রাত পোহালেই ডার্বি! চুনী থেকে ভাইচুং- একনজরে কলকাতার ডার্বি নায়করা

East bengal Mohun Bagan Derby: আশির দশকে ইস্টবেঙ্গল মোহনবাগানের খেলা মানেই চিমা ওকেরি বনাম সুব্রত ভট্টাচার্যের লড়াই। আশির দশকে ইস্টবেঙ্গলের অন্যতম নির্ভরযোগ্য ফরোয়ার্ড হয়ে উঠেছিলেন চিমা ওকেরি।

রাত পোহালেই ডার্বি। ভারতীয় ফুটবলের সবচেয়ে উত্তেজক ম্যাচ, সবচেয়ে বড় ম্যাচ। ডার্বির এক শতাব্দী পেরিয়ে গেলেও বিন্দুমাত্র ফিকে হয়নি বড় ম্যাচের উত্তেজনা। কত গল্প উপহার দিয়েছে এই ময়দান। আরও ভালো করে বলতে গেলে, কলকাতা ডার্বি ঘিরে কত উত্তেজনা, কত উত্তাপ। ফিফার তালিকা অনুযায়ী এশিয়ার সবচেয়ে বড় এবং সবচেয়ে পুরনো রাইভালরি (শত্রুতা নয়, প্রতিদ্বন্দ্বিতা) ইস্টবেঙ্গল বনাম মোহনবাগান। গত এক শতাব্দীতে এই কলকাতা ডার্বি বিভিন্ন সময় বিভিন্ন নায়কের জন্ম দিয়েছে, যারা পরবর্তীকালে নিজের পা দিয়ে ইতিহাস রচনা করেছেন। দেখে নেওয়া যাক এমন দশ ফুটবল ব্যক্তিত্বকে।

চুনী গোস্বামী

ভারতীয় ফুটবলে চুনী গোস্বামীর পরিচয় আলাদা করে দিতে হয় না। বহু ডার্বির নায়ক তিনি। তবে এমন একটি ডার্বি ম্যাচ ছিল যা তাঁকে মোহনবাগানের ঘরের ছেলে থেকে মহামেডানের নায়ক বানিয়ে দিয়েছিল। ১৯৬৭ সালে ক্যালকাটা ফুটবল লীগে সমীকরণ এমন দাঁড়িয়েছিল যে ডার্বিতে যদি ইস্টবেঙ্গল জেতে তাহলে তারা লিগ চ্যাম্পিয়ন হবে। যদি ইস্টবেঙ্গলকে রুখে দিয়ে মোহনবাগান জিততে পারে, মহামেডান চ্যাম্পিয়ন হবে। সেই সময় রটে গেল মোহনবাগানের যেহেতু লিগ জেতার সম্ভাবনা নেই তাই চুনী গোস্বামী পা বাঁচিয়ে খেলবেন। ইস্টবেঙ্গলও হয়তো তাই ভেবেছিল। সেই সময় ইস্টবেঙ্গলের গোলে রয়েছেন ভারতের সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ গোলরক্ষক পিটার থঙ্গরাজ। জমাট ডিফেন্স। তা সত্ত্বেও ইস্টবেঙ্গল ডিফেন্ডারদের বেগ দিলেন চুনী। ফল মিলল দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই, বক্সে ফাউল করায় পেনাল্টি আদায় করে নিল মোহনবাগান। এই পেনাল্টি থেকে গোল করে মোহনবাগানকে ম্যাচ জেতালেন চুনী গোস্বামী। শোনা যায় ম্যাচের পর পাশের মহামেডান তাবু থেকে সমর্থকরা এসে কাঁধে করে হিরোর মতো নিয়ে গিয়েছিলেন মোহনবাগানের ঘরের ছেলে চুনী গোস্বামীকে।

