বিপ্লবী ছাত্র থেকে সশস্ত্র মাওবাদী কমান্ডো! কেন কেশব রাওয়ের মৃত্যু মাওবাদীদের জন্যে বড় ধাক্কা?

Basavaraju: দান্তেওয়াড়া-নারায়ণপুর- বিজাপুরের সীমানায় কেশব রাওয়ের আসার খবর ছিল গোয়েন্দাদের কাছে। ভোররাত থেকে শুরু হয়েছিল এই অভিযান।

T

মৃত্যু হল মাওবাদী নেতা নাম্বাল কেশব রাও ওরফে বাসবরাজের। ২১ মে বুধবার, মোট ৩০ জন মাওবাদীকে নিকেশ করছে যৌথ বাহিনী। কেশব রাওয়ের মাথার দাম ছিল ১ কোটি টাকা।  এই অভিযানকে 'যুগান্তকারী ' বলে আখ্যা দিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা অনেকেই মনে করছেন, কেশব রাওয়ের হত্যা মাওবাদীদের মেরুদন্ড ভেঙে দেওয়ার সমান। কিন্তু কেন? খোলসা হওয়া দরকার।

বুধবার সকালে ছত্তিশগড়ে এনকাউন্টার অভিযান শুরু হয়। নিরাপত্তা বাহিনীর তথ্য অনুযায়ী, নারায়ণপুর জেলার আবুজাহমাদ জঙ্গল এলাকায় অভিযান শুরু করা হয়। নারায়ণপুর, বিজাপুর, দান্তেওয়াড়ার ডিআরজি-ও এই অভিযানে শামিল ছিলেন। জঙ্গলে ঢুকে মাওবাদী নেতাদের সাথে গুলির লড়াই চলে। দান্তেওয়াড়া-নারায়ণপুর- বিজাপুরের সীমানায় কেশব রাওয়ের আসার খবর ছিল গোয়েন্দাদের কাছে। ভোররাত থেকে শুরু হয়েছিল এই অভিযান।

কেশব রাও ছিলেন সিপিআই (মাওবাদী) সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক। ধারণা করা হয় যে, ১৯৮৫ সালে আত্মগোপনে চলে যান। ৭০ বছর বয়সী এই বৃদ্ধ অন্ধ্র প্রদেশের শ্রীকাকুলামের বাসিন্দা। তিনি ওয়ারাঙ্গলের রিজিওনাল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের ছাত্র ছিলেন। তেলেঙ্গানার একজন উচ্চপদস্থ গোয়েন্দা কর্মকর্তা দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসে-কে জানিয়েছেন-
"তিনি আরইসি ওয়ারেঙ্গলের ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি ছিলেন। তিনি র‍্যাডিক্যাল স্টুডেন্টস ইউনিয়নের ব্যানারে নির্বাচনও লড়েছিলেন।" সে সময় তিনি তাঁর ছোট বেলায় রাখা নামেই পরিচিত ছিলেন। তিনি বলেন-
তখন পুরো ওয়ারেঙ্গল উগ্রপন্থী সংগঠন দ্বারা প্রভাবিত ছিল। তিনি ১৯৮০ সালেও সংগঠনে গুরুত্বপূর্ণ ছিলেন। কর্মকর্তার কথায়, "তখন থেকেই বড়ো বড়ো অভিযানের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তিনি। পিপলস ওয়ার গ্রুপের পদেও উন্নীত হয়েছিলেন।" ২০০৪ সালে পিপলস ওয়ার গ্রুপ (পিডব্লিউজি) এবং মাওবাদী কমিউনিস্ট সেন্টার একত্রে হয়ে সিপিআই (মাওবাদী) গঠন করে।

গোয়েন্দা কর্মকর্তারা আরও বলেন- বাসবরাজের মৃত্যু ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মাওবাদী)-র জন্য একটি বড়ো ধাক্কা। কারণ, তিনি নিষিদ্ধ সংগঠনের উত্তর ও দক্ষিণ কমান্ডের মধ্যে সংযোগকারী ছিলেন। মুপ্পালা কেশভ রাও সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে পদত্যাগ করার পর, বাসবরাজ সম্পাদকের পদ পান। তেলেঙ্গানার আরেক পুলিশকর্তা দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসে-কে বলেছেন, "তিনিই একসময় নকশালবাড়ি সংগঠনকে দক্ষিণাঞ্চলীয় কমান্ডের সাথে যুক্ত করেছিলেন। দলকে এক ছাতার নিচে আনার জন্য দেশের বিভিন্ন প্রান্তে গিয়েছিলেন। বাসবরাজ তাঁরই পথ অনুসরণ করেছিলেন।”

ওই গোয়েন্দারাই কথায়- তিনি সংগঠনের যোদ্ধা নেতা ছিলেন। খুব ছোটবেলা থেকেই সংগঠন করেন। তাঁর মৃত্যু সংগঠনের বড়ো ক্ষতি এবং এর ফলে দল ভেঙেও যেতে পারে। তাঁর কথায়, কর্মীদের একত্রিত করতে পারে এমন কেউ আর সংগঠনে নেই। তিনি দাবি করেছেন, “তাঁকে ছাড়া মাওবাদীদের পুনর্গঠন করা প্রায় অসম্ভব।” ২০১১ সালে ৫৬ বছর বয়সে কিষাণজির (মাল্লোজুলা কোটেশ্বর রাও) হত্যা তারপর এখন বাসবরাজের মৃত্যু তেলুগুর সংগঠনকে আরও দূর্বল করবে। গত কয়েক বছরে তেলেঙ্গানা থেকে কোনও নতুন সদস্য খুঁজে না পাওয়া এবং পুরনো ক্যাডারের মৃত্যু- সংগঠনের জন্য মারাত্মক ক্ষতি বলে মনে করছেন শীর্ষ কর্মকর্তারা।

প্রসঙ্গত, ছত্তিশগড়ের এই অভিযান শেষ হতেই অমিত শাহ এক্সে পোস্ট করে নিরাপত্তা বাহিনীকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। তিনি লিখেছেন, "গত তিন দশকের নকশাল বিরোধী ইতিহাসে এই প্রথমবার কোনো সাধারণ সম্পাদক পর্যায়ের নেতাকে নিকেশ করতে সক্ষম হয়েছে আমাদের বাহিনী। এই যুগান্তকারী কাজের জন্য আমাদের সাহসী নিরাপত্তা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলিকে আন্তরিক অভিনন্দন জানাই।" তিনি আরও লেখেন, অপারেশন ব্ল্যাক ফরেস্ট-এ ছত্রিশগড়, তেলঙ্গানা এবং মহারাষ্ট্রে ৫৪ জন নকশালকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ৮৪ জন মাওবাদী আত্মসমর্পণ করেছেন। তাঁর কথায়, "মোদি সরকার অঙ্গীকারবদ্ধ - ৩১ মার্চ ২০২৬-এর মধ্যেই দেশ থেকে মাওবাদীদের নির্মূল করা হবে।"

উল্লেখ্য, দু'সপ্তাহ আগেই ৩৬ গড়ের বিজাপুরে এনকাউন্টারে ১৫ জন মাওবাদীকে নিকেশ করেছিল নিরাপত্তা বাহিনী। রাজ্য ও কেন্দ্রের যৌথ প্রচেষ্টার ফলে নকশালপন্থী সংগঠনগুলির দখল দুর্বল হয়েছে বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

More Articles