বিষাক্ততম সাপের কামড়ে মৃত্যু, ২০ বছরের এই তরুণ না থাকলে তৈরিই হতো না প্রতিষেধক
Snake Antivenom: রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দেখা যায় জিভ নাড়াতে বা গিলতে পারছেন না কেভিন।
একটা মৃত্যুর পাশে দাঁড়িয়ে থাকে অনেকগুলি জীবন। কথাটা খানিক নিজের জীবন দিয়েই প্রমাণ করে গেছিলেন বছর কুড়ির এক তরুণ। নেশা সাপধরা। আর নেশার তাড়াতেই জীবনে বাঁচার শুরুতেই শেষ, যাপনের শুরুতেই মৃত্যু। তবে তাঁর মৃত্যু বাঁচিয়ে দিয়েছে লক্ষ লক্ষ জীবন। ১৯৫০ সালে এই তরুণ শিক্ষানবিশ হারপেটোলজিস্ট এবং সাপ শিকারি বিশ্বের সবচেয়ে মারাত্মক সাপ জ্যান্ত ধরেছিলেন অ্যান্টিভেনম তৈরির গবেষণায় ব্যবহার করার জন্য। পরিণতি হয়েছিল মর্মান্তিক।
কতই বা বয়স তখন, কুড়ি ছুঁয়েছে সবে। সদ্য তারুণ্যে পা দেওয়া ছেলেটির শখই হচ্ছে সাপ ধরা। তাও যে সে সাপ না। পৃথিবীর সবচেয়ে বিষাক্ত সাপগুলিই টানত তাঁকে। কেভিন বুডেন এই অল্প বয়স সত্ত্বেও তাই হয়ে উঠেছিলেন অভিজ্ঞ সাপ শিকারি। স্থানীয় নানা কাগজপত্রে তাঁর বিষাক্ত সাপ ধরার শখের কথা ফলাও করে ছাপা হতো। এক বছরে ৫৯টি সাপ ধরেছিলেন কেভিন। অথচ মাত্র পাঁচবার সাপে ছোবল মারে তাঁকে। সেই পাঁচবার অবশ্য জরুরি চিকিৎসার প্রয়োজন পড়ে তাঁর। শেষবার আর ফেরা হয়নি।
আরও পড়ুন- চিকিৎসার নামে খুন হয়েছে শ’য়ে শ’য়ে মুরগি! সাপের কামড়ের এই টোটকা শুনে শিউরে উঠবেন
২০ বছর বয়সে, কেভিন বুডেন এবং তাঁর দুই সহকর্মী একটি তাইপান সাপ ধরার চেষ্টায় কুইন্সল্যান্ডে গিয়েছিলেন। তাইপান হচ্ছে একটি দ্রুত, অত্যন্ত বিষাক্ত এবং মারাত্মক সাপের প্রজাতি। এই সাপেদের বিষের কোনও অ্যান্টিভেনম ছিল না। সাপের সন্ধানে নেমে কেভিন বুডেন একটি ৬ ফুট লম্বা তাইপান ধরে ফেলেন। যখন সাপটিকে ধরে একটি ব্যাগে ভরতে যান, কোনও মতে ফসকে পালাতে যায় সেটি। পালানোর চেষ্টাতেই সাপটি মোক্ষম এক কামড় বসিয়ে দেয় কেভিনের হাতের বুড়ো আঙুলে।
মাথা ঠান্ডা রেখে ওই অবস্থাতেই কেভিন অন্য হাত দিয়ে সাপটিকে ধরে ব্যাগের মধ্যে ঢুকিয়ে ফেলেন। সাপটিকে ওই অবস্থাতেই ধরে মূল রাস্তার দিকে এগিয়ে যান কেভিন। মনে রাখতে হবে, তাইপান যে সে সাপ নয় কিন্তু! এমন একটি মারাত্মক সাপ ধরে রেখেছিলেন কেভিন যার কোনও অ্যান্টিভেনম কোনওদিন তৈরিই হয়নি। তক্ষুনি চিকিৎসা না হলে প্রাণ যেতে পারে কেভিনের। জরুরি চিকিৎসার জন্য ডাক্তারদের