পরিচারিকাকে গরম তাওয়ার ছ‍্যাঁকা, প্রস্রাব চাটানো! অভিযুক্ত খোদ 'বেটি বাঁচাও'-এর কাণ্ডারি, কে এই সীমা পাত্র?

দলিত মহিলার নিগ্রহে অভিযুক্ত নেত্রী 'বেটি বাঁচাও, বেটি পড়াও' প্রকল্পের একজন অন্যতম আহ্বায়ক।

বিজেপির জাতীয় মহিলা মোর্চার কার্যকরী কমিটির সদস্যের বিরুদ্ধেই এবার মহিলা নির্যাতনের অভিযোগ। বাড়ির পরিচারিকাকে নির্মম অত্যাচারে অভিযুক্ত হলেন ঝাড়খণ্ডের বিজেপি নেত্রী সীমা পাত্র। যাঁর স্বামী মহেশ্বর প্রাক্তন আইএএস আধিকারিক। গেরুয়া নেত্রীর এই কাণ্ড প্রকাশ্যে আসতেই ঝাড়খণ্ডে 'অপারেশন লোটাস' বিতর্কের মধ্যেই ফের অস্বস্তিতে বিজেপি। তড়িঘড়ি নেত্রীকে সাসপেন্ড করে দল। বিবৃতি দিয়ে এই ঘটনার নিন্দা করা হয় নেতৃত্বের তরফে। ঝাড়খণ্ডের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বাবুলাল মারাণ্ডি মুখ খোলেন এই ঘটনার বিরুদ্ধে। অত্যাচারিত ওই পরিচারিকার ভিডিও ভাইরাল হতেই নিন্দার ঝড় ওঠে সব মহলে। হেমন্ত সোরেনের সরকার ঘটনায় কড়া পদক্ষেপের আগেই পুলিশের গাফিলতির বিরুদ্ধে সোচ্চার হন রাজ্যপাল রমেশ বাইস। নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। সীমার গ্রেফতারির পাশাপাশি এই ঘটনায় তাঁর ছেলে-সহ পরিবারের অন্য সদস্যদের ভূমিকা খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা। পরিচারিকা নির্যাতন-কাণ্ডে স্বতঃপ্রণোদিত উদ্যোগ নিয়েছে মহিলা কমিশন। তৎপর হয়েছে অনগ্রসর শ্রেণির জন্য নির্ধারিত কমিশনও। প্রসঙ্গত, এই নেত্রী প্রধানমন্ত্রীর 'বেটি বাঁচাও, বেটি পড়াও' প্রকল্পের একজন অন্যতম আহ্বায়ক।

এখানেই উঠেছে প্রশ্ন। ঘটনার পরেই সরব হয়েছে বিরোধীরা। প্রশ্ন উঠেছে ঝাড়খণ্ড সরকার ও পুলিশের ভূমিকা নিয়েও, বিশেষত যেখানে একজন দলিত মহিলার ওপর অত্যাচারের বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছে। গরম তাওয়া দিয়ে ছ্যাঁকা থেকে শুরু করে মারধর, মেঝেতে থাকা প্রস্রাব চাটনোর মতো নৃশংস অভিযোগ একজন প্রতিষ্ঠিত পরিবারের রাজনৈতিক নেত্রীর বিরুদ্ধে ওঠায় হতবাক মনোবিদরাও। বিজেপি-বিরোধীদের অভিযোগ, মুখে মহিলাদের সুরক্ষা আর ভালো রাখার কথা বললেও, মোদি-শাহর দলের নেতারা আসলে মহিলাদের কেমন করে ভাল রাখতে পারেন, এই ঘটনা তারই প্রমাণ! পাল্টা, বিজেপি-বিরোধী ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চা-র সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছে বিজেপি নেতৃত্ব। তাঁদের দাবি, এত বড় অভিযোগের পরেও কেন ব্যবস্থা নিল না হেমন্ত সোরেনের পুলিশ, প্রশাসন।

