দৃষ্টি হারিয়ে অন্তর্দৃষ্টি খুঁজে পাওয়াই সলমন রুশদির 'নাইফ'
Salman Rushdie Knife Review: প্রথম যখন এই বইটি লেখার কথা ভাবেন সলমন রুশদি, তখনই তিনি ঠিক করে নিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় চরিত্র হবে তিনজন: স্ত্রী এলিজা, তিনি স্বয়ং আর তাঁর অক্ষম ঘাতক
"... যেখানে সবসময় কেউ অপেক্ষা করে থাকে --- পলেস্তারা মুঠো করে বটচারার মতন
কেউ না কেউ, যাকে তুমি চেনো না
অপেক্ষা করে থাকে পাকার আড়ালে শক্ত কুঁড়ির মতন মাকড়সার সোনালি ফাঁস হাতে ..."
সে বড় সুখের সময় নয়, সে বড় আনন্দের সময় নয়
১৯৮৮ সালে প্রকাশিত হয় সলমন রুশদির পঞ্চম বই 'The Satanic Verses'। আরে দাঁড়ান দাঁড়ান, নাম পড়েই ভুরু কুঁচকে শিরোনামে গিয়ে মিলিয়ে নেবেন না যেন কোন বইয়ের পাঠ প্রতিক্রিয়া লিখতে বসে কোন বইয়ের কথা লিখছি। এই বই-ই আসলে তখনই তৈরি করে দিয়েছিল ২০২৪ সালে প্রকাশিত 'Knife'-এর প্রেক্ষাপট।
আজ থেকে পঁয়ত্রিশ বছর আগে, ১৯৮৯ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি, ইরানের শিয়া সম্প্রদায়ভুক্ত সর্বোচ্চ নেতা আয়াতোল্লা খোমেইনি 'The Satanic Verses' লেখার 'অপরাধে' সলমন রুশদিকে মারার ফতোয়া জারি করেন:
“We are from Allah and to Allah we shall return. I am informing all brave Muslims of the world that the author of 'The Satanic Verses', a text written, edited and published against Islam, the prophet of Islam and the Qur'an, along with all the editors and the publishers aware of its contents are condemned to death. I call on all valiant Muslims wherever they may be in the world to kill them without delay. So that no one will dare insult the sacred beliefs of Muslims henceforth. And whoever is killed in this cause will be a martyr, Allah willing. Meanwhile if someone has access to the author of the book but is incapable of carrying out the execution, he should inform the people so that Rushdie is punished for his actions. If a non Muslim becomes aware of Rushdie's whereabouts and has the ability to execute him quicker than Muslims, it is incumbent on Muslims to pay a reward or a fee in return for this action."
ইরানের কর্মকর্তারা সেইসময় রুশদিকে মারার উপহারস্বরূপ ৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্য ধার্য করেন। তারপর থেকেই রুশদির আত্মগোপন করে বাঁচার শুরু। লন্ডন শহরে স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডের নিরাপত্তায় মোড়া ব্যক্তিজীবনে হাঁপিয়ে উঠতে উঠতে ২০০০ সালে তিনি নিউ ইয়র্কে মার্কিন নাগরিক হিসেবে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। সেই তাঁর পুলিশি নিরাপত্তাবলয়ের বাইরে বেরিয়ে স্বাধীন জীবনের শুরু। মাঝে নানা সময় অবশ্য ইরানের অন্য অনেক নেতা বলেছেন, রুশদির উপর আর কোনও ফতোয়া নেই। ২০০৬ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি ইরানিয়ান স্টেট নিউজ এজেন্সি জানায়, ফতোয়া যেমন ছিল তেমনই আছে, আর লক্ষ্যভেদ না হওয়া পর্যন্ত থাকবেও।
ততদিনে রুশদি এই ফতোয়ার ভয় কাটিয়ে উঠেছেন পুরোদস্তুর। ২০০৭ সালে এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, প্রতিবছর ১৪ ফেব্রুয়ারি ইরান থেকে তাঁর কাছে ফতোয়া মনে করিয়ে একটা ইমেইল আসে, যাকে তিনি রুশদিসুলভ রসিকতায় বলেন, "a sort of Valentine's card"। প্রশ্নকর্তা এরপর জিজ্ঞাসা করেন, "আপনার ভয় করে না?" রুশদি সহাস্যে বলেছিলেন, "ধুর! ওটা এখন একটা আলংকারিক ব্যাপার মাত্র, ফাঁকা আওয়াজ, ওতে আর সত্যি সত্যি ভয় পাওয়ার মতো কিছু অবশিষ্ট নেই।"
ফতোয়া জারির পর থেকে কেটে গেছে সাড়ে তেত্রিশ বছর। যখন একা রুশদিই শুধু নন, তাঁর সমস্ত আত্মজনেরাও ফতোয়াকে ফাঁকা আওয়াজ ধরে নিয়ে নিশ্চিন্তে শান্তিতে জীবনযাপন করছেন, ঠিক তখনই নেমে এল মর্মান্তিক আঘাত।
"... কেউ কথা রাখেনি, তেত্রিশ বছর কাটলো, কেউ কথা রাখেনি....."
