বিহার নির্বাচন: রাজনৈতিক বাস্তবতা থেকে মুখ ফিরিয়ে ছিলেন রাহুল, তেজস্ৱীরা?
Bihar Election Result: উন্নয়নের ছবি কখনোই নীতিশ কুমার ও বিজেপি জোটের সাফল্যের কারণ হতে পারে না। বিহারে ফল আসলে এক পরিকল্পিত পাটিগণিত যার কাছে বিরোধীরা মাত হয়ে গিয়েছেন।
সদ্য সমাপ্ত বিহার বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফল শুধু হতাশাজনক নয়, ধর্মনিরপেক্ষ ও প্রগতিশীল শক্তির কাছে সব অর্থেই এক মহাবিপর্যয়। বিশেষ করে ২০২৪ সালে লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির একক সংখ্যাগরিষ্টতা না পাওয়ার পর সংসদীয় রাজনীতিতে যে আশা তৈরি হয়েছিল, একের পর এক বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির ধারাবাহিক সাফল্যে সেই আশা চুরমার হয়ে যাচ্ছে। ২০২৪ পরবর্তী সময়ে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের অভিভাবকত্বে বিজেপি যেভাবে তার জয়রথ চালাচ্ছে তা এক গভীর পর্যবেক্ষণের দাবি রাখে। বিরোধীরা যদি আজকের ভারতের ভোট ব্যবস্থাকে এক সাধারণ গণতান্ত্রিক কাঠামো ভাবে তাহলে ভয়ঙ্কর ভুল হয়ে যাবে। আজ নির্বাচন কমিশন, বিচারব্যবস্থা-সহ সমস্ত সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলো কম-বেশি কেন্দ্রীয় সরকারের দখলে। এই অবস্থায় সাধারণ রাজনৈতিক ভাষ্য ও কৌশল দিয়ে বিজেপির মত সংগঠিত ফ্যাসিবাদী শক্তিকে রোখা সম্ভব নয়। আবার ষড়যন্ত্র তত্ত্বের কারণেই বিরোধীরা ধারাবাহিকভাবে ধরাশায়ী হচ্ছেন— এই ভাবনাও অতি সরলীকরণ। গ্রাউন্ড জিরোর অবস্থা সম্পর্কে সম্যক ধারণা ছাড়া, হিন্দুত্ববাদীদের রণকৌশলকে সামলানো সম্ভব নয়। বিহার এই বাস্তবতাকে আরেকবার সামনে এনে দিল।
বাস্তবের মাটি থেকে ইন্ডিয়া জোটের নেতৃত্ব, সমর্থক এবং বিকল্প মিডিয়া যে এখনও কতদূরে তা হাড়েহাড়ে আমরা উপলব্ধি করলাম ফলপ্রকাশের বিকেল থেকে পরবর্তী ৭২ ঘন্টায়। সোশ্যাল মিডিয়ায় একটা ন্যারেটিভ ভাইরাল হয়ে গেল যার মূল বক্তব্য হলো নির্বাচন কমিশন এসআইআরের পর বিহারের মোট ভোটার সংখ্যা বলেছিল ৭ কোটি ৪২ লাখ। এবার বিহারে ভোট পড়েছে সর্বকালীন রেকর্ড ভেঙে ৬৭.১৩%। এই হিসাবে প্রদত্ত ভোট সংখ্যা হওয়ার কথা ৫ কোটিরও অনেক কম। অথচ নির্বাচন কমিশন নাকি তাদের ওয়েবসাইটে জানিয়েছে মোট ভোট পড়েছে ৭ কোটি ৪৫ লাখ। আর এই ঘটনা যদি সত্য হয় তবে ঘোটালা হয়েছে কম বেশি তিন কোটি। এমনকি সেই ফলের এক ছবিও বিদ্যুৎ গতিতে ছড়িয়ে পড়ল প্রগতিশীল শিবিরে। সেই ছবিটাতেই কিন্তু স্পষ্ট ছিল নির্বাচন কমিশন কোথাও বলেনি বিহারে কত ভোট পড়েছে। সেখানে পুরুষ ও মহিলা ভোটারদের শতকরা হার এবং ভোটার তালিকায় পুরুষ ও মহিলা ভোটারের সংখ্যা ছিল। স্বাভাবিক ভাবেই এই আজগুবি তথ্যের উপর ভর করে কোনো বিরোধী রাজনৈতিক দল আদালতের দ্বারস্থ হলো না। পরাজিত পক্ষের দ্বিতীয় ন্যারেটিভটাও ততটাই নির্বুদ্ধিতার পরিচায়ক। একটা হিসাব সব জায়গায় প্রচার করা হলো। তাতে বলা হলো বিজেপি ২০.