চুনী গোস্বামী এবং পিকে ব্যানার্জি

পিকে ব্যানার্জী

প্রদীপ কুমার ব্যানার্জি ভারতীয় ফুটবলে জনপ্রিয় পিকে ব্যানার্জি নামেই। তাঁর অনবদ্য ফুটবল স্কিল আর ক্ষুরধার মস্তিষ্কে ভর করে দেশ-বিদেশের মাঠে দাপিয়ে বেরিয়েছে ভারতীয় ফুটবল। শাসন করেছে এশিয়ান গেমস। অলিম্পিক্সে ফ্রান্সের মতো মহাশক্তিধর দেশের সঙ্গে ড্র করেছে। জানলে অবাক হতে হয়, ইস্টবেঙ্গল, মোহনবাগান বা মহামেডান- তিন প্রধানের কোনও প্রধানেই খেলেননি এই খেলোয়াড়। তবে খেলোয়াড় হিসেবে নয় ডার্বির সঙ্গে কোচ পিকে ব্যানার্জির নাম জড়িয়ে রয়েছে ওতপ্রোতভাবে। কলকাতা ময়দানে প্রচলিতই ছিল যে, পিকের ভোকাল টনিক সঙ্গে আছে মানেই অর্ধেক ম্যাচ পকেটে! ১৯৭৫ সালের আইএফএ শিল্ড ফাইনালে মোহনবাগানকে ৫-০ গোলে হারিয়েছিল ইস্টবেঙ্গল, যা আজও রেকর্ড। সেই ডার্বি জন্ম দিয়েছিল শ্যাম থাপার। এর পরবর্তীতে আসা যাক ১৯৯৭ সালে। সেবার ফেড কাপে অমল দত্তের মস্তিষ্কপ্রসূত ডায়মন্ড সিস্টেমে প্রচণ্ড আগ্রাসী ফুটবল খেলে বিরোধীদের মাটি ধরাচ্ছিল মোহনবাগান। মোহনবাগানের কোচ অমল দত্ত অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসী হয়ে ইস্টবেঙ্গলের ডিফেন্ডার স্যামি ওমোলোকে ‘ওমলেট’, ভাইচুং ভুটিয়াকে ‘চুমচুম’, সোসোকে ‘শসা’ বলে ব্যক্তিগত আক্রমণ করে বসেন। নির্দেশে খেলোয়াড়রা একটা শব্দও খরচ করেনি। কিন্তু খেলতে নেমে ডায়মন্ড সিস্টেমের পালটা কাউন্টার অ্যাটাক করে সেই ডায়মন্ডকেই ফালাফালা করে দিয়েছিলেন ভাইচুং, সোসো, নাজিমুলরা। ম্যাচটি ৪-১ গোলে জিতেছিল ইস্টবেঙ্গল।

আরও পড়ুন- বারবার লজ্জার হার, যে ভাবে অতীতেও ল্যাজেগোবরে হয়েছে পাকিস্তান

সুভাষ ভৌমিক

১৯৭৫ সালের আইএফএ শিল্ড ফাইনালে মোহনবাগানকে ৫-০ গোলে হারিয়েছিল ইস্টবেঙ্গল। এই ম্যাচ অনেক নায়কের জন্ম দিয়েছিল। তাঁদের মধ্যে অন্যতম হলেন ময়দানের ‘বুলডোজার’ সুভাষ ভৌমিক। নিজে গোল না করলেও গোল করিয়েছিলেন দু’টি। দুই প্রধানের হয়েই খেলেছেন সুভাষ। খেলোয়াড় ক্যারিয়ারের মতোই উজ্জ্বল তাঁর কোচিং ক্যারিয়ার। ইস্টবেঙ্গলের কোচ থাকাকালীন খ্যাতির শীর্ষে পৌঁছেছিলেন তিনি। ২০০২-০৫ এই তিন বছরের মধ্যে এশিয়ান কাপ-সহ দু’বার ব্যাক টু ব্যাক আই লিগ জেতে ইস্টবেঙ্গল। সবেরই নেপথ্যে সেই সুভাষ ভৌমিক।

সুভাষ ভৌমিক

শ্যাম থাপা

১৯৭৫-এর সেই ডার্বিতে জোড়া গোল করে ম্যাচের সেরা হয়েছিলেন শ্যাম থাপা। শ্যাম থাপা জানিয়েছিলেন ১৯৭৭ সালে শুধুমাত্র পেলের বিরুদ্ধে খেলার জন্য ইস্টবেঙ্গল ছেড়ে মোহনবাগানে যান তিনি। সেই ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধেই ১৯৭৮ কলকাতা লিগের বড় ম্যাচে শ্যাম থাপার সেই ব্যাক ভলি আজও চোখে লেগে রয়েছে মানুষের। ওই ম্যাচ শেষে চুনী গোস্বামী দর্শক আসন থেকে ছুটে এসে কার্যত কোলে তুলে নিয়েছিলেন শ্যাম থাপাকে। দুই প্রধানের জার্সিতেই অসংখ্য স্মরণীয় মুহূর্ত সমর্থকদের উপহার দিয়েছেন শ্যাম থাপা।