১০ অগাস্ট, ২০২২ (বুধবার)
একটি আলোচনাসভায় যোগ দিতে নিউ ইয়র্ক থেকে প্রথমে ফ্লাইট, তারপর গাড়িতে সলমন রুশদি এসে পৌঁছলেন Chautauqua Institution-এ। সে রাত কাটল ভারি নির্বিঘ্নে।
১১ অগাস্ট, ২০২২ (বৃহস্পতিবার)
বন্ধু এবং আলোচনাসভায় তাঁর সহ-অংশগ্রহণকারী হেনরি রিজ ও তাঁর স্ত্রী ডিয়ান স্যামুয়েলসের সঙ্গে সারাদিন চমৎকার কাটালেন রুশদি। গল্প-আড্ডা, খাওয়া দাওয়ায় ভরা চমৎকার একটা দিন। রাতে বন্ধুদের থেকে বিদায় নিয়ে নিজের কটেজে ফিরে দেখলেন, পাশেই লেক Chautauqua-র জলে পূর্ণ ভরন্ত চাঁদের প্রতিবিম্ব। নির্জনতায় মোড়া চাঁদের আলোয় তিনি জানতেও পারলেন না ঠিক কী অপেক্ষা করে আছে তাঁর জন্য। রুশদির নিজের কথাতেই, যে কোনও বইয়ের মুখ্য চরিত্র আর আমাদের জীবনের মধ্যে সবচেয়ে বড় মিল হলো, এই অজানা-অদেখা ভবিষ্যত; বই পড়তে পড়তে পার্শ্বচরিত্রদের কাণ্ডকারখানা জানতে জানতে পাঠক হয়তো মনে মনে চিৎকার করে মুখ্য চরিত্রটিকে সাবধান করতে চাইছে, কিন্তু পাঠকের মনের আওয়াজ চরিত্রের কান পর্যন্ত কিছুতেই পৌঁছয় না। ঠিক তেমনই, একা একা চাঁদের আলো উপভোগ করতে থাকা রুশদি জানতেও পারলেন না কোন মূর্তিমান কালো আঁধার ঘনিয়ে আসছে তাঁর জীবনে।
১২ অগাস্ট, ২০২২ (শুক্রবার)
দিন শুরু হয়েছিল আর পাঁচটা সাধারণ রোদ ঝলমলে দিনের মতো। Chautauqua Institution-এর অ্যাম্ফিথিয়েটারে যে আলোচনায় রুশদি প্রধান বক্তা, তার বিষয়বস্তু ছিল 'লেখকদের নিরাপত্তা'। চার হাজার মানুষ একসঙ্গে সেখানে সভায় আলোচনা শুনতে পারেন। অর্ধেকেরও বেশি ভরা অ্যাম্ফিথিয়েটারে যথাসময়ে সভা শুরু হয়। স্টেজের উপর রুশদি আর হেনরি রিজ। সঞ্চালক নাম ঘোষণার পর সলমন রুশদি চেয়ার ছেড়ে বলতে উঠলেন। স্টেজের ডানদিকে বসেছিলেন রুশদি। সেইদিক থেকেই হঠাৎ মিসাইলের মতো ছুটে আসে আপাদমস্তক কালো পোশাক পরা, কালো মুখোশে মুখ ঢাকা একটা শরীর। ক্ষিপ্রতায় উঠে পড়ে স্টেজের উপর। রুশদি একবারও তার দিক থেকে চোখ সরাননি, পালানোর চেষ্টা করেননি। তিনি মনে মনে বলেছেন, 'তবে তুমিই সেই। তাহলে এখন এতদিন পর কেন এলে!' ততক্ষণে সে এসে দাঁড়িয়েছে তাঁর মুখোমুখি। সহজাত আত্মরক্ষার প্রবৃত্তিতে তিনি মুখের সামনে তাঁর বাঁ-হাত তুলে ধরেন। প্রথম আঘাত আসে সেখানেই। তারপর উপুর্যপরি এলোমেলো আঘাত নেমে আসতে থাকে ঘাড়ে-বুকে-ডান চোখে। স্টেজের উপর পড়ে যান লেখক।