আরও পড়ুন: ‘বেটি বাঁচাও’-এর দেশে নির্বিচারে হয় ভ্রুণহত‍্যা, পুত্রসন্তানের নির্লজ্জ চাহিদা কমেনি আজও

প্রশ্ন উঠছে এখানেই, অভিযোগ আর পাল্টা অভিযোগের দাবদাহে কীভাবে লঘু হয়ে যেতে পারে এই মারাত্মক অপরাধ! ১০ বছরের বেশি সময় ধরে পরিচারিকা হিসেবে কাজ করা একজন মহিলার ওপরে এমন অত্যাচার করা যায় কতটা অমানবিক হলে! দিনের পর দিন অকথ্য নৃশংস অত্যাচারে জর্জরিত করা যায় বাড়ির সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ সদস্যকে। কেউ কেউ বলছেন, এক মহিলার দলিত পরিচয়ের ঊর্ধ্বে উঠতে পারেননি অভিযুক্ত ওই বিজেপি নেত্রী। অমানুষিক শ্রমের পরেও এই অত্যাচার চালিয়েছেন দিনের পর দিন। যা প্রকাশ্যে আসেনি। ট‍্যুইটার এবং 'দলিত ভয়েস'-এর সূত্রে হঠাৎ প্রকাশ্যে এসেছে এই দলিত মহিলার ওপর অত্যাচারের আর এক করুণ ছবি। যা শোরগোল ফেলেছে আবার! যদিও সংশ্লিষ্ট মহলের একটি অংশের দাবি, এর শেষ নেই, যতদিন না মানুষের পরিচয় তাঁর জাত নয়, মানবিকতা দিয়ে হবে, ততদিন নিস্তার নেই এর থেকে।

এই ঘটনার পরেই দেশজুড়ে দলিত অর্থাৎ তথাকথিত অনগ্রসর শ্রেণির সামগ্রিক অবস্থান নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন। যেখানে প্রায় প্রতি মুহূর্তেই অভিযোগ উঠছে দলিতের প্রতি অত্যাচার নিয়ে। দেশের প্রায় সব রাজ্যে, বিশেষত, গো-বলয়ের রাজ্যে এর প্রভাব বাড়ছে ক্রমশ! সেই প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে, দেশের রাষ্ট্রপতি অধিবাসী সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি হয়ে বিশ্বরেকর্ড গড়লেও দেশজুড়ে আসলে কেমন আছেন দলিতরা, মহিলারা; নাকি প্রভাবশালী সীমা, মহেশ্বরদের অত্যাচারে ক্রমশ পিছিয়েই চলেছে অনগ্রসররা- প্রশ্ন উঠছে তা নিয়েও। পরিসংখ্যান বলছে, দেশের মোট জনসংখ্যার অর্ধেকের বেশি দলিত অথবা অনগ্রসর শ্রেণির। শাসকের ক্ষমতায় টিকে থাকা অথবা দেশের সামগ্রিক উন্নয়নে এই অংশের ভূমিকা স্বাভাবিকভাবেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সেখানে দাঁড়িয়ে এই অংশের মন রাখতে বারবার সোচ্চার হন শাসকরা। কেন্দ্রের বিজেপি সরকার, মোদি কৌশল রাষ্ট্রপতি নির্বাচন থেকে শুরু করে একাধিক কেন্দ্রীয় প্রকল্প, সব ক্ষেত্রেই বিশেষ ভূমিকা নিয়েছে। এই অবস্থায় লোকসভা নির্বাচনের আবহ, কেন্দ্রের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগের মধ্যেই ঝাড়খণ্ড রাজ্যের মতো দলিত, আদিবাসী-অধ্যুষিত রাজ্যে এই ঘটনা স্বাভাবিকভাবেই চাপে ফেলেছে বিজেপিকে।

More Articles