কাছে যেতেই হবে কেভিনকে। কিন্তু রাস্তায় উঠে নিজের কথা ভাবা দূর, পথে এক ট্রাক চালককে থামিয়ে সাপটিকে গন্তব্যে নিয়ে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করলেন কেভিন। কারণ এই তাইপানটি ছিল সেই সময় অবধি ধরা পড়া একমাত্র জীবিত এই গোত্রের সাপ। এই সাপটি জ্যান্ত অবস্থাতেই অ্যান্টিভেনম গবেষকদের কাছে পৌঁছনো দরকার ছিল।
যে সাপটি ধরেছিলেন এবং গবেষকদের কাছে পাঠিয়েছিলেন কেভিন তা মেলবোর্নে পাঠানো হয়েছিল। সেখানে ১৯৫৫ সালে একটি অ্যান্টিভেনম তৈরিতে বিশাল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল এই সাপটি। তবে কেভিনের অবস্থা ছিল শোচনীয়। কুইন্সল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেনোমোলজিস্ট ব্রায়ান ফ্রাই ৮০ বছর পরে ওই বিষের নমুনা দেখেছিলেন। তখনও সেই বিষয় ছিল প্রচণ্ড শক্তিশালী!
আরও পড়ুন- পৃথিবীর ভয়ঙ্করতম দ্বীপ এটিই! ১১ হাজার বছর ধরে এখানে কেবল বাস বিষাক্ত সাপেদের
অ্যান্টিভেনম নেই জেনেও কোনও সাপ ধরতে যাওয়া কী ভয়ঙ্কর চ্যালেঞ্জিং যে কোনও মানুষই বুঝবেন। যে সাপের বিষ থেকে প্রথম অ্যান্টিভেনম তৈরি হবে সেটি বিশ্বের সেই সাপ, যার ধারে কাছে যাওয়াটাই কঠিন এবং ঝুঁকিপূর্ণ। কেভিন এই ঝুঁকি নিয়েছিলেন। হাসপাতালে আসার পর কেভিনের ডাক্তাররা দেখেন, নিজের সাপে কামড়ের বিষয়টি চেয়েও এই সাপটিকে নিয়েই বেশি চিন্তিত তিনি। কেভিনের বিশ্বাস ছিল, এই সাপের কামড়ে যারা মারা গিয়েছেন, তারা বিষের চেয়েও বেশি মারা গিয়েছেন ভয়ের তাড়নায়। বুড়ো আঙুলটি কেটেও ফেলতে চাননি কেভিন কারণ সেটি সেই যন্ত্রণার চিহ্ন বয়ে চলেছে।
কেভিন বুডেনকে টাইগার স্নেক অ্যান্টিভেনম দেওয়া হয়েছিল, যা সাপের বিষকে জমাট বাঁধতে সাহায্য করেছিল। কিন্তু স্নায়ুতন্ত্রের উপর তাইপানের বিষের প্রভাব ঠেকাতে পারেনি এই অ্যান্টিভেনম। হলুদ তরল বমি করতে শুরু করেন কেভিন। শুরু হয় মারাত্মক মাথাব্যথা এবং পেশিও দুর্বল হতে শুরু করে। রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দেখা যায় জিভ নাড়াতে বা গিলতে পারছেন না কেভিন। মুখ কালো, যেন কী যেন এক শক্তি ভতর থেকে টেনে নিয়েছে সব রস।
চিকিত্সকরা প্রথমে ভেবেছিলেন কেভিন সুস্থ হয়ে উঠবেন কিন্তু পরের দিনই তিনি মারা যান। তাঁর এই মৃত্যু অ্যান্টিভেনমের জন্ম দেয়। তারপর থেকে তাইপানের কামড়ে আর কোনও মৃত্যু ঘটেনি।