৪৭% ভোট পেয়ে ৮৯ টি আসন পেয়েছে, নীতীশ কুমারের জনতা দল (ইউনাইটেড) ১৯.২৭% ভোট পেয়ে ৮৫ টি আসন পেয়েছে অথচ লালু প্রসাদের রাষ্ট্রীয় জনতা দলের ভোট প্রাপ্তির হার সবচেয়ে বেশি ২২.৯৮% হওয়া সত্ত্বেও তাদের আসন সংখ্যা ২৫। এই ফল নিশ্চিত ভাবে পুকুর চুরির সামিল। এখন প্রশ্ন হলো, এই পরিসংখ্যান ১০০ শতাংশ সত্য হলেও, এই পয়েন্টে কোনো দল কি কোথাও নির্বাচনী দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণ করতে পারবেন? উত্তর হলো না। কারণ ভারতের সংসদীয় নির্বাচনী ব্যবস্থা তার জন্মলগ্ন থেকে এমন ভাবেই চলে আসছে এবং এমনটা হওয়াই দস্তুর। কারণ আমাদের দেশে আনুপাতিক নির্বাচনী ব্যবস্থা নয়, আসন সংখ্যা একমাত্র বিবেচ্য। 'ফার্স্ট পাস্ট দ্য পোস্ট' এর খেলায় নরেন্দ্র মোদি ৫০ শতাংশের কম ভোট শেয়ার নিয়ে দেশ শাসন করছেন। ২০২১ সালে পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেস ও বিজেপির মধ্যেকার মোট ভোটের পার্থক্য আর আসন সংখ্যার পার্থক্য পাশাপাশি রাখলে এই সিস্টেমের মজা বোঝা যাবে। আজ পর্যন্ত কোনো রাজনৈতিক দল এই পদ্ধতিতে ভোট করার বিরোধিতা করেনি। ভোটে খেলতে নেমে নিয়ম বদলের দাবি তুললে লোকে শুনবে কেন?
সমস্যা হলো বিরোধীরা নির্বাচন কমিশনের আসল উদ্দেশ্যকে প্রশ্ন করা এবং প্রতিরোধ করাকে মাঝপথে বন্ধ করলেন। এই বিষয়টি হলো এসআইআর। এটা যেমন এনআরসি করার প্রথম ধাপ তেমনি এক বিশাল অংশের মানুষকে ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করে এবং পরিকল্পনা মাফিক ভুয়ো ভোটার তালিকা ভুক্ত করে বিজেপির জয়কে সুনিশ্চিত করার নীল নকশা। বিহারে এসআইআর প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার আগে ভোটার সংখ্যা ছিল ৭.৮৯ কোটি যা সেপ্টেম্বর মাসে চূড়ান্ত তালিকায় হয় ৭.৪২ কোটি। অর্থাৎ ৪৭ লক্ষ ভোটারের নাম বাদ হয়ে গেল। নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুসারে খসড়া তালিকায় ৬৫ লক্ষ এবং চূড়ান্ত তালিকায় আরও ৩.৬৬ লক্ষ ভোটার বিয়োজিত হয় এবং নতুন নাম ওঠে ২১.