গুজরাত ভোটে তিনিই 'চাণক্য', অমিত শাহর ছোট্ট চালে যে ভাবে কিস্তিমাত 'ব্র্যান্ড মোদি'-র
Gujarat Legislative Assembly Election : লক্ষ্যপূরণের দায় নিয়ে অসুস্থ শরীরেও এগিয়ে গিয়েছেন। একাধিক বিতর্ক আর দাঙ্গাবাজ তকমার পরেও তিনিই হয়ে উঠেছেন সেরা!
গুজরাতে গেরুয়া ঝড়! বুথ ফেরত সমীক্ষার আভাসের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ফের নরেন্দ্র মোদির রাজ্যে ক্ষমতায় বসছে বিজেপি। কংগ্রেসকে নাস্তানাবুদ করে ১৮২ আসনের বিধানসভায় (Gujarat Legislative Assembly Election Result) বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়েই ক্ষমতায় এসেছেন ভূপেন্দ্র প্যাটেলের নেতৃত্বাধীন বিজেপি। ২৭ বছর পর আবার প্রায় ১৫০ আসনের দোরগোড়ায় উঠে এসেছে মোদির দল (Narendra Modi BJP) । মাত্র ২৩-এই থমকে গিয়েছে কংগ্রেস। আম আদমি পার্টির ঝুলিতে এখনও পর্যন্ত রয়েছে ৬টি আসন। যদিও গণনা চলছে এখনও।
কিন্তু এই রাজ্যের নির্বাচন নিয়ে হিমাচল প্রদেশ (Himachal Pradesh) ছাড়িয়েও উত্তেজনা ছিল সর্বাধিক। একাধিক ক্ষেত্রেই আগামী লোকসভা নির্বাচনের আগে গুজরাত বিধানসভার লড়াই কার্যত হয়ে উঠেছিল সেমিফাইনাল। মোদির 'প্রেস্টিজ ফাইট'। দুর্নীতি থেকে শুরু করে আচমকা মোরবি ব্রিজ বিপর্যয়, ড্রাগ মাফিয়া থেকে বিজেপি-র অন্দরের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব। একের পর এক ঘটনায় শোরগোল হয় রাজ্যজুড়ে। সঙ্গে ভূপেন্দ্রদের (Bhupendra Patel) গলার কাঁটা হিসেবে উঠে আসে আম আদমি পার্টি। অরবিন্দ কেজরিওয়ালের (Arvind Kejriwal) 'ক্যালমা'য় চিন্তিত হয় গেরুয়া শিবির। তারপর?
গুজরাত কি শুধুই মোদির রাজ্য! বিজেপি-র মসীহার সম্মান বাঁচানোর লড়াই! নাকি একটি রাজ্যের ক্ষমতা দখলের ধারা বজায় রাখার স্বার্থ! একাধিক প্রশ্ন আর বিতর্কের আবহেই উঠে এসেছে এই জয়ের নেপথ্য নায়কের কথাও। যিনি বারবার 'ব্র্যান্ড মোদি' রক্ষায় সচেষ্ট হয়েছেন। গুরুর সম্মান বাঁচানোর লড়াইয়ে অবতীর্ণ হয়েছেন প্রত্যেক মুহূর্তে। অচিরেই হয়ে উঠেছেন বিজেপি-র 'চাণক্য'। লক্ষ্যপূরণের দায় নিয়ে অসুস্থ শরীরেও এগিয়ে গিয়েছেন। একাধিক বিতর্ক আর দাঙ্গাবাজ তকমার পরেও তিনিই হয়ে উঠেছেন সেরা!
অমিত শাহ (Amit Shah)। গুজরাত বিধানসভা নির্বাচনের নেপথ্য নায়ক হিসেবে ফের উঠে এসেছে তাঁর নামই। অমিতের শাহি-স্পর্শেই নাকি বেঁচেছে 'ব্র্যান্ড মোদি' (Brand Modi) ! শাহের কৌশলেই রক্ষা হয়েছে সৌরাষ্ট্র-গড়। কীভাবে?
