বৃষ্টি, ধসে বিপর্যস্ত উত্তরবঙ্গ, কার্নিভাল স্থগিত করা গেল না কেন?
Uttarbanga Disaster: শনিবার উত্তরবঙ্গে ভয়াবহ বিপর্যয়ের পর রবিবার সারাদিন কেটে গেলেও মুখ্যমন্ত্রীর দেখা মেলেনি উত্তরবঙ্গে। তিনি ব্যস্ত ছিলেন পুজো কার্নিভালে, কলকাতায়।
শনিবার রাতে অতি ভারী বৃষ্টিতে পাহাড়ে ধস নেমে বিচ্ছিন্ন উত্তরবঙ্গের জনজীবন। রবিবার কার্নিভাল হলো কলকাতায় স্বাভাবিক ছন্দেই। পাহাড় ও ডুয়ার্স মিলিয়ে এখনও পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা ২৮ বলে জানা যাচ্ছে। মৃতদের পরিবারকে পাঁচ লক্ষ টাকা করে আর্থিক সাহায্যের ঘোষণা মুখ্যমন্ত্রীর। শনিবার ভয়াবহ বিপর্যয়ের পর রবিবার সারাদিন কেটে গেলেও মুখ্যমন্ত্রীর দেখা মেলেনি উত্তরবঙ্গে। তিনি ব্যস্ত ছিলেন পুজো কার্নিভালে, কলকাতায়। আর এখানেই উঠছে প্রশ্ন। রাজ্যের এক অংশে এত বড় বিপর্যয়, এতগুলো মানুষের মৃত্যুর পরও কি কাার্নিভাল বন্ধ রেখে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় যাওয়া যেত না?
প্রশ্ন উঠছে, কী ভাবে মুখ্যমন্ত্রী বললেন, "আগামীকাল (সোমবার) যাব"? মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, কার্নিভালে প্রায় ১০০টি পুজো কমিটি অংশগ্রহণ করেছে। তাই তিনি উপস্থিত না হলে, তা অসম্মানজনক হতো। ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্যে সমস্ত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ তিনি নিয়েছেন। সোমবার বেলা তিনটের মধ্যে মুখ্যসচিবকে নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী উত্তরবঙ্গে পৌঁছাবেন বলে জানান।

দুর্গাপুজো কার্নিভালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী কার্নিভাল নিয়ে তোপ দেগেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। কটাক্ষ করে তিনি বলেছেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে কার্নিভাল আগে, বিপর্যয় পরে। এত প্রাণহানির পরও তিনি কলকাতায় উৎসব করছেন, এটা দুঃখজনক। মুখ্যমন্ত্রীর সবসময়ই অগ্রাধিকার বাছাইয়ে সমস্যা রয়েছে।” কিন্তু দোষারোপ করে কি সমস্যার সমাধান পাওয়া যায়? বিরোধী দলনেতার ভূমিকা কী? তিনি কেন উত্তরবঙ্গে রবিবার পৌঁছলেন না? প্রশ্ন তো উঠেই যায়।
আরও পড়ুন- বৃষ্টিতে, মৃত্যুতে ভেসে যাচ্ছে হিমাচল! ভারতের পাহাড় কি ধ্বংসের মুখে?
সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিমের কথায়, মুখ্যমন্ত্রীর এই সিদ্ধান্ত চরম ‘অসংবেদনশীলতার পরিচয়’। তিনি বলেন, “যখন উত্তরবঙ্গে মৃত্যুমিছিল চলছে, তখন কলকাতায় কার্নিভাল আয়োজন করা মানবিকতার পরিপন্থী।” তিনি আরও জানান যে, সিপিএমের রেড ভলেন্টিয়ার্সরা উত্তরবঙ্গের পাশে দাঁড়াবে।
প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি শুভঙ্কর সরকার উত্তরবঙ্গের বিধ্বংসী প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ঘটনায় উদ্বিগ্ন হয়ে জানান, “বহু জীবনহানি এবং আর্থিক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। আমরা আমাদের সাধ্য অনুযায়ী দুর্গতদের পাশে গিয়ে দাঁড়াবো। আমরা স্থানীয় কংগ্রেস নেতৃত্বকেও বলছি, প্রশাসনের সঙ্গে সর্বক্ষণ যোগাযোগ স্থাপন করে চলুন৷ এই দুর্যোগের সময় 'রাজনীতি' করতে চাইনা আমরা। কিন্তু যদি মানুষের প্রতি বঞ্চনা হয়, ত্রাণ নিয়ে দলবাজি হয় তবে আমরা রাজনৈতিক ভাবেই তার মোকাবিলা করব।”

বিপর্যস্ত উত্তরবঙ্গ
তবে শাসকদলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বিরোধীদের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে রবিবার বলেছেন, “মুখ্যমন্ত্রী দায়িত্বশীল ভাবে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন। আগামীকালই উত্তরবঙ্গে যাচ্ছেন। বিরোধীদের উচিত রাজনীতি না করে দুর্গতদের সাহায্যে নামা।” তিনি আরও বলেন, “যারা বলছেন কেন কার্নিভাল হলো? তাদের একটা জাতক্রোধ রয়েছে কার্নিভালের উপর। পুজোটা এখন আর আনন্দে নেই, পুজোটা একটা সিস্টেম, পুজোটা একটা পর্যটন, পুজোটা একটা ইকোনমি। সকালে যখন খবর (উত্তরবঙ্গে বিপর্যয়ের) আসছে, ততক্ষনে কার্নিভালের প্রস্তুতি সম্পূর্ণ। ফলে আচমকা কয়েক ঘন্টার নোটিশে এত বড় আয়োজন কি স্থগিত করে দেওয়া সম্ভব? কিন্তু সকলেরই মন পড়েছিল উত্তরবঙ্গে। যেটুকু না হলে নয়, সেটুকু করে আজকের অনুষ্ঠান শেষ হয়েছে।”

দুর্গাপুজো কার্নিভালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
কিন্তু এই আগামীকালেই আপত্তি আম জনতার একাংশের। কেন রবিবারই উত্তরবঙ্গে গেলেন না মুখ্যমন্ত্রী? উত্তরের মানুষরাও তো ওঁর রাজ্যেরই বাসিন্দা। সামাজিক মাধ্যমেও প্রশ্ন তোলা হচ্ছে, পরিবারের সদস্যের শবদেহের উপর দিয়ে কার্নিভালে আনন্দ উদযাপন করা যায়?

Whatsapp
