অন্তর্বর্তী জামিনে মুক্ত কেজরিওয়াল, সুপ্রিম কোর্টের এক সিদ্ধান্তে বদলে যাবে দিল্লি ভোটের ফলাফল?
Arvind Kejriwal gets bail: শুক্রবার বা শনিবার তিহাড় জেল থেকে মুক্তি পেতে চলেছেন কেজরি, তেমনটাই আশা করা যাচ্ছে। পয়লা জুন পর্যন্ত তাঁর জামিনের আবেদন মঞ্জুর হয়েছে। তার পর ফের তাঁকে ফেরত আসতে হবে তিহাড় জেলেই।
লোকসভা ভোট চলছে। ইতিমধ্যেই বেশ কয়েক দফা ভোটগ্রহণ সারা হয়ে গিয়েছে। আগামী ২৫ মে ষষ্ঠ দফায় ভোট দিল্লিতে। গত দেড় মাস ধরে আবগারি দুর্নীতি মামলায় জেল বন্দি মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল। গোটা ভোটপর্ব কি কাটবে তাঁর জেলেই? সেই সংশয়ের মধ্যেই শুক্রবার সুপ্রিম কোর্টে মিলল স্বস্তি। অবশেষে জামিন পেলেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী কেজরিওয়াল। ২৩ দিনের জন্য তাঁকে অন্তর্বর্তী জামিনের নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। ২ জুন ফের তাঁকে আত্মসমর্পণ করতে হবে বলে জানিয়ে দিয়েছে শীর্ষ আদালত।
গত ২১ মার্চ দিল্লির আবগারি নীতি কেলেঙ্কারি মামলায় ইডির হাতে গ্রেফতার হন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল। তার পর থেকে জেলেই রয়েছেন কেজরি। প্রাথমিক ভাবে ইডি হেফাজতে থাকলেও পরবর্তী কালে তিহাড় জেলে স্থানান্তরিত করা হয় তাঁকে। জামিনের আবেদন নিয়ে এর আগে নিম্ন আদালতের দ্বারস্থ হন কেজরি। তবে সেখানে আশার আলো দেখতে পাননি তিনি। অবশেষে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী। সেই মামলার আগের শুনানিতে কোনও রায় দেয়নি বিচারপতি সঞ্জীব খান্না ও দীপঙ্কর দত্তের বেঞ্চ। শুক্রবার অবশেষে সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়েছে বেঞ্চ। যেখানে তাঁকে অন্তর্বর্তী জামিনের কথা জানানো হয়েছে।
আরও পড়ুন: জামিন পেতে চলেছেন কেজরিওয়াল! এবার দিল্লিতে বিজেপিকে উপড়ে ফেলতে পারবে আপ?
শুক্রবার বা শনিবার তিহাড় জেল থেকে মুক্তি পেতে চলেছেন কেজরি, তেমনটাই আশা করা যাচ্ছে। পয়লা জুন পর্যন্ত তাঁর জামিনের আবেদন মঞ্জুর হয়েছে। পয়লা জুনের পর ফের তাঁকে ফেরত আসতে হবে তিহাড় জেলেই। দিল্লি ভোটের দিন তিনি হাজতমুক্ত থাকলেও ভোটগণনার দিন বাইরে থাকতে পারবেন না কেজরিওয়াল। সেই আবেদন আদালতে জানিয়েছিলেন কেজরির আইনজীবী অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি। জামিনের মেয়াদ বাড়িয়ে ৫ জুন পর্যন্ত করার আর্জি জানান। তবে সেই আবেদন খারিজ হয়ে গিয়েছে শীর্শ কোর্টে। বিচারপতি সঞ্জীব খান্না এবং বিচারপতি দীপঙ্কর দত্তের ডিভিশন বেঞ্চ নির্দেশ দিয়েছে, ২ জুন কেজরিওয়ালকে আত্মসমর্পণ করতে হবে। অর্থাৎ ১ জুন লোকসভা নির্বাচনের শেষ দফার ভোটগ্রহণের সময় জেলের বাইরে থাকবেন কেজরি। কিন্তু পরদিনই তাঁকে আত্মসমর্পণ করতে হবে।
