ইউয়িংস সারকোমাই প্রাণ কাড়ল লড়াকু ঐন্দ্রিলার! কী উপসর্গ এই মারণ রোগের?

Aindrila Sharma Ewing sarcoma Cancer: ভর্তির পর সিটি স্ক্যান করে দেখা যায় অভিনেত্রীর মাথার বাঁদিকে প্রচুর পরিমাণে রক্তপাত হয়েছে। জরুরি ভিত্তিতে অস্ত্রোপচার করা হয় ঐন্দ্রিলার।

দীর্ঘ ২০ দিনের লড়াইয়ের অবসান। হাজার হাজার মানুষের প্রার্থনা ও পরিজনদের মায়া ত্যাগ করে চলে গেলেন অভিনেত্রী ঐন্দ্রিলা শর্মা। অতীতে মারণ রোগ ক্যান্সারকে দু'বার হারিয়ে দিলেও রবিবার আর শেষ রক্ষা হল না। অভিনেত্রী যে বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন সেখানের চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, ইউয়িংস সারকোমা ক্যান্সারই প্রাণ কেড়ে নিয়েছে অভিনেত্রীর। এটি এক ধরনের দুরারোগ্য ক্যান্সার,যা প্রাথমিকভাবে হাড়ে সংক্রমিত হয়। অস্টিওসারকোমার পরে এটিই দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মারাত্মক হাড়ের ক্যান্সার। শিশু ও কিশোরদের মধ্যে এই ক্যান্সার বেশি দেখা যায়। আমেরিকার প্রতি মিলিয়নে একজন এই রোগে আক্রান্ত হন।

২০১৫ সাল থেকে ইউয়িংস সারকোমার রোগী ছিলেন ঐন্দ্রিলা শর্মা। গত দু'বার ক্যান্সার সেরে গেলেও পিছু ছাড়েনি দুরারোগ্য এই রোগ। তৃতীয়বার ফিরে এসেছিল এবং নীরবে ছড়িয়ে পড়েছিল মস্তিষ্কে। সেই কারণেই একাধিকবার স্ট্রোক হয় অভিনেত্রীর। গত ১ নভেম্বর স্ট্রোক হয় ঐন্দ্রিলার। হাওড়ার এক বেসরকারি হাসপাতালে সঙ্গে সঙ্গে ভর্তি করা হয় অভিনেত্রীকে। প্রথম থেকেই তাঁর অবস্থা বেশ সংকটজনক ছিল। ভেন্টিলেশনে রাখাও হয়েছিল তাঁকে। ভর্তির পর সিটি স্ক্যান করে দেখা যায় অভিনেত্রীর মাথার বাঁদিকে প্রচুর পরিমাণে রক্তপাত হয়েছে। জরুরি ভিত্তিতে অস্ত্রোপচার করা হয় ঐন্দ্রিলার। বায়োপসিতে দেখা যায়, আগের সেই 'ইউয়িংস সারকোমা' থেকেই মস্তিষ্কে দেখা দিয়েছে মেটাস্টেসিস। অর্থাৎ মস্তিষ্কে জড়িয়ে পড়েছে মারণ ক্যান্সার। অস্ত্রোপচারের দশ দিন পরে ফের স্ট্রোকে আক্রান্ত হন অভিনেত্রী। ক্রমশ চেতনা কমতে শুর করে তাঁর। শেষে একাধিক বার হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন অভিনেত্রী। অবশেষে ২০ তারিখ ১২ টা ৫৯ মিনিটে ফের কার্ডিয়াক অ্যারেস্টে মৃত্যু হয় অভিনেত্রী ঐন্দ্রিলা শর্মার।

আরও পড়ুন- যন্ত্রণা, কান্নার ঊর্ধ্বে হাল না ছাড়ার লড়াই! বাংলাকে বেঁচে থাকার গান শিখিয়ে গেলেন ঐন্দ্রিলা

ইউয়িংস সারকোমা কী?

চিকিৎসকদের মতে, এটা এমন এক ধরনের টিউমার যা শিশুর জন্মের সময় থেকেই সঙ্গে নিয়ে আসে। বয়স যত বাড়ে, এই টিউমার ততই প্রাণঘাতী ক্যান্সারের রূপ নেয়। তবে এ ধরনের ম্যালিগন্যান্ট টিউমার শরীরের এক জায়গায় সেরে গেলে অন্য জায়গায় ফের মাথাচাড়া দেয়। হার্ট বা মস্তিষ্কে এই টিউমার মারাত্মক আকার নেয়, এই টিউমার এমনকী প্রাণঘাতীও। কিন্তু শরীরের অন্যান্য জায়গায় ধরা পড়লে ফিরে আসার সম্ভাবনা প্রায় ১৫ শতাংশ। দুশ্চিন্তার কারণ হল, এই মারণ রোগ সেরে যাওয়ার পাঁচ বছর পরেও ফের ফিরে আসতে পারে। আবার একবার ধরা পড়লে পাঁচ বছরের মধ্যে রোগীর মৃত্যুর সম্ভাবনা থাকে।

