হুহু করে বাড়ছে ডেঙ্গি ম্যালেরিয়া, কী ভাবে সতর্ক হবেন?
Dengue: ইতিমধ্যেই গোটা দেশে ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা দেড় লক্ষ ছাড়িয়ে গেছে। পশ্চিমবঙ্গেও আক্রান্ত প্রায় ২১ হাজার। ইতিমধ্যেই মৃত্যু হয়েছে ২৬ জনের। খাস কলকাতায় মৃত্যু হয়েছে ৬ জনের।
হু হু করে শহর,শহরতলি এলাকায় বাড়ছে ডেঙ্গু,ম্যালেরিয়ার প্রকোপ। যদিও ডেঙ্গুর তুলনায় ম্যালেরিয়া আক্রান্তের সংখ্যা এখনও পর্যন্ত বেশ কিছুটা কম। তবু, রোগের বাড়াবাড়ি দেখা যাচ্ছে উভয় ক্ষেত্রেই। উল্লেখ্য, কলকাতার পাশাপাশি বাংলাদেশেও ব্যাপকভাবে প্রভাব বিস্তার করছে ডেঙ্গু। ইতিমধ্যেই গোটা দেশে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা দেড় লাখ ছাড়িয়ে গেছে। পশ্চিমবঙ্গেও আক্রান্ত প্রায় ২১ হাজার। ইতিমধ্যেই মৃত্যু হয়েছে ২৬ জনের। খাস কলকাতায় মৃত্যু হয়েছে ৬ জনের। তবে মৃত্যুর হার সর্বাধিক উত্তর ২৪ পরগণা জেলায়। দমদমের মতিঝিল অঞ্চলের ষোল বছর বয়সী এক নাবালিকার মৃত্যু ঘিরে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। নাবালিকার পারিবারিক সূত্রে খবর, মতিঝিলের ঘিঞ্জি দোকানঘেরা অঞ্চলে বাস ছিল তাঁদের। ডেঙ্গু পজিটিভ রিপোর্ট আসার কিছুদিনের মধ্যেই তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। শনিবার নাবালিকার মৃত্যু ঘটেছে। সোমবার রাতে যাদবপুরের কেপিসি হাসপাতালে মৃত্যু হয়েছে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের এক পড়ুয়ারও। জানা গেছে, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের এম.টেকের প্রথম বর্ষের ঐ ছাত্র, বিশ্ববিদ্যালয়ের হোস্টেলেই বসবাস করতেন। ৩১ অগাস্ট থেকে তাঁর ডেঙ্গুর লক্ষণ ধরা পড়ে। পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ম্যালেরিয়ায় মৃতের সংখ্যাও।
লক্ষণ:
ডেঙ্গির লক্ষণ হিসেবে অত্যন্ত উল্লেখযোগ্য হল-
১. ধুম জ্বর
২. মাথা যন্ত্রণা
৩. পেশি এবং পেশির সংযোগস্থলে ব্যথা
৪. বমি এবং পেটে ব্যথা
৫. গায়ে বিভিন্ন দাগ বা র্যাশ
ম্যালেরিয়ার লক্ষণগুলি হল-
১. কাঁপুনি দিয়ে জ্বর
২. গা হাত পায়ে ব্যথা
৩. শীতভাব
৪. পেশিতে ব্যথা
- তাই এই লক্ষণগুলি দেখা গেলে, অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। প্রয়োজনে রক্তপরীক্ষা করান। অযথা আতঙ্কিত হবেন না। জেনে নিন, কী করণীয় আর কী করণীয় নয় এই অবস্থায়।
আরও পড়ুন: চিকিৎসায় দেরি হলেই ডেঙ্গিতে খোয়া যাবে চোখ! ভয় দেখাচ্ছে ভয়াবহ সম্ভাবনা
কী করবেন না:
১. ডেঙ্গি বা ম্যালেরিয়ার মশা বংশবিস্তার করে জমা জলে। সুতরাং, এলাকায় জল জমতে দেবেন না।
২. ঘিঞ্জি বা জনবসতিপূর্ণ এলাকায় বেশিক্ষণ থাকবেন না।
৩. ভোরবেলা এবং সন্ধের পর জানলা খোলা রাখবেন না।