শ্যাম থাপার সেই ব্যাক ভলি

ভাস্কর গাঙ্গুলি

সুভাষ ভৌমিক, শ্যাম থাপা, সুরজিৎ সেনগুপ্তরা ’৭৫-এর ডার্বির নায়ক হলেও সেই ম্যাচে কার্যত খলনায়ক হয়ে গিয়েছিলেন ভাস্কর গাঙ্গুলি। মোহনবাগানের গোলকিপার ছিলেন তিনি এবং বড় ম্যাচে তিনি একাই চার গোল খান। চতুর্থ গোল হতেই মেজাজ হারিয়ে বাগান ডিফেন্ডার সুব্রত ভট্টাচার্য চড় মেরেছিলেন বছর আঠেরোর তরুণ ভাস্কর গাঙ্গুলিকে। ব্যাস! এই চড়েই ক্যারিয়ার ঘুরে যায় ভাস্কর গাঙ্গুলির। ওই ম্যাচের পর তিন মাস লজ্জায় এবং ভয়ে বাড়ির থেকে বেরোননি ভাস্কর। কিছুটা সময় কাটিয়ে নিজের মন শক্ত করে ট্রেনিং শুরু করে দেন তিনি। ’৭৬ সালে যোগ দেন ইস্টবেঙ্গলে।

হাবিবের শট এক হাতে উড়িয়ে দেন ভাস্কর গাঙ্গুলি

এরপর ১৯৭৭ সালে আসে আরেকটি ডার্বি। ’৭৫-এর ডার্বির খলনায়ক ভাস্কর গাঙ্গুলি এবার লাল-হলুদের গোলরক্ষক। ওদিকে মোহনবাগানের অধিনায়ক সুব্রত ভট্টাচার্য। ম্যাচের তিন মিনিটের মাথায় ‘ভারতের বেকেনবাওয়ার’ অর্থাৎ গৌতম সরকারের ডিফেন্স চেরা পাস থেকে অসাধারণ একটি শট নেন হাবিব। কিন্তু এক হাত দিয়ে সেই বল উড়িয়ে দিয়ে নিজের জাত চিনিয়ে দেন ১৯ বছরের তরুণ গোলরক্ষক ভাস্কর গাঙ্গুলি। দ্বিতীয়ার্ধে সমরেশ চৌধুরী এবং মিহির বসুর গোলে মোহনবাগানকে ২-০ গোলে হারিয়ে দেয় ইস্টবেঙ্গল। এরপর সুদীর্ঘ ১৩ বছর ইস্টবেঙ্গলের হয়ে খেলে বহু ট্রফি এবং ডার্বি জিতেছেন তিনি। ১৯৮০ মনোরঞ্জন ভট্টাচার্যের সঙ্গে যুগ্মভাবে সর্বশ্রেষ্ঠ খেলোয়াড়ের শিরোপা পান ভাস্কর গাঙ্গুলি।

সুব্রত ভট্টাচার্য

টানা ১৭ বছর খেলেছেন সবুজ-মেরুন জার্সি গায়ে। কখনও ক্লাব বদল করেননি। তাই তাঁকে মোহনবাগানের ঘরের ছেলে বলে ডাকা হয় এখনও। পরবর্তীকালে মোহনবাগানের কোচও ছিলেন। এই ভূমিকায় দু’বার ক্লাবকে জাতীয় লিগ চ্যাম্পিয়নও করিয়েছেন। ১৯৭৭-এ মোহনবাগানের অধিনায়ক নির্বাচিত হন সুব্রত, কলকাতা ময়দানে যিনি ‘বাবলু’ বলেই বেশি পরিচিত। সেই বছরই কিংবদন্তি পেলের দল কসমস যখন কলকাতায় খেলতে আসে, তখন তাঁর নেতৃত্বেই ২-২ ড্র করে মোহনবাগান এবং অধিনায়কত্ব পেয়ে দলকে ভারতীয় ফুটবলের ত্রিমুকুট (ডুরান্ড কাপ, রোভার্স কাপ ও আইএফএ শিল্ড) জিততে সাহায্য করেন তিনি। মোহনবাগানের হয়ে প্রায় সাড়ে আটশো ম্যাচ খেলেছিলেন সুব্রত। যার মধ্যে প্রায় ৫০টি ডার্বিও ছিল।

