প্রবল বেগে ধেয়ে আসছে ৬৩০ ফুট লম্বা এই পাথরের টুকরো! পৃথিবীর দিন কি তবে শেষ?

Asteroid Earth Collision: ২০১২ সালে এই গ্রহাণুটি আবিষ্কৃত হয়েছিল। কিন্তু জেট প্রপালশন ল্যাবরেটরি সেই ১৯০৪ সাল থেকে এর গতিবিধি নজরে রাখছে।

১৩ তারিখ, বৃহস্পতিবার। বিশালাকার এক গ্রহাণু ধেয়ে আসছে পৃথিবীর দিকে। ধাক্কা লাগলেই তবে শেষ? আর পৃথিবীতে প্রাণের কোনও অস্তিত্ব রইবে না? যাবতীয় গুছিয়ে রাখা জীবন এক নিমেষে ছারখার? এই জাতীয় ভয় পাওয়ার আগে জানা দরকার গ্রহাণু আসলে কতটা বিপজ্জনক হতে পারে। মনে রাখা দরকার, পৃথিবীর দিকে সহস্র বছর ধরে বিভিন্ন গ্রহাণু ধেয়ে আসে। মহাকাশে ঘুরতে থাকা এইসব পাথর খণ্ডের সঙ্গে পৃথিবীর মোলাকাত হয়ে যাওয়া অস্বাভাবিক কিছু না। ইদানীং স্যাটেলাইট ব্যবস্থা আড়ে বহরে এতখানিই উন্নত হয়েছে যে আমরা সেই গ্রহাণুর পুঙ্খানুপুঙ্খ খবর জানতে পারছি। বিজ্ঞানীরা এই পাথর খণ্ডের নাম দিয়েছেন গ্রহাণু ৪৩৬৭৭৪ (2012 KY3) বা 2012 KY3। বৃহস্পতিবার সূর্যকে প্রদক্ষিণ করার পথে ৪৭,৮৪,১৩৯ কিলোমিটার দূরত্বে আমাদের পৃথিবীর সঙ্গে সাক্ষাৎ হবে এই গ্রহাণুর।

প্রায় ৪.৬ বিলিয়ন বছর আগে সৌরজগৎ যখন তৈরি হচ্ছে তখন অবশিষ্ট কিছু পাথুরে টুকরো মহাকাশে থেকে যায়, এগুলিই বস্তুত গ্রহাণু। যে গ্রহাণুটি ধেয়ে আসছে তার গতিবেগ প্রতি ঘণ্টায় ৬৩,১৮০ কিলোমিটার, আর তা দৈর্ঘ্যে ৬৩০ ফুট!

2012 KY3 গ্রহাণুটিকে একটি নিয়ার আর্থ অবজেক্ট (NEO) হিসাবেই শ্রেণিবদ্ধ করা হয়েছে। এই গ্রহাণুর আকার প্রায় অর্ধেক থেকে এক কিলোমিটারের মধ্যে। নাসা জয়েন্ট প্রপালশন ল্যাবরেটরি (জেপিএল) বলছে, একটি গ্রহাণুকে পৃথিবীর কাছাকাছি বস্তু হিসাবে তখনই শ্রেণিবদ্ধ করা হয় যখন আমাদের গ্রহ থেকে এর দূরত্ব পৃথিবী থেকে সূর্যের দূরত্বের ১.৩ গুণের কম হয়। উল্লেখ্য, পৃথিবী থেকে সূর্যের দূরত্ব প্রায় ৯৩ মিলিয়ন মাইল।

আরও পড়ুন- মহাবিশ্বের সবচেয়ে বড় রহস্য আবিষ্কার! ৩০,০০০,০০০,০০০ সূর্যকে গিলে খেতে পারে এই দানব!

এই গ্রহাণুটি ধেয়ে এসে ধাক্কা মারলে পৃথিবী কি শেষ হয়ে যেতে পারে? গ্রহাণুটিকে গ্রহ হত্যাকারী বস্তুর বিভাগেই রাখা হয়েছে। কারণ এক কিলোমিটার প্রস্থের চেয়ে বড় গ্রহাণুগুলি পৃথিবীর ঘন বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করে বেঁচে থাকার ক্ষমতা রাখে। যদিও 2012 KY3 পৃথিবীর জন্য খুব একটা বিপজ্জনক নয় কারণ এটি নিরাপদ দূরত্ব রেখেই পৃথিবীর পাশ দিয়ে সরে যাবে। ৪৭ লাখ কিলোমিটার দূরত্ব রেখে পৃথিবীর পাশ দিয়ে চলে যাবে এই গ্রহাণু।

২০১২ সালে এই গ্রহাণুটি আবিষ্কৃত হয়েছিল। কিন্তু জেট প্রপালশন ল্যাবরেটরি সেই ১৯০৪ সাল থেকে এর গতিবিধি নজরে রাখছে। শেষবার এই গ্রহাণুটি পৃথিবীর কাছাকাছি এসেছিল ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে। সেবার পৃথিবী থেকে ৬,৮২,৮৮,৪৩৬ কিলোমিটারের মধ্যেই ছিল গ্রহাণুটি। এর পর আবার বছর দুয়েকের মধ্যেই, ২০২৫ সালে পৃথিবীর এত কাছাকাছি আসবে এই গ্রহাণু। এই গ্রহাণুটি সূর্যের চারপাশে তার কক্ষপথে চার বছর ধরে প্রদক্ষিণ করে।

যদিও এই গ্রহাণুটি নিরাপদেই পৃথিবীর পাশ কাটিয়ে চলে যাবে তাও বিজ্ঞানীরা আশঙ্কার কথা জিইয়ে রাখছেন। গ্রহাণুটি যদি পৃথিবীর সঙ্গে কোনও প্রকার সংঘর্ষ ঘটায় তাহলে ব্যাপক জটিল পরিস্থিতি দেখা দেবে। নাসা সম্প্রতি গ্রহাণু-হত্যাকারী মিশন 'ডবল অ্যাস্টেরয়েড রিডাইরেকশন টেস্ট বা DART পরীক্ষা করেছে। একটি গ্রহাণুতে আঘাত করে এটিকে তার কক্ষপথ থেকে বেশ কিছুটা সরিয়ে দেওয়া গেছে। DART-ই ছিল প্রথম মহাকাশ মিশন যা গতির প্রভাবক দ্বারা কোনও গ্রহাণুর বিচ্যুতি পরিমাপ করে।

More Articles