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় বেঁচে থাকলে হয়তো মেনে নিতেন, বোষ্টুমী, নাদের আলি, বরুণা কথা না রাখলেও কেউ কেউ কথা রাখে... সাড়ে তেত্রিশ বছর পরেও।
"..... "বেঁচে থাকো, যে আছো যেখানে বেঁচে থাকো।
যেমন করেই হোক,
মরতে-মরতে জোড়া পায়ে মৃত্যুর পাঁজরে লাথি মেরে
বেঁচে থাকাটাই বড়ো কথা...."
পুরো ঘটনার আকস্মিকতায় উপস্থিত সকলেই এতটাই অবাক হয়ে যান যে, প্রথমে যা ঘটছে সেটা সত্যি নাকি কোনও রূপক সেটাই ঠাহর করতে পারেননি। তারপর রক্তাক্ত রুশদিকে পড়ে যেতে দেখে প্রথম ছুটে আসেন হেনরি রিজ, তিয়াত্তর বছরের সর্বশক্তি দিয়ে আটকানোর চেষ্টা করেন চব্বিশের ঘাতককে। তাঁর শরীরেও আঘাত এসে পড়ে। সেইসময় বাকিরা দর্শকাসন থেকে ছুটে আসতে থাকেন স্টেজের দিকে। সম্মিলিত চেষ্টায় আটকানো যায় ঘাতককে।
পনেরোবার ছুরির গভীর আঘাতে রক্তে মাখামাখি রুশদি তখনও চেতন-অবচেতনের মাঝামাঝি, চেতনার দিকেই পাল্লা ভারী। তখনও তাঁর মৃত্যু আসন্ন বলে দুঃখবোধ হয় না, বরং দুঃখ হয় তাঁর এই আসন্ন মৃত্যুর সময় পাশে কোনও ভালোবাসার, কাছের মানুষ নেই বলে। এই একাকীত্ব তাঁর কাছে মৃত্যুর থেকেও অনেক বেশি মর্মান্তিক।
তাঁর আজন্মলালিত নাস্তিকতা দিয়ে তিনি অনুভব করেন
"...There was nothing supernatural about it. No tunnel of lights. No feeling of rising out of my body. I have rarely felt so strongly connected to my body."
অথচ ততক্ষণে তিনি তাঁর নিজের শরীরের ওপর অধিকার হারিয়েছেন। উপস্থিত শুভাকাঙ্খীদের মধ্যে একজন চিকিৎসক ছিলেন। তিনি ক্ষত পরীক্ষা করবেন বলে বলেছেন, 'স্যুটটা কেটে ফেলতে হবে'। রুশদি তখন মনে মনে ভাবছেন, 'হায় রে, আমার রালফ লরেন স্যুটের এই হাল হতে চলেছে!' আবার কখনও অস্ফুটে বলেছেন, কোন পকেটে বাড়ির চাবি আর কোন পকেটে ক্রেডিট কার্ডগুলো আছে। কেউ হয়তো মন্তব্য করেছেন, 'তাতে কীই বা যায় আসে! ওগুলো তো কাজে লাগবে না আর।' অদ্ভুতভাবে সেইসময় তাঁর মনে এসেছে 'The Satanic Verses'-এর প্রথম লাইন যেখানে জিব্রাইল ফরিস্তা বলছেন, "To be born again first you have to die."
