ফের লকডাউনের আতঙ্ক! রাহুলের ভারত জোড়ো যাত্রা বন্ধ করতেই কোভিড ত্রাস সৃষ্টি?
Rahul Gandhi Bharat Jodo Yatra: কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী মনসুখ মাণ্ডব্য রাহুল গান্ধীকে চিঠি লিখেছেন, যদি ভারত জোড়ো যাত্রা চালিয়ে যেতে হয়, তাহলে কোভিড বিধিনিষেধ মেনে চলতে হবে।
বিশ্বকাপ শেষ হয়েছে, আর্জেন্টিনা কাপ জিতেছে। বাংলাদেশ থেকে শুরু করে ভারত এবং অবশ্যই আর্জেন্টিনার রাজধানী বুয়েন্স আয়ারসে দলে দলে মানুষ রাস্তায় নেমে এই খেলা উপভোগ করেছেন এবং আর্জেন্টিনার জয় উদযাপন করেছেন। যেই সময়ে কাতারে দলে দলে মানুষ বিশ্বকাপ দেখতে গেছেন এবং ফিরে আসছেন, তখনই আবার আতঙ্কের খবর আসতে শুরু করেছে চিন থেকে। চিনের ‘শূন্য কোভিড’ নীতির কারণে সেখানে দীর্ঘদিন লকডাউন করে রাখা হয়েছিল। যদিও চিনে আসলে কতজন মানুষ আক্রান্ত এবং কত মানুষ মারা যাচ্ছেন, এই তথ্য কতটা সঠিক এবং কতটা ভুল তা নিয়ে বিতর্ক আছে, তবু যেভাবে নানান মহল থেকে খবর আসছে, তা দেখে মনে হচ্ছে চিনে বহু মানুষ এই মুহূর্তে কোভিডে আক্রান্ত হচ্ছেন এবং তার মধ্যে অনেকে মারাও যাচ্ছেন। যদিও মৃতের শতাংশ কত তার পরিসংখ্যান এখনও পাওয়া যায়নি কিন্তু আমাদের দেশে যে আবার কোভিডাতঙ্ক শুরু হয়েছে, তা রাস্তাঘাটের আলোচনা এবং দৈনিক সংবাদপত্রগুলোর প্রথম পাতায় ‘কোভিড মিটার’ ফিরে আসার মধ্যে দিয়ে বেশ বোঝা যাচ্ছে।
অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন, চিনে কঠোর লকডাউন করে ‘শূন্য কোভিড নীতি’ কি আদপেই কার্যকরী কোনও পদক্ষেপ? অনেকে বলছেন, এই পদ্ধতির মধ্যে দিয়ে চিনের নাগরিকদের তো কোনও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়নি, উল্টে কমেছে। অনেকে আবার ছাত্র-যুবদের আন্দোলনের ফলে চিনের শি জিনপিং সরকারের লকডাউন নীতি শিথিল করারও সমালোচনা করছেন, কিন্তু ইতিমধ্যেই আরও বেশ কিছু প্রশ্ন উঠে গেছে। চিনের এই পরিস্থিতিতে ভারত সরকারও নড়েচড়ে বসেছে। আবার নতুন করে প্রতিষেধক নিয়ে বিতর্ক সামনে আসছে। অনেকে বলা শুরু করেছেন, প্রতি বছর যদি কোনও না কোনও দেশে এই রকম হারে কোভিড সংক্রমণ বাড়তে থাকে, তাহলে কি তার প্রভাবে বিশ্বের সব দেশে সমস্ত মানুষকে আবারও বুস্টার নিতে হবে? তাহলে কি আবারও লকডাউন করবে বিভিন্ন দেশের সরকার?
