সারে না সহজে, অর্ধেক আমেরিকা জুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে এই রোগ! কীভাবে বাঁচাবেন নিজেকে?
Untreatable Super Fungus Danger : মানুষও রীতিমতো আতঙ্কিত। তাহলে কি নতুন করে আবার মহামারীর প্রকোপে পড়তে চলেছে আমেরিকা?
একের পর এক মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন। হাসপাতালে রীতিমতো লাইন পড়ছে রোগীদের। ডাক্তাররাও হাঁপিয়ে উঠছেন রোগী দেখতে দেখতে। প্রায় প্রত্যেকেই একই রোগে আক্রান্ত। নতুন করে করোনা বাড়ল? মহামারীর আকার নিচ্ছে আবার? না, এই খেল করোনার নয়। বরং আমেরিকার নতুন ত্রাস এখন হয়ে উঠেছে সামান্য একটা ছত্রাক। আর সেটাই মার্কিন মুলুকের অর্ধেকেরও বেশি জায়গায় ছড়িয়ে পড়েছে। মানুষও রীতিমতো আতঙ্কিত। তাহলে কি নতুন করে আবার মহামারীর প্রকোপে পড়তে চলেছে আমেরিকা?
বিজ্ঞানের ভাষায়, এই বিশেষ ছত্রাকের নাক ক্যান্ডিডা অরিস (Candida auris)। প্রায় ১৫ বছর আগে জাপানে প্রথমবার এই ছত্রাকের সন্ধান পান গবেষকরা। তখন থেকেই এই ছত্রাকজনিত রোগের ব্যাপারেও একটু একটু করে গবেষণা এগোতে থাকে। আমেরিকার সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের (CDC) পরিসংখ্যান বলছে, ওই দেশে ২০১৬ সাল থেকে এই ছত্রাকের প্রাদুর্ভাব শুরু হয়। তারপর থেকে যত দিন গিয়েছে, এর সংক্রমণ বেড়েছে। কিন্তু প্রথমে এত মারাত্মক আকার ছিল না। ২০২২ সাল থেকে রীতিমতো ভয়াবহ আকার ধারণ করে এই ছত্রাকটি। আক্রান্তের সংখ্যাও হু হু করে বাড়তে থাকে।
আরও পড়ুন : ভারতের প্রায় ৬ কোটি মানুষ এই রোগে আক্রান্ত, যে সমীক্ষা চিন্তা বাড়াচ্ছে দেশের চিকিৎসকদের
কী এই ক্যান্ডিডা অরিস?
বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই ছত্রাকটি আসলে ইস্টেরই একটি বিশেষ প্রজাতি। কিন্তু এর মারণ ক্ষমতা আর ভয়াবহতা অনেকটাই বেশি। এখনও অবধি পৃথিবীর ৩০টিরও বেশি দেশে এর অস্তিত্ব পাওয়া গিয়েছে। এই মুহূর্তে আমেরিকার ৫০টি রাজ্যের মধ্যেই অর্ধেকেরও বেশি জায়গায় ছড়িয়ে পড়েছে এটি। পরিসংখ্যানের দিক দিয়ে দেখলে এর ভয়াবহতা বোঝা যাবে। ২০১৯ থেকে ২০২১-’২২, এই ক’বছরের মধ্যে এই ছত্রাকের সংক্রমণ তিনগুণ হয়ে গিয়েছে। ২০১৬ সালে যেখানে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল মাত্র ৫৩, সেখানে পাঁচ বছর পর ২০২২-এ সেই অঙ্কটি গিয়ে দাঁড়িয়েছে ২৩৭৭-এ! হিসেব বলে, ৪০ গুণেরও থেকে বেশি বেড়ে গিয়েছে এর সংক্রমণ। আর তার জেরেই বিপদে পড়েছে মার্কিন মুলুক।
কোথায় আঘাত হানে এই ছত্রাক?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ক্যান্ডিডা ছত্রাক মূলত মানুষের ত্বকে আক্রমণ করে। অত্যন্ত দ্রুত গতিতে বংশবিস্তার করে, এবং মানুষের গোটা শরীরটাকেই নিজেদের ‘বাসা’ বানিয়ে ফেলে। এবং যেহেতু এটি ছত্রাকজনিত রোগ, তাই আক্রান্তের শরীর, কাপড় কিংবা অন্য ব্যবহৃত জিনিসের সংস্পর্শে এলেই তা ছড়িয়ে পড়ে।
কারা আক্রান্ত হন এই রোগে?
আমেরিকার সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল জানাচ্ছে, মূলত বয়স্ক মানুষ, যাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম, তাঁদেরকেই বেশি আক্রমণ করছে এই ছত্রাক। এই রোগের মর্টালিটি রেট প্রায় ৬০ শতাংশ! কাজেই, একেবারে হেলাফেলা করার নয়। এছাড়াও গবেষকরা বলছেন, বিভিন্ন সমস্যায় যাদের চিকিৎসা চলছে, তাঁরাও আক্রান্ত হতে পারেন। কীরকম? যারা অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করেন; এর সঙ্গে যাদের শরীরে শ্বাসনালীর টিউব, ক্যাথিটার, ফিডিং টিউব লাগানো আছে, তাঁদেরও আক্রমণ করতে পারে এই ক্যান্ডিডা ছত্রাক।
আরও পড়ুন : ঝড়বৃষ্টি হলেই বাড়ছে হাঁপানি? জানেন কোন কঠিন অসুখের শিকার আপনি?
রোগের লক্ষণ
বিভিন্ন লক্ষণ দেখা দিতে পারে এই ছত্রাক আক্রমণ করলে। যে কোনও জায়গা দিয়ে এই ছত্রাক হানা দিতে পারে। শরীরের কোনও কাটা স্থান হোক কিংবা কান – এর প্রবেশের জায়গা ভিন্ন ভিন্ন। একবার এই ছত্রাক হানা দিলে বেশকিছু লক্ষণ দেখা যায়
১) জ্বর
২) তীব্র মাথাব্যথা, সঙ্গে বমি বমি ভাব
৩) শীত শীত ভাব, সঙ্গে চুলকানি, যা সহজে যায় না
সবচেয়ে বড় কথা, করোনা মহামারীর পর এই ছত্রাকের সংক্রমনের হার অনেকটাই বেড়ে গিয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থায় বড় আঘাত হেনেছে করোনা ভাইরাস। তারপরই বিভিন্ন রোগ নিজেদের অস্ত্রশস্ত্র আরও ধারালো করেছে। আরও বড় কথা হল, এখনও অবধি এই রোগের কোনও সুনির্দিষ্ট প্রতিকার নেই। যত তাড়াতাড়ি ধরা পড়বে, ততই ভালো। নয়ত গোটা শরীরে ছড়িয়ে পড়লে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। ভেন্টিলেশনে যাওয়ারও প্রয়োজন হতে পারে।