উপসর্গ বদলাচ্ছে ডেঙ্গু! জমা জলেই কি তবে লুকিয়ে কলকাতার সর্বনাশ?
Dengue Update Kolkata: নতুন উপসর্গের পাশাপাশি চিকিৎসকদের চিন্তার কারণ ডেঙ্গুর ডেন থ্রি প্রজাতি। ডেন থ্রি আক্রান্তরা বেশীরভাগই উপসর্গহীন। থাকছে না জ্বর।
ক্রমশ ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে শহরের ডেঙ্গু পরিস্থিতি। পুজোর আগে ডেঙ্গু পরিস্থিতি সামাল দিতে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছেন কলকাতার মেয়র। রাজ্যে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ইতিমধ্যেই প্রায় ১০ হাজার ছুঁইছুঁই। মৃতের সংখ্যাও দুই অঙ্ক ছুঁয়ে ফেলেছে। এ অবস্থায় সম্প্রতি নাইসেডের প্রকাশিত রিপোর্ট বলছে চরিত্র বদল করে আরও ভয়াবহ রূপ নিয়েছে ডেঙ্গু। উপসর্গহীন ডেঙ্গুর হানায় ত্রস্ত শহরবাসী। মেয়র ফিরহাদ হাকিম এই রিপোর্টের কথা উল্লেখ করে উদ্বেগও প্রকাশ করেছেন।
শহরের ডেঙ্গু পরিস্থিতি
ঘরে ঘরে জ্বরে আক্রান্ত মানুষ। বর্ষার মরশুমে শহরের ডেঙ্গু পরিস্থিতি চিন্তার কারণ হয়ে দঁড়িয়েছে। এখনও পর্যন্ত কলকাতাতে প্রায় ৯০০ জন মানুষ ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন। প্রতিদিন প্রায় কয়েকশো করে মানুষ নতুন করে ডেঙ্গু আক্রান্ত হচ্ছেন। অগাস্ট মাস থেকে এখনও পর্যন্ত ৬ জন ডেঙ্গুতে মারা গিয়েছেন। এঁদের মধ্যে ৫ জনই চলতি মাসের প্রথম দশদিনের মধ্যে মারা গিয়েছেন। হাসপাতালগুলিতেও ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ক্রমশ বেড়েই চলেছে। শেষ এক সপ্তাহে ১৮৫৪ জন মানুষের ডেঙ্গু পরীক্ষার ফল পজিটিভ এসেছে। এর মধ্যে উত্তর ২৪ পরগনা জেলাতেই আক্রান্তের সংখ্যা ৬১৮, হুগলিতে ৩৫৬ , মুর্শিদাবাদে ২৯০ এবং কলকাতাতে ২৬৩। আক্রান্তের তালিকায় খোদ রয়েছেন কলকাতার পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েল।
নাইসেডের রিপোর্ট কী বলছে?
সম্প্রতি কলকাতার ৫০ জন ডেঙ্গু আক্রান্তের নমুনা সেরো পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছিল ফুলবাগানের নাইসেডে। সেই রিপোর্টে বলা হয়েছে, চরিত্র বদলাচ্ছে ডেঙ্গু। বদল ঘটেছে রোগের উপসর্গতেও। এখন আর রক্তে প্লেটলেটের মাত্রা কমছে না কিন্তু শরীরে অক্সিজেনের অভাব দেখা যাচ্ছে, যা চিকিৎসকদের উদ্বেগ আরও বাড়িয়ে তুলেছে। নতুন উপসর্গের পাশাপাশি চিকিৎসকদের চিন্তার কারণ ডেঙ্গুর ডেন থ্রি প্রজাতি। ডেন থ্রি আক্রান্তরা বেশীরভাগই উপসর্গহীন। থাকছে না জ্বর। প্লেটলটের পরিবর্তে অক্সিজেন কমে যাওয়ায় রোগীর অবস্থার অবনতি হচ্ছে নিমেষে। নাইসেডে পরীক্ষা করতে পাঠানো ৫০টি নমুনার ৩৫ জনের শরীরেই মিলেছে ডেন থ্রি প্রজাতি। শুক্রবার মেয়র ফিরহাদ হাকিম বলেছেন, “ডেঙ্গুর চরিত্র বদল হয়েছে। কোভিডের সঙ্গে বন্ধুত্ব হয়েছে ডেঙ্গুর। নাহলে হঠাৎ অক্সিজেন কমে যাচ্ছে কেন? একটি বাচ্চাকে হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছি। ওর শরীরে অক্সিজেনর মাত্রা কমে যাচ্ছে।”
আরও পড়ুন- শুকোচ্ছে ফুসফুস, আয়ু কমছে কলকাতার! অতিবৃষ্টিতে জল জমা নিয়ে ভয়াবহ তথ্য
পুজোর সময় পুরকর্মীদের ছুটি বাতিল