সুব্রত ভট্টাচার্য

ডিফেন্ডার হলেও মোহনবাগানের জার্সি গায়ে ৪১টি গোল করেছেন সুব্রত। আশির দশকে তিনি যখন ফর্মের তুঙ্গে, তখন নাইজেরিয়া থেকে এক নতুন তারকার আগমন ঘটে কলকাতার ফুটবলে, যাঁর নাম চিমা ওকোরি। চিমা তখন ইস্টবেঙ্গলের আক্রমণে সেরা অস্ত্র। সেই সময়ে ডার্বি মানেই মোহনবাগানের গোল এরিয়ায় চিমা ও সুব্রতর ধুন্ধুমার ফুটবল-ডুয়াল। যা নিয়ে তখন ফুটবলপ্রেমীদের উন্মাদনা উঠত তুঙ্গে।

আরও পড়ুন- ফুটবল বিশ্বকাপে খেলার সুযোগ পেয়েও হাতছাড়া করে ভারত! নেপথ্যে যে কারণ

চিমা ওকেরি

আশির দশকে ইস্টবেঙ্গল মোহনবাগানের খেলা মানেই চিমা ওকেরি বনাম সুব্রত ভট্টাচার্যের লড়াই। আশির দশকে ইস্টবেঙ্গলের অন্যতম নির্ভরযোগ্য ফরোয়ার্ড হয়ে উঠেছিলেন চিমা ওকেরি। বাংলার ময়দানে খেলা প্রথম বিদেশি ফুটবলার চিমাই। বড় ম্যাচে স্ট্রাইকারদের মধ্যে অন্যতম সফল চিমা ওকেরি। নাইজেরিয়ার এই ফরওয়ার্ড ডার্বিতে মোট ১৬টি গোল করেছেন যার মধ্যে ১০টি তিনি ইস্টবেঙ্গলের জার্সি গায়ে করেন এবং ছয়টি গোল করেন সবুজ-মেরুনের হয়ে। ইস্টবেঙ্গলের পাশাপাশি মোহনবাগান এবং মহামেডানেও খেলেছেন ময়দানের কালো চিতা। ক্যারিয়ারে অসংখ্য ট্রফি এবং ডার্বি জিতেছেন চিমা। জীবনের শেষ ডার্বিও জিতেছিলেন তিনি। ১৯৯৭-৯৮ সালের জাতীয় লিগে তাঁর এবং দিপেন্দু বিশ্বাসের করা গোলে ২-১ এ ডার্বি হেরে যায় ইস্টবেঙ্গল। সেবছর জাতীয় লিগ ঘরে তোলে মোহনবাগান।

কৃশানু দে এবং চিমা ওকেরি

কৃশানু দে

বাংলা তথা ভারতীয় ফুটবলে এতটা স্কিলফুল ফুটবলার আর কোনও দিনও আসবে বলে মনে হয় না। যথার্থ কারণেই কৃশানু দে-কে ‘ভারতের মারাদোনা’ বলা হত। টানা সাত বছর ইস্টবেঙ্গলে খেলেছিলেন তিনি। তখনই এই আখ্যা পান। ১৯৮২ থেকে ১৯৮৪ পর্যন্ত মোহনবাগানে খেলার পরে ইস্টবেঙ্গল কর্তারা অনেক চেষ্টায় ১৯৮৫-তে কৃশানুকে সই করাতে সফল হন। তার পরে ১৯৯১ পর্যন্ত লাল-হলুদ জার্সি গায়ে ভারতীয় ফুটবল মাতান তিনি। ওই সাত বছরে প্রায় একশো ম্যাচ তিনি খেলেছেন ইস্টবেঙ্গলের হয়ে। পরে ১৯৯৪-এ ফের যোগ দিয়ে খেলেছিলেন প্রায় ৫০টি ম্যাচ। ১৯৯২-এ তিনি ফের মোহনবাগানে যোগ দেন। এই দুই দফায় মোহনবাগানের হয়ে খেলেছিলেন প্রায় ৭৫টি ম্যাচ। ওই সময় সবচেয়ে বেশি পারিশ্রমিক পাওয়া ফুটবলারও ছিলেন তিনি। তখন ডার্বি মানেই কৃশানু দে ও বিকাশ পাঁজি জুটির ঝড়। ১৯৮৭-তে যখন চিমা ওকেরি ইস্টবেঙ্গলের ‘গোলমেশিন’ হয়ে ওঠেন, প্রথম বছরেই তিনি কলকাতা লিগে যে ২৬টি গোল করেন, তার বেশিরভাগই আসে কৃশানুর পাস থেকে। তখন চিমাকে গোলের পাস দেওয়ার প্রধান দায়িত্ব ছিল কৃশানুর উপরই। মাঝমাঠ ও আক্রমণভাগের মধ্যে লিঙ্কম্যান হিসেবে তিনিই ছিলেন ওই সময়ে সেরা। ১৯৮৭ থেকে ১৯৯০-এ কৃশানু-বিকাশ-চিমা ত্রয়ী ইস্টবেঙ্গলকে টানা তিনবার লিগ খেতাব এনে দিয়েছিলেন। সুব্রতর মতো কৃশানুও ইস্টবেঙ্গলকে ত্রিমুকুট এনে দিয়েছিলেন ১৯৯০-এ। দুর্ভাগ্যের বিষয়ে এত বড় মাপের খেলোয়াড় হওয়া সত্ত্বেও অর্জুন পুরস্কার থেকে বঞ্চিত রাখা হয়েছিল তাঁকে।