'একা কুম্ভ' অমিত শাহ
২০১৭ সালের বিধানসভা নির্বাচনের পর থেকে একাধিক কোন্দলে বিপর্যস্ত হয়েছে গুজরাত বিজেপি। অমিত শাহ এবং নরেন্দ্র মোদির কেন্দ্রে ব্যস্ততা বাড়তেই রাজ্যের নেতাদের মধ্যে বেড়েছে সমস্যা। রাজ্যে সরকার চালানো নিয়েও উঠেছে প্রশ্ন। জনমানসে একাধিক প্রশ্নে জর্জরিত হয়েছেন বিজেপি নেতারা। ঠিক এই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে বারবার মুখ্যমন্ত্রী পরিবর্তন করতে হয়েছে বিজেপি-কে। আনন্দীবেন প্যাটেল থেকে শুরু করে ভূপেন্দ্র প্যাটেল। একই রাজ্যে একাধিক মুখ্যমন্ত্রী মাত্র কয়েক বছরে উঠে এসেছেন। ঠিক এই অবস্থায় খুব একটা নাক গলাননি দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। গুজরাতকে চলতে দিয়েছেন নিজের মতো করে।
কিন্তু নির্বাচন? ২০২২ এগিয়ে আসতেই একদিকে খানিকটা দুর্বল কংগ্রেসকে রক্ষা করা গেলেও উঠে আসে আম আদমি পার্টি। অরবিন্দ কেজরিওয়াল থেকে শুরু করে একাধিক বিরোধী নেতার আক্রমণে জনতার মধ্যে খানিকটা প্রতিষ্ঠান বিরোধী হাওয়া তৈরি হয়। ঠিক এই অবস্থায়, মোদির নিজের রাজ্যে, সর্বাধিক গুরুত্বের রাজ্য গুজরাতকে নিয়ে নয়া চিন্তাভাবনা শুরু করে কেন্দ্রীয় বিজেপি নেতারা। কীভাবে ঠেকানো যাবে রাজনৈতিক বিপদ! এই প্রশ্নেই আর প্রশান্ত কিশোর নন, এবার ফের মোদির নির্দেশেই মাঠে নামেন অমিত শাহ।
খানিকটা কোণঠাসা বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি সিআর পাতিলের উপর ভরসা না রেখেই একা এগিয়ে যেতে শুরু করেন অমিত শাহ। কারণ, জিততেই হবে গুজরাত। লোকসভার আগে এটাই সবচেয়ে বড় অগ্নিপরীক্ষা গেরুয়া শিবিরের কাছে।
অমিত-কৌশলে বাজিমাৎ
এরপর শুরু হয় কৌশল অবলম্বন করার পালা। প্রথমেই রাজ্যে যাতায়াত বাড়ান অমিত। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কাজ সামলেই নির্বাচন বড় বালাই, এই বাক্যকে মর্যাদা দিয়ে দিল্লি ছেড়ে বারবার পা দেন আহমেদাবাদে। সপ্তাহে তিনদিন করে যাতায়াত শুরু হয়। গুজরাতে নিজের বাড়িতেই কার্যত কন্ট্রোল রুম তৈরি করে ফেলেন শাহ। একাধিক ফোন আর অফিস বানিয়ে সেখানেই শুরু করেন আলোচনা। একের পর এক বিধায়কের সঙ্গে আলোচনা। অভিযোগের নিরসন। এবং দলের ক্ষোভ সামাল দিতে উঠেপড়ে লাগেন অমিত শাহ। সকাল থেকে সন্ধ্যা। সারাদিন বৈঠক আর আবহ বুঝে নিতে চেষ্টা করেন অমিত শাহ।
প্রার্থী বাছাইয়ে শাহ-সিদ্ধান্ত