ইউয়িংস সারকোমার কারণ

আজ পর্যন্ত ইউয়িংস সারকোমার প্রকৃত কারণ জানা যায়নি। তবে গবেষণায় দেখা গেছে যে, এক্ষেত্রে কোষের ডিএনএ জন্মের পরপরই পরিবর্তিত হয় এবং এর ফলস্বরূপই ইউয়িংস সারকোমা দেখা দেয়। চিকিৎসকদের মতে, এই রোগ এটি একটি জিনঘটিত রোগ।

লক্ষণ ও উপসর্গ

১. আক্রান্ত স্থানের কাছে ব্যাথা ও ফোলা ভাব

২. যেকোনও কারণে হাড় ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে

৩. এই মারণ রোগে আক্রান্ত রোগী অসম্ভব ক্লান্তি অনুভব করেন

৪. আক্রান্ত রোগীর দেহের তাপমাত্রা ওঠানামা করে অর্থাৎ প্রায়ই জ্বরে ভোগেন

৫. ইউয়িংস সারকোমায় আক্রান্ত রোগীর শরীরের ওজন দ্রুত হ্রাস পেতে থাকে।

৬. এই রোগের আরেকটি উপসর্গ হল রাতের বেলা বা ব্যায়াম করার সময় হাড়ের তীব্র ব্যাথা অনুভব করেন রোগী।

উল্লিখিত উপসর্গগুলি অনুভব করলে ফেলে না রেখে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। যদি প্রাথমিক পর্যায়ে এই রোগ ধরা পড়ে তবে চিকিৎসায় প্রাণ বাঁচানো সম্ভব আক্রান্ত রোগীর। তবে ইউয়িংস সারকোমার চিকিৎসায় প্রধান সমস্যা হল, উৎপত্তিস্থল থেকে এই ক্যান্সার দ্রুত শরীরের অন্যান্য অংশ ছড়িয়ে পড়ে। যার ফলে পুনরায় রোগীকে সুস্থ করে তুলতে নানা চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হয় চিকিৎসকদের।

আরও পড়ুন- সব লড়াই শেষ, চলে গেলেন ঐন্দ্রিলা, অমর হয়ে থাকল প্রেমের রূপকথা

রোগ নির্ণয় এবং চিকিৎসা পদ্ধতি

রোগী ইউয়িংস সারকোমায় আক্রান্ত কিনা তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য রোগীর সম্পূর্ণ শরীর পরীক্ষা এবং তাঁর চিকিৎসার ইতিহাস সম্পর্কে জেনে নেওয়া প্রয়োজন। এক্ষেত্রে যে যে পরীক্ষা করানোর পরামর্শ দেওয়া হয় -

১. ইমেজিং

২. এমআরআই স্ক্যান

৩. সিটি স্ক্যান

৪. পজিট্রন এমিশন টোমোগ্রফি ( পিইটি) স্ক্যান

৫. বায়োপসি

৬. বোন ম্যারো অ্যাসপিরেশন

৭. রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে লোহিত রক্ত কণিকার হার নির্নয়, সি রিয়েক্টিভ প্রোটিন নির্ণয়।

চিকিৎসা পদ্ধতি

  • কেমোথেরাপি
  • রেডিয়েশন
  • অস্ত্রোপচার
  • যদি বারবার ক্যান্সার ফিরে আসে তবে রোগীকে স্টেম সেল থেরাপি করানো হয়। এছাড়াও অ্যান্টিজেন বৃদ্ধিজনিত ইমিউনো থেরাপি, মনোক্লোনাল অ্যান্টিবডিস প্রয়োগ করা হয়।

সর্বোপরি ক্যান্সার কোন স্তরে রয়েছে তার উপর রোগীর বেঁচে থাকা নির্ভর করে। তবে উল্লেখিত চিকিৎসার মাধ্যমে রোগীর স্বাস্থ্যের সামান্য উন্নতি হলে পুনরায় পরীক্ষাগুলি করানোর পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকরা। চিকিৎসকরা প্রথমেই রোগী ও পরিবারের লোককে জানিয়ে দেন, এই ক্যান্সার যেকোনও সময় ফিরে আসতে পারে এবং জীবন কেড়ে নিতে পারে রোগীর। ঠিক যেমনটা ঘটল অভিনেত্রী ঐন্দ্রিলা শর্মার সঙ্গে।

More Articles