৫ লক্ষ জনের। এই বিষয়টা কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা বোঝা যায় যখন আমরা দেখি অন্তত ১১ টা আসনে জয়-পরাজয়ের ব্যবধানের থেকে বেশি এসআইআরে বাদ যাওয়া নাম। বিহার নির্বাচনের দিনগুলোতে বহু মানুষ বুথে গিয়ে দেখে তাদের নামই নেই। বিরোধীদের ভোটব্যাঙ্কের উপর নির্বাচন কমিশনের সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের গুরুত্ব এত দিনে বুঝতে পেরে ১৮ নভেম্বর কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী এসআইআরকে এক ষড়যন্ত্র আখ্যা দিয়ে বিবৃতি এবং সর্বাত্মক প্রতিবাদের ডাক দেন। ততদিনে বিহারের খেলা শেষ।আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হলো এসআইআরের পরে যে চূড়ান্ত ভোটার তালিকা হয় এবং যে ভোটার লিস্টে বিহারে ভোট হলো, তার মধ্যেও তিন লাখের বেশি ভোটার পার্থক্য। নির্বাচন কমিশনের দাবি ১৯৫০ সালের জনপ্রতিনিধিত্ব আইন অনুসারে নির্বাচনের দশ দিন আগেও ভোটার লিস্টে নাম তোলা যায়। কিন্তু এক্ষেত্রে প্রশ্ন হলো, এই তিন লাখ লোক কীভাবে ভোটার তালিকায় যুক্ত হলো! এসআইআর হয়ে যাওয়ার পর এই নামগুলো কি অনলাইন নথিভুক্ত হলো! সবচেয়ে বড় কথা বিরোধী দলের লোকেরা তা জানতেই পারল না? বিহারে বহু জায়গায় ১০০ থেকে ৫,০০০ ভোটের পার্থক্যে জয় পরাজয় হয়েছে, সেখানে বিভিন্ন আসনে গড়ে ৫,০০০ করে নতুন ভোটার যুক্ত হলে গোটা ছবিটাই পাল্টে যেতে পারে। বিরোধীরা এই নিয়ে গভীর অনুসন্ধান করুক কারণ এটার মধ্যে পরিষ্কার দুর্নীতির গন্ধ আছে। কিন্তু এ বিষয়টি নির্বাচনের ফলপ্রকাশের পর সেভাবে আলোচনায় এলই না।
গোদি মিডিয়া এই ফলাফলকে ন্যায্যতা দিতে বিহারে নীতীশ কুমারের জমানার 'সুশাসন' এবং 'উন্নয়ন'-এর গল্প বলছেন, যা যে কোনো সূচকেই ডাহা মিথ্যা বলে প্রমাণিত। একটি রাজ্যের আর্থিক অবস্থা মূল্যায়ণে এখনও পর্যন্ত সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য মাপকাঠি হলো মান্থলি পার ক্যাপিটা কনজামশন এক্সপেনডিচার ( MPCE)। দেশের মধ্যে এই হারে সবার শেষে বিহার (গ্রামে ৩,৩৮৪ টাকা,শহরে ৪,৭৬৮ টাকা)। গ্রামীণ বিহারে কৃষি শ্রমিকের মজুরি দিনপ্রতি ৩০৮ টাকা এবং অকৃষি ক্ষেত্রে মজুরি ৩১৩ টাকা যা দেশের মধ্যে সবচেয়ে কম। বড় রাজ্যগুলির মধ্যে সাক্ষরতাতেও বিহার পিছিয়ে (৭৪.৩%)। ১০ লক্ষ মানুষ পিছু সরকারি হাসপাতালে বেডের সংখ্যা মাত্র ৯৮ যা সর্বনিম্ন। সাম্প্রতিক সময়ে বিহার সবচেয়ে বেশি শিরোনামে এসেছে নির্মীয়মান সেতু ভেঙে পড়ার কারণে। দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি পরিযায়ী শ্রমিকের বাস বিহারে। উন্নয়নের ছবি কখনোই নীতীশ কুমার ও বিজেপি জোটের সাফল্যের কারণ হতে পারে না। বিহারে ফল আসলে এক পরিকল্পিত পাটিগণিত যার কাছে বিরোধীরা মাত হয়ে গিয়েছেন।
