ভারতে আবার বাড়ছে কোভিড? বাস্তবে কতটা ভয়ের, স্পষ্ট জানালেন বিজ্ঞানীরা

Covid 19 Surge in India: গত ২৫ মে পর্যন্ত ভারতে সক্রিয় কোভিড আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১,০১০। সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত কেরলে (৪৩০), তারপরে মহারাষ্ট্র (২১০), দিল্লি (১০৪) এবং গুজরাত (৭৬)।

প্রায় তিন বছর পেরিয়ে, কোভিড-আতঙ্ক আবার উদ্বেগ বাড়াচ্ছে কিছুটা হলেও। সোশ্যাল মিডিয়া থেকে শুরু করে গণমাধ্যম, ভারতে কোভিডে আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধির খবর প্রায় এক সপ্তাহ ধরে ছড়িয়ে পড়ছে। সত্যিই কি নতুন করে কোনও তরঙ্গ ছড়িয়ে পড়ছে ভারতে? আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি কি সত্যিই উদ্বেগের কারণ?

'COVID-19 ফিরে এসেছে' এই প্রচলিত ধারণাটি বৈজ্ঞানিকভাবে আস্ত ভুল ধারণা কারণ অন্য যেকোনও ভাইরাসের মতো, Sars-Cov-2 অর্থাৎ যেটি COVID-19 সৃষ্টি করে, কখনও বিলুপ্তই হয়নি। যা বিলুপ্তই হয়নি, তা তো ফিরে আসবেই। অন্যান্য সকল ভাইরাসের মতোই এই ভাইরাসও এতদিন ধরে ছড়িয়েই আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে। মানব ইতিহাসে গুটিবসন্ত ছাড়া আর কোনও ভাইরাসই নির্মূল করা যায়নি।

পর্যায়ক্রমে আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধির সম্ভাবনাও রয়েছে কারণ Sars-Cov-2 একটি দ্রুত পরিবর্তনশীল ভাইরাস। তাই ভাইরাস ফিরে এসেছে জাতীয় তথ্য ভুল। তাহলে বর্তমানে কী ঘটছে?

আরও পড়ুন-কোভিডের ভ্যাকসিন নিয়ে মৃত্যু সন্তানদের! কতটা ভয়াবহ এই কোভিশিল্ড?

কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের অনলাইন ওয়েবসাইটে উপলব্ধ তথ্য অনুসারে, গত ২৫ মে পর্যন্ত ভারতে সক্রিয় কোভিড আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১,০১০। সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত কেরলে (৪৩০), তারপরে মহারাষ্ট্র (২১০), দিল্লি (১০৪) এবং গুজরাত (৭৬)। সপ্তাহ শুরু হয়েছিল ১৯ মে থেকে। ফলে এক সপ্তাহের হিসেব বলছে, আক্রান্তের সংখ্যার সর্বোচ্চ পরিবর্তন হয়েছে কেরলে (এই সপ্তাহে ৯৫টি সংক্রমণ বেশি) এবং মহারাষ্ট্রে (এই সপ্তাহে ৫৬টি বেশি সংক্রমণ)। এমন পরিস্থিতিতে, স্বাভবিকভাবেই সরকারের অতিরিক্ত প্রস্তুতি নেওয়া উচিত এবং হাসপাতালগুলিকেও প্রস্তুত থাকতে বলা উচিত।

তবে, মনে রাখতে হবে, এই তথ্যটি আসল চিত্র নয়। কোভিড সংক্রমণ পরিমাপের ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো পজিটিভিটির হার, অর্থাৎ, প্রতি ১০০টি পরীক্ষার মধ্যে কতজনের দেহে কোভিড পজিটিভ ধরা পড়ছে, সেই সংখ্যা। সাধারণত, যখন কোভিড-১৯ সংক্রমণের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়া নিয়ে আলোচনা বাড়ে, তখন স্বাভাবিকভাবেই বেশি সংখ্যক মানুষ ভাইরাসের পরীক্ষা করান। যত বেশি মানুষ পরীক্ষা করাবেন, তত বেশি সংখ্যক রোগী শনাক্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। কোভিড বিষয়ক আলোচনা না হলে পরীক্ষাও কম করা হবে এবং তাই পজিটিভ রোগীর সংখ্যাও কম হবে। অতএব, পজিটিভিটির হার জানা প্রাসঙ্গিক।

