শেষ খড়কুটো ধরতে মরিয়া! ভারতের প্রত্যাঘাত এড়াতে যেভাবে ঘুঁটি সাজাচ্ছে পাকিস্তান

India Pakistan Relation: পহেলগাঁও হামলার পর দুই দেশের মধ্যে তীব্র উত্তেজনার সময়, ভারতের আরেকটু দায়িত্বশীলতা দেখানো উচিত, বলছেন পাক প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ।

ভারতকে বোঝাতে হবে যে এই মুহূর্তে বাকবিতণ্ডা থেকে সরে আসা উচিত তাদের। বদলে পহেলগাঁও হামলার পর দুই দেশের মধ্যে তীব্র উত্তেজনার সময়, ভারতের আরেকটু দায়িত্বশীলতা দেখানো উচিত। বক্তা, পাক প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ। শ্রোতা, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও। গত ২২ এপ্রিল কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে জঙ্গিদের হামলায় ২৬ জন নিহত হন, যাঁদের বেশিরভাগই ছিলেন পর্যটক। সাম্প্রতিককালে এই অঞ্চলে এমন নৃশংস হামলা আর ঘটেনি। ঘটনার দায় স্বীকার করেছে পাক সমর্থিত জঙ্গি গোষ্ঠী লস্কর-ই-তৈবার ছায়া সংগঠন দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট। পাকিস্তান বলছে, এতে কোনওভাবেই তাদের 'হাত' নেই, নিরপেক্ষ তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে পাকিস্তান। এরপর থেকে স্বাভাবিকভাবেই সীমান্তে উত্তেজনা আরও বেড়েছে, পাকিস্তান তার সেনা বাহিনীকে শক্তিশালী করছে এবং নরেন্দ্র মোদি সেনাবাহিনীকে এই হামলা মোকাবিলায় 'সমস্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার 'সম্পূর্ণ স্বাধীনতা' দিয়েছে। বোঝাই যাচ্ছে, দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক তিক্ততর হচ্ছে। এমতাবস্থায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সংযমের আহ্বান জানিয়েছে। বলেছে এমন সংকট নিরসনের জন্য দুই পক্ষের সঙ্গেই আলোচনার পরিকল্পনা করছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, পাকিস্তান মরিয়া হয়ে পাশে চাইছে আমেরিকাকে। শুধু মধ্যস্থতার জন্য এই আকুতি নয়, নিজেদের টলমলে অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে ভারতের থেকে যে কোনওরকমের প্রত্যাঘাত আটকাতে এখন পাকিস্তানের শেষ সম্বল আমেরিকাই!

পাক প্রধানমন্ত্রীকে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ফোন করেন। প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ ওই ফোনালাপেই ভারতকে বাকবিতণ্ডা কমাতে এবং দায়িত্বশীল আচরণ করার জন্য চাপ দেওয়ার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে অনুরোধ করেছেন। শেহবাজ শরিফ বলেছেন, “ভারতের উত্তেজনাকর এবং উস্কানিমূলক আচরণকে গভীরভাবে হতাশাজনক এবং উদ্বেগজনক। সন্ত্রাসবাদকে পরাস্ত করতে পাকিস্তান যে প্রচেষ্টা চালাচ্ছে, বিশেষ করে আইএসকেপি (ইসলামিক স্টেট খোরাসান প্রদেশ), টিটিপি (তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান) এবং বিএলএ (বেলুচিস্তান লিবারেশন আর্মি)-কে ঠেকাতে পাকিস্তানের প্রয়াসকে প্রত্যাখ্যান করছে ভারতের এই উস্কানি"। সঠিক তথ্য প্রকাশের জন্য স্বচ্ছ, বিশ্বাসযোগ্য এবং নিরপেক্ষ তদন্তের আহ্বান জানিয়েছেন পাক প্রধানমন্ত্রী। পাকিস্তান এক বিবৃতিতে বলছে, "সকল ধরনের সন্ত্রাসবাদের নিন্দা করার পাশাপাশি, প্রধানমন্ত্রী সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে পাকিস্তানের নেতৃত্বাধীন ভূমিকা এবং ৯০,০০০-এরও বেশি জীবন এবং ১৫২ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি অর্থনৈতিক ক্ষতির উপর জোর দিয়েছেন।”

আরও পড়ুন- ভারতের আক্রমণ আসন্ন, তৈরি পাক বাহিনী? যা জানাচ্ছেন পাক প্রতিরক্ষামন্ত্রী

সিন্ধু জল চুক্তি স্থগিত বিষয়ে পাক প্রধানমন্ত্রী বলেছেন যে, “এটা অত্যন্ত দুঃখজনক যে ভারত জলকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যা পাকিস্তানের ২৪ কোটি মানুষের জীবনরেখা।” পাক প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য, কাশ্মীর বিরোধের শান্তিপূর্ণ সমাধানই দক্ষিণ এশিয়ায় স্থায়ী শান্তি নিশ্চিত করার একমাত্র উপায়। বিবৃতি অনুসারে, প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ আমেরিকার শীর্ষ কূটনীতিককে জানিয়েছেন, পাকিস্তান এবং আমেরিকা গত সাত দশক ধরে একসঙ্গে কাজ করেছে এবং দুই পক্ষই সন্ত্রাসবাদ দমন এবং বর্ধিত অর্থনৈতিক সহযোগিতায় প্রস্তুত।

 

 
 
 
 
 
View this post on Instagram
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 

A post shared by Dawn Today (@dawn.today)

এদিকে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, রুবিও "এই অযৌক্তিক হামলার তদন্তে পাকিস্তানি কর্মকর্তাদের সহযোগিতার আহ্বান জানিয়েছেন।" পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র ট্যামি ব্রুস জানিয়েছেন, রুবিও বুধবার ভারতীয় বিদেশমন্ত্রী জয়শঙ্করের সঙ্গেও কথা বলেছেন। পহেলগাঁও হামলায় প্রাণহানির জন্য দুঃখ প্রকাশ করে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারতকে সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। ভারতকে উত্তেজনা হ্রাস এবং দক্ষিণ এশিয়ায় শান্তি ও নিরাপত্তা বজায় রাখতে পাকিস্তানের সঙ্গে কাজ করার জন্য উৎসাহিত করেছেন রুবিও। পাক উপ-প্রধানমন্ত্রী এবং বিদেশমন্ত্রী ইসহাক দারের সঙ্গেও মার্কিন প্রশাসন আলোচনা করেছে।

পহেলগাঁও হামলার পর থেকেই, জম্মু ও কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণ রেখা (এলওসি) বরাবর পাকিস্তানের যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের ঘটনাও বৃদ্ধি পেয়েছে। এদিকে ভারত পাকিস্তানি বিমান সংস্থাগুলির জন্য ভারতের আকাশসীমাও বন্ধ করে দিয়েছে। ভারত সরকারের জারি করা বিমানবাহিনীর বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, পাকিস্তানি বিমানের উপর এই নিষেধাজ্ঞা ৩০ এপ্রিল থেকে ২৩ মে পর্যন্ত বহাল থাকবে। পাকিস্তান সরকারের সূত্র জানাচ্ছে, গোয়েন্দাদের বিশ্বাসযোগ্য তথ্য থেকে জানা যাচ্ছে, ভারত আগামী ২৪ থেকে ৩৬ ঘণ্টার মধ্যে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপের পরিকল্পনা করছে।

More Articles