মহিলাদের ভোটই বিহারের ‘গেমচেঞ্জার’?
Bihar Election 2025: নির্বাচনের ঠিক আগে ১.২০ কোটি মহিলাকে ১০,০০০ টাকা করে ‘সিড ক্যাপিটাল’ দেওয়া হয়েছে। এটি আসলে সরকারি ঋণ, তবে অনেকেই নির্বাচনী প্রচারে প্রকাশ্যে বলছেন, “ফিরিয়ে দিতে হবে না।”
বিহার জুড়ে ভোটের হাওয়া বদলে দিয়েছে একটিই শক্তি— মহিলা ভোটার। মহাগঠবন্ধনের বড় বড় প্রতিশ্রুতির চেয়ে তাঁরা বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন নীতীশ কুমারের কাজকে। মহিলাদের ভোটই কি তবে বিহারের ‘গেমচেঞ্জার’? বিহারে মহিলাদের জন্য কী কী প্রকল্প রয়েছে?
বছরের পর বছর ধরে নিতীশ কুমার রাজ্যের মহিলাদের জন্য একাধিক প্রকল্প চালু করেছেন। শিক্ষা, স্বনির্ভরতা, স্বাস্থ্য— প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই তারা উপকৃত হচ্ছেন। গ্রামের ভোটকেন্দ্রগুলিতে দেখা গিয়েছে, মহিলারা দল বেঁধে ভোট দিচ্ছেন। এবারের নির্বাচনের ফলাফলে এই বার্তা স্পষ্ট, মহিলা ভোটাররা এনডিএ-র শক্তিশালী স্তম্ভ।
বিহারে মহিলাদের জন্য কী কী প্রকল্প রয়েছে?
• ‘মুখ্যমন্ত্রী সাইকেল যোজনা’
নবম শ্রেণিতে পড়া মেয়েদের সাইকেল কেনার জন্য আর্থিক সহায়তা। ফলে শিক্ষা থেকে বেরিয়ে যাওয়া কমেছে।
• নগদ পুরস্কার
মাধ্যমিকে ভালো ফল করলেই মেলে নগদ পুরস্কার। এতে পরিবারগুলির শিক্ষায় আর্থিক বোঝা কমে।
আরও পড়ুন
বিহারে শূন্য জন সুরজ! প্রশান্ত কিশোরের অঙ্ক কেন মিলল না?
• ‘জীবিকা’ প্রকল্প
এটিই নিতীশের সবচেয়ে বড় শক্তি। গ্রামীণ মহিলাদের স্বনির্ভর করতে স্ব-সহায়ক গোষ্ঠী তৈরি, প্রশিক্ষণ, ঋণ-সবই তারা পাচ্ছেন।
নির্বাচনের ঠিক আগে ১.২০ কোটি মহিলাকে ১০,০০০ টাকা করে ‘সিড ক্যাপিটাল’ দেওয়া হয়েছে। এটি আসলে সরকারি ঋণ, তবে অনেকেই নির্বাচনী প্রচারে প্রকাশ্যে বলছেন, “ফিরিয়ে দিতে হবে না।” ফলে মহিলাদের জীবনে সরাসরি আর্থিক স্বস্তি এসেছে। এটি এনডিএ-র পক্ষে সমর্থন জোগাতে বিশাল সুবিধা তৈরি করেছে।
‘জীবিকা’ প্রকল্পের সদস্যরা— রাজনৈতিক ভাবে মাঠেও সক্রিয়। Newslaundry-র গ্রাউন্ড রিপোর্ট অনুযায়ী, গ্রামেগঞ্জে 'জীবিকা প্রকল্প'র সঙ্গে যুক্ত সংগঠকরা শুধু উন্নয়নমূলক কাজই করছেন না, ভোটের প্রচারেও সক্রিয় ছিলেন। মহিলা ভোটারদের সঙ্গে তাঁদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক এনডিএ-কে বাড়তি সুবিধা দিয়েছে।
আরও পড়ুন
‘ভোট চুরি’ স্লোগানেই বিহারে উল্টো ফাঁদে কংগ্রেস?
মহাগঠবন্ধনের প্রতিশ্রুতি মহিলাদের অর্ধেক মনও জয় করতে পারেনি। আরজেডি-নেতৃত্বাধীন মহাগঠবন্ধন তাদের ইস্তেহার মহিলাদের জন্য বিশাল প্রতিশ্রুতি দেয়— প্রতি বছর ৩০,০০০ টাকা করে ‘মাই বাহিন মান যোজনা’। অনেক মহিলাই মনে করছেন, এই প্রতিশ্রুতি আদৌ বাস্তবায়িত হবে কিনা বা কবে হবে তাতে সন্দেহ রয়েছে। অন্যদিকে, নীতীশের প্রকল্পগুলি বছরের পর বছর ধরে চালু আছে— এটাই তাঁদের আস্থা বাড়িয়েছে।
স্বাস্থ্য, বয়স, রাজনৈতিক সমালোচনা— সব চাপা পড়েছে মহিলাদের সমর্থনে। নিতীশ কুমারের বয়স, স্বাস্থ্য নিয়ে বিরোধীদের তীব্র সমালোচনা ছিল। কিন্তু বাস্তব পরিস্থিতি বলছে, মহিলাদের কাছে এগুলো বড় বিষয় নয়। তাঁদের মতে, কাজ করলে বয়স বড় কথা নয়। মহিলা ভোটারদের এই মনোভাবই নিতীশকে জয় পেতে সাহায্য করেছে।
২০২৫ সালের বিহার নির্বাচনে মহিলাদের ভোট বদলে দিয়েছে রাজ্যের রাজনৈতিক সমীকরণও। নীতীশ কুমারের দীর্ঘমেয়াদি প্রকল্প মহিলাদের জীবনে যে স্পষ্ট প্রভাব ফেলেছে, তা এবার ব্যালটবাক্সে সরাসরি প্রতিফলিত হয়েছে। বিহারের উন্নয়ন-রাজনীতিতে এবার ‘মহিলা ফ্যাক্টর’ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

Whatsapp
