আপনি কি জলের তলায় কাঁদতে পারেন?

Crying Underwater : শুনতে অবাক লাগলেও, কিছু অশ্রু বাষ্পীভূত হয়ে যায়।

লুকিয়ে কাঁদার কিছু সুবিধা আছে তা অনস্বীকার্য। প্রবল কষ্ট বা দীর্ঘকালের যন্ত্রণা যখন সবটুকুকে ছেয়ে ফেলে, কোনও না কোনও ভাবে সেই কষ্টকে তরল করে দেয় মস্তিষ্ক। তরল দুঃখেরা কোথায় যায়? দু'চোখ বেয়ে নামে, কষ্ট কোথাও যায় না, সামান্য লাঘব হয় মাত্র। এই কষ্ট লাঘবের বিষয়টি প্রকাশ্যে এলে অনেকেই দুর্বল হয়ে পড়েন বলে লুকোতে চান। নিভৃতি খোঁজেন। সিঁড়িঘরে লুকিয়ে কাঁদেন, গোপন চিলেকোঠায় সেঁধিয়ে কাঁদেন, একলা ঘরে বন্দি হয়ে কাঁদেন, যাতে সেই নিজস্ব চোখের জল কেউ দেখতে না পান। জল ঢাকতে যদি জলের আশ্রয় নেন, তাহলে কেমন হবে? ধরুন সাঁতার কাটতে কাটতে প্রবল কান্না পেল, জলের মধ্যে নিজেকে লুকিয়ে কি কাঁদতে পারবেন আপনি?

আমাদের চোখ সবসময়ই অশ্রু আবৃত। এই অশ্রু তেল, জল এবং শ্লেষ্মা দিয়ে তৈরি। কেউ আবেগপ্রবণ হলে তখন তাদের চোখ অতিরিক্ত অশ্রু বের করে ফেলে অন্যদের জানাতে চায় যে তারা কষ্টে আছেন, যন্ত্রণায় আছেন বা প্রচণ্ড আনন্দ পেয়েছেন। এন্ডোরফিন হরমোন যেমন শরীরে সুখের অনুভূতি তৈরি করে এবং ব্যথা কমায়, অক্সিটোসিন হরমোন তেমন মানুষকে অন্যের সঙ্গে সংযুক্ত করে, সম্পর্কের বন্ধন অনুভব করায়, বিশ্বাস ও ভালোবাসা তৈরি করে। আমাদের কান্না শরীরের মধ্যে এই রাসায়নিকগুলিকে মুক্ত করে। তাই কাঁদলে একটু ভালো বোধ হয়। সুতরাং কান্না নানাবিধ উপায়েই ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। চোখ সুস্থ রাখার জন্য চোখের জল অত্যাবশ্যক, এমনকী আপনি যখন রাতে ঘুমোন বা সাঁতার কাটেন, তখনও।

আরও পড়ুন- চোখের পাতায় এই ছোট্ট গর্ত আছে আপনারও? কী কাজ এই ছিদ্রের জানেন?

কান্না চোখকে আর্দ্র ও সুস্থ রাখে

চোখের উপরের পাতায় এবং ভ্রুর নিচে থাকা অশ্রু গ্রন্থি বা বা ল্যাক্রিমাল গ্ল্যান্ড থেকে অশ্রু উৎপন্ন হয়। অশ্রুর প্রধান কাজই হলো চোখকে লুব্রিকেটেড এবং সুরক্ষিত রাখা। অশ্রু চোখকে শুষ্ক হতে দেয় না, সারাক্ষণই আমাদের চোখ জুড়ে আলতো করে কান্নার স্তর থাকে। যখনই আমরা চোখের পাতা বন্ধ করি, চোখের এই তরল সামান্য সামান্য পরিমাণে বেরিয়ে চোখ আর্দ্র রাখতে সাহায্য করে। যদি কেউ আরামদায়ক কন্ট্যাক্ট লেন্স পরেন, সেক্ষেত্রে এই লেন্সগুলি আসলে চোখের জলের এই স্তরেই ভাসতে থাকে। যদি চোখে খুব কম অশ্রু থাকে তাহলে কনট্যাক্ট লেন্সগুলি চোখে সেঁটে থাকতে পারে। সেক্ষেত্রে বিষয়টা বেশ অস্বস্তিকর।