একথা সবাই স্বীকার করতে বাধ্য যে বিহারের রাজনীতি আজও প্রবলভাবে জাত-পাত-সম্প্রদায় নির্ভর এবং নির্বাচনী জোট এই সমীকরণকে মেনেই চলে। এক্ষেত্রে এনডিএ জোট অনেক সফলভাবে তাদের উচ্চ বর্ণ (ব্রাহ্মণ,রাজপুত), যাদব ব্যতীত ওবিসি যেমন কুর্মী, কৈরি, ইবিসি (এক্সট্রিম ব্যাকওয়ার্ড), পাসোয়ানদের নিয়ে এমন এক রামধনু জোট তৈরি করতে সফল হয়েছিল যার উত্তর মহাগঠবন্ধনের কাছে ছিল না। এই ওবিসি ও দলিত প্রশ্নটা কতটা নির্ণায়ক হতে পারে তা নীতীশ কুমারের করা জাত-সমীক্ষার সময় টের পাওয়া গিয়েছিল। ২০২০ থেকে ২০২৫ সালের পার্থক্যটা হলো সেবার নীতীশ কুমারকে শিক্ষা দিতে গিয়ে বিজেপির মদতে লোক জনশক্তি পার্টি (চিরাগ পাসোয়ান) স্বাধীন ভাবে লড়েছিল। তার ফল হয়েছিল নীতীশের বিপর্যয় এবং ইন্ডিয়া জোটের সাফল্য। এবার চিরাগ জোটের মধ্যে থেকে শুধু ১৯ টা আসনই পায়নি, একই সঙ্গে এনডিএ -র পক্ষে সুনামি এনে দিয়েছে। একই সঙ্গে দলিত ও ওবিসিদের পার্টি হিন্দুস্তানী আওয়ামী মোর্চা (জিতনরাম মাঝি) ও রাষ্ট্রীয় লোক মোর্চা (উপেন্দ্র কুশওয়াহা) ইন্ডিয়া জোটকে শক্তিশালী করেছে। অন্যদিকে যাদব, মুসলমান এবং দলিতদের একটা ক্ষুদ্র অংশ (মুকেশ সাহানির দল যারা বিহারের রাজনীতিতে পরীক্ষিৎ নয়) নিয়ে ইন্ডিয়া জোট তার ধারে কাছে পৌঁছাতে পারেনি। নীতীশ কুমারের এই উইনিং কম্বিনেশন এক নতুন রাজনৈতিক পরিস্থিতির দিকে ইঙ্গিত করে। মন্ডল কমিশনের পর বিহারে যাদব ও মুসলমানদের নিয়ে সামাজিক ন্যায়ের ন্যারেটিভ তৈরি করেছিল, আজ তার গুণগত পরিবর্তন ঘটেছে। মহাদলিত যারা যাদবদের চাপে প্রান্তিক অবস্থানে ছিল, তারা নিজেদের প্রকাশ করতে এই রামধনু জোটে সামিল হয়েছে। এর ফল এনডিএ জোটকে এই পর্বত প্রমাণ সাফল্য এনে দিয়েছে। সংসদীয় বামেরা বিহারে গুরুত্বপূর্ণ শক্তি হওয়া সত্ত্বেও এবং প্রশান্ত কিশোরের জন সুরজ পার্টি জাতপাতের উর্ধ্বে উঠে এক নতুন রাজনীতির ডাক দিলেও বিহারের নির্বাচক মন্ডলী সে কথায় কান যে দেননি তা ফলেই পরিষ্কার।
মুসলিম ভোট নিয়ে সাধারণ যে ধারণা আমাদের রয়েছে, এবার বিহারে তার পরিবর্তন হয়েছে। বিশেষ করে সীমাঞ্চলে (পূর্ণিয়া, আরারিয়া, কাটিহার, কিসানগঞ্জ) মুসলিমরা এবার মিমকে তাদের বন্ধু ভেবেছে। শুধুমাত্র ওয়াইসিকে বিজেপির দালাল ও ভোট কাটুয়া বলে দেগে দিয়ে এর উত্তর পাওয়া যাবে না। দীর্ঘদিন ধরে মুসলমানরা বিজেপিকে দূরে রাখতে রাষ্ট্রীয় জনতা দল ও কংগ্রেস জোটকে ভোট দিয়েছে। এটাকে অনিবার্য ধরে নিয়ে ইন্ডিয়া জোট রাজনীতি করেছে কিন্তু আজও সেই রাজনীতিতে মুসলমানদের আর্থিক-সামাজিক ও রাজনৈতিক অংশগ্রহণ শূন্য বলেই চলে। এই যে ব্রাত্য থাকা, তাকে ইসু করে মিম ভোটে লড়ছে ও সফল হয়েছে। এক্ষেত্রে প্রশ্ন হলো মুকেশ সাহানীর মতো অপরীক্ষিত নেতাকে উপমুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী করা গেলেও মিমের মতো শক্তিকে জোটের বাইরে রাখা কি বিহারে রাজনৈতিক বুদ্ধিমত্তার পরিচায়ক? এই প্রশ্নের উত্তরও মহাগঠবন্ধনকে খুঁজতে হবে।
