বিহারে শূন্য জন সুরজ! প্রশান্ত কিশোরের অঙ্ক কেন মিলল না?
Prashant Kishor’s Magic Failed in Bihar: বিশেষজ্ঞদের মতে, কিশোরের দল আলোচনায় ছিল, প্রচারেও এগিয়ে ছিল; কিন্তু ভোটাররা তাদের বিশ্বাসযোগ্য বিকল্প মনে করেননি।
প্রায় এক দশক ধরে ভারতের রাজনৈতিক কৌশলের অঘোষিত জাদুকর ছিলেন প্রশান্ত কিশোর। নরেন্দ্র মোদি থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়—দেশের তাবড় তাবড় নেতাদের জয়ের নকশা তিনি এঁকেছেন। কিন্তু নিজের দল নিয়ে রাজনীতির ময়দানে নামতেই তার ‘জাদু’ যেন উধাও হয়ে গেল।
বিহারে ভালো শাসনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে, স্টার্টআপের মতো ঝকঝকে ভাবনা নিয়ে কিশোর গড়েছিলেন জন সুরজ। দু'বছর ধরে হাঁটলেন রাজ্য জুড়ে, গড়লেন বিস্তৃত সাংগঠনিক কাঠামো, ২৪৩টি আসনের প্রায় সবগুলোতেই প্রার্থী দাঁড় করালেন। কিন্তু ফলাফল? একটিও আসন নয়। সামান্য ভোট আর অন্যদিকে বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ-র ঝড়ো জয়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, কিশোরের দল আলোচনায় ছিল, প্রচারেও এগিয়ে ছিল; কিন্তু ভোটাররা তাদের বিশ্বাসযোগ্য বিকল্প মনে করেননি। রাজনৈতিক বিশ্লেষক রাহুল ভার্মা দ্য হিন্দু-কে বলেন, “বিহারে কোনো অ্যান্টি-ইনকাম্বেন্সি ছিল না। ভোটাররা তাদের পুরনো সামাজিক-রাজনৈতিক আনুগত্যেই টিকে ছিলেন। তাই নতুন দলকে জায়গা দিতে চাননি।”
আরও পড়ুন
বিহারে ভরাডুবির মধ্যেও যেভাবে ভেসে রইল বামেরা
ভারতের রাজনীতির সাম্প্রতিক ইতিহাস দেখলে স্পষ্ট বোঝা যায় নতুন দল তখনই উঠে আসে, যখন তার পেছনে একটা আন্দোলন থাকে। যেমন তেলেগু দেশম পার্টি (১৯৮৩), অসম গণপরিষদ (১৯৮৫), আম আদমি পার্টি (অ্যান্টি-করাপশন মুভমেন্ট থেকে জন্ম) কিন্তু জন সুরজ কোনো আন্দোলন থেকে ওঠেনি। শুরু থেকেই এটা ছিল একটি পরিকল্পিত, কৌশল-নির্ভর রাজনৈতিক প্রকল্প। কিশোরের পদযাত্রা মানুষকে ছুঁতে চেয়েছিল ঠিকই, কিন্তু তাতে ছিল না আন্দোলনের মতো আবেগ বা উত্তেজনা। কিশোর ভিড় টানতেন, মিডিয়ার ফোকাস পেতেন, তরুণদের সঙ্গে কথা বলতেন কিন্তু সংগঠনের শক্তি গড়ে তুলতে পারেননি। বেশিরভাগ প্রার্থীই ছিলেন প্রথমবার নির্বাচনে নামা মুখ।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, জন সুরাজ একটা আইডিয়া-নির্ভর দল, আন্দোলন থেকে জন্ম নেয়নি; তাই আবেগের জোয়ার তৈরি হয়নি। পাশাপাশি তারা এও বলছেন, দল পরিচিতি পেয়েছে ঠিকই, কিন্তু কোনো নির্দিষ্ট সামাজিক ভিত্তি; যেমন জাতি, ধর্ম, অঞ্চল কোনোটাই পায়নি। এটাই বড় ব্যর্থতা। বিশ্লেষকরা আরেকটি বড় কারণ সামনে আনছেন, কিশোর নিজে কোনো আসনে লড়েননি। এতে হয়ত ভোটারদের মনে সন্দেহ তৈরি হয়েছে, তিনি কি সত্যিই বিকল্প হয়ে উঠতে চান, নাকি এটি একটি রাজনৈতিক ‘এক্সপেরিমেন্ট’? কিন্তু, দিল্লিতে কেজরিওয়াল নিজে লড়ে প্রতীকী বার্তা দিয়েছিলেন, যা জন সুরজের ক্ষেত্রে হয়নি।
তাহলে কি এখানেই জন সুরজের ইতি হলো? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, না হয়নি। বিহারে রাজনৈতিক পরিস্থিতি বদলাচ্ছে, জাতপাতের হিসেবও ধীরে ধীরে বদলাচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, কিশোর যদি সংগঠন ধরে রাখেন, স্থানীয় নেতৃত্ব তৈরি করেন, ভোটের পর দল নিস্ক্রিয় না হয়ে মাঠে থাকে এবং পরেরবার নিজে লড়েন; তাহলেই ২০৩০ সালের নির্বাচনে জন সুরজ শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠতে পারে।

Whatsapp
