পুজোর হ্যাংওভার সামলাতে শরীর আদৌ প্রস্তুত? মাথায় থাকুক সুস্থতার এই উপায়গুলি

Durgapuja Health Tips: সারাবছর যেখানে বাজার চলতি জলের কোনও ঠিক ঠিকানা থাকে না, সেখানে দুর্গাপুজোর মতো সময়ে যে জলের কোম্পানিগুলি ‘হাইজিন’ মেনে চলবে, একথা আশা করাও ভুল।

দু’দিন পরেই মহালয়া আর মহালয়া মানেই দেবীপক্ষের সূচনা। বাঙালির পুজো শুরু হয় বলতে গেলে মহালয়ার দিন থেকেই। কলকাতায় প্রতিবছর তৃতীয়া কিংবা চতুর্থীতেই রাস্তায় পা রাখার জায়গা পাওয়া যায় না। এরমধ্যে কিছুদিন আগে ‘হু’ আবার ঘোষণা করে দিয়েছে, করোনা অবশেষে পৃথিবী ছেড়ে বিদায় নিয়েছে। তাই এবার আর পুজোর ভিড় দেখার জন্য যে নগরবাসীকে তৃতীয়া পর্যন্তও অপেক্ষা করতে হবে না, সে কথা বলাই বৃথা।  বাঙালির কাছে পুজো মানেই সারা বছরের একটু একটু করে জমিয়ে রাখার সবটা ঢেলে খরচা করা। পুজো মানেই বাঁধ ভাঙা আনন্দ, একসঙ্গে বসে আড্ডা, হই-হুল্লোড়, সারা রাত জেগে ঠাকুর দেখা আর সবচেয়ে জরুরি, যা মন চায় তাই খাওয়া। বছরের এই সময়েই বাঙালিরা খাওয়া–দাওয়া নিয়ে বিশেষ বাছবিচার করেন না, এমনকী যাঁরা সারা বছর ধরে জিমে গিয়ে ঘাম ঝরিয়ে বহু কষ্টে সিক্সপ্যাক বানান, তাঁরাও খুব সহজেই পুজোর ভূরিভোজে তা একেবারে ভেঙে চুরমার করে দিতেও বিশেষ ভাবেন না।

চপ, শিঙ্গারা, ফুচকা, এগরোল, পরোটা থেকে শুরু করে প্রায় সব ধরনের ক্ষতিকর খাবারগুলিই তখন আমাদের কাছে একেবারে স্বর্গসম। এরসঙ্গেই আবার রয়েছে লাগাম ছাড়া রঙিন জলের হিড়িক। অতঃপর পুজোর চারটে দিন কোনওরকমে পার করতে পারলেও, পরের দিনগুলোতে শরীর খারাপ একেবারে অবধারিত। আবার অনেকে তো পুজোর মধ্যেই অসুস্থ হয়ে পড়েন। এইবার পুজোয় যেন আপনাকে আর অসুস্থ না হতে হয় সেইজন্যই রইল পুজোয় নিজেকে ভালো রাখার কিছু টিপস।

আরও পড়ুন- Karim’s vs Kareem’s: এ বলে আমায় দেখ, ও বলে আমায়! পুজোয় কোথায় কোন বিরিয়ানি সেরা?

এবার শরতের নীল আকাশে ‘সাদা মেঘের ভেলা’র বদলে কালো মেঘের ঘনঘটার প্রকোপই বেশি। যদিও আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, দেশ ছেড়ে বর্ষা-বিদায় ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে, তবে বঙ্গ থেকে বর্ষা নাকি বিদায় জানাতে জানতে অক্টোবরের দ্বিতীয় সপ্তাহ। সুতরাং পুজোতে যে বৃষ্টি হবে না, এ কথা একেবারেই বলার উপায় নেই। বৃষ্টি মানেই মণ্ডপ দেখতে গিয়ে কাক স্নান! জামার জল গায়েই শুকনো আর সেখান থেকেই ঠাণ্ডা লেগে কিংবা ভাইরাল ইনফেকশন থেকে ধূম জ্বর। বেশিরভাগ সময়েই শাড়ি সামলাতে সামলাতে আর ছাতা সামলানো হয়ে ওঠে না, তাই বেচারা বর্ষাকালের সঙ্গী আর পুজোর সঙ্গী হয়ে উঠতে পারে না। কিন্তু এইবার পুজোয় কষ্ট করে হলেও ছাতাটা একটু সঙ্গে রাখার চেষ্টা করুন। একদিকে যেমন পুজোর আগে করানো ফেসিয়ালের মেয়াদও দীর্ঘস্থায়ী হবে, তেমনই আবার রক্ষা মিলবে বরুণ দেবের ‘কু-নজর’ থেকেও।