ভিড়ের মধ্যে ওই কাটা পোশাকে শুয়ে থাকতে থাকতে তাঁর লজ্জাবোধ হয়েছে। সেই সময় তাঁর মাথার মধ্যে ক্রমাগত কেউ বলে গেছে, 'বাঁচো, বাঁচো, তোমায় বাঁচতে হবে।'
"... Some battling part deep within simply had no plan to die, and fully intended to use those cards and keys again.."
এরপর স্ট্রেচারে শুইয়ে তাঁকে যখন হেলিকপ্টারে তোলা হচ্ছে, কেউ জিজ্ঞেস করেছেন তাঁর ওজন কত। তিনি কাটা কাটা উচ্চারণে অস্ফুটে জানিয়েছেন সঠিক পরিমাপ। হাসপাতাল পৌঁছনোর পর আস্তে আস্তে চেতনা হারিয়েছেন তিনি। সেই থেকে প্রায় দু'মাস একটানা তাঁকে হাসপাতালেই থাকতে হয়েছে, যেতে হয়েছে নানারকম সার্জারি আর থেরাপির মধ্যে দিয়ে। এইসময় তাঁকে সাহস জুগিয়ে গেছেন তাঁর স্ত্রী র্যাচেল এলিজা গ্রিফিথ, আর তাঁদের পুরো পরিবার। হাসপাতালে থাকতে থাকতেই তাঁর নতুন নতুন উপলব্ধি হয়েছে; রসিকতার ছলে নিজেকে কখনও তুলনা করেছেন উলভারিনের সঙ্গে আবার কখনও দুর্ঘটনার কয়েক সপ্তাহ পর ওয়াশরুমের আয়নায় আবিষ্কার করেছেন অচেনা এক প্রতিবিম্বকে, যাঁকে দেখে তাঁর মনে হয়নি এটা আসলে তিনিই। পরক্ষণেই হয়তো আবার তিনি নিজেই বুঝেছেন ছুরির আঘাত তাঁর প্রজ্ঞা, মেধা, স্মৃতি, ক্ষুরধার তীক্ষ্ণ শাণিত বুদ্ধি, অদম্য প্রাণশক্তি, রসবোধ কোনওটাকেই নষ্ট করতে পারেনি, বদলে ফেলতে পারেনি। তাই তিনি বাড়ি ফিরতে পেরেছেন। অকেজো ডানচোখ আর আংশিক কর্মক্ষম বাঁহাত তাঁকে ব্যথিত করেছে। তবু তিনি প্রতিনিয়ত নিজেই নিজেকে ভরসা দিয়েছেন।
So it's you. Here you are
প্রথম যখন এই বইটি লেখার কথা ভাবেন সলমন রুশদি, তখনই তিনি ঠিক করে নিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় চরিত্র হবে তিনজন: স্ত্রী এলিজা, তিনি স্বয়ং আর তাঁর অক্ষম ঘাতক, যাকে তিনি A বলে সম্বোধন করেছেন পুরো বইতে। নাম না থাকলে কখনও ইতিহাসের শরিক হওয়া যায় না। তাই হয়তো তিনি A-কে কোনও কাল্পনিক নাম দিয়েও সেই চরিত্রকে অমরত্ব দিতে চাননি।
কিন্তু A-এর প্রতি এক অদ্ভুত কৌতূহল কাজ করেছে সবসময়। তাঁর মনে প্রশ্ন জেগেছে, কাউকে মারা তো বন্দুক দিয়েও যায়, বরং অনেক বেশি দূর থেকে যায়। তাহলে ছুরিই কেন! ছুরির ঠান্ডা, ধারালো, ধাতব স্পর্শ যখন শিকারের গরম রক্ত-মাংস ছিঁড়ে ছুঁয়ে বেরিয়ে আসে, ভিজিয়ে দেয় আততায়ীর হাত, শিকার আর আততায়ীর মধ্যে তখনই তৈরি হয় এক নিবিড় সংযোগ, ঘৃণার বন্ধন। আততায়ীর সুযোগ হয় আক্রান্ত মানুষটিকে শরীরের গভীরে গিয়ে জানবার, এক অন্যরকম স্পর্শসুখ বুঝি বা। রুশদি হিসেব করে দেখেন, তাঁর সঙ্গে A-এর এই নিবিড় সংযোগ ছিল মাত্র সাতাশ সেকেন্ডের। তাই A-কে কোনও নামে না ডেকে তিনি অবলীলায় বলতে পারেন, "ওকে আমার বাড়ির মধ্যে কী নামে ডাকি সেটা তো ব্যক্তিগত বিষয়। লেখায় ওর নাম শুধুই A।" অনায়াস নির্লিপ্তি নিয়ে বলতে পারেন, "..His 27 seconds of fame is over. He was nobody again.”
