কোভিডের টিকাতেই ছিল মৃত্যুফাঁদ! বিস্ফোরক যে তথ্য আসছে প্রকাশ্যে
Covid Vaccine: টিকাকরণের প্রভাবে কী কী বিরূপ প্রতিক্রিয়া শরীরে দেখা যাচ্ছে?
কোভিডের ভ্যাকসিন নেওয়া কর্মক্ষেত্রে, শিক্ষাক্ষেত্রে সবার জন্য বাধ্যতামূলক করা হয়েছে অনেকদিন হলো। একথা আর নতুন কী! বিমানবন্দর তো বটেই, এমনকী, হোটেলে একরাত মাথা গোঁজার আগেও দেখাতে হয় নিজের ভ্যাকসিনেশনের সার্টিফিকেট। বাদ যায়নি বড়সড় উৎসব অনুষ্ঠানও। দেখানেও দেখাতে হচ্ছে সেই সার্টিফিকেট।
কোভিডের ভ্যাকসিন নিঃসন্দেহে কোভিড প্রতিরোধে কার্যকর। এমনকী, ভ্যাকসিন নিলে ভাইরাস সংক্রমণের সম্ভাবনাও কমে। তবে প্রশ্ন উঠছে টিকাকরণের প্রভাবে কী কী বিরূপ প্রতিক্রিয়া শরীরে দেখা যাচ্ছে। তবে লাখ টাকার প্রশ্ন, সেই বিরূপ প্রভাবগুলির বিষয়ে মানুষকে সচেতন ও সাহায্য করার জন্য সরকার কতটা সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে।
কোভিশিল্ড ও কোভ্যাকসিন-সহ বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ভ্যাকসিনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে জ্বর, গায়ে ব্যথা, শীত-শীত ভাব, ইঞ্জেকশন নেওয়া হচ্ছে যেখানে সেখানে অস্বাভাবিক ব্যথা, মাথা যন্ত্রণা, ডায়রিয়া, বমি-বমি ভাব কিংবা বমি হওয়া এবং হালকা সর্দির মতো লক্ষণ ইত্যাদি বিষয়গুলি আমরা সকলেই অল্প-বিস্তর খেয়াল করেছি নিজেরা বা পরিচিত কেউ ভ্যাক্সিন নেওয়ার পরে। এবং এই বিষয়গুলি যে স্বাভাবিক মিনিস্ট্রি অফ হেলথ অ্যান্ড ফ্যামিলি ওয়েলফেয়ারের তরফে আমাদের জানানোও হয়েছে সেকথা। এছাড়াও ভ্যাকসিন নেওয়ার প্রভাবে যে সমস্যাগুলি দেখা যেতে পারে, তার মধ্যে উল্লেখ করা হয়েছে ডিমায়েলিনেটিং ডিসঅর্ডারের কথাও।
ঠিক কী হয় ডিমায়েলিনেটিং ডিসঅর্ডারে, একটু সংক্ষেপে বলা যাক। মায়েলিন শিথ একটি প্রোটিনের আবরণ, যা আমাদের স্নায়ুকে আবৃত করে রাখে। ডিমায়েলিনেটিং ডিসঅর্ডার হলে মায়েলিন শিথ নষ্ট হয়ে যায়। মায়োলিন শিথ কাজ করে ইনসুলেটরের মতো। তাই এটি নষ্ট হলে স্নায়ু সংবেদনে বিঘ্ন ঘটতে পারে। স্নায়ু সংবেদন স্বাভাবিকের থেকে বিলম্বিত যেমন হতে পারে, আবার থেমেও যেতে পারে একেবারে। যার অবশ্যম্ভাবী ফল হিসেবে বিভিন্ন স্নায়বিক সমস্যা দেখা যায়।
কিন্তু এর বাইরেও কি আরও কিছু কুপ্রভাবের সম্মুখীন যে বহু মানুষ হচ্ছেন, সেই বিষয়ে কিন্তু সাধারণ মানুষকে সরকারের তরফ থেকে জানানো হয়নি। ভ্যাকসিন নেওয়ার পর বিভিন্ন শারীরিক জটিলতা নিয়ে কমবয়সি থেকে বয়স্কদের মধ্যে কতজন যে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছেন, সেই হিসেব আমাদের সামনে আসে না বললেই চলে। তার থেকেও চিন্তার বিষয়, ভ্যাকসিন নেওয়ার পরপরই যে শারীরিক জটিলতাগুলি ধরা পড়েছে, যেগুলির ফলে মৃত্যুও ঘটেছে- সেই কারণগুলি কোভিডের টিকাকরণের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত নয় বলে সরকার বা হাসপাতালের তরফে অধিকাংশ সময়ে জানানো হচ্ছে।
মিনিস্ট্রি অফ হেলথ অ্যান্ড ফ্যামিলি ওয়েলফেয়ারের ওয়েবসাইট। টিকাকরণের বিরূপ অথচ বিরল প্রভাবগুলির মধ্যে একমাত্র ডিমায়েলিনেটিং ডিসঅর্ডারের উল্লেখ রয়েছে
কিন্তু যে মানুষগুলি আগে এই ধরণের শারীরিক জটিলতার শিকার হননি, অথচ ভ্যাকসিন নেওয়ার পরেই তাঁদের এমন ঘটনা ঘটল, সেক্ষেত্রে অনেক প্রশ্ন থেকে যায়।
মজার বিষয় হলো, এই প্রতিবেদন লেখার সময় মিনিস্ট্রি অফ হেলথ অ্যান্ড ফ্যামিলি ওয়েলফেয়ারের ওয়েবসাইটে টিকাকরণের বিরল কুপ্রভাবগুলির মধ্যে ডিমায়েলিনেটিং ডিসঅর্ডারের উল্লেখই পাওয়া গেছে। ভ্যাক্সিন নেওয়ার পরে ডিমায়েলিনেটিং ডিসঅর্ডারের সমস্যা দেখা দিলে, ঠিক কী কী লক্ষণ দেখা যেতে পারে তার বিশদ উল্লেখ ছিল না এই প্রতিবেদন লেখার সময়ে।
মোদ্দাকথায়, সাধারণ জনগণ জানল না ডিমায়েলিনেটিং ডিসঅর্ডার কী। তা খায়, না মাথায় দেয়। ডিমায়েলিনেটিং ডিসঅর্ডার হলে কী কী জটিলতা দেখা যেতে পারে এবং তার চিকিৎসা কী, সেই বিষয়ে সাধারণ মানুষ কিন্তু আঁধারেই রয়ে গেলেন।
আরও একটি অবাক হওয়ার মতো বিষয়, মিনিস্ট্রি অফ হেলথ অ্যান্ড ফ্যামিলি ওয়েলফেয়ারের ওয়েবসাইটে গুরুতর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে উল্লেখ নেই অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া, বা লিম্ফ নোড স্ফীত হওয়ার মতো সমস্যার কথাও।
“I was wondering why no one is telling people about the life long side effects of getting these so-called vaccines for covid. The lifelong side effects are worse than getting covid itself. Why doesn’t anyone ever write stories on that. Or better yet why our court system and DA are so corrupt and our DA Bill Porter has all these past charges and stuff for bribery and all sorts of things but yet he is still our DA. I mean come on write about something the community has been complaining about.” - Stephanie Fitch
শুধু তাই নয়, ভ্যাকসিনের কুপ্রভাবে যে রক্তনালির গভীরে রক্ত জমাট বেঁধে রক্তের প্রবাহ অবরুদ্ধ করে দিয়েছে, কিংবা স্তব্ধ করে দিয়েছে শরীরের প্রয়োজনীয় অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলিকে, তারও উল্লেখ নেই মিনিস্ট্রি অফ হেলথ অ্যান্ড ফ্যামিলি ওয়েলফেয়ারের ওয়েবসাইটে বা কেন্দ্রীয় সরকারের কোনও ওয়েবসাইটে। উল্লেখ নেই, ভ্যাকসিনের কুপ্রভাবে যে মস্তিষ্কের গভীরে চুপিসারেই রক্তক্ষরণ হতে পারে কিংবা কেউ কেউ প্যারালাইসিসের শিকার হয়ে চলৎশক্তি হারিয়েছেন।
