ভাঙছে হাসিনা-মমতার সম্পর্ক! মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য নিয়ে দিল্লিকে কেন নালিশ বাংলাদেশের?

Mamata Banerjee on Bangladesh: মমতা বলেছিলেন, "যদি অসহায় মানুষ পশ্চিমবঙ্গের দরজায় কড়া নাড়তে আসে, আমরা অবশ্যই তাদের আশ্রয় দেব।"

শেখ হাসিনার সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সুসম্পর্ক অজানা নয়। একে অন্যকে শাড়ি উপহার, আম উপহার চলতেই থাকে। রাজনৈতিকভাবে পাতানো এই 'দিদি-বোন' সম্পর্ক কি ধাক্কা খেল এবার? কোটা আন্দোলনের জেরে সপ্তাহজুড়ে উত্তাল বাংলাদেশ। কোটা পদ্ধতির সংস্কার চেয়ে পথে নামা ছাত্রছাত্রদীদের বিক্ষোভকে হাসিনা সরকার যে পথে দমন করেছে তাতে সমগ্র বাংলাদেশ জুড়েই বড় অংশের দাবি ওঠে হাসিনা সরকারের পতনের। ছাত্র আন্দোলনের জেরে এত এত সাধারণ মানুষের মৃত্যু প্রশ্ন তুলে দেয় 'স্বৈরাচারী', ‘অগণতান্ত্রিক' হাসিনা সরকারের ভূমিকা নিয়ে। বাংলাদেশের আওয়ামী লীগের সরকার এবার আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিবাদ জানিয়েছে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্যের। হিংসা বিধ্বস্ত বাংলাদেশ থেকে 'অসহায় মানুষদের আশ্রয়' দেওয়ার বিষয়ে মমতার সাম্প্রতিক বিবৃতি ঘিরে অসন্তুষ্ট 'বন্ধু' হাসিনা। এতটাই অসন্তুষ্ট যে প্রতিবেশী দেশটি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে নয়াদিল্লিতে অভিযোগ জানিয়েছে।

বাংলাদেশের বিদেশমন্ত্রী হাসান মাহমুদ বলেন, "পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর প্রতি যথাযথ সম্মান জানাচ্ছি, তাঁর সঙ্গে আমাদের খুব ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। তবু, আমরা এটি পরিষ্কার করতে চাই যে তাঁর মন্তব্যে বিভ্রান্তি ছড়ানোর সুযোগ রয়েছে। তাই, আমরা ভারত সরকারকে একটি চিঠি দিয়েছি।”

উত্তাল বাংলাদেশে মানুষের মৃত্যু, সরকারি ভবনে ভাংচুর, আগুন, ইন্টারনেট বন্ধ, জরুরি পণ্যের জোগান কমে যাওয়ার মতো ভয়াবহ পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষের পাশে থাকার বার্তা দিয়েছিলেন এ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। গত ২১ জুলাই বাংলাদেশে বাড়তে থাকা হিংসা এবং বিক্ষোভের পরিপ্রেক্ষিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, প্রতিবেশী দেশ থেকে যদি কোনও মানুষ বিপদে পড়ে এরাজ্যে আসেন, তাঁদের জন্য পশ্চিমবঙ্গের দরজা খোলা থাকবে এবং তাদের আশ্রয় দেবে।

আরও পড়ুন- ১১ মাস জেলও খেটেছেন! তবু কেন বাংলাদেশের জনগণের মন রাখতে ব্যর্থ শেখ হাসিনা?

 

বিদেশের কোনও ইস্যুতে মন্তব্য করা কেন্দ্রের বিষয়বস্তু তা উল্লেখ করেই শহিদ দিবসের সমাবেশ থেকে মমতা বলেছিলেন, "যদি অসহায় মানুষ পশ্চিমবঙ্গের দরজায় কড়া নাড়তে আসে, আমরা অবশ্যই তাদের আশ্রয় দেব।" মমতা আরও বলেছিলেন, "এটা আমার কথা নয়। রাষ্ট্রসংঘের সনদেই বিপদগ্রস্তদের পাশে থাকার কথা বলা আছে। অশান্তি সংলগ্ন অঞ্চলগুলিতে উদ্বাস্তুদের স্থান দেওয়ার জন্য জাতিসংঘেরই প্রস্তাব রয়েছে।"

আরও পড়ুন- বাংলাদেশের কোটা ব্যবস্থা ঠিক কী? কেন এর বিরোধিতায় প্রাণ হারালেন পড়ুয়ারা?

পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই মন্তব্যের বিষয়ে রিপোর্ট চেয়ে পাঠিয়েছেন। রাজভবন বলছে, বহিরাগত বিষয় নিয়ে কথা বলা কেন্দ্রের অধিকার। রাজ্যপালের কার্যালয় সোমবার এক বিবৃতিতে বলেছে, "বিদেশ থেকে আসা মানুষদের আশ্রয় দেওয়ার দায়িত্ব নেওয়া নিয়ে একজন মুখ্যমন্ত্রীর প্রকাশ্য বিবৃতি খুবই গুরুতর সাংবিধানিক বিধি লঙ্ঘন।"

জনসভায় মমতা আরও বলেছিলেন, "বাংলাদেশ নিয়ে কেউ প্ররোচণায় পা দেবেন না। ওখানকার পরিস্থিতির জন্য আমাদের সহমর্মিতা আছে। ছাত্রছাত্রীদের তাজা প্রাণ চলে যাচ্ছে।" মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই মন্তব্য স্বাভাবিকভাবেই হাসিনা সরকারের দমনকে সমর্থন করে না। তাই কি সোজা দিল্লিতে নালিশ বাংলাদেশের সরকারের? বাংলাদেশে ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন থাকার সুযোগ নিয়ে বিদেশে বাংলাদেশ নিয়ে গুজব ছড়ানোর প্রতিরোধেও ব্যবস্থা নিচ্ছে বাংলাদেশ সরকার। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্যে কি কোথাও 'গুজব' ছড়ানোর গন্ধই পাচ্ছিল বাংলাদেশ? সরকারি সুত্রে জানানো হয়েছে, বুধ ও বৃহস্পতিবারও কার্ফিউ জারি থাকবে বাংলাদেশে। তবে বুধবার থেকে সীমিত সংখ্যায় অফিস খুলবে। মঙ্গলবার রাতে ঢাকায় কিছু গুরুত্বপূর্ণ এলাকা ও অফিসে ইন্টারনেট চালু হয়েছে।

বাংলাদেশের নোবেল জয়ী অর্থনীতিবিদ ডঃ মহম্মদ ইউনুসের সাম্প্রতিক বিবৃতিকেও দেশবিরোধী বলে মনে করেছে বাংলাদেশ সরকার। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে যতই সুসম্পর্ক থাক, অন্যের দেশ নিয়ে 'নাক গলানো'-কে তাই হাসিনাবিরোধিতা হিসেবেই দেখছে প্রশাসন। এবং স্পষ্ট করে দিচ্ছে, কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদি সরকারের প্রতি আস্থা রয়েছে তাঁদের। কেন্দ্র বাংলাদেশ ইস্যুতে একটি বাক্যও খরচা করেনি।

More Articles