তবে জামিন পেলেও দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না কেজরি। সই করতে পারবেন না কোনও ফাইলেও। এমনকী সরকারের কোনও কাজ বা প্রকল্প বন্ধের নির্দেশও দিতে পারবেন না তিনি। সে কথা সাফ জানিয়ে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। তবে লোকসভা ভোটের বাজারে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীর জেলের বাইরে থাকা কি কোনও বড় প্রভাব ফেলতে পারবে লোকসভা ভোটের ফলাফলে, উঠছে প্রশ্ন। গত লোকসভা ভোটে সাতটি আসনের মধ্যে সাতটিই নিজেদের দখলে রাখতে পেরেছিল বিজেপি।
চাঁদনি চক আসনে বরাবরই জোর টক্কর হয়েছে কংগ্রেস-বিজেপির। আগে আসনটি ছিল কংগ্রেস নেতা কপিল সিব্বলের হাতে। ২০০৯ সালে সেটি ছিনিয়ে নেন বিজেপির হর্ষ বর্ধন। ২০১৪-তে উত্তর দিল্লিও কংগ্রেসের থেকে চলে যায় বিজেপির মনোজ তিওয়ারির হাতে। বাকি সব ক'টি আসনও ২০১৪ থেকে নিজেদের হাতে রেখেছে বিজেপি। এদিকে, এই লোকসভার অধিকাংশ বিধানসভা আসনই আবার আপের জমি। সেই শক্ত জমিতে কি সামান্য হলেও চিড় ধরেছে আপ সুপ্রিমোর জেলযাত্রায়। গোড়া থেকেই জেল থেকেই মুখ্যমন্ত্রীত্ব সামলানোর দাবি জানিয়ে এসেছেন কেজরি। তবে বাস্তবে তেমনটা হয়নি মোটেও। বরং কেজরির জেলে যাওয়াকেই ভোটের বাজারে হাতিয়ার করতে চেয়েছে আম আদমি দল। জোরদার প্রচার করেছে তারা 'জেল কা জবাব ভোট সে'। কেজরির জেল থেকে বেরিয়ে আসা সত্যিই কি উল্টেপাল্টে দিতে চলেছে এতদিনকার সমস্ত হিসেব?
আরও পড়ুন: কাকে ভোট দিচ্ছেন তার নেপথ্যেও আছে বিজ্ঞান! জানেন, কোন অঙ্ক মেনে চলে গণতন্ত্র?
কেজরির অনুপস্থিতির সুযোগ যতই বিজেপি নেওয়ার চেষ্টা করুক না কেন, কংগ্রেসও দিল্লিতে এবার ঘুঁটি সাজিয়েছে গুছিয়ে। এ বার মনোজ তিওয়াড়ির বিরুদ্ধে কংগ্রেস প্রার্থী করেছে তরুণ নেতা কানহাইয়া কুমারকে। আশা করা যাচ্ছে, উত্তর দিল্লিতে ভালো মতোই লড়াই হতে চলেছে কানহাইয়া-মনোজের। অন্য়দিকে কেজরি ফিরে এসে যদি প্রচারে জোর দেন, সেক্ষেত্রে দিল্লির বেশ কিছু আসনের উপর যে দাবি জমাতেই পারে আপ, সেই সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। তার উপর কেজরিকে জেলে পাঠানোর নেপথ্যে বিজেপির ষড়যন্ত্রের যে জল্পনা আকাশে বাতাসে ঘুরছে, তার কিছুটা সুবিধাও পেতে পারে আপ দিল্লিতে। তবে আসলে ঠিক কী ঘটতে চলেছে রাজধানীর রাজনীতিতে, তার সঠিক উত্তর মিলবে আগামী ৪ জুনেই।