আরও পড়ুন- নাকে কয়েক ফোঁটা নিলেই করোনা গায়েব! বিশেষ এই ন্যাজাল ভ্যাকসিন কবে মিলবে , জানুন
এরই মাঝে আরও একটি ঘটনা ঘটেছে যা হয়তো সেই অর্থে কোভিডের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত নয় কিন্তু দেশের প্রেক্ষিতে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। রাহুল গান্ধীর ভারত জোড়ো যাত্রা একশো দিন অতিক্রম করেছে। প্রথমদিকে অতটা গুরুত্ব না দিলেও যত দিন যাচ্ছে দেখা যাচ্ছে, সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা এই ভারত জোড়ো যাত্রায় পা মেলাচ্ছেন। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের প্রাক্তন গর্ভনর রঘুরাম রাজন, মহাত্মা গান্ধীর প্রপৌত্র তুষার গান্ধী সহ বহু মানুষ মনে করছেন, বিভাজনের যে রাজনীতির পরিবেশ এই মুহূর্তে ভারতবর্ষে চলছে, তার বিরুদ্ধে মানুষের এই ভারত জোড়ো যাত্রাই একমাত্র বিকল্প। প্রতিদিন নতুন দৃশ্য তৈরি হচ্ছে, যা এই দেশের শাসকদলের নেতা মন্ত্রীদের বুকে কাঁপন ধরাচ্ছে। তাঁদের কুখ্যাত আইটি সেলের তরফ থেকে রাহুল গান্ধীকে কটাক্ষ করার প্রক্রিয়া যেমন চলছে, তেমনই তাঁরা ভয়ও পাচ্ছেন, এই যাত্রার প্রভাব পড়ছে না তো? মানুষ শাসকদলের বিভাজনের রাজনীতি ধরে ফেলে, নির্বাচনে তাঁদের থেকে মুখ ঘুরিয়ে নেবেন না তো? এই ভয় যদি নেতা মন্ত্রীরা পেয়ে থাকেন, তার ফলস্বরূপই ভারত জোড়ো যাত্রা কীভাবে বন্ধ করা যায়, তার উপায় খুঁজছেন না তো? যে সময় রাজস্থানে এই যাত্রা চলছে সেই সময়ে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী মনসুখ মাণ্ডব্য ভারত জোড়ো যাত্রার অন্যতম মুখ রাহুল গান্ধীকে চিঠি লিখেছেন, যদি এই যাত্রা চালিয়ে যেতে হয়, তাহলে কোভিড বিধিনিষেধ মেনে চলতে হবে। সকলকে জমায়েতের সময় মাস্ক পরতে হবে।
আরও পড়ুন- হু হু করে বাড়বে মৃত্যু! কতটা মারাত্মক এই নয়া BF.7 কোভিড ভ্যারিয়েন্ট?
তবে গুরুত্বপূর্ণ এই দিকটি নিয়ে যথারীতি কোনও সংবাদমাধ্যমে আলোচনা হচ্ছে না। চিনের কোভিডের যে ভ্যারিয়েন্টকে দেখিয়ে খুব উচ্চগ্রামে বলা হচ্ছে, এটা নাকি ‘চিনা দৈত্য’, সেই একই ভ্যারিয়েন্ট গত অক্টোবর মাসে গুজরাত নির্বাচনের প্রাক্কালে একাধিক ব্যক্তির মধ্যে পাওয়া গিয়েছিল। তখন কিন্তু সরকার এই বিষয়ে কোনও সাবধানবাণী শোনায়নি, একবার নির্দেশ দেয়নি যে সবাইকে মাস্ক পরতে হবে। শুধু গুজরাতে নয়, ওড়িশাতেও কোভিডের ওমিক্রোন প্রজাতির এই সাব ভ্যারিয়েন্টের খোঁজ মিলেছিল জুলাই এবং সেপ্টেম্বর মাসে। তাহলে হঠাৎ এই সাবধানবাণী কেন? কাল বাদে পরশু ভারত জোড়ো যাত্রা দিল্লি পৌঁছবে, আরও বহু সংবাদমাধ্যমে তখন এই যাত্রা সংক্রান্ত খবর আসবে ছোট ছোট ভিডিও, হোয়াটসঅ্যাপ মারফত। মানুষের কাছে খবর ছড়াবে, মানুষের মনে স্থায়ী ছবি আসতেও পারে যে রাহুল গান্ধীর নেতৃত্বেই হয়তো এখনকার শাসকদলকে পরাজিত করা সম্ভব। তাই কি তড়িঘড়ি উচ্চপর্যায়ের বৈঠক হতে চলেছে? কীভাবে ফের কোভিডের সংক্রমণকে প্রতিহত করা সম্ভব? আবারও আঞ্চলিক লকডাউন? এই লকডাউন করার উদ্দেশ্য আসলে কী, সেই প্রশ্নটা কি কেউ করবেন?
দেশের হাসপাতালে আরও শয্যা তৈরি রাখাটাই যদি বিকল্প হয়, তাহলে গত দু’ বছরে কেন তা করা গেল না, সেই প্রশ্ন কেউ কি করবেন? তাহলে ফের লকডাউন করার অন্য কোন উদ্দেশ্য আছে? এমনিতেই দেশের অর্থনীতি তলানিতে, মানুষ কাজের জন্য হন্যে হয়ে ঘুরছেন, শৈশব নষ্ট হয়েছে স্কুল কলেজ বন্ধ রাখার ফলে। ফের একবার এই ধরনের ব্যর্থ লকডাউন প্রক্রিয়াকে কেন মেনে নেবে মানুষ? চিন থেকে আসা যেকোনও বিমানের যাত্রীদের পরীক্ষা করা বাঞ্ছনীয়, কিন্তু ফের আরেকটা লকডাউনের ঘা নিতে কি দেশ প্রস্তুত? এ খানিক নিজের পায়ের জুতো না পরে সারা দেশকে কাপড় দিয়ে ঢেকে ধুলো থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখার মতো বিষয় নয় কি?