ভোটের মুখে মোদির গলায় বিঁধে অনন্ত-কাঁটা, কোচবিহারে গড় ধরে রাখতে পারবে বিজেপি?

Lok Sabha Election 2024: বিজেপির হাত ধরেই রাজ্যসভার সদস্য হয়েছিলেন অনন্ত মহারাজ। বিজেপিরও তাঁর উপর অনন্ত ভরসা। কিন্তু লোকসভা ভোটের ঠিক আগে রাজবংশীদের উন্নয়নের প্রশ্নে বিজেপি-বিরোধিতার সুর স্পষ্ট হয়ে উঠল অনন্ত মহারাজের গল...

লোকসভা ভোট এসেই গিয়েছে। প্রায় প্রতিটি রাজ্যেই প্রচারে ব্যস্ত রাজনৈতিক দলগুলি। কিন্তু এই সময়েই যেন বেসুরো বাজছেন কোচবিহারের বিজেপির বিশ্বস্ত অনন্ত মহারাজ। বিজেপির টিকিটেই পশ্চিমবঙ্গ থেকে রাজ্যসভার সাংসদ হন অনন্ত। বৃহস্পতিবারও কোচবিহারে মোদির সভামঞ্চে দেখা গিয়েছিল অন্তত মহারাজকে। আর তার পরেই বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে তোপ দেগে বসলেন অনন্ত রায়। রাজবংশীদের জন্য কোনও কিছুই করেনি মোদিসরকার। বিস্ফোরক দাবি কোচবিহারের মহারাজার।

গ্রেটার কোচবিহার পিপলস অ্যাসোসিয়েশনের কর্ণধার অনন্ত রায়। স্থানীয় ভাবে মহারাজা হিসেবেই পরিচিত। বিজেপির হাত ধরেই রাজ্যসভার সদস্য হয়েছিলেন অনন্ত মহারাজ। বিজেপিরও তাঁর উপর অনন্ত ভরসা। কিন্তু লোকসভা ভোটের ঠিক আগে আগে রাজবংশীদের উন্নয়নের প্রশ্নে বিজেপি বিরোধিতার সুর স্পষ্ট হয়ে উঠল অনন্ত মহারাজের। কার্যত ক্ষোভের সুরেই বোমা ফাটালেন তিনি। তৃণমূলের অভিযোগের সুরে সুর মিলিয়ে বলে বসলেন, গত পাঁচ বছরে রাজবংশীদের জন্য কিছুই করেনি বিজেপি সরকার। তাঁর বক্তব্য, করেনি যে তা সত্য কথা। কিন্তু কেন করেনি তা তাঁর কাছে স্পষ্ট নয়। কোনও উন্নয়নই তাঁর চোখে পড়েনি বলেই দাবি করলেন অনন্ত মহারাজ।

বৃহস্পতিবারই কোচবিহারে সভা করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী নিশীথ প্রামাণিকের সমর্থনেই ছিল এই সভা। সেই সভায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকাতেই দেখা গিয়েছিল অনন্ত মহারাজকে। কোচবিহারের ভোটবাক্সের ৩২ শতাংশ জুড়ে রাজবংশীরা। ফলে ভোটের বাজারে তা যে একটা বড় ফ্যাক্টর, তা অস্বীকার করার জায়গা নেই। ফলে লোকসভা ভোটের আগে বিজেপি নেতা অনন্ত মহারাজের এই মন্তব্য যে কোচবিহারের বিজেপির ভোটবাক্সে বড়সড় প্রভাব ফেলতে পারে, তা নিয়ে সন্দেহ নেই।

আরও পড়ুন: তৃণমূলকে জেতাতেই ডায়মন্ড হারবার থেকে প্রার্থী হলেন না নৌশাদ?

খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এসেছিলেন মানুষের কাছে দরবার করতে, যাতে ফের বিজেপি প্রার্থী নিশীথকেই সংসদে পাঠায় কোচবিহারের মানুষ। তবে ভোটের নিয়ন্ত্রণ যে ওই এলাকার রাজবংশীদের হাতে, তা ভালোই বোঝে বিজেপি নেতৃত্ব। অনন্ত মহারাজের দাবি, পৃথক রাজ্য থেকে নারায়ণী ব্যাটেলিয়ন, কোনও দাবিই পূরণ হয়নি রাজবংশীদের। আর তা পূরণ না হওয়ার দায় বিজেপি সরকারের কাঁধেই ঠেলেছেন অনন্ত মহারাজ।

