‘বিগ বি’র ভাই হয়েও থেকে গেলেন লোকচক্ষুর আড়ালেই, আসলে কে ছিলেন অজিতাভ বচ্চন?

Amitabh Ajitabh Relationship : প্রথম প্রথম একটার পর একটা প্রত্যাখ্যান যখন গ্রাস করতে শুরু করে অমিতাভ বচ্চনকে তখনও অজিতাভ শক্ত করে হাল ধরে ছিলেন। অথচ তিনি আজীবন থেকে গিয়েছে লাইমলাইট থেকে দূরেই।

‘বচ্চন’, নামটাই কাফি। সম্প্রতি ‘প্রোজেক্ট কে’-র শ্যুট চলাকালীন হায়দ্রাবাদে সিনেমার সেটে পাঁজরে চোট পান অমিতাভ বচ্চন। ছবিতে একটি অ্যাকশন দৃশ্যের শ্যুটের সময়েই ঘটে এই ঘটনা। অমিতাভ বচ্চনের পরিচয় যদিও আলাদা করে দেওয়ার কিছুই নেই। দুশো ছুঁইছুঁই ছবিতে অভিনয় করেছেন তিনি। অমন লম্বা চেহারার এই মানুষটাকে দেখলে এখনও নিমেষে চোখের সামনে ফ্ল্যাশ ব্যাকের মতো ধরা পড়ে একটার পর একটা স্লাইড। ‘আনন্দ’, ‘দিওয়ার’, ‘কুলি’, ‘শোলে’, ‘অমর আকবর অ্যান্টনি’, ‘মুকাদ্দার কা সিকান্দার’, ‘শক্তি’, ‘ব্ল্যাক’, ‘মোহাব্বতে’, ‘পা’, ‘পিকু’ ইত্যাদি নামগুলো আজও দর্শকদের কাছে অন্যরকম আবেদন তৈরি করে। অমিতাভ বচ্চনকে চেনে না এমন মানুষ পাওয়া এ দেশে সত্যিই দুষ্কর। তাঁর গোটা পরিবারকে নিয়েই দর্শকদের মধ্যেই কৌতূহলের শেষ নেই।

তবে এ হেন একজন ব্যক্তিত্বের আছেন নিজের একজন ভাইও। চেনেন কি তাঁকে? কেন এমন একজন মানুষের ভাই হয়েও আজীবন লোকচক্ষুর আড়ালেই থেকে গেলেন অজিতাভ? আসলে কে তিনি? এই প্রশ্ন জট পাকায় ঠিকই। অবশ্য সেই পাকিয়ে যাওয়া জট ছিঁড়তেও হয়। শোনা যায়, একদিন অভিনয় জগতে দাদাকে পথ চিনিয়ে দিয়েছিলেন এই ভাই-ই। এমনকী অমিতাভ বচ্চনের সঙ্গে কেউ দেখা করতে চাইলেও প্রথমে অজিতাভের অনুমতি নিয়েই তবে দেখা মিলত। তাহলে কী এমন হল? দুম করে কোথায় হারিয়ে গেলেন এই অজিতাভ? কেনোই বা অভিষেক বচ্চন এবং ঐশ্বর্য্য রাই বচ্চনের বিয়েতেও দেখা যায়নি তাঁকে? রয়েছে আরও ভুরি ভুরি প্রশ্ন।

আরও পড়ুন - ‘কুলি’র পর ফের শুটিংয়ে গুরুতর আঘাত, রক্তাক্ত পাঁজর, কতটা সংকটে অমিতাভ বচ্চন?

হিন্দি কবি ও লেখক হরিবংশ রাই বচ্চনের ছেলে অমিতাভ এবং অজিতাভ বচ্চন। বয়সে অমিতাভের চেয়ে বছর পাঁচেকের ছোট অজিতাভ। দাদার অভিনয় জীবনের শুরুতে তিনিই ছিলেন সঠিক কান্ডারী। অমিতাভের অভিনেতা হওয়ার ইচ্ছেকে উস্কে দিতে প্রযোজকদের কাছে তিনিই ছবি পাঠাতে শুরু করেন। প্রথম প্রথম একটার পর একটা প্রত্যাখ্যান যখন গ্রাস করতে শুরু করে অমিতাভ বচ্চনকে তখনও অজিতাভ শক্ত করে হাল ধরে ছিলেন। অথচ তিনি আজীবন থেকে গিয়েছেন লাইমলাইট থেকে দূরেই।

