পায়ের নিচে পাঁচ পর্বতশৃঙ্গ! প্রাথমিক শিক্ষিকা পিয়ালির অন্নপূর্ণা জয় এক রূপকথা

Piyali Basak Annapurna Summit: ২০১৯ সালে এভারেস্টের কাছাকাছি গিয়েও খারাপ আবহাওয়ার জন্য ব্যর্থ হন পিয়ালি। থেমে থাকেননি মোটেও।

শিখর ছুঁতে ভালো লাগে। এই ভালো লাগা নেশা সমান। এই নেশা মানুষকে তাড়িয়ে নিয়ে যায় উচ্চতা থেকে অন্য উচ্চতায়। এক শৃঙ্গ থেকে অন্য শৃঙ্গে। বিশ্বের সর্বোচ্চ সমস্ত উচ্চতা মানুষের পায়ের নিচে আসে, যেমন এসেছে পিয়ালির। পেশায় চন্দননগরের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা, আর নেশা পর্বতের সমস্ত উচ্চতাকে ছুঁয়ে দেখা। এভারেস্ট-সহ নেপাল হিমালয়ের চারটি শৃঙ্গ আগেই ছুঁয়ে দেখেছেন পিয়ালি। এবার পঞ্চম শৃঙ্গ জয় করেছেন তিনি। এই নিয়ে টানা পাঁচবার, আট হাজারের বেশি উচ্চতার পর্বতশৃঙ্গ ছুঁয়ে দেখলেন পিয়ালি বসাক। সোমবার পৃথিবীর দশম উচ্চতম অন্নপূর্ণা ১-এর (৮০৯১ মিটার) শিখরে পৌঁছন পিয়ালি। পাঁচেই থামবেন না তিনি মোটেও, অন্নপূর্ণা জয়ের পরেই ঠিক করে নিয়েছেন আগামী যাত্রাপথ। বত্রিশ বছর বয়সের পর্বতারোহী পিয়ালির পরের লক্ষ্য ৮৪৮১ মিটারের মাকালু শৃঙ্গ।

১৬ মার্চ রওনা দিয়েছিলেন পিয়ালি। অক্সিজেন সিলিন্ডার ছাড়াই অন্নপূর্ণা ১ আর মাকালু অভিযানই ছিল পরিকল্পনা। অভিযানের লক্ষ্যে ১৬ মার্চ রওনা হন পিয়ালি। অন্নপূর্ণার শিখর জয় করতে শনিবার রওনা দিলেও খারাপ আবহাওয়ার কারণে তা সম্ভব হয়নি। রবিবার বিকেলে সামিট পুশ শুরু করেন পিয়ালি। সোমবার পৌঁছন অন্নপূর্ণার চূড়ায়। সঙ্গে ছিলেন দাওয়ানুরু শেরপা। তবে শেষ অবধি গিয়ে আর অক্সিজেন সিলিন্ডার সরিয়ে রাখা তাঁর পক্ষে সম্ভব হয়নি।

আরও পড়ুন- এভারেস্টের চেয়ে খাটো, তবু আজও কেন ‘অজেয়’ কৈলাস, রহস্যে মোড়া শিব ঠাকুরের আপন দেশ!

২০১৮ সালে পৃথিবীর অষ্টম উচ্চতম শৃঙ্গ মানাসুলু জয় করেন পিয়ালি। ২০১৯ সালে এভারেস্টের কাছাকাছি গিয়েও খারাপ আবহাওয়ার জন্য ব্যর্থ হন পিয়ালি। থেমে থাকেননি মোটেও। ২০২১ সালে সপ্তম উচ্চতম শৃঙ্গ ধৌলাগিরি জয় করেন। ২০২২ সালের ২২ মে অক্সিজেন সিলিন্ডার ছাড়াই পৃথিবীর সর্বোচ্চ শিখরে ওঠেন পিয়ালি বসাক। এর ঠিক দু' দিন পরেই পৃথিবীর চতুর্থ উচ্চতম শৃঙ্গ লোৎসে জয় করেন পিয়ালি। লাগাতার পর্বত শৃঙ্গ জয়ের নেশা তিষ্ঠোতে দেয়নি চন্দননগরের এভারেস্টজয়ীকে। এবার অন্নপূর্ণাকেও জয় করে ফেলেছেন তিনি। অক্সিজেন ছাড়াই অন্নপূর্ণা জয়ের আশা অবশ্য বাস্তব হয়নি, আবহাওয়া প্রচণ্ড প্রতিকূল থাকায় শেষ মুহূর্তে অক্সিজেন ব্যবহার করতেই হয়েছে তাঁকে।

পিয়ালি দু’মাসের এই পর্বতাভিযানে খরচ হচ্ছে প্রায় ৩১ লক্ষ টাকা। সাধারণ মানুষের সাহায্যে বেশ খানিকটা এগিয়েছেন পিয়ালি। এভারেস্ট অভিযানের টাকাও উঠেছিল ক্রাউড ফান্ডিং-এর মাধ্যমেই। স্পোর্টস এবং অ্যাডভেঞ্চার বিভাগে পৃষ্ঠপোষকতার অভাব আছে বরাবরই। ফলে এক একটা শৃঙ্গ জয়ের জন্য যে পরিমাণ অর্থ সংস্থান প্রয়োজন হয়, তার অনিশ্চয়তাতেই পিছিয়ে যান অনেকে। অসুস্থ বাবা, মা ও বোনকে নিয়ে সংসার, চিকিৎসার খরচ যোগাতেই সমস্যায় পড়তে হয় পিয়ালিদের। সংসার চালাতে চাকরি আর পাহাড় চড়তে মানুষের কাছে হাত পাতা- পিয়ালি শিখর স্পর্শ করেন এভাবে, জীবনেরও, প্রকৃতিরও।

More Articles