বিতর্কই তবে সত্যি? কোভিড ভ্যাকসিন নিয়ে দেহে বাড়ছে হার্ট, মস্তিষ্কের বিরল রোগ!
Covid-19 Vaccine Effect : যারা কোভিড ১৯ আক্রান্ত হওয়ার পরেও বেঁচে গিয়েছেন তারা ইওরোপিয় এবং চিনের মানুষদের তুলনায় বেশি ফুসফুস এবং শ্বাসকষ্টের সমস্যায় ভুগছেন।
বেশ কিছুটা সময় আগে, একাংশের মানুষ বলতে থাকেন কোভিডে যারা মারা যাননি, তাঁদের প্রাণ কাড়ছে কোভিড ভ্যাকসিন। কোভিড থেকে সুস্থ হয়ে ওঠার পর ভ্যাকসিন নেওয়ার পরে নানা শারীরিক জটিলতায় ভুগেছেন অনেকেই, ভুগছেনও। বিশ্বের বৃহত্তম কোভিড গবেষণা সম্প্রতি এমন এক তথ্য সামনে এনেছে যা রীতিমতো ভয় ধরিয়ে দেয়। টিকা নিয়েছেন এমন ৯০ মিলিয়ন মানুষের উপর গবেষণা চালিয়ে দেখা গেছে যে ফাইজার, মডার্না এবং অ্যাস্ট্রাজেনেকার মতো কোম্পানির ভ্যাকসিন মস্তিষ্ক, হার্ট এবং রক্তের বিরল রোগ বয়ে এনেছে শরীরে। কোভিড ভ্যাকসিন বিতর্ক কি তাহলে সত্য?
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার একটি গবেষণা শাখা, গ্লোবাল ভ্যাকসিন ডেটা নেটওয়ার্কের গবেষকরা দেখেছেন যে, কোভিড ভ্যাকসিনেশনের ফলে ১৩ টি বিভিন্ন চিকিত্সা সমস্যাকে বাড়িয়ে তুলেছে যেগুলি রীতিমতো ভয়াবহ। এই সমীক্ষায় আটটি দেশের প্রায় ১০০ মিলিয়ন মানুষ, যারা টিকা নিয়েছেন তাঁদের উপর দীর্ঘ সমীক্ষা চালানো হয়। এই মানুষরা আর্জেন্টিনা, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, ডেনমার্ক, ফিনল্যান্ড, ফ্রান্স, নিউজিল্যান্ড এবং স্কটল্যান্ডের বাসিন্দা।
এই সমীক্ষা থেকে পাওয়া ফলাফল গবেষণা করে দেখা যায়, কোভিডের টিকা নেওয়ার পরে স্নায়বিক, রক্ত এবং হার্ট সংক্রান্ত সমস্যার সামান্য বৃদ্ধি ঘটেছে।
মায়োকার্ডাইটিসের বিরল ঘটনা - এটি আসলে হৃদপিণ্ডের প্রদাহ। দেখা গেছে ফাইজার-বায়োএনটেক এবং মডার্নার এমআরএনএ ভ্যাকসিনের প্রথম, দ্বিতীয় এবং তৃতীয় ডোজগুলির ফলে এই জটিল রোগটি বাসা বাঁধছে দেহে। দ্বিতীয় মডার্না ডোজ দেওয়ার পরে এই রোগের সর্বোচ্চ হার দেখা গেছে (প্রত্যাশিত হারের ৬.১ গুণ)।
পেরিকার্ডাইটিস - এটিও আরেকটি হৃদরোগ। যারা অ্যাস্ট্রাজেনেকা ভ্যাকসিনের তৃতীয় ডোজ নিয়েছিলেন তাদের মধ্যে এই রোগের ঝুঁকি ৬.০ গুণ বেড়ে যায়। মডার্নার প্রথম এবং চতুর্থ ডোজ নেওয়া পরে পেরিকার্ডাইটিসের হার যথাক্রমে ১.৭ গুণ এবং ২.৬ গুণ বেড়েছে।
