মাছ ধরে চলে সংসার! দেশকে আশা দেখাচ্ছে কেকেআরের উজ্জ্বল মুখ জিন্না

IPL KKR 2023: গ্রামের রাস্তায় পড়ে থাকা মুচি ডাব নিয়ে বল করা শুরু।

ভোর রাতে উঠে, জেলা পেরিয়ে সুদূর রাজধানীতে আসা। সারাদিনের ক্লান্তি নিয়ে অনুশীলন সেরে বাড়িতে ফেরা। দিনের পর দিন, মাসের পর মাস এই পরিশ্রম করে গিয়েছেন। আর এবার চলতি আইপিএলে কেকেআরের হয়ে নেট বোলিং করছেন বসিরহাটের সেই পরিশ্রমী যুবক জিন্না মন্ডল। প্রত্যন্ত এই গ্রামের বাসিন্দা জিন্না মণ্ডলের বাবা রফিকুল মণ্ডল পেশায় জেলে। মাছ ধরার পাশাপাশি জমিতে চাষও করেন। ক্রিকেট তাঁর কাছে ছিল স্বপ্নই, যাঁদের বাড়িতে টিভি আছে তাঁদের দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে দেখা অবধিই ছিল পরিধি। রফিকুলের সন্তান জিন্না এখন কেকেআরের অন্যতম আলোর সম্ভাবনা।

উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বসিরহাটের বিবিপুর গ্রামে জন্ম জিন্নার। অভাবের সংসারেই বড় হয়ে ওঠা। জিন্নার ক্রিকেটের হাতেখড়ি আর পাঁচজন গ্রামের বাচ্চার যেভাবে হয়, সেভাবেই। গ্রামের রাস্তায় পড়ে থাকা মুচি ডাব নিয়ে বল করা শুরু। সেখান থেকে টেনিস বলে হাত পাকিয়ে পাড়ার মাঠে নিয়মিত ক্রিকেট খেলায় নেমে পড়লেন জিন্না।

গ্রামে না আছেন ভালো প্রশিক্ষক না আছে সুযোগ! ক্রিকেট কোচিং সেন্টারকে স্বপ্ন বললেও কম বলা হয়। টেনিস বলে ভাল খেলেই এলাকার এক ক্রিকেটপ্রেমীর নজরে পড়েন জিন্না। সেই মানুষটির হাত ধরেই কলকাতায় সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায় আকাডেমিতে ট্রায়ালের সুযোগ পান জিন্না। জিন্নার খেলা দেখে বিনা পারিশ্রমিকেই তাঁকে গড়েপিটে নিতে রাজি হন প্রশিক্ষকরা। সেই বসিরহাট থেকে কলকাতায় রোজ গিয়ে অনুশীলন! দূরত্ব অনেক, খরচও বিস্তর, পদে পদে বাধা। তবে বাধা কোন স্বপ্নকে কবেই বা খুন করতে পেরেছে!

আরও পড়ুন- রঙিলা আইপিএল এবং ভারতীয় ক্রিকেটের বৃষোৎসর্গ শ্রাদ্ধ

জিন্নার নিজের বাড়ি থেকে কাকড়া মির্জানগর স্টেশনের দূরত্ব পায় ১০ কিলোমিটার। ক্রিকেটের প্রতি নিখাদ ভালোবাসার কাছে হেরে গিয়ে সমস্ত প্রতিকূলতা জিন্নার পথ ছেড়ে সেলাম ঠুকেছে। ঘড়িতে যখন কাঁটায় কাঁটায় রাত তিনটে, গোটা গ্রাম তখন শুনশান। সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে পড়ে বছর একুশের জিন্না। রাতের বেলা কেউ এখন হুড়মুড়িয়ে সাইকেল চালানো দেখে অবাক হন না। সকলেই জানেন, জিন্না সাইকেল চালিয়ে প্রথম ট্রেন ধরতে ছুটছে। ঘণ্টাঘানেক সাইকেল চালিয়ে স্টেশন, সেখান থেকে ট্রেন ধরে কলকাতা। অনুশীলন শেষে রোজ বাড়ি ফিরে আসেন জিন্না। জানলার ছেঁড়া পর্দার ফাঁক দিয়ে আশার আলো ঘরের মেঝেয় এসে পড়ে। স্থানীয় সমাজসেবী কাজী মাহমুদ হাসান সেখানে থেকেই অনুশীলন করার একটি ঠাঁইও দিয়েছেন।

এখন মণ্ডল জিন্না কলকাতা নাইট রাইডার্স দলের নেট বোলার। ক্রিকেটই তাঁর জীবন, একমাত্র ভালোবাসা। বেড়ে ওঠার সময় থেকে বিভিন্ন কষ্ট, বিবিধ অপমান সহ্য করে IPL-এ নেট বোলার হিসাবে সুযোগ ছিনিয়ে নিয়েছেন জিন্না। স্বচ্ছ্বল সংসার কাকে বলে, জিন্নার অভিধানেই নেই। বাবা-মা, দুই ভাই এবং এক বোনকে নিয়েই তাঁর গোটা পৃথিবী। ক্রিকেটের পৃথিবীর বাইরে তাঁর এই অভাবের গৃহে বাবার নিয়মিত সঙ্গী সে। বাড়িতে থাকলে বাবার সঙ্গে মাঝেমধ্যেই মাছ ধরতে যান জিন্নাও।

জিন্নার ২২ গজের লড়াই এখনও সেভাবে প্রচারের আলোয় আসেনি কিন্তু তাঁর অদম্য জেদ প্রতিদিন তাতিয়ে তুলছে তাঁকে। জেদ ও স্বপ্নই জিন্নার বুক পকেটের যত্নের সঞ্চয়। নাইট ব্রিগেডের হয়ে খেলার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন জিন্না।

More Articles