ভোট এলেই অনুপ্রবেশ-জিগির শাহদের! কেন এই ইস্যু জিইয়ে রাখতে চায় বিজেপি?

Lok Sabha Election 2024: এ রাজ্যে কতগুলি আসন জিততে চলেছে বিজেপি, এ নিয়ে চর্চা চলছে বহু দিন ধরেই। অমিত শাহ এ দিনের সভা থেকে স্পষ্ট করে দেন, লোকসভা ভোটে বিজেপির পাখির চোখ এবার বাংলা।

লোকসভা ভোট শুরু হয়ে গিয়েছে। প্রথম দফায় পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার ও জলপাইগুড়িতে ভোট হয়ে গিয়েছে। বাকি পশ্চিমবঙ্গের সিংহভাগ এলাকাই। দীর্ঘদিন ধরে চেষ্টা করেও পশ্চিমবঙ্গে দাঁত ফোটাতে পারেনি বিজেপি। ২০১৯ লোকসভা ভোটে বামকে হঠিয়ে রাজ্যের প্রধান বিরোধী দলের আসনটুকু জিততে পেরেছিল ভারতীয় জনতা পার্টি। সেইটুকুই অনেক। এ হেন বাংলা যে বিজেপির পাখির চোখ এই লোকসভা ভোটে, তা বলাই বাহুল্য।

ভোটকুশলী প্রশান্ত কিশোর-সহ অনেকেই বলেছেন, এ বছর বাংলায় একে উঠে আসবে বিজেপি। যদিও বিশেষজ্ঞমহলের একাংশ তেমনটা মনে করছে না একেবারেই। এ রাজ্যের প্রতিটি লোকসভা কেন্দ্রে প্রার্থী দিতে রীতিমতো হিমশিম খেতে হয়েছে বিজেপিকে। তার উপর ভোটের মুখে মুখে ইলেক্টোরাল বন্ড কেলেঙ্কারি সামনে এসে পড়ার ঘটনা ভালোই অস্বস্তিতে ফেলেছে বিজেপিকে। তড়িঘড়ি জনগণের নজর ঘোরাতে সিএএ কার্যকর করার কথা ঘোষণা করে দেয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের দফতর। বাংলা, অসম-সব বিভিন্ন রাজ্য সেই সিএএ নিয়ে ক্ষোভে ফেটে পড়ে। ভোটের বাজারে মোদি-শিবিরের যে খুব একটা ভালো প্রভাব তৈরি করতে পারেনি এই সিএএ ইস্যু, অন্ততপক্ষে বাংলায় তো নয়ই, তা ভালোই মালুম পাওয়া গিয়েছিল।

আরও পড়ুন: মুসলিমদের অকথ্য অপমান মোদির! প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশন কেন ব্যবস্থা নেবে না?

তবে সেই বাংলা নিয়েই এবার আরও একবার আশাবাদী শোনাল দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে। লোকসভা ভোটে পশ্চিমবঙ্গে জনসমর্থন জিততে দলের কৌশলের কথাও ভেঙে বললেন শাহ। ভোট ঘোষণার আগে যতবার বাংলায় এসেছেন, ততবার এনআরসি-সিএএ ধুয়ো তুলেছেন শাহ। সম্প্রতি ভোটপ্রচারে গিয়ে একটি সভা থেকে ফের সংখ্যালঘুদের আক্রমণ করে বসেছেন মোদি। কংগ্রেসকে কটাক্ষ করতে গিয়ে তিনি বলে বসেন, কংগ্রেস নাকি বলেছে দেশের সম্পত্তির উপর প্রধান অধিকার মুসলিমদের। কংগ্রেস ক্ষমতায় এলে 'ঘুসপেটিয়া'-দের মধ্যে সম্পত্তি বিলিয়ে দেওয়ার কথাও বলেন প্রধানমন্ত্রী। দেশে নির্বাচনী আচরণবিধি চলাকালীন খোদ প্রধানমন্ত্রীর মুখে সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে এ ধরনের কথাবার্তা নিয়ে জোর সমালোচনা নানা মহলে। বিজেপির সেনাপতি তথা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের কথাতেও কিন্তু কার্যত শোনা গিয়েছে সেই বক্তব্যের সমর্থনই।

পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির ভোটমুখী রূপরেখা নিয়ে কথা বলতে গিয়ে তিনি ফের বাংলায় অনুপ্রবেশ নিয়ে সরব হন। জানান, বাংলায় অনুপ্রবেশ রোখাই তাদের অন্যতম উদ্দেশ্য। শাহের দাবি, বাংলার মানুষও তাই চান। তাঁরা নরেন্দ্র মোদিকেই ফের প্রধানমন্ত্রীর পদে দেখতে চান বাংলার মানুষ। একই সঙ্গে কংগ্রেস বা তৃণমূল কংগ্রেস সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, কেউ-ই যে সিএএ-র পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারবে না। সম্প্রতি দিনাজপুরের একটি জনসভায় লোকসভা ভোটের ফলাফল সম্পর্কেও ভবিষ্যদ্বাণী করেন শাহ।

Amit Shah said if the people of West Bengal want to stop infiltration in the state, they will have to make Narendra Modi the Prime Minister of India again

এ রাজ্যে কতগুলি আসন জিততে চলেছে বিজেপি, এ নিয়ে চর্চা চলছে বহু দিন ধরেই। অমিত শাহ এ দিনের সভা থেকে স্পষ্ট করে দেন, লোকসভা ভোটে বিজেপির পাখির চোখ এবার বাংলা। অমিত শাহ জানিয়েছেন, এবার বাংলায় ৩৫টি লোকসভা আসনে জিততে চলেছে বিজেপি। ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে ৪২টি আসনের মধ্যে ১৮টি আসন পেয়েছিল বিজেপি। এবার তার দ্বিগুণ আসন পাওয়ার দাবি করছে বিজেপি। এ রাজ্যে জয় সম্পর্কে এক রকম ভাবে আত্মবিশ্বাসীই ঠেকল শাহ এবং তার দলকে।

এমনিতেই ভোটের আগে এসএসসি দুর্নীতি নিয়ে হাইকোর্টের রায়ের জেরে বেশ খানিকটা কোণঠাসা পরিস্থিতিতে পড়েছে তৃণমূল। তবে সেই ইস্যুকে তৃণমূলের বিরুদ্ধে ব্যবহার করার বিরুদ্ধে হিন্দুত্ববাদ ও সংখ্যালঘু বিরোধিতার দিকেই বেশি মন দিতে দেখা গেল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে। শাহ এদিন ওই জনসভা থেকেই বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর প্রতি প্রশ্ন ছুড়ে দেন। বাংলাদেশ থেকে আসা বৌদ্ধ ও হিন্দু শরণার্থীরা ভারতে নাগরিকত্ব পেলে মুখ্যমন্ত্রীর সমস্যা রয়েছে কিনা জিজ্ঞেস করেন তিনি। তার পরেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দাবি, পশ্চিমবঙ্গের মতো রাজ্যে যদি অনুপ্রবেশ বন্ধ করতে হয়, তাহলে ফের মোদিকেই প্রধানমন্ত্রী করে আনতে হবে বঙ্গবাসীর।

আরও পড়ুন: CAA-র জন্য প্রয়োজনীয় নথি না থাকলে কী হবে? যা জানালেন শাহ

বিজেপি শাসনের কেন্দ্রে ফেরা একরকম নিশ্চিত বলেই মনে করছে একটি পক্ষ। বছরের শুরু থেকেই বিজেপির প্রতিটি পদক্ষেপে স্পষ্ট হয়েছে তাদের সেই আত্মবিশ্বাসই। তবে যে বাংলায় লোকসভা ভোটে সব ক'টি কেন্দ্রে প্রার্থী দিতেই নাকানিচোবানি খেয়েছে বিজেপি, সেখানে ৩৫টি আসন জয় নিয়ে কী করে এতটা নিশ্চিত হচ্ছেন শাহরা? ভোট এলেই প্রতিবছর অনুপ্রবেশ নিয়ে সরব হতে দেখা যায় মোদি-শাহদের। এবারও তার ব্যতিক্রম নয়। কিন্তু আদৌ কি কোনও রাজ্যের অনুপ্রবেশ বন্ধ করা সে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর হাতে রয়েছে। সে কাজ করতে পারে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক। তবে সে নিয়ে আদতে কোনও পদক্ষেপ করেন না কেন শাহর দফতর। নাকি সেই ইস্যু ভোটের আগে জিইয়ে রাখাই প্রধান উদ্দেশ্য বিজেপির? উঠেছে প্রশ্ন। পাশাপাশি সত্যিই এই অনুপ্রবেশ বা সিএএ ইস্যু নিয়ে বাংলা শিকে ছিঁড়বে বিজেপির? এই বাংলায় আদৌ কোনওদিন স্বপ্নপূরণ হবে শাহদের? প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।

More Articles