কিন্তু এই ধরনের ঘটনা আমাদের নজরে আসছে না বা সরকারি ওয়েবসাইটে তার উল্লেখ নেই বলে এই ধরনের ঘটনা ঘটছে না, এমন তো নয়। সংখ্যায় নগণ্য হলেও ঘটছে সেই ঘটনাগুলি। কাল সেটা আপনি, আমি বা আমাদেরই প্রিয়জন হতে পারে। তবুও সেই বিষয়ে রাখঢাক না রেখে, মানুষকে সরাসরি সচেতন করার কোনো প্রয়াস কিন্তু সরকারের তরফে চোখে পড়েনি। মিনিস্ট্রি অফ হেলথ অ্যান্ড ফ্যামিলি ওয়েলফেয়ারের ওয়েবসাইটে নিদেনপক্ষে এই সমস্যাগুলির উল্লেখও নেই।
এমনকী, কোভিশিল্ড দেওয়ার সময়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এবং ব্রিটেন-সহ বিভিন্ন দেশে উল্লেখ করা হচ্ছে এই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলি সম্পর্কে। শুধু তাই নয়, ব্রিটেনের মতো দেশে কোভিড টিকাকরণের সম্ভাব্য গুরুতর প্রভাব এবং পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া টিকাকরণের আগেই জানিয়ে একটি অনুমতিপত্রে সই করতে হচ্ছে টিকাকরণের আগে।
টিকাকরণের বিরূপ প্রভাবে কোন রাজ্যে কত মৃত্যু (উৎস: স্ক্রল)
অথচ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজি়জ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের ওয়েবসাইটে নোটিস দেওয়া হয়েছে কোভিডের টীকার ফলে অ্যানাফাইলেক্সিস, গুইলেইন-বার সিন্ড্রোম, থ্রম্বোটিক থ্রম্বোসাইটোপেনিয়া, মায়োকার্ডাইটিস, পেরিকার্ডাইটিসের মতো গুরুতর সমস্যা দেখা যেতে পারে। যদিও সেই ঘটনা বিরল, তবে ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা শূণ্য একেবারেই নয়।
কিন্তু তারপরেও কেন্দ্রীয় সরকার এবং মিনিস্ট্রি অফ হেলথ অ্যান্ড ফ্যামিলি ওয়েলফেয়ারের তরফে এরকম কোনও ঘটনা সম্পর্কে ভারতের টিকা-গ্রহণকারীদের সচেতন করা হয়নি।
অথচ ভারতে টিকাকরণের আগে কিন্তু এই ধরনের কোনও ব্যবস্থা নেই। এ-দেশে ভ্যাকসিন দেওয়ার পর আধঘণ্টা অবধি বসিয়ে রাখা হচ্ছে টিকাকরণ কেন্দ্রে। কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হচ্ছে কি না দেখার জন্য। ব্যস! এতটুকুই।
ভ্যাকসিনের গুরুতর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্বন্ধে অভিযোগ জানানোর জন্য সরকারের তরফে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এই ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হলে স্থানীয় টিকাকরণ অফিসার বা টিকাকরণ কেন্দ্রেই সরাসরি জানানো যেতে পারে। এছাড়াও এই সম্পর্কে 'ইন্ডিয়ান ফার্মাকোপিয়া কমিশন'-কে জানানো যায়। সরকারি কর্মচারী এবং অফিসাররা ভ্যাকসিনের গুরুতর প্রভাব ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া-সংক্রান্ত বিষয় সরাসরি জানাতে পারে 'সেফ-ভ্যাক'-এ।
এছাড়াও CoWIN-এ ভ্যাকসিনের গুরুতর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে জানানোর ব্যবস্থা করেছে কেন্দ্রীয় সরকার।
এবার বলা যাক পরপর কিছু ঘটনার কথা।
থ্রম্বোটিক থ্রম্বোসাইটোপেনিয়া
'স্ক্রল'-সূত্রে জানা যাচ্ছে, আঠারো বছরের রিথাইকা শ্রী ওমরি ২০২১ সালের মে মাসে কোভিশিল্ড ভ্যাকসিন নিয়েছিলেন।
ভ্যাকসিন নেওয়ার পাঁচ দিনের মধ্যে ভীষণ জ্বরে কাবু হয় ওমরি। তার সঙ্গে আঙুলে কাঁটা ফোটার মতো অনুভূতি। হায়দরাবাদ অ্যাপোলো হাসপাতালের এক ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে তিনি জানান, টিকাকরণের ফলস্বরূপ ওই কিশোরীর অ্যালার্জির সমস্যা হচ্ছেমাত্র। সেইমতো তাঁকে অ্যালার্জি-প্রতিরোধী ওষুধও দেওয়া হয়। কিন্তু তার পাঁচদিন পরেও যখন জ্বর কমল না, রক্ত পরীক্ষা করে দেখা গেল প্লেটলেটের সংখ্যা বিপজ্জনকভাবে কমেছে ওমরির।
তার কিছুদিনের মধ্যেই ঘন ঘন বমি শুরু হয়। হাঁটার ক্ষমতা হারায় ওমরি। এমআরআই পরীক্ষা করা হতে ওমরির বাবা-মায়ের মাথায় হাত! মেয়ের মাথায় রক্ত জমাট বেঁধেছে এবং মস্তিষ্কের ডানদিকে ফ্রন্টাল অঞ্চলে রক্তক্ষরণও (হেমারেজ) চলছে। হায়দরাবাদ অ্যাপোলো হাসপাতালের ডাক্তাররা প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই সিদ্ধান্ত নেন ক্রেনিওটোমি সার্জারির। কিন্তু তারপর থেকেই কিশোরীর অবস্থা আরওই সংকটজনক হতে শুরু করে। জানানো হয় ওমরির ব্রেন ডেথ হয়েছে।
রিথাইকা শ্রী ওমরি ২০২১ সালে মারা যান। মারা যাওয়ার সময়েও তাঁর মৃত্যুর কারণ তাঁর বাবা-মায়ের কাছে অজানা ছিল। ভ্যাকসিনের বিরূপ প্রভাবে তাঁর মেয়ের মৃত্যু হয়েছে কি না খতিয়ে দেখার জন্য ২০২১ সালের অক্টোবরে তিনি রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে দু'টি রাইট টু ইনফর্মেশন দায়ের করেন। এবং নিজের মেয়ের ময়নাতদন্তের রিপোর্ট জানতে চান। রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকার উভয়েই তাঁর আর্জি নাকচ করে। তিনি আবারও রাজ্যের বিরুদ্ধে রাইট টু ইনফর্মেশন দায়ের করেন ২০২১ সালের নভেম্বরে। ডিসেম্বরে অবশেষে সরকারের তরফে জানানো হয় ওমরির থ্রম্বোসাইটোপেনিয়ায় মৃত্যু হয় এবং যার নেপথ্যে ভ্যাকসিনই দায়ী।
টিকাকরণের ঠিক দুই সপ্তাহের মাথায় যখন এই ঘটনা ঘটেছে ওমরির অভিভাবকদের হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়নি ওমরির মৃত্যুর কারণ যে থ্রম্বোটিক থ্রম্বোসাইটোপেনিয়া। যে রোগে জমাট বাঁধে শিরা-ধমনির গভীরে। যার অবশ্যম্ভাবী প্রভাব হিসেবে রক্তপ্রবাহ বন্ধ হয়। আর মস্তিষ্ক, হৃদপিণ্ড, বৃক্ক, যকৃৎ-সহ শরীরের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গে রক্ত পৌঁছনোর রাস্তা বন্ধ হয় যায়। (উৎস: স্ক্রল)