দলের গোষ্ঠী কোন্দল ঠেকানো এবং বিরোধী দলকে সুযোগ না দেওয়া বড় চ্যালেঞ্জ ছিল অমিত শাহের কাছে। সেখানেই বাজিমাৎ করেন তিনি। নরেন্দ্র মোদির কাছের লোক হিসেবে পরিচিত 'অমিত-ভাই' গুজরাত বিধানসভার ১৮২ আসনে প্রার্থী বাছেন নিজের মতো করে। একাধিক বৈঠকে, তথ্যে, পরিসংখ্যানে তিনি বুঝে নেন কীভাবে গুজরাতে কিস্তিমাত করতে পারে বিজেপি। সেই কৌশলেই প্রায় এক সঙ্গে ১৬০ এর বেশি আসনে প্রার্থী বেছে নেন অমিত শাহ। এখানে সমস্যা তৈরি করেন দলের রাজ্য সভাপতি সিআর পাতিল। প্রার্থী তালিকা প্রকাশের আগেই খবর প্রকাশ্যে আনেন তিনি। ক্ষুণ্ণ হন তাঁর 'বস্ অমিত শাহ'। শুরু হয় টানাপোড়েন। যদিও তারপরেও মূলত কোন্দল ঠেকাতে নয়া পন্থা নেন শাহ। যে যে আসনে যেমন প্রয়োজন, তেমন প্রার্থী দেন তিনি। কোন্দলের আসনে তৃতীয় কাউকে তুলে এনে প্রার্থী করে দেন অমিত শাহ। হার্দিক প্যাটেল থেকে ক্রিকেটার রবীন্দ্র জাদেজার স্ত্রী, একাধিক আসনে প্রার্থী পদে চমক দিতে শুরু করেন তিনি।
এমনকী অমিতের কাছের লোকদেরও টিকিট দেন তিনি। তুলনামূলক কম কঠিন আসন, তাঁর লোকসভা কেন্দ্র গান্ধীনগরের দুই বিধানসভা আসনেই টিকিট দেন তাঁরই বহুদিনের নির্বাচনী এজেন্টকে। হর্ষদ প্যাটেলের (Harshad Patel) জন্য টিকিট বরাদ্দ করেন শাহ। এমনকি ১৪ নভেম্বর ওই প্রার্থীর নির্বাচনী অফিসে উপস্থিত হন অমিত নিজেও। টিকিট দেন আর এক পরিচিত, কাছের লোক অমিত থাকেরকে ।
আবার দলের রাজ্য সভাপতির কাছের প্রায় ১৯ বিধায়ককে টিকিট দেননি অমিত শাহ! এভাবেই একের পর এক কৌশলে গুজরাতে বিজেপি-র নির্বাচনী টিকিট বণ্টনের নাগাল হাতে নেন অমিত শাহ। খুব একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেননি নরেন্দ্র মোদির কাছের বলে পরিচিত গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী ভূপেন্দ্র প্যাটেলের ঘনিষ্ঠরাও। এখানেও ছিল সমস্যা। কারণ, একদা খুব একটা ভালো সম্পর্ক ছিল না ভূপেন্দ্র এবং অমিত শাহের। ভূপেন্দ্র ছিলেন অমিত বিরোধী গোষ্ঠী আনন্দীবেন প্যাটেলের গোষ্ঠীর লোক!
অমিত-প্রচারে ঝড়
অমিত শাহ প্রথম থেকে প্রচারের কৌশল এবং তার প্রয়োগে সচেষ্ট হয়েছেন রাজ্যজুড়ে। প্রতিমুহূর্তে মূলত বিজেপির অন্যতম হিন্দুত্ববাদের মুখদের টেনে এনেছেন গুজরাতে। বারবার প্রচারে আনা হয়েছে উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথকে (Yogi Adityanath) । একাধিক জনসভা করেছেন তিনি। এর সঙ্গেই গুজরাতে এসেছেন আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা (Himanta Biswa Sharma)। অমিত শাহ এবং হিমন্ত একসঙ্গে জনসভা করেছেন সুরাত-সহ একাধিক এলাকায়। 'স্টার' প্রচারকের তালিকায় উঠে এসেছেন এঁরা।
মোদি-প্রচারে শাহি-কৌশল
'ব্র্যান্ড মোদি'। এই বিষয়টির প্রতিষ্ঠায় অমিত শাহের কাছে গুজরাতের নির্বাচন ছিল অন্যতম। আর সেক্ষেত্রেই একাধিক কৌশল অবলম্বন করেন তিনি। মোদির কাছের এই ভোটকুশলী, বিজেপি নেতা সেইমতো কাজও করেছেন গুজরাতে। নরেন্দ্র মোদিকে দিয়ে একাধিক জনসভা করিয়েছেন গুজরাত জুড়ে। অপেক্ষাকৃত কঠিন আসন রয়েছে এমন এলাকায় জনসভা এবং পদযাত্রা মিলিয়ে প্রায় ১৬ বার রাজ্যে এসেছেন মোদি। মোরবি ক্ষত সামাল দিতে ওই জেলাতেই প্রশাসনিক বৈঠকে দেখা গিয়েছে দেশের প্রধানমন্ত্রীকে। একের পর রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিয়ে ঝড় তুলেছেন শাহ।
আপ-রক্ষায় শাহি-টার্গেট
কংগ্রেস না আম আদমি পার্টি। নাকি কেজরিওয়ালের থাকায় সুবিধা বিজেপি-র! একাধিক সম্ভাবনার কথা মাথায় রেখেই প্রথম থেকে আপ-কে গুজরাতে অস্তিত্বহীন করার পথে এগিয়েছেন অমিত শাহ। নয়া কৌশলে বারবার চেষ্টা করেছেন আপ বলে কিছু নেই! অর্থাৎ কেজরিওয়ালের বিরোধী প্রচারকে টেক্কা দিয়ে গুজরাতে যে এর কোনও গুরুত্ব নেই একথা বারবার প্রকাশ্যে এনেছেন অমিত শাহ। যদিও দলীয় অভ্যন্তরে নেওয়া হয়েছিল অন্য লক্ষ্য। কংগ্রেসের শক্তিশালী প্রভাব রয়েছে যে আসনে, সেখানে আম আদমি পার্টির প্রভাব এবং বিরোধী ভোট ভাগের কথায় নজর ছিল অমিত শাহদের। যদিও প্রকাশ্য অমিত শাহ বলেন, গুজরাতে খাতাও খুলতে পারবে না আপ।
বিশ্বাস অর্জনে অমিত-আশ্বাস
রাজ্য বাসীর মধ্যে মোদি এবং বিজেপি সরকারের প্রতি বিশ্বাস অর্জন ছিল গুরুত্বপূর্ণ। যে বিষয়ে আলোকপাত করতে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছিলেন অমিত শাহ। সংবাদমাধ্যম থেকে শুরু করে জনসভা, পথসভা। সর্বক্ষেত্রেই মানুষের কথা, সরকারের কথা, উন্নয়নের কথার সঙ্গেই অমিত-কৌশল ছিল দেশভক্তি, জাতীয়তাবাদের আঙ্গিকে সামগ্রিকভাবে দেশের কথা তুলে ধরা। অর্থাৎ মোদি গড় রক্ষায় দেশের ভূমিকার কথায় প্রাধান্য দিয়েছেন অমিত শাহ। যা কাজে লেগেছে নির্বাচনে, বলছেন অনেকেই।
আত্মবিশ্বাসে বিরোধী-আক্রমণ
অমিত শাহ বরাবর প্রকাশ্যে আত্মবিশ্বাসী মনোভাব পোষণ করেন। এই নির্বাচনেও তার অন্যথা হয়নি। বারবার বিরোধীরা যে দুর্বল, গুজরাতে বিজেপি ছাড়া মানুষের মনে যে আর কিছু নেই! বিরোধী মানেই শূন্য! এই বিষয়গুলি বারবার এই ধারণায় গাঢ় করতে চেষ্টা করেছেন অমিত শাহ। যেখানে মানুষের মনে ঢুকিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে, আমরা নয় তো কেউ নয়, - এই মনোভাব।
অমিত-উত্থান
গুজরাত থেকে দিল্লি। মোদির রাজনৈতিক পথের উল্কাসম উত্থানের মাঝে অমিত শাহ কম যান না! তাঁর রাজনৈতিক জীবনের গতিপথের পরিবর্তন ঘটেছে ঝড়ের মতোই। সামান্য এক নাগরিক থেকেই তিনি হয়ে উঠেছেন দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। শুধু তাই-ই নয়, অচিরেই পরিবর্তিত হয়েছেন বিজেপি-র নির্বাচনী চাণক্য হিসেবে।