আজকে ভারতে সংসদীয় রাজনীতিতে পপুলিস্ট ভাবনা ও অনুদানের রাজনীতি একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। একদা তামিলনাড়ুতে জয়ললিতা যা শুরু করেছিলেন এবং পশ্চিমবঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যাকে প্রায় শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছেন, তাঁকে অস্বীকার করে এখন আর সংসদীয় রাজনীতি এগবে না। এ মুহূর্তে ভারতে ১২ টি রাজ্যে শুধুমাত্র মহিলাদের জন্য নিঃশর্ত বিভিন্ন পরিমাণ টাকার অনুদান চালু আছে। নীতীশ কুমার সেই গণিত মেনে ভোটের ঠিক আগে ১.২৫ কোটি মহিলার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ১০,০০০ টাকা দিয়ে ঋণ, তার সঙ্গে রয়েছে পরিবার পিছু ১২৫ ইউনিট পর্যন্ত নিঃশুল্ক বিদ্যুৎ। এটা অবশ্যই নীতীশের ভোটবাক্সকে আরও সংহত করেছে। শুধু তথ্যের খাতিরে একটা কথা মনে করিয়ে দেওয়া প্রয়োজন যে বিহারে মদ নিষিদ্ধ করার পর থেকে মহিলাদের একটা বড় অংশের সমর্থন নীতীশ কুমারের ভোটব্যাঙ্ক যা কখনও নীতীশকে ছেড়ে যায়নি।
আমরা যদি ভোটের শতাংশকে সামনে রেখে ২০২০ ও ২০২৫ সালের ফলাফলের বিচার করি তাহলে দেখব প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে নীতীশ কুমারের দল ব্যাতীত কারোরই সেভা বাড়ে বা কমেনি। বিজেপির ভোট বেড়েছে ০.৬১%, রাষ্ট্রীয় জনতা দলের ভোট কমেছে ০.১২%, কংগ্রেসের কমেছে ০.৭৬%। একমাত্র নীতীশের দলের বেড়েছে ৩.৮৮%। আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো বিহারে বিজেপি তাদের প্রথাগত সাম্প্রদায়িক মেরুকরণের প্রচারকে কখনোই সেভাবে উচ্চগ্রামে নিয়ে যায়নি কারণ বিহারের এই ভোট হিন্দুত্বের পক্ষে ভোট নয় বরং এই ভোটে নীতীশ-বিজেপি জোটের পক্ষে। বিজেপি বিহারের এই বাস্তবতাকে মেনে নিয়েই তাঁর মুসলমান-বিদ্বেষী হাইভোল্টেজ প্রচারকে অনুপ্রবেশের মুখোশে ঢেকেছে। এই নির্বাচনে তাই আবার ম্যান অব দ্য ম্যাচ হিসাবে নীতীশ কুমার উঠে এসেছেন। বিহার এক পার্টিজান নির্বাচন কমিশন, জাতপাতের রাজনীতির জটিল ক্যালকুলাস এবং জনবাদী রাজনীতির মিশেলকে জয়ী করেছে। মহাগঠবন্ধনের কুশীলবরা জমিতে এই রাজনীতির বাস্তবতা ধরতেই পারেননি। রাহুল গান্ধীর অনিয়মিত প্রচার, শরিকদের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ নির্বোধ লড়াই না হলেও ছবিটা খুব বেশি পাল্টাত না।
(লেখকের মতামত ব্যক্তিগত)

Whatsapp