কিছুদিন পরে হাসপাতালের তরফ থেকে জেলা টিকাকরণ সমিতিকে জানানো হয় ভ্যাকসিনের ক্ষতিকর প্রভাবেই ওমরির মৃত্যু হয়েছে। ঠিক কী হয়েছিল তাঁর, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তা জানায়নি ।
ওমরির মৃত্যুর আগেও নির্দিষ্ট ভাবে অ্যানস্ট্রাজে়নেকার ভ্যাকসিনের প্রভাবে থ্রম্বোটিক থ্রম্বোসাইটোপেনিয়া দেখা যাওয়ার ঘটনার উল্লেখ পাওয়া গেছে। ২০২১ সালের মার্চ মাসের শুরুতে ঠিক এই কারণেই ডেনমার্কে অ্যানস্ট্রাজে়নেকার ভ্যাকসিন দেওয়া বন্ধ করা হয়। সেই বছরের এপ্রিল মাসে 'দ্য নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অফ মেডিসিন'-এ ইউনিভার্সিটি অফ পেনসিলভেনিয়া-র প্রকাশিত একটি গবেষণায় স্পষ্ট উল্লেখ করা হয়, অ্যানস্ট্রাজে়নেকার ভ্যাকসিনের প্রভাবে থ্রম্বোটিক থ্রম্বোসাইটোপেনিয়ার মতো গুরুতর সমস্যা দেখা যাচ্ছে এক লাখের মধ্যে অন্তত একজন ব্যক্তির। অ্যানস্ট্রাজে়নেকার ভ্যাকসিনের বিরুদ্ধে একই ঘটনা জানানো হয় দ্য ইউনিভার্সিটি অফ অ্যালাবামা অ্যাট বার্মিংহামের পক্ষ থেকেও।
হাইপোথাইরয়েডিজ়ম এবং গ্রেভস অফথ্যালমোপ্যাথি
স্ক্রল-সূত্রে জানা যাচ্ছে কোয়েম্বাটোরের একান্ন বছর বয়সি ভেনুগোপালন গোভিন্দন ভ্যাকসিন নিয়েছিলেন ২০২১ সালে। আর তারপর থেকেই হাইপোথাইরয়েডিজ়ম এবং গ্রেভস অফথ্যালমোপ্যাথির সমস্যায় ভুগেছেন।
ভ্যাকসিন নেওয়ার পরে যে তিনি এই জাতীয় সমস্যার শিকার হচ্ছেন, তা তিনি CoWIN-এ জানান। কিন্তু তারপরেও নির্দিষ্ট কোনও সমস্যায় তিনি ভুগছেন, তা বিশদে জানতে তাঁর সঙ্গে কেউ যোগাযোগ করেননি। সেক্ষেত্রে স্বাভাবিকভাবেই ভ্যাকসিনের ঠিক কী কী গুরুতর প্রভাব দেখা যাচ্ছে, তা অন্ধকারেই রয়ে যাচ্ছে।
ভেনুগোপাল গোভিন্দন ও তাঁর কন্যা করুণ্যা। ২০২১ সালে মৃত্যু হয় করুণ্যার। ২০২২ সালে ন্যাশানাল কমিটি করুণ্যা ভেনুগোপালের মৃত্যুকে B১ শ্রেণির আওতায় ফেলে। জানানো হয় সেক্ষেত্রে মৃত্যুর সাথে টিকাকরণের সম্পর্ক 'অস্থায়ী' (টেম্পোরাল রিলেশনশিপ)। তথ্যপ্রমাণের অভাবে জানা যায়নি করুণ্যা ভেনুগোপালের মৃত্যুর কারণের নেপথ্যে টিকাকরণই দায়ী কি না। তবে সন্দেহ থেকেই যাচ্ছে। (উৎস: স্ক্রল)
মাল্টিসিস্টেম ইনফ্ল্যামেটরি সিন্ড্রোম
স্ক্রল-সূত্রে জানা যাচ্ছে, গোভিন্দনের একুশ বছর বয়সি মেয়ে করুণ্যা ভেনুগোপালও টিকাকরণের পর থেকে বিরূপ প্রভাবের শিকার হন। তবে এক্ষেত্রে তাঁর সমস্যা আলাদা। ভ্যাকসিন নেওয়ার পরে 'মাল্টিসিস্টেম ইনফ্ল্যামেটরি সিন্ড্রোম' দেখা যায় যুবতীর শরীরে। টানা চার সপ্তাহ হাসপাতালে যমে-মানুষে টানাটানি চলল। কিন্তু শেষরক্ষে হয়নি।