গত লোকসভা ভোটে রাজবংশী ভোটের জোরেই খালি হাতে ফিরতে হয়েছিল তৃণমূলকে উত্তরবঙ্গে। রাজবংশী ভোট টানতেই অনন্ত মহারাজকে কৌশল করে রাজ্যসভায় পাঠিয়েছিল গেরুয়া শিবির। আর সেই অনন্তই এবার বিদ্রোহ প্রকাশ করে বসলেন বিজেপির বিরুদ্ধে। গত লোকসভা পর্বে উত্তরবঙ্গের জন্য কখনও পৃথক রাজ্যের দাবি, কখনও আবার কেন্দ্রশাসিত এলাকা গড়ার ডাক দিয়েছেন অনন্ত মহারাজ। অন্ধের মতোই ভরসা করেছেন বিজেপি সরকারের উপর। কিন্তু এই লোকসভা ভোটের আগে অমিত শাহের মন্ত্রকের তরফে সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়, লোকসভা ভোটের আগে পৃথক রাজ্য বা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল, তাদের কোনও দাবিপূরণই সম্ভব নয়। আর তাতেই ক্ষোভ জমতে শুরু করেছিল রাজবংশীদের এই স্বঘোষিত 'মহারাজ'-এর বিরুদ্ধে। সেই জমা ক্ষোভই আগ্নেয়গিরির মতো ফেটে বেরিয়েছে লোকসভা ভোটের আগেই।

যে অনন্ত মহারাজের দাপটেই একদিন কোচবিহার গড়ে দাঁত ফোটাতে পারেনি তৃণমূল, এখন সেই তৃণমূলের সুরেই কথা বলতে শোনা যাচ্ছে অনন্তকে। সুযোগ পেয়ে সেই বিক্ষোভে ধুনো দিয়েছে তৃণমূল। তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী জগদীশ বসুনিয়ার দাবি, দেরিতে হলেও জুমলাটা বুঝতে পেরেছিলেন অনন্ত মহারাজ। রাজবংশী ভোট টানার জন্য যে ভাঁওতা দিয়েছিল বিজেপি, তা ক্রমে প্রকাশ্যে এসেছে। তাঁর কথায়, বিজেপির থেকে উত্তরবঙ্গ উন্নয়নের জন্য অনেক কাজ করেছেন তৃণমূল নেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁক উদ্যোগেই তৈরি হয়েছে রাজবংশী ভাষা আকাদেমি। প্রাথমিক স্তরের স্কুলগুলিতে মাতৃভাষায় পঠনপাঠনের স্বীকৃতি মিলেছে। রাজ্য পুলিসে নারায়ণী ব্যাটিলিয়নও তৈরি হয়েছে। আর তৃণমূলের অভিযোগের সুরই শোনা গিয়েছে অনন্ত মহারাজের গলায়। ক্ষোভ উগরে তিনি বলেন, ‘‘দল বারবার বলছে আমায় চুপ থাকতে। কিন্তু আমি তো মানুষের প্রতিনিধি। আমাকে নাচানো যাবে না। মানুষ চাইলে আমি সাংসদ পদ ছেড়ে দেবো।"

কোচবিহারের রাজবংশীদের চটানোর ফলাফল কি ভালো মতোই বুঝতে পারবে বিজেপি? নিশীথকে সাংসদে পাঠানোর কাজ কি আগের মতোই সহজ হবে পদ্মশিবিরের পক্ষে। উঠেছে প্রশ্ন। অন্যদিকে, পরবর্তীতে ক্ষুব্ধ অনন্ত মহারাজ কি কোনও ভাবে হাত ধরতে পারেন তৃণমূলের। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যস্তরে অনন্তদের তোলা প্রায় সমস্ত দাবিই মিটিয়েছেন। কিছুদিন আগেই কোচবিহারে সভা করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। সব কিছু মিলিয়ে অনন্তের দল পাল্টানোর সম্ভাবনা কতটা, তা নিয়েই দ্বিধাবিভক্ত ওয়াকিবহাল মহল। কার্যত নরেন্দ্র মোদির গলায় কাঁটার মতোই বিঁধে অনন্ত মহারাজ। ভোটের মুখে কোচবিহার ভোটের দিকে তাকিয়ে না তাকে উগরাতে পারছে বিজেপি, না পারছে গিলতে। তবে রাজবংশী নেতার এই ক্ষোভ যে তৃণমূলকে কোচবিহারে সামান্য হলেও অতিরিক্ত নম্বর দিতে চলেছে, তা এক রকম ভাবে স্থির বলেই মনে করছে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা

More Articles