ভারতীয়ের মাথা কেটে ভিডিও করে পাঠানো হল পাকিস্তানে! হাড়হিম এই ঘটনার নেপথ্যে কারা?

Delhi man beheaded ISIS style Pakistan : এবার সিরিয়া নয়; অকুস্থল খোদ ভারত! শুধু তাই নয়, ভারতীয়ের মাথা কাটার হাড়হিম সেই ভিডিও পাঠানো হল সোজা পাকিস্তানে!

এক ঝলক দেখলে মনে পড়ে যাবে কয়েক বছর আগের কথা। তখন গোটা বিশ্বেই ভয়াবহতার আরেক নাম হয়ে গিয়েছিল ‘আইসিস’। আতঙ্ক ছড়াতে এই জঙ্গি গোষ্ঠীর একটি বিশেষ পদ্ধতি ছিল। বন্দিকে গেরুয়া কাপড় পরিয়ে ভিডিও ক্যামেরার সামনে বসানো হতো। তারপর ছোট ছুরি দিয়ে, জীবন্ত অবস্থাতেই তাঁর মাথা কাটা হতো। গোটা দৃশ্যটি ভিডিওবন্দি করে নেট মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হতো। ২০২৩-এর জানুয়ারিতেও সেই একই জিনিস ঘটল। তবে এবার সিরিয়া নয়; অকুস্থল খোদ ভারত! শুধু তাই নয়, ভারতীয়ের মাথা কাটার হাড়হিম সেই ভিডিও পাঠানো হল সোজা পাকিস্তানে!

ঘটনাস্থল সেই দিল্লি। গ্যাংস্টার ঘটিত একটি কেসের তদন্ত করছিল দিল্লি পুলিশ। সেই কেসের সূত্রেই নৌশাদ বলে একজনকে গ্রেফতার করে পুলিস। এর আগেও এই ব্যক্তিকে বেশ কয়েকবার হাজতবাস করতে হয়েছে। নব্বইয়ের দশকের শুরুর দিকে খুন, তারপর ২০২০ সালে জুলুমবাজির ঘটনায় জেল খেটেছে নৌশাদ। ছাড়া পেয়ে যাওয়ার পরও অপরাধে কোনও না কোনও ভাবে জড়িয়ে পড়ে সে। সেই নৌশাদকেই জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করল দিল্লি পুলিস। মামুলি কেস ভেবে শুরু করেছিলেন অফিসাররা। কিন্তু জেরার মুখে হঠাৎই এমন কিছু বলল নৌশাদ যে, পুলিশের দুঁদে অফিসারদেরও কপালে ভাঁজ পড়ে যায়।

পুলিসি জেরার সামনে নৌশাদ বলে, সে কয়েকদিন আগেই এক যুবককে খুন করেছে। তারপর তাঁর দেহ আট টুকরো করে কেটে পুকুরে ফেলে দিয়েছে। শুধু সে-ই নয়, এই ঘটনায় আরও একজন যুক্ত রয়েছে। নির্বিকার মুখে এমন কথা শুনে তদন্তে নামে পুলিশ। ভালস্বা ডেয়ারি এলাকার একটি পুকুর থেকে পাঁচটি দেহাংশ উদ্ধারও করা হয়। এরপর গ্রেফতার করা হয় এই খুনে নৌশাদের আরেক সঙ্গী জগজিৎ সিংকে। কিন্তু কে এই যুবক? এখনও তাঁর পরিচয় পাওয়া যায়নি। কিন্তু যে ঘটনার বিবরণ পাওয়া গেল, তা শুনে গোয়েন্দারাও সতর্ক হয়ে পড়লেন।

শুরুর দিকে নৌশাদ যখন জেলে ছিল, তখন তার সঙ্গে আলাপ হয় সোহেল নামে এক ব্যক্তির। এই সোহেল আদতে লস্কর-ই-তইবার জঙ্গি। সেখানেই দুজনের চেনা পরিচিতি তৈরি হয়। ২০১৩ সালে জেল থেকে ছাড়া পায় সোহেল। তারপর সে সোজা পাকিস্তান উড়ে যায়। এখনও সেখানেই রয়েছে এই সোহেল। এদিকে দ্বিতীয়বার হাজতবাসের পর ২০২২ সালে মুক্তি পায় নৌশাদ। তারপরই সে সোহেলের সঙ্গে যোগাযোগ করে। তাদের সঙ্গে যোগ দেয় জগজিৎ সিং। এই ব্যক্তি কানাডার এক জঙ্গি অর্শদীপ সিং গিল ওরফে অর্শ দাল্লার সহকারী। সোহেলের সঙ্গে ঠিক কী কথা হয়েছিল, নৌশাদও জঙ্গি গোষ্ঠীর সদস্য কিনা সেসব খতিয়ে দেখছে পুলিশ। সেইসঙ্গে প্রজাতন্ত্র দিবসের আগেই এমন ঘটনা হওয়ায় নাশকতার সন্দেহও উড়িয়ে দিচ্ছেন না অফিসাররা।

কিন্তু এই খুন কেন? এর সঠিক উত্তর এখনও পায়নি পুলিশ। তবে জেরায় নৌশাদ ও জগজিৎ জানিয়েছে, পাকিস্তানে বসে থাকা তাদের ‘বস’ খুব চোটপাট করেছিল। তারা খুনের যোগ্য নয়, সেটাও বলা হয়েছিল। তাই নিজেদের ‘যোগ্য’ প্রমাণ করতেই এমন কাণ্ড! জেরায় আরও জানা গিয়েছে, দিন কয়েক আগে এই যুবকের সঙ্গে পরিচয় হয় নৌশাদের। অজ্ঞাতপরিচয় এই যুবক আসলে মাদকাসক্ত ছিলেন। সেই লোভ দেখিয়ে নিজের ভাড়াবাড়িতে নিয়ে আসে নৌশাদ। এরপরই জগজিৎ আর নৌশাদ মিলে তাঁকে খুন করে।

তবে হাড়হিম করা বিষয়টি হল, খুনের পুরো ঘটনাটাই ভিডিও রেকর্ড করা হয়। বিশেষ করে, আইসিস জঙ্গিদের মতো ওই যুবকের মাথা কেটে নেওয়া হয়। সেই ভিডিও পাঠিয়ে দেওয়া হয় পাকিস্তানে! তদন্তকারী অফিসাররা ওই বাড়ি থেকে দুটি গ্রেনেডও উদ্ধার করেছেন বলে দাবি পুলিশের। তাহলে কি ফের কোনও নাশকতার ছক? আর পুরো ঘটনাটির সঙ্গে জড়িয়ে আছে সোহেল ও লস্কর-ই-তইবা? ভারতীয় গোয়েন্দাদের দাবি, এই মুহূর্তে পাকিস্তানে আইএসআই-এর মদতে বসবাস করছে সোহেল। এই ঘটনায় আইএসআইয়েরও হাত থাকতে পারে বলে অনুমান।

More Articles