চলতি বছর অক্টোবরে ন্যাশনাল কমিটি করুণ্যা ভেনুগোপালের মৃত্যুকে B1 শ্রেণির আওতায় ফেলে। জানানো হয়, সেক্ষেত্রে মৃত্যুর সঙ্গে টিকাকরণের সম্পর্ক 'অস্থায়ী' (টেম্পোরাল রিলেশনশিপ)। তথ্যপ্রমাণের অভাবে জানা যায়নি করুণ্যা ভেনুগোপালের মৃত্যুর কারণের নেপথ্যে টিকাকরণই দায়ী কি-না। তবে সন্দেহ থেকেই যাচ্ছে।
ভ্যাকসিনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি এবং নিউরোলজিক্যাল ডিসঅর্ডার
জার্নাল অফ অ্যাফেক্টিভ ডিসঅর্ডারে প্রকাশিত একটি গবেষণা থেকে জানা যাচ্ছে, গবেষণায় অংশ নেওয়া ছাব্বিশ শতাংশের বেশি ব্যক্তির মধ্যে কোভিডের টিকাকরণের ফলে অ্যাংজা়ইটি এবং কুড়ি শতাংশর মধ্যে অবসাদের মতো বিরূপ প্রভাব দেখা গেছে।
এশিয়ান জার্নাল অফ সাইকায়াট্রি-তে প্রকাশিত একটি রিভিউ আর্টিকলে উঠে আসছে এগারোটি রিপোর্ট। যেখানে দেখা যাচ্ছে কোভিড ভ্যাকসিন নেওয়ার দশ দিনের মধ্যে অনেকেরই অল্টারড মেন্টাল স্টেট, সাইকোসিস, ম্যানিয়া, মানসিক অবসাদ, এবং অন্যান্য কিছু স্নায়বিক ব্যধির লক্ষণ দেখা গেছে।
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক পঁচিশোর্ধ্ব ভারতীয় এক মহিলা জানাচ্ছেন, কোভিশিল্ডের দ্বিতীয় ডোজ় নেওয়ার চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে তিনি অ্যাংজা়ইটি, বুক ধড়ফড়, ঘুমের মধ্যে অ্যাংজা়ইটি অ্যাটাকের মতো সমস্যায় ভুগেছেন। আগে থেকেই তাঁর এই ধরনের সমস্যা থাকলেও, ভ্যাকসিন নেওয়ার আগে কয়েক মাস যাবৎ যে তাঁর এই জাতীয় সমস্যা একেবারেই হয়নি, তা-ও তিনি জানিয়েছেন ইনস্ক্রিপ্ট-কে। অথচ কোভিশিল্ডের প্রথম ডোজ় নেওয়ার পর এই জাতীয় সমস্যার শিকার হননি তিনি।
'প্রগ্রেস ইন নিউরোলজি অ্যান্ড সাইকায়াট্রি' জার্নালে প্রকাশিত রিপোর্ট থেকে জানা যাচ্ছে অ্যাস্ট্রাজে়নেকা/কোভিশিল্ড ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ় নেওয়ার পর কয়েকজন পঞ্চাশোর্ধ্ব পুরুষদের মধ্যে অ্যাকিউট কনফিউশানাল স্টেটস ধরা পড়ে। অথচ তাঁদের কারওরই ভ্যাকসিন নেওয়ার আগে এই ধরনের সমস্যা ছিল না।
অ্যাস্ট্রাজে়নেকা/কোভিশিল্ড ভ্যাকসিন নেওয়ার সাত দিনের মধ্যে দুই ব্যক্তির অ্যাকিউট সাইকোসিসের ঘটনা দেখা গিয়েছে। অন্যদিকে ফাইজা়র-বায়োএনটেকের ভ্যাকসিন নেওয়ার কয়েকদিনের পরেই কুড়ি বছরের এক তরুণীও অ্যাকিউট সাইকোসিসের (ক্যাটাটোনিক বৈশিষ্ট্য-সহ) শিকার হন।
অথচ এই ধরনেই কোনও বিষয়ই উল্লেখ করা হয়নি মিনিস্ট্রি অফ হেলথ অ্যান্ড ফ্যামিলি ওয়েলফেয়ারের পক্ষ থেকে।
উদাসীন সরকার!