যারা অ্যাস্ট্রাজেনেকা ভ্যাকসিন নিয়েছিলেন তাদের মধ্যে একটি বিরল স্নায়বিক ব্যাধিরও ঝুঁকি বাড়তে দেখা যায় — Guillain-Barre syndrome বা জিবি সিন্ড্রোম। রক্ত জমাট বাঁধার ঝুঁকি ৩.২ গুণ বেড়ে যায় তাদের।
সমীক্ষা অনুযায়ী, মডার্না ভ্যাকসিন গ্রহণের পর স্নায়বিক ব্যাধির বাড়বাড়ন্তের ঝুঁকিও দেখা গেছে। এই ভ্যাকসিন নেওয়ার পরে এনসেফালোমাইলাইটিস হওয়ার ঝুঁকি ৩.৮ গুণ বেশি ছিল। অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন নেওয়ার পরে এই স্নায়বিক রোগের ঝুঁকি ২.২ গুণ বেশি বেড়ে যায়।
আরও পড়ুন- চেনা মুখই অচেনা! ভয়াবহ রোগের শিকার বহু কোভিড আক্রান্ত, উপসর্গ?
বিশেষজ্ঞরা কী বলছেন?
এনওয়াইইউ ল্যাঙ্গোন মেডিকেল সেন্টারের মেডিসিনের অধ্যাপক ডাঃ মার্ক সিগেল, টিকা দেওয়ার সামগ্রিক নিরাপত্তা এবং সুবিধার উপরই জোর দিয়েছেন। জৈবপ্রযুক্তি সংস্থা সেন্টিভাইক্সের সিইও তথা বিশেষজ্ঞ জ্যাকব গ্লানভিল জানিয়েছেন, ভ্যাকসিন নেওয়ার পরে প্রতিকূল ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা তুলনায় কম, কোভিডে আক্রান্ত হওয়ার পর এই নানাবিধ জটিলতা বাড়ার আশঙ্কাই বেশি।
ভারতীয়রাও কি কোভিড ভ্যাকসিন নিয়ে ভুগছেন?
ভেলোরের খ্রিস্টান মেডিকেল কলেজের একটি নতুন গবেষণায় দেখা গেছে, যারা কোভিড ১৯ আক্রান্ত হওয়ার পরেও বেঁচে গিয়েছেন তারা ইওরোপিয় এবং চিনের মানুষদের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি হারে ফুসফুস এবং শ্বাসকষ্টের সমস্যায় ভুগছেন।
গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছে যে, এই আক্রান্ত মানুষরা বেশিরভাগই কোভিড-১৯ সংক্রমণের এক বছরের মধ্যে সুস্থ হয়ে উঠেছেন, তবে অন্যদের ফুসফুসের স্থায়ী ক্ষতি হয়েছে।
ভারতে মহামারীর প্রথম ঢেউয়ের সময় ২০৭ জন ভারতীয়ের উপর একটি গবেষণা করা হয়েছিল। পালমোনারি ফাংশন পরীক্ষা, ছয় মিনিটের হাঁটার পরীক্ষা, বুকের রেডিওগ্রাফি এবং সেন্ট জর্জের শ্বাসযন্ত্র সংক্রান্ত নানা প্রশ্ন ও পরীক্ষা চালানো হয় তাঁদের উপর।
এই রোগীদের ফুসফুসের কার্যকারিতা পরীক্ষা, ব্যায়াম করার ক্ষমতা, বুকের রেডিওগ্রাফি এবং জীবনের গুণগত মানের মূল্যায়ন করার পরে দেখা যায় কোভিড-১৯ আক্রান্ত হওয়ার পরে ফুসফুসের ক্ষতি হয়ে গিয়েছে। একবার করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পরে বেশিরভাগ মানুষেরই ফুসফুসের কার্যকারিতায় স্থায়ী সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে।