থেমে গেল পৃথিবীর কেন্দ্রের ঘূর্ণন! উলটোদিকে ঘুরছে গ্রহের কেন্দ্র, কোন আশঙ্কার মুখে মানুষ?

Earth's Core Spinning: আমরা যে ভূপৃষ্ঠে বাস করি পৃথিবীর মূল অংশটি তার থেকে প্রায় ৫,০০০ কিলোমিটার গভীরে রয়েছে।

ঘুরতে ঘুরতে থেমে গেছে! একদিন যদি পৃথিবী ঘুরতে ঘুরতে হঠাৎ থেমে যায় বা উলটো দিকে ঘোরা শুরু করে? খুব একটা অমূলক নয় এমন ভাবনা। আস্ত গ্রহটা না হোক কিন্তু গবেষণা বলছে, পৃথিবীর কঠিন অভ্যন্তরীণ স্থানটি আসলে যেটা গরম ফুটন্ত লোহার বল তার ঘূর্ণন থেমে গিয়েছে। ঘূর্ণন থামিয়ে বিপরীত দিকে ঘুরতে শুরু করেছে পৃথিবীর অভ্যন্তর। আমরা যে ভূপৃষ্ঠে বাস করি পৃথিবীর মূল অংশটি তার থেকে প্রায় ৫,০০০ কিলোমিটার গভীরে রয়েছে। গ্রহের মধ্যেকার এই গ্রহ স্বাধীনভাবে ঘুরতে পারে কারণ এটি তরল ধাতবের মধ্যে ভাসছে। ঠিক কীভাবে এই অভ্যন্তরীণ মূলটি ঘোরে তা বিজ্ঞানীদের মধ্যে এখনও বিতর্কের বিষয়। কিন্তু মোদ্দা কথা হলো, সে এবার উলটোদিকে ঘুরছে।

অভ্যন্তরীণ এই গোলক সম্পর্কে আমরা যা জানি তা মূলত ভূকম্পনের তরঙ্গ পরিমাপ করার মাধ্যমেই জানা। ভূমিকম্প বা কখনও কখনও পারমাণবিক বিস্ফোরণ দ্বারা সৃষ্ট তরঙ্গ পৃথিবীর মাঝখান দিয়েই যায়। নেচার জিওসায়েন্স জার্নালে প্রকাশিত নতুন গবেষণা গত ছয় দশক ধরে ভূমিকম্পের পুনরাবৃত্তি থেকে ভূমিকম্পের তরঙ্গ বিশ্লেষণ করেছে। গবেষণার লেখক, জিয়াওডং সং এবং চিনের পিকিং ইউনিভার্সিটির ই ইয়াং জানিয়েছেন যে, তারা দেখেছেন পৃথিবীর অভ্যন্তরীণ কোরের ঘূর্ণন ২০০৯ সালের দিকে প্রায় বন্ধ হয়ে যায় এবং তারপরে বিপরীত দিকে ঘুরতে শুরু করে।

গবেষকরা জানাচ্ছেন, তাঁদের মতানুযায়ী পৃথিবীর পৃষ্ঠের সাপেক্ষে ভিতরের অংশটি ঘূর্ণায়মান হয়, এটি সামনে পিছনে, দোলনার মতো দোলে। এই দোলের একটি চক্র প্রায় সাত দশক। মানে মোটামুটিভাবে প্রতি ৩৫ বছরে তা দিক পরিবর্তন করে। অর্থাৎ ১৯৭০-এর দশকের গোড়ার দিকে দিক পরিবর্তন করেছিল। ফের ২০৪০- এর দশকের মাঝামাঝি দিক বদল হবে। এই বদলের ফলে মানুষের জীবনে কী প্রভাব পড়বে?

আরও পড়ুন- পৃথিবীর দ্রুততম ডুবন্ত শহর, প্রাণে বাঁচতে আস্ত রাজধানী অন্যত্র তুলে নিয়ে যাচ্ছে এই দেশ!

গবেষকরা বলেছেন, এখনও অবধি মানুষের উপর এর প্রভাব বোঝার মতো কোনও উপায় নেই। কিন্তু পৃথিবীর সমস্ত স্তরের মধ্যে অভ্যন্তরীণ স্তরের সঙ্গেই ভূপৃষ্ঠের নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। গবেষকদের অন্য এক অংশ বলছেন, পৃথিবীর কেন্দ্র সম্পর্কে অনেক রহস্যই এখনও অজানা রয়ে গেছে। তথ্যের অভাবে তা নিয়ে কাজ করার পরিমাণও কম।

গত বছর প্রকাশিত এক গবেষণা বলছে অভ্যন্তরীণ অংশটি আরও দ্রুত দোদুল্যমান, প্রতি ছয় বছর পর পরই সে দিক পরিবর্তন করে। ১৯৬০-এর দশকের শেষের দিকে এবং ১৯৭০-এর দশকের প্রথম দিকে দু'টি পারমাণবিক বিস্ফোরণ থেকে ভূমিকম্পের তরঙ্গের নিয়ে কাজ করতে গিয়ে এই তথ্য সামনে আসে। আরেকটি তত্ত্ব বলছে পৃথিবীর অভ্যন্তরীণ অংশটি ২০০১ থেকে ২০১৩-র মধ্যে স্থানান্তরিত হয়েছে এবং তারপর থেকে তা স্থিরই রয়েছে।

অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির একজন ভূ-পদার্থবিজ্ঞানী তাঁর গবেষণা প্রকাশ করেছেন যে, অভ্যন্তরীণ অংশের ঘূর্ণন প্রতি ২০ থেকে ৩০ বছরে হয়। কিন্তু নিশ্চিত করে বলা যায় না কারণ তথ্যের অভাবে অভ্যন্তরীণ পৃথিবীর চিত্র এখনও অস্পষ্ট। তবে একটি তত্ত্ব বলছে, ভিতরের এই কোরটির ভিতরে আরও একটি লোহার বল থাকতে পারে, খানিকটা রাশিয়ান পুতুলের মতো।

 

More Articles