আন্দোলন দমাতে ইন্টারনেট বন্ধ! কী ঘটছে বাংলাদেশে জানবেন না আর কেউই?

Bangladesh Internet Shutdown: ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলছেন, জাতীয় ও নাগরিক নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রেখেই সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এই পদক্ষেপ।

আশঙ্কা ছিলই, বাস্তবও হলো নিমেষে। রাজধানী ঢাকাসহ সারা বাংলাদেশে বুধবার রাত থেকে মোবাইল ইন্টারনেটের ফোর-জি পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। কোটা সংস্কার আন্দোলনে উত্তাল পড়শি দেশ। প্রতিদিন প্রাণ হারাচ্ছেন নাবালক পড়ুয়া, চাকরিপ্রার্থী যুবক-যুবতী, আম-জনতা। পড়ুয়াদের দমনে হাসিনা সরকারের ব্যাপক পুলিশি দমনের ভিডিও নিমেষে ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বজুড়ে। বাংলাদেশের এই ভয়াবহ রূপ দেখে বিভিন্ন দেশ থেকে পড়ুয়াদের সংহতি জানিয়েছেন বহু মানুষ। হাসিনা সরকারের পতনের দাবি ক্রমেই তীব্র হচ্ছে বাংলাদেশজুড়ে। আন্দোলন দমাতে ইন্টারনেট বন্ধ করে দিয়ে আন্দোলনকে বহির্বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন করার প্রচেষ্টা যে কোনও শাসকের অন্যতম মূল অস্ত্র। হাসিনা সরকারও হেঁটেছে সেই পথেই।

বাংলাদেশে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট চালু আছে তবে ফোর-জি পরিষেবা বন্ধ। মোবাইল ইন্টারনেটের টু-জি পরিষেবা চালু আছে। মোবাইল ফোনে আর ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারছেন না ব্যবহারকারীরা। ব্যবহার করা যাচ্ছে না ফেসবুক, মেসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপ ও বিভিন্ন ওয়েবসাইটও। ফলে বাংলাদেশে ঠিক কী ঘটছে প্রতি মুহূর্তে সেই ভিডিও, ছবি বাইরের বিশ্বের কাছে যাওয়ার রাস্তা বন্ধ করেছে হাসিনা সরকার।

আরও পড়ুন- বেড়েই চলেছে মৃত্যুমিছিল! কমপ্লিট শাটডাউনেও বাংলাদেশে হিংসার বলি অন্তত ১৫

বৃহস্পতিবারই অভিযোগ ওঠে, রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন স্থানে হঠাৎ মোবাইল ইন্টারনেটের গতি কমে গেছে। ফেসবুক ও মেসেঞ্জার খুলতে পারা যাচ্ছে না। বহু চেষ্টায় তা খুললেও কোনও ভিডিও আপলোড, ছবি পোস্ট করার মতো গতিই নেই ইন্টারনেটের। এমনকী অন্যদের পোস্টে ক্লিক করে ছবি বা ভিডিও অবধি দেখা যাচ্ছে না। বৃহস্পতিবার দুপুরের পর থেকেই দেশের প্রায় সব মোবাইল অপারেটরের ইন্টারনেটের গতি কমিয়ে দেওয়া হয়। এর আগে গত মঙ্গলবার রাতেও ভিপিএন অর্থাৎ ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ধীরগতির ইন্টারনেট ব্যবহার করতে হয় অনেককে।

হাসিনা সরকারের ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলছেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে ব্যবহার করে গুজব, মিথ্যা, অপপ্রচার করাকে অস্ত্র হিসেবে বেছে নিয়েছে একটি গোষ্ঠী। তাই জাতীয় ও নাগরিক নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রেখেই সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এই পদক্ষেপ।

আরও পড়ুন- হাসিনা সরকারকে না হটানো অবধি নড়বে না পড়ুয়ারা: শহিদুল আলম

জুনাইদ আহমেদ পলকের বক্তব্য, "শুধু দেশের ভেতর নয়, বাইরে থেকেই কিছু কনটেন্ট পোস্ট করা হচ্ছে। তার মানে টাকা দিয়ে মিথ্যা তথ্যটা সবার কাছে পৌঁছে দেওয়ার যে অপকৌশল বা ষড়যন্ত্র, এটা আমরা যখন দেখছি তথ্য–উপাত্ত, গোয়েন্দা সংস্থার সব বিশ্লেষণ, তখন আমরা মনে করেছি, দেশের নাগরিকদের নিরাপত্তা, রাষ্ট্রের নিরাপত্তার স্বার্থে আমাদের যার যতটুকু করার সক্ষমতা আছে, সেটা করা দরকার। যেমন পুলিশ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিরাপত্তা রক্ষার চেষ্টা করছে, তেমনি আমরা সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সাইবার প্ল্যাটফর্মে চেষ্টা করছি, জাতীয় নিরাপত্তা ও নাগরিক নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রেখেই।"

আন্দোলনকারীদের সোশ্যাল মিডিয়াতে চোখ রাখছে প্রশাসন। কোথা থেকে কারা পোস্ট করছেন, পোস্টে কেউ টাকা ঢালছে কিনা, কোথা থেকে কারা বিভিন্ন কনটেন্ট তৈরি করছে তা নজরে রাখতে 'ফিজিক্যাল ও ডিজিটাল ইন্টেলিজেন্স' ব্যবস্থার কথা জানিয়েছে হাসিনা সরকার। ফেসবুক ও ইউটিউবের সঙ্গে যদিও এই বিষয়ে বাংলাদেশ সরকার কোনও আলোচনার পথেই যায়নি। পলকের দাবি, ফেসবুক ও ইউটিউব সরকারকে সহযোগিতা করেনি বলেই তাঁদের এই সিদ্ধান্ত। বিতর্কিত 'কনটেন্ট' দিয়ে উসকানি ছড়ানো হয়েছে বলেই শুরুতেই 'ছয়টি প্রাণ ঝরে গেছে,’ বলছেন মন্ত্রী।

More Articles