ঘুণাক্ষরেও টের পায়নি কেউ, অশনির অভিশাপ বদলে গেল বর্ষার আশীর্বাদে

ভারতবর্ষের মূল ভূখন্ডেও নির্ধারিত সময়ের প্রায় ৭ দিন আগেই বর্ষার আগমন হবে বলেই মত বিজ্ঞানীদের। কিন্তু কীভাবে অশনি এগিয়ে নিয়ে এল বর্ষাকে ? বুঝে নেওয়া যাক -

গরমের হাসফাসানির হাত থেকে বাঁচতে একটা সুখবই যথেষ্ট। শীঘ্রই বর্ষা আসছে ভারতে। আর এখানেই শেষ নয়। এই আগাম বর্ষা আগমনের কৃতিত্ব অশনি ঘুর্নিঝড়ের। আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই দেশে আগমন ঘটবে বর্ষার।ভারতের আবহাওয়া দপ্তরের বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, সাম্প্রতিক ঘূর্ণিঝড় অশনির কারণে প্রত্যাশিত সময়ের আগেই দক্ষিণ পশ্চিম মৌসুমী বায়ু ঢুকে পড়বে ভারতীয় স্থলভাগে। বর্ষা এখন ২২ মে তারিখের পরিবর্তে ১৫ মে,২০২২ তারিখে আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে পৌঁছানোর কথা। স্বভাবতই, ভারতবর্ষের মূল ভূখন্ডেও নির্ধারিত সময়ের প্রায় ৭ দিন আগেই বর্ষার আগমন হবে বলেই মত বিজ্ঞানীদের। কিন্তু কীভাবে অশনি এগিয়ে নিয়ে এল বর্ষাকে ? বুঝে নেওয়া যাক -

 

আবহাওয়া দফতর কী বলছে?

ভারতীয় হাওয়া অফিসের মতে, এবছর দক্ষিণ পশ্চিম মৌসুমী বায়ুর আগমন ঘটবে সময়ের আগেই। আগামী ১৫ মে তারিখে আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে এই মরশুমের প্রথম বৃষ্টি শুরু হবে'। তারা আরও জানিয়েছে, সাধারণত ১৫ মে তারিখের পর থেকে মৌসুমী বায়ু ঘনীভূত হতে শুরু করে। এরপর ২২ মে তারিখের মধ্যে আন্দামানের একেবারে উত্তরভাগ মায়াবন্দরে প্রবেশ করে প্রথম।

আবহাওয়া দপ্তরের অধিকর্তা মৃত্যুঞ্জয় মহাপাত্র বলেছেন, আগামী পাঁচ দিনের মধ্যে আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে বজ্রবিদ্যুৎ সহ ভারী বৃষ্টিপাত শুরু হবে। সাথে ৪০ থেকে ৬০ কিলোমিটার বেগে ঝোড়ো হাওয়া বইবে এই সময়ে। প্রথম বৃষ্টি শুরু হওয়ার পাঁচ দিনের মধ্যে কেরল, লাক্ষাদ্বীপে বৃষ্টি শুরু হবে।

কেন বর্ষা এগিয়ে আসছে?

বিশেষজ্ঞের মতে, বিশ্ব উষ্ণায়নের প্রভাব থেকে খানিক স্বস্তি দিয়েছে অশনি ঘূর্ণিঝড়। বর্ষাকালের একেবারে গা ঘেঁষে যে ঘূর্ণিঝড়গুলি সৃষ্টি হয় সেগুলি সাধারণত বায়ুপ্রবাহকে প্রভাবিত করে। ফলে মৌসুমী বায়ুর আগমন দেরিতে ঘটে ।কিন্তু যে ঘূর্ণিঝড় বর্ষার আগমণের বেশ কিছু সময় আগে তৈরি হয় তার প্রভাব একেবারে বিপরীত ।অর্থাৎ এ ধরনের ঘূর্ণিঝড়গুলি জলীয় বাষ্প আকর্ষণ করে ফলে প্রত্যাশিত সময়ের আগেই বর্ষা শুরু হতে পারে। ঠিক যেমনটা এবছর হবে বলেই জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা।

