ফাইনালে ব্যাট হাতে ব্যর্থ ধোনি, তবুও শেষ বলে যেভাবে বাজিমাত করলেন চেন্নাইয়ের ব্যাটাররা
IPL Final: শেষ বলেই বাজিমাত চেন্নাইয়ের, যেভাবে ফের আইপিএল-এ সিংহ হয়ে উঠলেন মহেন্দ্র সিং ধোনি!
বৃষ্টি অথবা রানের চাপ কিছুতেই দমানো গেল না সিংহবাহিনীকে। প্রথম থেকে অবশ্য হাওয়া বিপরীতমুখী ছিল। গুজরাট দলের দিকেই পারদ ভারী ঠেকছিল। প্রথমে ব্যাট করতে নেমে একটা বড় রানের প্রাচীর তৈরি করেছিল গুজরাট। ঘরের মাঠে খেলা, বলেই হয়তো একটা সহজাত আত্মবিশ্বাস প্রথম থেকেই ছিল তাদের মধ্যে। তার ওপর আগের বছরের ফাইনাল জেতার মনের জোর তো ছিলই। এছাড়া ফাইনালে ২১৫ রানের চাপও যথেষ্ট বেশি। তার ওপর গোদের ওপর বিষফোঁড়ার মতো এসে উপস্থিত হয় বৃষ্টি। ম্যাচ বন্ধ হয়ে যায় সাময়িক। প্রায় দুই ঘণ্টা দশ মিনিট পিছিয়ে যায় খেলা। ভিজে মাঠে রান তোলা আরও কঠিন হয়ে ওঠে তখন চেন্নাইয়ের ব্যাটারদের কাছে। কিন্তু হাল ছাড়েননি তাঁরা। গ্রীন রুম সংলগ্ন গ্যালারিতে বসে বৃষ্টি দেখতে দেখতে আসন্ন একটা দাপুটে ইনিংসের জন্য তৈরি হচ্ছিলেন ধোনিবাহিনী। যার বাস্তবায়ন ঘটলো সোমবার গুজরাটের ওই বৃষ্টিভেজা মাঠেই।
হাতে মাত্র দুই বল বাকি, এদিকে জিততে হলে তখনও দরকার দশটা রান। টানটান উত্তেজনা। শেষ ওভারে বল করছিলেন গুজরাটের মোহিত শর্মা। শেষ ওভারের প্রথম চারটি বল খুব ধরে করেছিলেন তিনি। মাত্র তিন রান দিয়েছিলেন। ফলে গুজরাট দলের পক্ষে তখন জয়ের পাল্লা বেশ ভারী। ঠিক এই সময় প্রয়োজন ছিল একটা মিরাকেলের। আর এই মিরাকেলটাই চেন্নাই দলের হয়ে বয়ে আনলেন রবীন্দ্র জাডেজা। পঞ্চম বলে প্রাণপণে ব্যাট হাঁকালেন তিনি। বল ততক্ষণে গ্যালারি পেরিয়েছে। শেষ বল, আর চার রান। এবারও তৈরি জাডেজা। জিততেই হবে, লড়াই জান কবুল। শেষ বলে সেই অতি আকাঙ্খিত চারটিই মারলেন তিনি। ব্যাস, পঞ্চমবারের মতো জয়ের শিরোপা উঠলো ধোনির মাথায়।
আরও পড়ুন - আনন্দের তিন ‘মন্ত্র’, ভারত কি পারবে কিস্তিমাত করতে?
এদিন বৃষ্টির জন্য অনেকটা সময় নষ্ট হয়। ২০ ওভারের খেলা কমে দাঁড়ায় ১৫ ওভারে। ২১৫ রানের লক্ষ্যও কমে হয় ১৭১। আর সেই লক্ষ্য তাড়া করে ৫ উইকেটে ম্যাচ জিতে যায় চেন্নাই। যদিও এদিন ব্যাট হাতে একেবারেই ব্যর্থ ছিলেন মহেন্দ্র সিং ধোনি। কিন্তু উইকেট কিপার ধোনি না থাকলে হয়তো ম্যাচটা অন্যরকম হতে পারতো। কারণ ম্যাচের প্রথম মোড় ঘুরিয়েছেন তিনিই। প্রথম ইনিংসে গুজরাটের দুই ওপেনার ঋদ্ধিমান সাহা, শুভমন গিল এবং তার পরে সাই সুদর্শন চেন্নাইয়ের বোলারদের নিয়ে কার্যত ছেলেখেলা করেছেন। চার, ছয়ের বন্যায় ততক্ষণে কার্যত প্লাবিত চেন্নাই শিবির। ৬ ওভারে ৬২ রান হয় গুজরাটের। তবে শুভমনের বড় রানের আশঙ্কা থামতে বাধ্য হয় ধোনির দস্তানায়। রবীন্দ্র জাডেজার বলে ৩৯ রানের মাথায় তাঁকে স্টাম্প আউট করেন ধোনি। গুজরাট দলে প্রথম ছন্দপতন হয় ঠিক তখনই।
যদিও রানের গতি বিশেষ কমেনি এতে। ঋদ্ধিমান সাহার ব্যাটে তখনও ছিল যথেষ্ট জোর। ৩৬ বলে অর্ধশতরান করেন তিনি। ঋদ্ধি যেখানে শেষ করলেন সেখান থেকে শুরু করলেন সাই সুদর্শন। ৩১ বলে অর্ধশতরান করেন সুদর্শন। তার পরে আরও হাত খুলে খেলা শুরু করেন তিনি। একটা সময় মনে হচ্ছিল, ফাইনালে শতরান করবেন সুদর্শন। কিন্তু ৪৭ বলে ৯৬ রান করে আউট হয়ে যান সুদর্শন। হার্দিক শেষ দিকে ১২ বলে ২১ রান করেন। ২০ ওভারে ৪ উইকেট হারিয়ে ২১৪ রান করে গুজরাট।
সামনে বড় রানের ধাক্কা, তার ওপরে বৃষ্টি ভেজা মাঠ, ফলে প্রথম থেকেই বড় শট খেলা ছাড়া কোনও উপায় ছিল না চেন্নাইয়ের ব্যাটারদের। প্রতি ওভারে একটু একটু করে বাড়ছিল প্রয়োজনীয় রান রেট। সেই পরিস্থিতি থেকে দলকে ফেরালেন শিবম দুবে, অজিঙ্ক রাহানে ও অম্বাতি রায়ডু। রাহানের ২৭ ও রায়ডুর ১৯ দলকে জয়ের কাছে নিয়ে যায় চেন্নাইকে। আর শেষ বাজিটা মত করলেন রবীন্দ্র জাডেজা। শেষ দুই বলে চার আর ছয় হাঁকিয়ে ক্যাপ্টেনের হাতে ট্রফি তুলে দিলেন তিনি।