করোনা বদলে দিয়েছে টিন-এজারদের মস্তিষ্ক! ভয়াবহ তথ্য উঠে এল গবেষণায়

Covid and Depression: কোভিড ১৯-এর প্রভাবে শিশু ও তরুণদের মানসিক স্বাস্থ্য এবং সুস্থতার ওপর যে প্রভাব পড়েছে তা অনেকদিন পর্যন্ত স্থায়ী থাকবে।

প্রায় দু'বছর করোনায় ঘরবন্দি অবস্থায় কেটেছে গোটা বিশ্বের। আজ অতিমারীর চোখরাঙানি কমলেও বহু যুবক যুবতী অস্থিরতা কাটিয়ে উঠতে পারেনি। সম্প্রতি একটি সমীক্ষায় প্রকাশিত হয়েছে যে, কিশোর কিশোরীদের মধ্যে মহামারী সম্পর্কিত স্ট্রেসের কারণে মস্তিষ্কের বয়স তাঁদের শারীরিক বয়সের তুলনায় বৃদ্ধি পেয়েছে, যা যথেষ্ট চিন্তার বলেই মনে করছেন গবেষকরা। গবেষণা থেকে ইঙ্গিত মিলেছে যে, কিশোর কিশোরীদের মানসিক ও স্নায়বিক স্বাস্থ্যের প্রভাব আরও খারাপ হতে পারে। গবেষণা প্রকাশিত হয়েছে রিপোর্টটি বায়োলজিক্যাল সাইকিয়াট্রি : গ্লোবাল ওপেন সায়েন্স জার্নালে।

গবেষণা রিপোর্ট কী বলছে?

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে আয়োজিত এক সমীক্ষা থেকে জানা গেছে, শুধুমাত্র ২০২০ সালে প্রাপ্ত বয়স্কদের মধ্যে উদ্বেগ ও বিষণ্ণতা আগের বছরের তুলনায় প্রায় ২৫ শতাংশ বেড়েছে। স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই সমীক্ষার সঙ্গে জড়িত এক গবেষক ইয়ান গটলিবের মতে, বিশ্ব জুড়ে চলতে থাকা নানা গবেষণা থেকে আমরা জানি যে শারীরিকভাবে মহামারীর কতখানি বিরূপ প্রভাব পড়েছে আমাদের উপর। এমনকী মানসিক স্বাস্থ্যের উপরেও যে ক্ষতিকারক প্রভাব ফেলেছে এই মহামারী তাও অনেকেই ভালো মতো জানেন। কিন্তু কিশোর কিশোরীদের মানসিক স্বাস্থ্যের উপর এর প্রভাব জানা ছিল না। এই গবেষণা থেকে তা অনেকটাই পরিষ্কার। গটলিব আরও উল্লেখ করেন, আমাদের বয়সের সঙ্গে সঙ্গে মস্তিষ্কের গঠনও স্বাভাবিকভাবেই পরিবর্তন হতে থাকে। বয়ঃসন্ধিকালে এবং কিশোর বয়সে মানব মস্তিষ্কের হিপোক্যাম্পাস এবং অ্যামিগডালা উভয় অংশই বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। মস্তিষ্কের এই অংশ আমাদের নির্দিষ্ট স্মৃতি এবং আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করে। একই সময়ে নির্বাহী কার্যকারিতার সঙ্গে জড়িত কর্টেক্স অঞ্চলের টিস্যু পাতলা হয়ে যায়।

আরও পড়ুন- করোনার পর ফের মহামারীর সামনে পৃথিবী? কারণ দেখিয়ে ভয়াবহ ইঙ্গিত বিজ্ঞানীদের

