দেখতে ঠিক চেরির মতো, বাংলায় অবহেলিত এই ফলেই রয়েছে হাজার রোগের নিরাময়

Bengal Currant or Karamcha : এর বৈজ্ঞানিক নাম Carissa carandus। আর ইংরেজিতে বলা হয় Bengal Current। আর বাংলায় কী বলে?

“লেবু পাতায় করমচা, যা বৃষ্টি ধরে যা...”, বাংলার এই কথ্য ছড়াটিতে এর ব্যবহার আছে ঠিকই, তবে ব্যবহারিক জীবনে আম, জাম, কলা, লিচুর ভিড়ে করমচার দেখা বিশেষ মেলে না। বলা চলে, এক প্রকার অবহেলিত এই ছোট্ট লালচে ফলটি। গ্রামের পথে ঘাটে যদিও বা করমচা গাছ দেখতে পাওয়া যায়, কিন্তু শহুরে প্রজন্মের কাছে একেবারেই অপরিচিত এই ফলটি।

একটা লম্বা কান্ডের ওপর ঝাঁকড়া পাতার বাহার, আর সেই সবুজ পাতার ফাঁকে ফাঁকে থোকায় থোকায় লালচে গোলাপী রঙের ফল। স্বাদে বেশ টক টক। মূলত গ্রীষ্মের শেষ দিক থেকে শুরু করে বর্ষাকাল জুড়ে পাওয়া যায় করমচা ফলটি। এর বৈজ্ঞানিক নাম Carissa carandus। আর ইংরেজিতে বলা হয় Bengal Current। উত্তর, পশ্চিম ও মধ্য ভারতে এর উৎপাদন সবথেকে বেশি।তবে এর আরও একটা পরিচয় হয়তো অনেকেই জানেন না। মনোহারী দোকানে অথবা ফলের দোকানে কাঁচের বয়ামে ছোট লাল লাল ফল দেখেছেন কখনও? দোকানে অবশ্য এটাকে চেরি ফল বলে বিক্রি হয়, কেক অথবা অন্য কোনও খাবার প্রস্তুতিতে প্রায়ই গৃহস্থ বাড়িতে কিনেও নিয়ে যাওয়া হয় এই ফল। তবে চেরি বলে বিক্রি হলেও এটি মোটেই চেরি নয়। আদতে এটি হল করমচা। এখন মনে হতেই পারে, করমচা তো স্বাদে টক, অথচ দোকানে বয়ামে রাখা লাল ফলগুলি তো বেশ মিষ্টি স্বাদের! আসলে এই করমচাকে চিনির রসে ডুবিয়ে চেরি নাম দিয়ে বিক্রি করা হয় আকচার।

আরও পড়ুন - মুঠো মুঠো চুল উঠছে শীতকালে, টাক পড়ে যাবে নাকি! ব্রেকফাস্টের এই খাবারেই সমস্যার সমাধান

কিন্তু বাংলায় এই ফল খাওয়ার চল সেই অর্থে নেই বললেই চলে। যদিও বহু উপকার রয়েছে এই ফলের। টক ফলের আচার অথবা চাটনির চল বাংলায় রয়েছে ঠিকই তবে অনাদৃত থেকে গিয়েছে করমচা। তবে এই ফলের গুণাগুণ জানলে অবাক হতে হয়। করমচায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি এবং পটাশিয়াম। এছাড়াও রয়েছে আয়রন, কার্বোহাইড্রেট এবং কিছু ফাইটোনিউট্রিয়েন্টস। ছোট্ট একটা ফলের মধ্যেই রয়েছে হাজার গুণ। তাই খাদ্যতালিকায় করমচা না থাকায় হেলায় হারাচ্ছি সেসব।

করমচা খেলে কী কী উপকার হয়?

১. যেহেতু স্বাদে টক জাতীয় তাই অরুচি কাটাতে খুবই সাহায্য করে এটি।

২. দাঁত এবং মাড়ি মজবুত রাখতে সহায়তা করে এই ফল। পাশাপাশি চোয়ালের ব্যথাতেও দারুণ উপকারী করমচা।

৩. দেহে কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে করমচা।

৪. আমাশয়, ডায়রিয়ার মতো পেটের সমস্যা দূর করতেও মহৌষধি হল এই ছোট্ট লালচে ফলটি।

৫. করমচার রস নিয়মিত খেলে মূত্রনালীর সংক্রমণের আশঙ্কা কমে।

৬. শরীরের অতিরিক্ত মেদ ঝরাতেও সাহায্য করে করমচা।

৭. করমচা খেলে ধমনীতে রক্ত চলাচলের মাত্রাও ঠিক থাকে, ফলে হৃদরোগের আশঙ্কা কমে।

৮. এছাড়াও যকৃৎ, কিডনি এবং ত্বকের রোগেও ইতিবাচক ভূমিকা নেয় করমচা।

More Articles