিস্তারিত তিন দিনের মধ্যে রিপোর্ট আকারে কমিশনের কাছে জমা দেওয়া হয়। 

মূল অভিযুক্তর ফেসবুক প্রোফাইলে উল্লেখ রয়েছে তিনি দক্ষিণ কলকাতা জেলা টিএমসিপির সাংগঠনিক সম্পাদক। সাউথ ক্যালকাটা ল'কলেজের টিএমসিপি ইউনিটের প্রেসিডেন্টও ছিলেন। পেশাগত পরিচয় দেওয়া রয়েছে আলিপুর আদালতে ‘ক্রিমিনাল লইয়ার’ বা ফৌজদারি আইনজীবী। সোশ্যাল মিডিয়ায় শাসক দলের একাধিক নেতাদের সঙ্গেও তার ছবি রয়েছে। ২ দিন আগেও দক্ষিণ কলকাতার যুব তৃণমূলের সভাপতি পদে সার্থক বন্দ্যোপাধ্যায় নির্বাচিত হওয়ার পর যে অনুষ্ঠান হয়েছে সেখানেরও ছবি রয়েছে তার ফেসবুকে। যদিও এখন তৃণমূল ছাত্র পরিষদ এসব দাবি মানছে না। জানা গিয়েছে, ওই কলেজের ছাত্র-ছাত্রীরাও মূল অভিযুক্তকে শাসকদলের ঘনিষ্ঠ বলেই চেনে। কলেজের গভর্নিং বডির সঙ্গেও নাকি তার বেশ ভালো সম্পর্ক ছিল। অভিযোগ উঠছে, বাকি দুই অভিযুক্তও টিএমসিপি-র সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যুক্ত। কলেজের সময় পেরিয়ে যাওয়ার পরেও ক্যাম্পাসে তারা কী করছিল? ক্ষমতার বলেই কি নির্যাতিতাকে জোর করে অভিযুক্তরা? প্রশ্ন উঠছে।  

More Articles