আমরা যখন ঘুমিয়ে থাকি, আমরা কম কাঁদি। কিন্তু অশ্রুগ্রন্থিরা তখনও চোখকে আর্দ্র রাখার কাজ করে যায় যাতে যখন ঘুম থেকে আমরা উঠব তখনও যেন চোখের ফোকাস ক্ষমতা ঠিকঠাক কাজ করে এবং আমরা পরিষ্কার দেখতে পাই। যাদের চশমা প্রয়োজন সেটি একেবারেই পৃথক বিষয়। চোখের পাতা যাতে সহজেই খোলা বন্ধ করা যায়, চোখ যাতে না চুলকায় তার নেপথ্যেও চোখের জলের ভূমিকা আছে। চোখের মধ্যে পড়া ধুলো, বালি, ধোঁয়া, খুব ক্ষুদ্র পোকা সবকিছু ধুয়ে বের করে দেয় অশ্রু। কারও যদি গাছপালা বা পোষা প্রাণীর প্রতি অ্যালার্জি থাকে, তখন অশ্রুই এই বিরক্তি দূর করতে সাহায্য করে। এমনকী কনজাংটিভাইটিস হলে চোখের জলই জীবাণুগুলিকে মেরে ফেলতে সাহায্য করে। রক্ত ​​প্রবাহ থেকে প্রয়োজনীয় পুষ্টি চোখে বয়ে নিয়ে যায় এই অশ্রুই। এ তো গেল অশ্রুর গুণ ব্যাখ্যা। গোড়ার প্রশ্নটি তো ছিল, জলের নিচে কাঁদতে পারবেন কি?

আসলে আপনি যখন জলের নিচে সাঁতার কাটছেন, তখনও আপনার চোখে জল রয়েছে। আপনি জলের নীচে কাঁদতেই পারবেন কিন্তু বাইরের প্রবল জল দ্রুত সেই অশ্রু ধুয়ে ফেলবে। বেশিরভাগ জল, যেখানে মানুষ ডুব দেয় তাতে সাধারণত ক্লোরিন, ব্যাকটেরিয়া বা বালির মতো জিনিস থাকে যা চোখের অস্বস্তি বাড়ায়। তাই চোখ খোলা রেখে সাঁতার কাটলে আমাদের অশ্রু গ্রন্থিগুলি এই সব বালি, ক্লোরিন ধুয়ে ফেলতে অশ্রু তৈরি করে। সাঁতারের গগলস পরলে বা জলের নিচে চোখ বন্ধ করে রাখলে তাই চোখ রক্ষা পায় বেশি, আরামও পায় ঢের।

আরও পড়ুন- ঘুম ভেঙেই চোখ লাল! কনজাংটিভাইটিস কি সত্যিই ছোঁয়াচে?

এই কান্না যায় কোথায়?

শুনতে অবাক লাগলেও, কিছু অশ্রু বাষ্পীভূত হয়ে যায়। আমাদের চোখের কোণে অশ্রু নালী রয়েছে যা অশ্রু প্রবাহের জন্য খানিক নালার মতো কাজ করে। এই নানা অশ্রুদের আমাদের নাকে এবং তারপরে গলায় নিয়ে যায়, সেখানে আমরা কান্না গিলে ফেলি। খুব কান্নাকাটি করলে তাই নাক দিয়েও জল গড়ায়। এই নালির কারণেই মাঝে মাঝে যখন চোখের ড্রপ নিই আমরা জিভে সেই ড্রপের স্বাদ মেলে।

কোনও কোনও শিশুর জন্মের সময় অশ্রু নালী বন্ধ হয়ে যায়। পরিবর্তে তাদের সমস্ত কান্না গাল বেয়ে প্রবাহিত হয়। সবসময়ই তাদের চোখ জল থইথই, দেখে মনে হয় যেন কাঁদছে। অথচ কোনও মন খারাপ নেই। চিকিত্সকরা এই শিশুদের অশ্রুনালী খুলতে সাহায্য করেন। আবার কখনও কখনও অশ্রু গ্রন্থি কম অশ্রু উৎপন্ন করে। সাধারণত বয়স হলে এমনটা হয়। কম কান্না মানেই চোখ জ্বলা, চুলকানি ভাব। এই কারণেই কেউ কেউ কৃত্রিম অশ্রুর ড্রপ ব্যবহার করে চোখকে আর্দ্র রাখেন।

More Articles