ভাইচুং ভুটিয়া

৯০-এর দশকের শেষ ভাগে ভারত তথা বাংলায় শুরু হল ভাইচুং ভুটিয়ার যুগ। ১৯৯৭ অমল দত্তের সেই ডায়মন্ড সিস্টেমকে গুঁড়িয়ে ফেলতে মুখ্য ভূমিকা নিয়েছিলেন ভাইচুং। ডার্বির ইতিহাসে প্রথম হ্যাটট্রিকটিও করেন বাইচুং। ১৯৯৭ সালের ১৩ জুলাই ফেডারেশন কাপের সেমিফাইনালে অমল দত্তের সেই ডায়মন্ড সিস্টেমকে ফালাফালা করে দিয়ে ডার্বির ইতিহাসে প্রথম হ্যাটট্রিকটি করেন ভারতীয় ফুটবলের শ্রেষ্ঠ তারকা। ম্যাচটি ৪-১ গোলে জিতেছিল ইস্টবেঙ্গল। ১ লক্ষ ৩০ হাজার সমর্থক এই ম্যাচে মাঠে উপস্থিত ছিলেন। ডার্বিতে সর্বোচ্চ গোলের (মোট ১৯ গোল) রেকর্ডও রয়েছে তাঁর ঝুলিতেই।

ব্যারেটো এবং ভাইচুং

জোসে ব্যারেটো

মোহনবাগানের সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বিদেশি খেলোয়াড় বলে বিবেচিত হন তিনি। ভারতীয় ময়দানের সবুজ তোতা ব্রাজিলীয় স্ট্রাইকার জোসে রামিরেজ ব্যারেটো মোহনবাগান সমর্থকদের মনের মণিকোঠায় আজীবন উজ্জ্বল হয়ে থাকবেন। ইস্টবেঙ্গলের থেকে অফার পেলেও কখনও সবুজ-মেরুনের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ক্লাবে সই করেননি ব্যারেটো। ফুটবল ক্যারিয়ারে গঙ্গাপাড়ের ক্লাবকে উজাড় করে দিয়েছেন। ১৭ গোল করে ডার্বিতে সর্বাধিক গোলদাতাদের তালিকায় ব্যারেটো রয়েছেন দ্বিতীয় স্থানে। একটা সময় ডার্বি মানেই ইস্টবেঙ্গলের ভাইচুং বনাম মোহনবাগানের ব্যারেটো। কোন তারকা গোল করে নিজের দলকে জেতাবেন তার লড়াই চলত দু’জনের মধ্যে।

এই তারকাদের ছাড়াও পরবর্তীকালে চিডি, ওকোলি ওডাফা, মেহতাব হোসেন, শিল্টন পাল, লালরিন্ডিকা রালতে কাতসুমি ইউসা, র‍্যান্টি মার্টিন্স, সোনি নর্ডেদের মতো তারকারা এসেছেন ডার্বিতে। দলকে জিতিয়ে সমর্থকদের মধ্যমণি হয়ে উঠেছেন। তবে এই তালিকাতেও এমন অনেক খেলোয়াড় আছে যাদের নাম উল্লেখ করা গেল না সময়কালের বিস্তৃতির কথা মাথায় রেখে।

More Articles