৪. খোলা নর্দমা ব্যবহার করবেন না। প্রয়োজনে নর্দমা ঢাকার ব্যবস্থা করতে হবে।
৫. চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ খাবেন করবেন না।
কী করবেন :
১. জানলায় নেট ব্যবহার করবেন।
২. মশারি ব্যবহার করবেন।
৩. মশা তাড়ানোর ওষুধ ব্যবহার করবেন।
৪. ফুলহাতা জামা ব্যবহার করবেন।
৫. প্রয়োজনে মোজা ব্যবহার করবেন।
ডেঙ্গি বা ম্যালেরিয়া আক্রান্ত হলে যা করণীয়:
ডেঙ্গি বা ম্যালেরিয়ার লক্ষণ দেখা দিলে তৎপরতার সঙ্গে চিকিৎসকের পরমার্শ নিয়ে রক্তপরীক্ষা করাতে হবে। ডেঙ্গির কোনও নির্দিষ্ট ওষুধ পাওয়া না গেলেও, ম্যালেরিয়ার জন্য চিকিৎসা বিজ্ঞানের জগতে একাধিক ওষুধের প্রচলন আছে। এছাড়া, প্রচুর পরিমাণে জল বা তরল পানীয় গ্রহণ করতে হবে। যেমন, ডাবের জল, আখের রস, ওআরএস প্রভৃতি। উল্লেখ্য, ম্যালেরিয়ায় লিভারও ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকে। তাই এই সময়ে, চিকিৎসকদের পরামর্শ থাকে, তেলমশলাযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলার। গ্রহণ করতে বলা হয় সঠিক পরিমাণে প্রোটিন। এছাড়াও শাকসবজি এবং ফল খাওয়ার পরামর্শও দেওয়া হয়।
চিকিৎসকের পরামর্শ :
ডেঙ্গি বা ম্যালেরিয়ার সতর্কতা বিষয়ে SSKM হাসপাতালের সংক্রামক রোগ বিষয়ের অধ্যাপক ডা: যোগীরাজ রায় এই প্রসঙ্গে জানান, জ্বর হলে বা কোনও লক্ষণ দেখা দিলে, অনেকসময় রোগী বা রোগীর পরিবারের কেউ তাঁদের চেনা ওষুধ ব্যবহার করতে চান। কিন্তু তা অত্যন্ত বিপজ্জনক এই পরিস্থিতিতে। চিকিৎসকের অনুমতি ছাড়া এই অবস্থায় কোনও ওষুধ খাওয়া করা উচিৎ নয়। একইসাথে আক্রান্ত অবস্থায় দূরে কোথাও যাতায়াত না করার পরামর্শও দিয়েছেন তিনি।
কোন এলাকায় প্রকোপ কেমন:
রাজ্যে সর্বাধিক ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা উত্তর ২৪ পরগণা জেলায়। সেখানে মৃতের সংখ্যা ইতিমধ্যেই ৯ ছাড়িয়েছে। নিরাপদ নয় কলকাতাও। পুরসভা থেকে পাওয়া খবর অনুযায়ী, টালিগঞ্জ-নিউ আলিপুর, যাদবপুর, কসবা এলাকায় ডেঙ্গির প্রকোপ সর্বাধিক। খাস কলকাতা শহরের বুকেই ডেঙ্গি আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা ৬।
আরও পড়ুন: উপসর্গ বদলাচ্ছে ডেঙ্গু! জমা জলেই কি তবে লুকিয়ে কলকাতার সর্বনাশ?
সরকারি উদ্যোগ:
যদিও এই প্রাক্ বর্ষায় প্রতি মরশুমেই মশাবাহিত রোগের প্রকোপ বাড়তে দেখা যাচ্ছে। তবু স্বাস্থ্যভবন-পুরসভাগুলির টনক নড়বে কবে? অধিকাংশ ক্ষেত্রেই নিয়মিত আগাছা পরিষ্কার করা হয় না। এলাকায় এলাকায় জমে থাকে জল। নিয়মিত সাফ হয় না নর্দমাও। প্রশ্ন ওঠে জনগণের সতর্কতার পাশাপাশি এর দায় কি পুরসভার উপরেও বর্তায় না? সরকারি হাসপাতালে যথেষ্ট সংখ্যক বেড নেই। অব্যবস্থা চরমে। কবে প্রতিকার পাবেন রাজ্যবাসী? ডেঙ্গির চোখরাঙানি ফের একবার ভাবিয়ে যাচ্ছে।