ব্রাজিলের মডেলের ছবি হরিয়ানার ২২টি ভোটার কার্ডে! যেভাবে ‘এইচ-বোমা’ ফাটালেন রাহুল
Rahul Gandhi’s ‘H-Files’: এই অভিযোগের প্রমাণ হিসেবে তিনি প্রকাশ করেছেন একটি নথি, নাম দিয়েছেন ‘এইচ-বোমা’('H-Files'অর্থাৎ Haryana Files)। রাহুল গান্ধী দাবি করেছেন, হরিয়ানায় অন্তত ২৫ লক্ষ নকল ভোটার ভোট দিয়েছেন।
হরিয়ানা বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে ফের বিতর্কের ঝড় তুললেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। ২০২৪ সালে হরিয়ানায় বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেসকে হারিয়ে ক্ষমতায় আসে বিজেপি। তবে রাহুলের অভিযোগ, ভোটচুরি করে সেই নির্বাচন জিতেছে পদ্মশিবির। শুধু অভিযোগ তোলেননি, সঙ্গে উদাহরণও দিয়েছেন তিনি। বুধবার তিনি সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেন, “হরিয়ানার আসল ফলাফল বদলে দেওয়া হয়েছে। কংগ্রেসই জয়ী হয়েছিল।”
কখনও সীমা, কখনও সুইটি, কখনও আবার সরস্বতী! ভোটার তালিকায় ভিন্ন ভিন্ন নাম। তবে সব নামের পাশে এক জনেরই ছবি। কে সেই রহস্যময়ী নারী? কংগ্রেস নেতা তথা লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুলের দাবি, ওই ছবি ব্রাজিলের এক মডেলের! দিল্লিতে সাংবাদিক সম্মেলনে হরিয়ানা বিধানসভা নির্বাচনে ভোটচুরির অভিযোগ তুলে রাহুল বলেন, অন্তত ২২টি ‘ভুয়ো’ ভোটার কার্ডে ওই মডেলের ছবি ব্যবহার করে ‘জালিয়াতি’ করেছে বিজেপি।
এই অভিযোগের প্রমাণ হিসেবে তিনি প্রকাশ করেছেন একটি নথি, নাম দিয়েছেন ‘এইচ-বোমা’('H-Files'অর্থাৎ Haryana Files)। রাহুল গান্ধী দাবি করেছেন, হরিয়ানায় অন্তত ২৫ লক্ষ নকল ভোটার ভোট দিয়েছেন। হরিয়ানার মোট ভোটার প্রায় দু’কোটি অর্থাৎ, রাজ্যের মোট ভোটারের প্রায় ১২.৫ শতাংশই অস্তিত্বহীন বা নকল।
আরও পড়ুন
রাহুলের অভিযোগে কমিশনের অস্বীকার! জনগণ কাকে বিশ্বাস করবে?