চলতি সপ্তাহের মঙ্গলবার পুর দফতরের তরফে রাজ্যের সবকটি পুরসভায় নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে। পুর দফতরের প্রধান সচিব নির্দেশিকায় জানিয়েছেন যে ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে ১০ অক্টোবর পর্যন্ত রাজ্যের সবকটি পুরসভায় ডেঙ্গু মোকাবিলার কাজে যুক্ত কর্মীরা ছুটি নিতে পারবেন না। পুর কর্তাদের বক্তব্য যে হারে ডেঙ্গি বেড়ে চলেছে তাতে কোনওভাবেই বাড়ি বাড়ি জমা জলের খোঁজে অভিযান বন্ধ করা যাবে না। অভিযান বন্ধ হলেই সেই সুযোগে মাথাচাড়া দেবে ডেঙ্গু।
ফিভার ক্যাম্প কলকাতা পুরসভার
প্রতিদিন রাজ্যের একাধিক জেলা সহ শহর কলকাতায় যে হারে ডেঙ্গু বাড়ছে তাতে উদ্বেগও ক্রমশ বাড়ছে। এ অবস্থায় কলকাতা পুরসভার ২৫ টি ওয়ার্ডকে ডেঙ্গি প্রবণ বলে চিহ্নিত করেছেন পুর আধিকারিকরা। পরিস্থিতির মোকাবিলায় এই ২৫টি ওয়ার্ডে ফিভার ক্যাম্প চালু করেছে পুরসভা। পাড়ায় পাড়ায় স্থানীয় ক্লাবগুলির সহযোগিতায় এই ক্যাম্পগুলি চালু করা হবে। শহরের বিভিন্ন জায়গায় ড্রোন ব্যবহার করে কীটনাশক স্প্রে করা হবে বলেও জানানো হয়েছে।
পুরসভার স্বাস্থ্য আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠক মেয়রের
পুজোর মুখে মশা বাহিত ডেঙ্গুর বাড়বাড়ন্তে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে স্বাস্থ্য ভবনের কপালেও। এ পরিস্থিতিতে কীভাবে ডেঙ্গু সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আনা যায় তা নিয়ে কলকাতা পুরনিগম রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের সঙ্গে বৈঠকে বসে চলতি সপ্তাহের সোমবার। মেয়র ফিরহাদ হাকিম, মেয়র পারিষদ অতীন ঘোষ এবং স্বাস্থ্য সচিব নারায়ণ স্বরূপ ছিলেন ওই বৈঠকে। শহরের ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় কাজ শুরু করেছে কলকাতা পুরসভা। মানুষের মধ্যে সচেতনতা গড়ে তুলতে ফিভার ক্যাম্পের পাশাপাশি পাড়ায় পাড়ায় প্রচার করা হবে। শিশুদের জন্য বেড সংরক্ষিত করা হয়েছে বেলেঘাটা আইডি হাসপাতাল এবং বিসি রায় শিশু হাসপাতালে। অন্যদিকে ২৪ ঘণ্টা রক্ত পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছে এসএসকেএম, এমআর বাঙ্গুর, বেলেঘাটা আইডি এবং ট্রপিকলে।
আরও পড়ুন- বোতামে আলতো চাপ, এক মিনিটে যন্ত্রণাহীন আত্মহত্যা, সাহায্য করবে এই স্টাইলিশ যন্ত্র
কী করণীয়
ডেঙ্গু সংক্রমণের হাত থেকে বাঁচতে যা যা করণীয় -
১. মসকিউটো রিপেলেন্ট ক্রিম মশার থেকে বাঁচার সবথেকে ভালো উপায়। তবে খেয়াল রাখবেন গায়ে র্যাশ বা ফুসকুড়ি উঠলে এ ধরনের ক্রিম না ব্যবহার করাই ভালো।
২. ঘুমানোর সময় সবসময় মশারি টাঙিয়ে নেওয়াই ভালো। এছাড়া বর্ষার মরসুমে ফুলহাতা জামা কাপড় পরা উচিত। বিশেষজ্ঞদের মতে এই সময় মশার কামড় থেকে বাঁচতে হালকা রঙের জামা পরতে হবে।
৩. জমা জল বা যে কোনও পুকুর বর্ষাকালে মশার আঁতুড় ঘরে পরিণত হয়ে তাই এমন জায়গা এই সময় এড়িয়ে চলুন।
৪. সুগন্ধি পারফিউম ব্যবহার না করাই ভালো এই সময় কারণ এগুলি মশাকে আকর্ষণ করে।
৫. ঘরের ভিতর নিম গাছের ছোটো চারা বা নিম গাছের ডাল রাখুন, মশার উপদ্রব থেকে বাঁচবেন।