অমিত অনিল চন্দ্র শাহ। ১৯৬৪ সালে মহারাষ্ট্রে জন্ম নেওয়া এই মানুষটি ছিলেন গুজরাতের বৈষ্ণব পরিবারের সন্তান। জৈব রসায়নের ছাত্র আহমেদাবাদে বাবার ব্যবসায় সাহায্য করতে শুরু করেন কলেজে পড়তে পড়তেই। যদিও এর আগে থেকে যোগ ছিল রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘের (RSS) সঙ্গে। ১৯৮২ নাগাদ তাঁর সঙ্গে প্রথম দেখা হয় নরেন্দ্র মোদির। আর তখন থেকেই জীবনস্রোত বাঁক নেয় এই নতুন পথে। ১৯৮৩ থেকে অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদ। তারপর ১৯৮৭ নাগাদ পাকাপাকি বিজেপি-যোগ। দলের যুব মোর্চা করতে শুরু করেন যুবক অমিত। ১৯৯১ সালে পান গুরুদায়িত্ব। লালকৃষ্ণ আদবানির হয়ে লোকসভা নির্বাচনে কাজের সুযোগ আসে তাঁর। গান্ধীনগর আসনে বিজেপি প্রার্থীর 'ম্যানেজার' হন শাহ।
১৯৯৫ এর প্রথম গুজরাতের বিজেপি সরকার। তারপর ১৯৯৯ নাগাদ সমবায় সমিতির প্রধান হিসেবে গ্রামীণ রাজনীতির কঠিন পাঠ আয়ত্ত করেন অমিত শাহ। তার আগেই বিধায়ক হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন তিনি।নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে সংযোগ, দলের সামনের সারিতে নিয়ে আসে অমিত শাহকে। ২০০২ সালে ফের বিধায়ক হন। হলেন মোদি ক্যাবিনেটের মন্ত্রীও। পেলেন প্রায় ১২টি দফতরের দায়িত্ব। এদিকে ২০০১-র অক্টোবরে কেশুভাই প্যাটেলের স্থানে স্থাপিত হল মোদি-রাজ। ফের ২০০৭-এ নির্বাচন। বিধায়ক হলেন অমিত শাহ। এদিকে একের পর দাঙ্গা, স্নোপগেট কান্ড জড়িয়ে নিল অমিত শাহের নাম। ২০১০ নাগাদ তাঁর নাম জড়াল সোহরাবউদ্দিন মামলায়।
জাতীয় রাজনীতিতে তাঁর প্রবেশ ঘটল মোদির হাত ধরেই। ২০১৪-র লোকসভা নির্বাচন। উত্তর প্রদেশের দায়িত্ব পেলেন তিনি। ৮০ আসনের মধ্যে ৭৩ আসনেই হাসিল করলেন জয়। এবার এলো বিরাট দায়িত্ব। বিজেপি-র 'সেকেন্ড ইন কমান্ড' হলেন শাহ। হয়ে গেলেন গেরুয়া শিবিরের দেশনায়ক। সর্বভারতীয় সভাপতি হিসেবে প্রায় ৫ বছরের সময়কালে বারবার বিস্ময় সৃষ্টি করেছেন তিনি। একাধিক বিতর্কের মধ্যেও তিনিই হয়ে উঠেছেন অভিনব।
২০১৯ এ সরকারে প্রবেশ। দেশের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী হলেন অমিত শাহ। কাশ্মীর থেকে শুরু করে দক্ষিণ ভারত। একাধিক ক্ষেত্রে ফের ছড়াল অমিত শাহের নাম। উঠল সিবিআই-ইডি অভিযোগও।
দেশের বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে মোদি ছাড়িয়ে ক্রমশ টার্গেট হয়েছেন অমিত শাহ। একাধিক ক্ষেত্রে উঠেছে তাঁর নাম। শুরু হয়েছে বিতর্ক। সিএএ বা এনআরসি, একাধিক বিষয়েও দোষী হয়েছেন অমিত শাহ। বারবার অভিযুক্ত শাহকে নিয়েও উঠেছে প্রশ্ন। কিন্তু এতকিছুর পরেও তিনিই হয়ে উঠেছেন বিজেপি-র 'ক্রাইসিস ম্যানেজার'। নির্বাচনে জয় পাওয়ার কৌশলে রসদ। যার সাম্প্রতিক উদাহরণ গুজরাত। আনন্দীবেন প্যাটেল গোষ্ঠীর একদা বিরোধ কাটিয়েও ফের গুজরাতের শেষ কথা হয়ে উঠেছেন তিনিই। ক্রিকেট থেকে প্রশাসন, সব ক্ষেত্রেই ছড়ি ঘোরানোর অভিযোগ ছাড়িয়েও শেষমেশ বিজেপির জয় এবং 'মোদি ব্র্যান্ডের মডেল' প্রতিস্থাপনে তিনিই হয়ে উঠেছেন অনন্য এবং সর্বেসর্বা।