জনস্বাস্থ্যকর্মী মালিনি আইসোলা স্ক্রল-কে জানিয়েছেন, "ভ্যাকসিনের সুপ্রভাবই অনেক বেশি। কিন্তু তার যে বেশ কিছু বিরূপ প্রভাবও ভোগ করছে সাধারণ মানুষ, দেশের বিভিন্ন রাজ্য কিন্তু সেই বিষয়টিকে জনসমক্ষে আনছে না।"
ওমরির ঘটনাই ধরা যাক। ওমরির মৃত্যুর পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কিন্তু তাঁর ময়নাতদন্তর রিপোর্ট ওমরির অভিভাবকদের হাতে দেয়নি। ওমরির বাবা নাছোড়বান্দা। ভ্যাকসিনের বিরূপ প্রভাবে তাঁর মেয়ের মৃত্যু হয়েছে কি না খতিয়ে দেখার জন্য ২০২১ সালের অক্টোবরে তিনি রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে দু'টি রাইট টু ইনফর্মেশন দায়ের করেন। এবং নিজের মেয়ের ময়নাতদন্তর রিপোর্ট জানতে চান। রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকার উভয়েই তাঁর আর্জি নাকচ করে। তিনি আবারও রাজ্যের বিরুদ্ধে রাইট টু ইনফর্মেশন দায়ের করেন ২০২১ সালের নভেম্বরে। ডিসেম্বরে অবশেষে সরকারের তরফে জানানো হয় ওমরির থ্রম্বোসাইটোপেনিয়ায় মৃত্যু হয় এবং যার নেপথ্যে ভ্যাকসিনই দায়ী।
বিখ্যাত ভাইরাস-বিশেষজ্ঞ ড. শাহিদ জামিল স্ক্রল-কে এই বিষয়ে নিজের অভিজ্ঞতার কথা জানান। টিকা নেওয়ার তিনদিন পরেও তাঁর ধুম জ্বর। জ্বর যখন কিছুতেই ছাড়ছে না, তিনি সোজা ফোন করলেন সরকারের হেল্পলাইন নম্বরে। ড. জামিল জানালেন নিজের সমস্যার কথা। যে ব্যক্তি ফোন ধরলেন তিনি বললেন তিনি এই ব্যপারে কিছুই জানেন না। ড. জামিল শেষে ফোন করলেন টিকাকরণ কেন্দ্রে। তাঁকে জানানো হলো, পরে ফোন করে অবশ্যই তাঁর সমস্যার কথা শোনা হবে। তবে সেই ফোন কখনও আসেনি।
ড. জামিল জানাচ্ছেন, পাশ্চাত্যের দেশগুলিতে কিন্তু ভ্যাকসিনের বিরূপ প্রভাবগুলিকে নথিভুক্ত করা হয়। যাতে পরবর্তীতে ভুক্তভুগীদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসাটুকু অন্তত করা যায়।
ভারতে সেই নথিভুক্তিকরণ তো দূর অস্ত। এখানে টিকাকরণ থেকে সমস্যা দেখা দিলে, তা নিয়ে কারও হেলদোল নেই কোনও। স্বাস্থ্য মন্ত্রকের উচ্চপদস্থ ব্যক্তিদের সঙ্গে যোগাযোগ করেও কোনও সুরাহা হয়নি, জানাচ্ছেন আরেক মৃতের পরিবারের সদস্য।