ছোট থেকেই একসঙ্গে স্কুল কলেজ পড়াশোনা সবই করেছিলেন দুই ভাই। অমিতাভ বচ্চন অভিনয়ের সুযোগ নিয়ে মুম্বাই চলে আসার সময় অবশ্য প্রাথমিকভাবে অজিতাভ কলকাতাতেই রয়ে যান। তখন তিনি কলকাতায় একটি চাকরি করছেন, পরবর্তীকালে অমিতাভের মুম্বাইতে মাটি শক্ত হলে তিনিও চাকরি ছেড়ে চলে আসেন দাদার কাছে থাকতে। সেই সময় অমিতাভ বচ্চনের সমস্ত কাজ নিজেই দেখাশোনা করতেন অজিতাভ বচ্চন।

হরিবংশ রাই বচ্চন যতদিন বেঁচে ছিলেন ততদিন দুইভাই এক সঙ্গেই থাকতেন। পরে অবশ্য পারিবারিক টানাপোড়েনের শিকার হয় সম্পর্ক। আলাদা হয়ে যান অজিতাভ এবং অমিতাভ বচ্চন। পেশায় একজন সফল ব্যবসায়ী অজিতাভ। সেই সময়ে ব্যবসার কাজে চলে যান লন্ডনে। লাইনলাইটের প্রতি কোনদিনই আকর্ষণ ছিল না তাঁর। বরং বলা ভালো প্রদীপের তলার অন্ধকার টুকুতেই থেকেছিলেন তিনি। দাদা অমিতাভ বচ্চনের চূড়ান্ত খ্যাতির পাশে নিজেকে আড়াল করে রেখেছিলেন সঙ্গোপনে। বেশ কিছু মিডিয়া রিপোর্টের দাবি, অভিনয়ের পাশাপাশি অমিতাভ বচ্চন যখন রাজনীতিতে প্রবেশ করেন, তখন অজিতাভ দেশ ছেড়ে লন্ডনে চলে যান, যেখানে তিনি নিজের ব্যবসা শুরু করেন। অমিতাভের টাকা অজিতাভের ব্যবসায় লগ্নি করেছিলেন বলেও শোনা যায়।

আরও পড়ুন - রাস্তায় রাত কাটানো থেকে অমিতাভের বন্ধুত্ব, যা রেখে গেলেন বিক্রম গোখলে

বিদেশে গিয়ে ব্যবসায় বেশ জমে ওঠেন অজিতাভ। তাঁর স্ত্রী রমোলাও তাঁকে এই ব্যবসায় সহায়তা করতেন। শোনা যায়, বোফর্স কেলেঙ্কারিতে অমিতাভ বচ্চনের নাম এলে এই দুই ভাইয়ের মধ্যে ঝগড়া হয় এবং এতে অজিতাভের ব্যবসায় প্রভাব পড়ে। সেই সময় লন্ডন থেকে বেলজিয়ামে বাধ্য হয়ে চলে যেতে হয়েছিল অজিতাভকে। যদিও পরে এই মামলায় অমিতাভ এবং অজিতাভকে ক্লিন চিট দেওয়া হয়েছিল বলেই জানা যায়।

অন্য একটি সংবাদমাধ্যমের তরফে জানা যায় অজিতাভ বচ্চন নিজেই একবার বলেছিলেন, দাদা অমিতাভের রাজনৈতিক জীবনের সূত্র ধরে এমন কিছু বন্ধু তৈরি হয়েছিল যা তাদের পারিবারিক সম্পর্কের ওপর প্রভাব ফেলে এবং দূরত্ব বেড়ে যায়। পরে অবশ্য অমিতাভ বচ্চন ভাইয়ের অংশীদারি বজায় রেখে একটি ব্যবসা খোলেন। যদিও সেই ব্যবসাও বেশি দিন চলে না, ডুবে যায়। অনেকেই মনে করেন, এটিও দুই ভাইয়ের সম্পর্কের মধ্যে বিবাদ তৈরি হওয়ার একটি বড় কারণ। তাই ছেলে অভিষেক বচ্চনের বিয়েতেই উপস্থিত ছিলেন না অজিতাভ। যদিও ২০০৭ সালে তিনি লন্ডন থেকে ফিরে আসেন আবার। ইতিমধ্যে স্ত্রী রমোলের সঙ্গে ডিভোর্স হয়ে যায় অজিতাভের। অজিতাভ ও রামোলার চার সন্তান, তিন মেয়ে ও এক ছেলে। তাঁরই এক কন্যা নয়নার বিয়েতে আবারও একসঙ্গে দুই ভাইকে দেখা গিয়েছে। ফলে আবারও সেই পুরনো সম্পর্ক ফিরতে পারে বলে আশাবাদী সকলে।

More Articles