আগেই বলেছি, পুজো মানেই বাইরের উলটোপালটা জিনিস খাওয়া। বাইরের খাবার যতখানি সম্ভব এড়িয়ে চলতে, এই বাণী মন একেবারেই শুনবে না। তার চেয়ে বরং সকালবেলা খালি পেটে একটা অ্যান্টাসিড খেতে পারেন আর পারলে তিনবেলাই বাইরে না খেয়ে অন্তত একবেলা হলেও বাড়িতে খাবার চেষ্টা করুন। তিনবেলা টানা বাইরে খাওয়া মানেই শরীরের খাদ্যনালী এবং পাচনতন্ত্রের উপর চাপ সৃষ্টি করা। এতে একদিন পেটপুরে খেলেও পরেরদিন
অসুস্থ হয়ে যাওয়ার সম্ভবনা প্রবল। অ্যান্টাসিডের পাশাপাশি আবার শরীরের মেটাবলিজম ঠিক রাখতে আর আগেরদিন রাতের হ্যাংওভার কাটিয়ে উঠতে সকালবেলা একগ্লাস লেবু-জলের বিকল্প নেই। আর যদি কেউ নেহাতই ফিটনেস ফ্রিক মানুষ হয়ে থাকেন তবে তাঁরা নিজেদের সঙ্গে পছন্দের দু’টো একটা ফল রাখতে পারেন। একেবারে তেলেভাজা না খেয়ে খাবারের মধ্যে দক্ষিণ ভারতীয় খাবার যেমন, ইডলি বা ধোসার মতো খাবারগুলি রাখতে পারেন।
সকালবেলার জলখাবার কিন্তু কোনওভাবেই মিস করা যাবে না পুজোর ক’টা দিনে।

আরও পড়ুন- অক্ষয় হোক পুজোর রান্নার ঐতিহ্য! যে ষোলোআনা বাঙালি খাবারগুলি অবশ্যই খাবেন…

‘প্যান্ডেল হপিং’ করতে করতে জল তেষ্টা পাবেই আর সেইসময় অধিকাংশক্ষেত্রেই মণ্ডপের আশেপাশের দোকান অথবা অন্যত্র থেকে যে কোনও কোম্পানির জলের বোতল কিনে থাকি। তেষ্টার তাড়নায় আমরা একবারও দেখি না পয়সা দিয়ে কেনা জল আদৌ ভরসাযোগ্য কি না। এরপরের গল্প প্রায় সবার জানা। সারাবছর যেখানে বাজার চলতি জলের কোনও ঠিক ঠিকানা থাকে না, সেখানে দুর্গাপুজোর মতো সময়ে যে জলের কোম্পানিগুলি ‘হাইজিন’ মেনে চলবে, একথা আশা করাও ভুল। তাই সঙ্গে একটা জলের বোতল রাখা আবশ্যক। যাদের আবার লো প্রেশারের সমস্যা আছে, তাঁরা জলের সঙ্গে একটা ইলেকট্রলের প্যাকেটও সঙ্গে রাখতে পারেন। জলের এই ঝামেলা এড়াতে চাইলে ডাবের জল বা প্যাকেট করা ফ্রুটজুস খেতে পারেন। এগুলিতে একদিকে যেমন বিভিন্ন মিনারেল থাকে, তেমনই বিশ্বাসযোগ্যতার ব্যাপারটাও রক্ষা পায়। তবে বর্ষাকালে অনেকেরই জল তেষ্টা পায় না। কিন্তু কিলোমিটারের পর কিলোমিটার হাঁটতে হাঁটতে শরীর ডিহাইড্রেটেড হয়ে যাবেই, তাই তেষ্টা না পেলেও অন্যান্য দিনের থেকে পুজোর দিনগুলোতে একটু বেশি জল খাওয়াই বাঞ্ছনীয়।

পুজোর চারটে দিনকে একেবারে চুটিয়ে উপভোগ করার কারণে অনেকেই ঘুম বিষয়টাকে একেবারে এড়িয়ে চলে যান। কিন্তু অন্যান্য দিনগুলোর থেকেও পুজোর দিনগুলোতে শরীরে ক্লান্তি বেশি বই কম আসবে না তাই অন্তত আট ঘণ্টা ঘুম খুবই জরুরি। করোনা পৃথিবী ছেড়েছে ঠিকই কিন্তু এখনও আমাদের প্রত্যেকের বাড়িতেই তার স্মৃতিস্বরূপ একটা-দু’টো স্যানিটাইজার ঠিকই পাওয়া যাবে। এইবছরের পুজোয় সেগুলোরও একটা গতি হোক। খারাপ সময়ে যা কিছু ভালো অভ্যাস গড়ে উঠেছিল সেগুলো না হয় অক্ষুণ্ণ থাকুক আর সকলের পুজো ভালো কাটুক।

More Articles