বনভূমি ফেরানোই মূল লক্ষ্য, কীভাবে স্বপ্ন সত্যি করতে চলেছেন ব্রাজিলের এই দম্পতি?

Brazil photo journalist Sebastian Salgado : ছবিতে আমাজনের অন্তহীন রহস্য উন্মোচন করেছেন সালগাদো, জঙ্গলকে ভালোবেসে ধংসের মুখ থেকে ফিরিয়ে আনতে উদ্যত তিনি, পাশে পেয়েছেন যোগ্য স্ত্রীকেও...

ছবি তোলাই পেশা তাঁর, অবশ্য নেশা বললেও কম বলা হয় না কিছুই। টানা ছয় বছর ধরে অ্যামাজন অঞ্চলে ঘোরাঘুরি করে অরণ্য, নদী নালা এবং পাহাড় পর্বতের ছবি তুলেছেন তিনি। এই ছবিগুলো একত্রে সংকলিত হয়েছে তাঁর নতুন বই অ্যামাজোনিয়ার পাতায় পাতায়। এই বিশেষ চিত্রগ্রাহক আর কেউ নয়, তিনি ব্রাজিলের বিখ্যাত মানুষ সেবাস্তিয়াও সালগাদো। পেশায় একজন ফটোজার্নালিস্ট। যদিও ছবি তোলার প্রতি তাঁর ভালোবাসা কবেই যে প্রথাগত পেশার গণ্ডি চাপিয়ে গিয়েছে তা হিসেব কষে বলা মুশকিল।

১৯৪৪ সালে ব্রাজিলেই জন্ম ফটোগ্রাফার সেবাস্তিয়াও সালগাদোর । পড়াশোনা যদিও করেছিলেন অর্থনীতি নিয়ে তবে ওই কাঠখোট্টা অঙ্কের হিসেবে কোনও দিনই বিশেষ মন ছিল না তাঁর, তাই পরবর্তীতে ছবি তোলার নেশাকেই বেছে নেন পেশা হিসেবে। বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক আলোকচিত্র সংস্থার হয়ে বহু অ্যাসাইমেন্টে কাজ করেছেন তিনি। এর পর তিনি ১৯৯৪ সালে তাঁর স্ত্রী লেলিয়ার সঙ্গে মিলে প্রতিষ্ঠা করেন অ্যামাজনস ইমেজেস নামের একটি সংস্থা। যেখানে ছবির মধ্যে দিয়ে ধরা রয়েছে তাঁর জীবনের দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে সঞ্চয় করা আমাজনের দৃশ্য। রয়েছে ওই অঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রার পটচিত্রও।

আরও পড়ুন - পায়ের নিচে পাঁচ পর্বতশৃঙ্গ! প্রাথমিক শিক্ষিকা পিয়ালির অন্নপূর্ণা জয় এক রূপকথা

তাঁর কাজই তাঁকে এনে দিয়েছে বিশেষ বিশেষ পুরস্কারের স্বীকৃতি। সহধর্মিণীকে তিনি পাশে পেয়েছেন সহকর্মী হিসেবে। ফটো সাংবাদিক সেবাস্তিয়ান সালগাডো এবং তার স্ত্রী স্থপতি লেলিয়া ডেলুইজ ওয়ানিক, ব্রাজিলের ধ্বংস হয়ে যাওয়া জঙ্গল পুনরুদ্ধারে ব্রতী হন। সালগাডো নিজেই একটি সাক্ষাৎকারে বলেন, “আমি মনে প্রাণে চাই, আমার যেটুকু শক্তি আছে, যেটুকু ভালবাসা আছে তা উজাড় করে দেওয়া থাকুক এই বইয়ে। আমার এই বই যেন ৫০ বছর পরে হারিয়ে যাওয়া এক পৃথিবীর নিদর্শনের দলিল না হয়ে ওঠে।”

ব্রাজিলের মিনাস গেরাইসের আইমোরেসে ১৫০০ একর বনভূমি পুনরুদ্ধারের কাজে নামেন এই দম্পতি। এখানে ৫০টিরও বেশি বিপন্ন উদ্ভিদ এবং প্রাণীর প্রজাতি রয়েছে যা সঠিক পরিস্থিতিতে পুনরুৎপাদন করার ক্ষমতার উপর নির্ভর করে। এখানেই শেষ নয়, তাঁরা ব্রাজিলে ধ্বংস হওয়া বন পুনরুদ্ধার করতে আগামী ২০ বছরে মোট দুই মিলিয়ন গাছ লাগানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আর এই কর্মসূচির হাত ধরেই ফের জঙ্গলমুখী হচ্ছে বন্যপ্রাণীরা। এই দলে রয়েছে প্রায় ১৭২টি বিশেষ পাখির প্রজাতির পাশাপাশি ৩৩টি ভিন্ন প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণীও। ফলে এই উদ্যোগ যে পুনরায় হারিয়ে যাওয়া বাস্তুতন্ত্রের ভিত শক্ত করতে পারবে তা বলাই বাহুল্য।

More Articles