রাহুলের প্রকাশ করা তথ্যানুযায়ী, হরিয়ানায় অনেক জায়গায় একই ব্যক্তির নাম, ছবি ও ঠিকানা বারবার ব্যবহার করে ভোট দেওয়া হয়েছে। কিছু ভোটার একাধিক কেন্দ্রে ভোট দিয়েছেন। কিছু আসনে পোস্টাল ভোট ও সাধারণ ভোটের ফলাফলে অস্বাভাবিক পার্থক্য দেখা গিয়েছে। রাহুল গান্ধীর বক্তব্য, “হরিয়ানায় গণতন্ত্রকে হত্যা করা হয়েছে। ভোটার তালিকা থেকে শুরু করে ফলাফল ঘোষণা— সব জায়গায় কারচুপি হয়েছে। এটা শুধু একটি রাজ্যের ব্যাপার নয়, পুরো দেশের গণতন্ত্রের প্রশ্ন।”
রাহুল গান্ধী বলেন, “হরিয়ানার প্রতিটি জেলার তথ্য আমরা বিশ্লেষণ করে দেখেছি। আমাদের হাতে স্পষ্ট প্রমাণ আছে, কংগ্রেসই প্রকৃত বিজয়ী ছিল। কিন্তু ইভিএম ও ভোট গণনার কারচুপির মাধ্যমে ফলাফল বদলে দেওয়া হয়েছে।” তিনি দাবি করেছেন, কিছু নির্বাচনী কেন্দ্রে কংগ্রেস প্রার্থী গণনা শেষ হওয়ার আগে পর্যন্ত এগিয়ে ছিলেন, কিন্তু শেষ মুহূর্তে হঠাৎ ফল উল্টে যায়।
রাহুল গান্ধীর ফের অভিযোগ তুলেছেন ইলেকশন কমিশনের (ECI) বিরুদ্ধেই। তাঁর কথায়, “কমিশন জানত কী হচ্ছে। বিজেপি এবং কমিশনের মধ্যে বোঝাপড়া ছিল। গণতন্ত্রকে কলুষিত করার জন্য হরিয়ানায় এক সুপরিকল্পিত খেলা হয়েছে।” তিনি আরও বললেন, “ইলেকশন কমিশন জনগণের কাছে দায়বদ্ধ। আমরা চাই, কমিশন হরিয়ানার ভোটার তালিকা ও ইভিএম গণনা প্রকাশ্যে আনুক। যদি ওরা সৎ হয়, তাহলে লুকোচুরি কেন?” রাহুলের দাবি, “দেশের মানুষকে জানাতে হবে, কীভাবে ভোট চুরি হয়, কারা করে, আর কারা সেটাকে ঢেকে রাখে।”
আরও পড়ুন
রাহুলের তীর জ্ঞানেশের দিকে, কেন বিদ্ধ হলেন অনুরাগ ঠাকুর?
রাহুলের এই বক্তব্যের পরেই বির্তক আরও বেড়েছে। কংগ্রেস নেতারা একে 'ভারতের নির্বাচনী ব্যবস্থার কালো অধ্যায়' বলছেন। বিজেপি মুখপাত্র বলেন, “রাহুল গান্ধী প্রতিবার হারের পর নতুন গল্প বানান। এবারও ব্যতিক্রম নয়।” ইলেকশন কমিশন এখনও পর্যন্ত এই বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া দেয়নি।
২০২৪ সালের হরিয়ানা ভোটে বিজেপি দ্বিতীয়বারের জন্য সরকার গঠন করে। কিন্তু ফল ঘোষণার দিন থেকেই সন্দেহ প্রকাশ করেছিল কংগ্রেস। রাহুলের বক্তব্য, “হরিয়ানার ইতিহাসে এমন ঘটনা প্রথমবার। পোস্টাল ব্যালটের ফল এবং ভোটবাক্সের ফল একে অপরের সঙ্গে মেলেনি। এটা যদি তদন্তে প্রমাণিত হয়, তাহলে সেটি দেশের গণতন্ত্রের জন্য ভয়াবহ সংকেত।”
বেশিরভাগ বুথফেরত সমীক্ষা প্রথমদিকে কংগ্রেসের পক্ষে গেলেও, চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণার পর দেখা যায় বিজেপি সরকার গঠন করছে। রাহুল গান্ধীর বক্তব্য, “আমরা ভোটে জিতেছিলাম। কিন্তু ভোটের হিসাব বদলে দেওয়া হয়েছে। এই নির্বাচন গণতন্ত্রের উপর আঘাত।”
রাজনৈতিক মহল মনে করছে, রাহুল গান্ধীর এই ‘এইচ-বোমা’ এখন কেন্দ্রীয় রাজনীতিতেও বড় ইস্যু হয়ে উঠতে পারে। কংগ্রেস ইতোমধ্যেই দাবি করেছে— তারা শীঘ্রই নির্বাচন কমিশনের কাছে আনুষ্ঠানিক অভিযোগপত্র দেবে এবং হাই কোর্টে যাচাইয়ের আবেদন করবে।

Whatsapp