গটলিব তাঁর গবেষণার জন্য মহামারীর আগে এবং লকডাউন চলাকালীন ১৬৩ জন কিশোর কিশোরীর এমআরআই স্ক্যানের তুলনা করে দেখেন। এরপরই তিনি লক্ষ্য করেন, যেসব কিশোর কিশোরীরা ঘরবন্দি অবস্থায় কাটিয়েছেন তাঁদের ক্ষেত্রে মস্তিষ্কের বৃদ্ধি দ্রুত সম্পন্ন হয়েছে। যার ফলে মস্তিষ্কের বয়স শারীরিক বয়সের তুলনায় বেড়ে গেছে। তবে প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, এই ধরনের পরিবর্তনগুলি শুধুমাত্র সেইসব কিশোর কিশোরীদের মধ্যেই লক্ষ্য করা গেছে যাঁরা অতিমারীর কারণে দীর্ঘস্থায়ী প্রতিকূলতা, অবহেলা, পারিবারিক কর্মহীনতা কিংবা একাধিক এই জাতীয় কারণের সম্মুখীন হয়েছে। এ ধরনের অভিজ্ঞতা পরবর্তী জীবনে মানসিক স্বাস্থ্যের উপর খারাপ প্রভাব ফেলবে। তবে গবেষক দল মস্তিষ্কের যে পরিবর্তনগুলি লক্ষ্য করেছেন তার ফলে কতখানি গভীর সমস্যা দেখা যাবে ভবিষ্যতে বা এই ধরনের পরিবর্তনগুলো স্থায়ী কিনা তা স্পষ্ট করে কিছু জানাননি। স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক দল জানিয়েছেন, "অতিমারীর ফলে মস্তিষ্কের এই অকাল পরিণতির সঙ্গে শারীরিক পরিবর্তন কতখানি যুক্ত তার উত্তর জানতে আমাদের এখনও অপেক্ষা করতে হবে। একজন সত্তর বা আশি বছর বয়সী ব্যক্তির ক্ষেত্রে স্মৃতিভ্রংশের মতো কিছু সমস্যা খুবই সাধারণ। কিন্তু একজন ১৬ থেকে ১৭ বছর বয়সে কিশোর কিশোরীর ক্ষেত্রে মস্তিষ্কের অকাল বৃদ্ধির ফলাফল ঠিক কী? তা এখনই বোঝা যাচ্ছে না।"

আরও পড়ুন- কোভিড সারছে, শরীর সারছে না? অজান্তেই দানা বেঁধেছে এই মারণ অসুখ

তবে গটলিব জানিয়েছেন, মহামারীর আগে তাঁদের ল্যাবে বয়ঃসন্ধিকালীন বিষণ্ণতার উপর দীর্ঘমেয়াদি গবেষণার জন্য সানফ্রান্সিসকো এলাকার একদল শিশু এবং কিশোর কিশোরীকে বেছে নেওয়া হয়। কিন্তু করোনার প্রভাবে যুবকদের নিয়মিতভাবে পরীক্ষা করা সম্ভব হয়নি। এরপর অতিমারি পরিস্থিতি খানিক ঠিক হতেই ফের গবেষণার কাজ শুরু করেন গটলিব। এরপরই নতুন এই তথ্য হাতে আসে গবেষক দলের। গটলিব আরও মনে করেন, প্রাপ্ত ফলাফল ভবিষ্যতে মহামারী কাটিয়ে ওঠা প্রজন্মের বিষয়ে নতুন গবেষণার জন্য খুবই উপযোগী হবে। ভবিষ্যতের তিনি নিজেও এই সংক্রান্ত দীর্ঘ গবেষণা করবেন বলেও জানিয়েছেন।

মানসিক স্বাস্থ্য ও করোনা

শুধু গটলিবের গবেষণা নয় বিশ্বজুড়ে বহু গবেষণা রিপোর্টে প্রমাণ পাওয়া গেছে করানোর ফলে মানসিক স্বাস্থ্যের উপর গভীর প্রভাব পড়েছে। গত বছর ইউনিসেফের এক সমীক্ষা রিপোর্টে জানানো হয়েছিল, কোভিড ১৯-এর প্রভাবে শিশু ও তরুণদের মানসিক স্বাস্থ্য এবং সুস্থতার ওপর যে প্রভাব পড়েছে তা অনেকদিন পর্যন্ত স্থায়ী থাকবে। দ্য স্টেট অফ দ্য ওয়ার্ল্ড চিলড্রেন ২০২১; অন মাই মাইন্ড , প্রমোটিং, প্রটেকটিং অ্যান্ড কেয়ারিং ফর দ্য চিলড্রেনস মেন্টাল হেলথ শীর্ষক ওই প্রতিবেদনে একবিংশ শতাব্দীতে শিশু কিশোরদের মানসিক স্বাস্থ্যের উপর বিশদ আলোচনা করা হয়েছে। প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, অতিমারীর আগেও শিশু কিশোরদের মানসিক স্বাস্থ্যজনিত সমস্যা ছিল এবং এক্ষেত্রে সমস্যা সমাধানের জন্য যথেষ্ট বিনিয়োগ ছিল না। তবে করোনা যে ক্ষতের পরিমাণ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে এ ব্যাপারে কোনও সন্দেহ নেই। সমীক্ষায় দেখা গেছে ,বিশ্বের ২১ দেশের প্রায় ১৯ শতাংশ তরুণ তরুণী (১৫-২৪ বছর বয়সী) হতাশায় ভুগছে এবং তাঁদের কাজ করার উদ্যোগের অভাব রয়েছে। সুতরাং করোনা থেকে খানিক স্বস্তি পেলেও মানসিক স্বাস্থ্যের উপর এর প্রভাব যে সুদূর প্রসারী তা বারে বারে প্রমাণিত হয়েছে।

 

More Articles