স্বাস্থ্য মন্ত্রকের ওয়েবসাইটে বর্তমান স্ট্রেনের পজিটিভিটির হার সম্পর্কে কোনও নতুন তথ্য নেই। ধরে নেওয়া যেতে পারে, কেরলে সর্বাধিক সংখ্যক কোভিড পজিটিভ ঘটনার কারণ হতে পারে সেখানে বেশি মানুষের পরীক্ষা হচ্ছে।

ইন্ডিয়ান SARS-CoV-2 জিনোমিক্স কনসোর্টিয়াম (INSACOG) জিনোমিক নজরদারি এবং ভাইরাসের নতুন স্ট্রেনটির বর্তমান অবস্থা খুঁজে বের করার কাজ করে। INSACOG-এর ২৬ মে তারিখ পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুসারে, JN.1 হচ্ছে সবচেয়ে সাধারণ ছড়িয়ে পড়া স্ট্রেন। নতুন স্ট্রেন NB.1.8.1-এর কিছু ঘটনাও ধরা পড়েছে কিন্তু তা এখনও সেই তালিকায় নেই।

আরও পড়ুন-কমিয়ে দেখানো হয়েছে সংখ্যা? সরকারি নথিতেই উঠে আসছে কোভিডে মৃত্যুর গরমিল তত্ত্ব

গত ১৫ মে প্রকাশিত সর্বশেষ INSACOG বুলেটিনে বলা হয়েছে, "যেহেতু ভারতের কিছু অংশে পরীক্ষা এবং নমুনা সংগ্রহের সংখ্যা কম, তাই সামগ্রিক পরিস্থিতি এখনও স্পষ্ট নাও হতে পারে।"

JN.1 এবং NB.1.8.1 নিয়ে কী বলছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা?

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) নতুন উদীয়মান স্ট্রেনগুলিকে তিনটি বিভাগের — পর্যবেক্ষণাধীন রূপ (VUM), আগ্রহজনক রূপ (VoI) এবং উদ্বেগের রূপ (VoCs)— একটির মধ্যে ফেলে। এর মধ্যে VuM হিসাবে শ্রেণিবদ্ধ রূপগুলি সবচেয়ে কম উদ্বেগজনক। যদি কোনও স্ট্রেনকে VuM হিসাবে মনোনীত করা হয়, তবে এটি নিয়ে স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের ভাবনাচিন্তা করা উচিত। যদি কোনও স্ট্রেনকে VoI হিসাবে শ্রেণিবদ্ধ করা হয়, তাহলে বুঝতে হবে এটির এর আগের রূপগুলির তুলনায় দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা আছে। ফলে এটি জনস্বাস্থ্যের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। VoCs হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ স্ট্রেনগুলি সর্বোচ্চ মাত্রায় নিজেদের পরিবর্তন করে। এই ধরনের স্ট্রেন বিশ্বজুড়ে স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে প্রভাবিত করতে পারে।

বর্তমানে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা JN.1 কে VoI হিসাবে শ্রেণীবদ্ধ করেছে। NB.1.8.1 কে VuM হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। বর্তমানে ছড়িয়ে পড়া সমস্ত স্ট্রেনই ওমিক্রন ভেরিয়েন্টের শাখা। হু বলেছে, বর্তমানে যে প্রমাণ পাওয়া গেছে, তাতে বোঝা যাচ্ছে JN.1 খুব বেশি ঝুঁকির নয়। JN.1 জ্বর, গলা ব্যথা, নাক থেকে অতিরিক্ত শ্লেষ্মা নির্গত হওয়া, নাক বন্ধ হওয়া, ক্রমাগত শুষ্ক কাশি, ক্লান্তি, মাথাব্যথা, স্বাদ হ্রাস, গন্ধ হ্রাস, পেশির ব্যথা, কনজাংটিভাইটিস, ডায়রিয়া এবং বমির কারণ হতে পারে।

More Articles