তামা দিয়ে তৈরি ধারালো দাঁত! জানেন, রক্তকৃমির এক কামড়েই কী হতে পারে আপনার?
Bloodworm Metal Teeth: এদের এই ধাতব চোয়াল এতটাই শক্ত যে রক্তকৃমির জীবদ্দশায়, মানে পাঁচ বছর পর্যন্ত এর কোনও ক্ষয় হয় না!
পৃথিবীর নিরীহতম প্রাণীটিও যদি দাঁত নখ বের করে ধেয়ে আসে, অভিজ্ঞতা মোটেও সুখকর হবে না। সে যত ক্ষুদ্রই হোক না কেন, দাঁত চিরকালই ভয়ের। আর সামান্য সেই প্রাণীর দাঁত যদি হয় ধাতব! সম্ভব নাকি! রক্তকৃমির পাল্লায় পড়লে সম্ভব অসম্ভবের দ্বিধা ঘুচে যাবে। দৈর্ঘ্যে প্রায় ৩৫ সেন্টিমিটার (১৪ ইঞ্চি) পর্যন্ত প্রসারিত। দেহ প্রকাণ্ড নয়, মাংসল-গোলাপী রঙ দেখে তাদের এতটা ভয়ঙ্কর মনে হবেই না। স্রেফ ধাতব দাঁত দেখলে রোম খাড়া হয়ে যেতে পারে।
সাধারণত যারা নানা অণুজীব চাষের জন্য খনন করেন বা যারা জেলে, তাদের রক্তকৃমির কামড়ের শিকার হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। যারা জীবনে একবার না একবার রক্তকৃমির কামড় খেয়েছেন তাদের সেই অভিজ্ঞতা মর্মান্তিক। জানলে আশ্চর্য হতে হয় যে, রক্তকৃমি তাদের শিকারের কঙ্কালের বহির্ভাগে অবধি কামড়ে দিতে পারে। কামড়ে ধরে থেকে রক্তকৃমি নিজেদের বিষ ঢুকিয়ে দেয় যার ফলে আক্রান্ত মানুষটি পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে পড়তে পারেন। মনে করা হয় যে, রক্তকৃমির তামার দাঁতগুলি রাসায়নিক বিক্রিয়ার জন্য এক অনুঘটক হিসাবে কাজ করে। যার ফলে সাধারণত দেহে বিষ প্রবেশ করতে যে সময় লাগে তা অনেকটা দ্রুত হয়ে যায় এই দাঁতের কারণে।
মানুষের কামড় খাওয়ার ঘটনা তুলনামূলকভাবে বিরল হলেও ২০২২ সালের একটি ঘটনা বলছে এক সামুদ্রিক বাস্তুবিজ্ঞানী যে কামড় খেয়েছিলেন সেই বিষাক্ত অভিজ্ঞতা শুনলে রক্তকৃমিদের নিয়ে নতুন করে ভাবতেই হবে। ওই বিজ্ঞানী একটি গবেষণার কাজ করার সময়ই রক্তকৃমির কামড় খেয়েছিলেন। কামড় খাওয়া জায়গাটিতে প্রায় সারাটা দিন ব্যথা, চুলকানি এবং অসাড়তা অনুভব করেন। মৌমাছি হুল ফোটালে যেমন তীব্র জ্বলে, জায়গাটি অবশ হয়ে পড়ে খানিক তেমনই। তারপর ক্ষতের জায়গাটি ফুলে অদ্ভুত ঘা হয়ে যায়।
কামড়ানোর আট দিন পরে অবস্থার কোনও হেরফের না দেখে আক্রান্ত বিজ্ঞানী চিকিত্সকের কাছে যান। কামড়ের ফলে বিষয় ভিতরে ঢুকেছে কিনা, এটি ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ কিনা, বা বিষ আর ব্যাকটেরিয়া দু'টির সংমিশ্রণ কিনা ঠিক পরিষ্কার ছিল না। তার অন্যতম কারণ এই জাতীয় কামড়ের ঘটনা বিরল। আরও বেশ কিছু কামড়ের ঘটনা পেলে ভালোভাবে বোঝা যেত রক্তকৃমির কামড় আসলে মানুষের দেহে কী কী প্রভাব ফেলে।
ব্লাডওয়ার্ম বা রক্তকৃমি হলো গ্লাইসেরা গোত্রের কৃমির একটি রূপ এবং অগভীর সামুদ্রিক পরিবেশেই এদের দেখা পাওয়া যায়। আদতে কৃমি হলেও এদের দৈহিক গঠন কিন্তু সাংঘাতিক! রক্তকৃমির চোয়াল ১০ শতাংশ তামার স্ফটিক দ্বারা গঠিত। এদের এই ধাতব চোয়াল এতটাই শক্ত যে রক্তকৃমির জীবদ্দশায়, মানে পাঁচ বছর পর্যন্ত এর কোনও ক্ষয় হয় না! থ্রিলার সিনেমায় বা কল্পবিজ্ঞানের কাহিনিতে যে ধাতব দাঁতের কথা আমরা হামেশাই দেখতে পাই, বুঝতে অসুবিধা হয় না তার নেপথ্যে রয়েছে ঠিক কোন প্রাণীরা।
প্রাণীজগতে কিন্তু ধাতু বিরল। মূলত এর কারণ হচ্ছে অনেকটা পরিমাণে ধাতু পাওয়া প্রাণীদের ক্ষেত্রে সহজ নয়। ব্লাডওয়ার্ম বা রক্তকৃমির ক্ষেত্রে কিন্তু বিষয়টা আলাদা! সমুদ্রের পলির মধ্যে এরা লুকিয়ে থাকে আর চারপাশের পরিবেশ থেকে প্রচুর পরিমাণে তামা শোষণ করতে পারে। কিন্তু সেই তামা দিয়ে কীভাবে দাঁত বা চোয়াল তৈরি হয় এই নিয়ে প্রশ্ন রয়েই গেছে। তবে ২০২২ সালের একটি গবেষণায় এর একটি দিশা মিলেছে। ওই গবেষণা বলছে, একটি মাল্টি-টাস্কিং প্রোটিন রয়েছে যা রক্তকৃমির ধাতব দাঁত তৈরির নেপথ্যে কাজ করে। এই প্রোটিনের বেশিরভাগটাই গ্লাইসিন এবং কিছুটা হিস্টিডিন দিয়ে তৈরি। তামা থেকে তৈরি দাঁতগুলি মূলত শিকারকে কামড়ানো এবং অন্য প্রাণীদের সঙ্গে লড়াই করার জন্যই ব্যবহৃত হয়। হ্যাঁ, মাঝেমাঝে মানুষকেও পঙ্গু করে ফেলে।