বর্ষার শুরুয়াত

ভারতের আবহাওয়া দপ্তরের মতে, আন্দামানে এ মাসের ১৫ তারিখ বর্ষা ঢুকে পড়লেও ভারতের মূল ভূখণ্ডে অর্থাৎ কেরলে ঠিক কবে বর্ষা ঢুকবে তা এখনও নির্দিষ্ট করে বলা যাচ্ছে না। সাধারণত কেরল উপকূলে দক্ষিণ পশ্চিম মৌসুমী বায়ু ঢোকে জুন মাসের প্রথমদিনে। তবে গতবছর ৩ রা জুন মৌসুমী বায়ু এসে পৌঁছায় কেরলে কিন্তু এবছর তার আগেই আসবে বলে মনে করা হচ্ছে।ফলে এর থেকে একটা বিষয় পরিষ্কার যে এবছর প্রায় চার মাসব্যাপী বর্ষাকাল চলবে দেশে।

আরও পড়ুন-ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়ের নাম কেন ‘অশনি’? নামের মধ্যেই কি লুকিয়ে বিপদের পূর্বাভাস?

তথ্য বলছে, ২০২১ সালে দক্ষিণ পশ্চিম মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে দেশজুড়ে পর্যাপ্ত পরিমাণে বৃষ্টিপাত হয়েছে। তবে পূর্ব ও উত্তর পূর্ব ভারতে সাধারণের তুলনায় কম বৃষ্টি হয়েছে। অন্যদিকে দক্ষিণ ভারত সাধারণের তুলনায় বেশি বৃষ্টি পেয়েছে।

অশনি ও করিম

হাওয়া অফিসের রিপোর্ট আগেই জানিয়েছিল, শক্তি হারিয়ে অন্ধ্রপ্রদেশ উপকূলে গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে ঘুর্নিঝড় অশনি।অন্যদিকে দক্ষিণ ভারত মহাসাগরে ৮ মে তারিখে তৈরি হয়েছে ঘুর্নিঝড় করিম।তবে আবহাওয়াবিদদের মতে করিম হল দ্বিতীয় পর্যায়ের একটি হ্যারিকেন।


নাসার প্রকাশিত উপগ্রহ চিত্রে ধরা পড়েছে যে অশনি এবং করিম দুটিই নিরক্ষরেখা থেকে প্রায় সমান দূরত্বে থাকলেও একে অপরের বিপরীতে অবস্থিত। ঘূর্ণিঝড়ের হাওয়া উত্তর গোলার্ধে ঘড়ির কাঁটার দিকে এবং দক্ষিণ গোলার্ধে ঘড়ির কাঁটার বিপরীতে দিকে ঘুরছে। এই ঘূর্ণনের সাথেই আশেপাশের অঞ্চল থেকে জলীয় বাষ্প সংগ্রহ করেছে যে কারণে এবছর আগেই বর্ষার আগমণ ঘটছে। এবছর দেশে শতকরা ৯৪ থেকে ১০৪ ভাগ বৃষ্টিপাত হবেই বলেই মনে করছেন আবহাওয়াবিদরা।


ইউনিভার্সিটি অফ মেরিল্যান্ডের অধ্যাপক রঘু মুর্তুগুডের মতে, অনেক সময় বঙ্গোপসাগরের ওপর তৈরি হওয়া ঘুর্নিঝড়ের কারণে বর্ষা শুরু হতে দেরি হয়।কিন্তু এ বছর উল্টো প্রভাব পড়েছে।


প্রসঙ্গত উল্লেখ্য,২০১৯ সাল থেকে গত বছর পর্যন্ত টানা তিনবার দেশে সঠিক সময়েই শুরু হয়েছিল বর্ষার বৃষ্টি। তবে এবছর অশনি এবং করিমের প্রভাবে আগেভাগেই প্রবেশ ঘটছে মৌসুমী বায়ুর।এদিকে উত্তর ভারতের বেশিরভাগ অংশে তাপপ্রবাহ অব্যাহত রয়েছে । রাজস্থানের বারমেঢ়ে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছেছে। রাজস্থান, হরিয়ানা, গুজরাট, মধ্যপ্রদেশ এবং মহারাষ্ট্রের বিভিন্ন শহরে তাপমাত্রা ৪৪ ডিগ্রি পার করে গেছে।

দেশে স্বাভাবিক বর্ষার আগমণে সাধারণ মানুষের পাশাপাশি চাষীদের মুখেও হাসি ফুটবে। খারিফ ফসলের চাষ দক্ষিণ পশ্চিম মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে ঘটা বৃষ্টিপাতের ওপর নির্ভরশীল। জুন -জুলাই থেকে বীজ বপন শুরু হয় খারিফ ফসলের। ভালো চাষের ফলে খাদ্যদ্রব্যের দাম খানিক কমতে পারে। পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেলেও মাঝে মাঝেই আকাশে কালো মেঘের ঘনঘটা দেখা যাবে।

More Articles