সুস্থ হওয়ার পর প্রথমে তাঁর বারবার মনে হয়েছিল, একবার A-এর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে ওকে কিছু প্রশ্ন করার, কেন এখনই কেন, কী কারণ! পরে সংবাদপত্রকে দেওয়া A-এর এক সাক্ষাৎকার পড়ে তাঁর মনে হয়, সেই তো এক বাঁধা গতের ধর্ম অবমাননার অভিযোগ আনবে তাঁর উপর, A-এর বিচার-বুদ্ধি-বিবেচনার উপর তাঁর ভরসা থাকে না। বরং তাঁর মনে হতে থাকে, সামনে কথা বলে কোনও লাভ নেই, সেই একই চর্বিতচর্বণ। তার চেয়ে তিনি নিজের মনের মধ্যেই A-এর সঙ্গে তৈরি করবেন এক কল্পিত কথোপকথন। তিনি নিরুত্তাপভাবে A-এর টিভি সাক্ষাৎকার শুনে বলেন, "You'll have to come up with a better reason than that".
যখন জানতে পারেন A জীবনে তাঁর কোনও বই এক দু' পাতার বেশি পড়েনি, শুধু ইউটিউবে তাঁর কয়েকটা ভিডিওর উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বিচ্ছিন্ন করা টুকরো অংশ শুনেছে মাত্র, তখন তাঁর মনে হয় এই খুনের অপচেষ্টার পেছনে 'The Satanic Verses' হয়তো সত্যি দায়ী নয়। কারণ A নিজে তো সেটা পড়েনি। সে শুধু অন্যের বুদ্ধিতে চালিত হয়েছে, প্ররোচিত হয়েছে। তাঁর মাথার মধ্যে কল্পিত কথোপকথনের মাঝে উত্তেজিত A বলে, "আর কথা বলব না। তোমার কোনও প্রশ্নের উত্তর দেব না আমি।"
পনেরোবার ছুরির আঘাতে ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন হওয়া রুশদি এখনও আছেন রুশদিতেই। তাই তো তিনি নির্দ্বিধায় এর উত্তরে লিখতে পারেন,
"... No, no. The point about this is, it's happening in my head, so it's not over until my head says it is. You don't even have to think of things to say. I'll put the words into your mouth."
রুশদি বারবার আগে বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে বলেছেন, তিনি ভালোবাসা আর ঘৃণা নিয়ে একটা বই লিখতে চান যেখানে ভালোবাসার শক্তি ঘৃণাকে হারিয়ে দেবে। এই বই হলো সেই বই, যেখানে ভালোবাসা আর ঘৃণা দুই-ই আলোচ্য এবং শেষ পর্যন্ত ভালোবাসা জয়ী হয়। নির্দ্বিধায় লেখক বলেন, "I would answer violence with art"। এই বই এক আশ্চর্য সমাপতনের গল্প বলে, অসম্ভবকে সম্ভব করার কথা বলে, বাস্তব দুনিয়ায় ভালোবাসার জাদুশক্তির যে অস্তিত্ব আছে তার কথা বলে।
ছুরির আঘাতে ডান চোখের দৃষ্টিশক্তি আর বাঁহাতের আশি শতাংশ কর্মক্ষমতা হারিয়ে সলমন রুশদি পেলেন এক অনন্যসাধারণ অন্তর্দৃষ্টি। তাঁর নিজের কথাতেই,
"... During those empty sleepless nights, I thought a lot about the knife as an idea. A knife was a tool, and acquired meaning from the use we made of it. Language too was a knife. It could cut open the world and reveal it's meaning, it's inner workings, it's secrets, it's truths. It could cut through from one reality to another. It could call bullshit, open people's eyes, create beauty. Language was my knife. If I had unexpectedly been caught in an unwanted knife fight, may be this was the knife I could use to fight back."