গঙ্গার নীচেই ছুটবে ট্রেন, নতুন বছরেই শুরু হতে চলেছে ইস্ট ওয়েস্ট মেট্রো পরিষেবা?
East West Metro Corridor : মাত্র ৪৫ সেকেন্ড। তার মধ্যেই গঙ্গা নদী পেরিয়ে যাবেন যাত্রীরা। খুব শীঘ্রই পরিষেবা শুরু হবে বলে জানিয়েছে মেট্রো রেল কর্তৃপক্ষ।
ট্রেনের কামরায় উঠে জানলার ধারে চুপটি করে বসলেন। সামান্য কিছু সময় পর ট্রেন আপনাকে নিয়ে চলল নদীর ভেতর। রূপকথার গল্পের মতো বিশালাকার তিমির পেটে বসেই আপনি গঙ্গা পেরিয়ে এলেন। সাঁতারও কাটতে হল না, লঞ্চেও চাপতে হল না, আর গায়ের জামাকাপড়ও ভিজল না। একটা সময় এই সমস্তটাই ছিল কল্পবিজ্ঞান। নদীর নিচ দিয়ে ট্রেন! এই ভারতে সেটা সম্ভবই নয়!
কিন্তু এখন আর সেসব ব্যাপার নেই। সৌজন্যে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো করিডোর। ভারতের মধ্যে এই প্রথম নদীর ভেতর দিয়েই সুড়ঙ্গের মাধ্যমে মেট্রো রেল যাতায়াত করবে। ঠিক যেন ইউরোপের লন্ডন-প্যারিস করিডোর। আর সেই পথের পথিকৃৎ হল বাংলা। উল্লেখ্য, একটা সময় এই পশ্চিমবঙ্গেই প্রথম শুরু হয় মেট্রো পরিষেবা। এবারও প্রযুক্তির এই বিস্ময়ের সাক্ষী থাকতে চলেছে বাংলা। মেট্রোই এবার জুড়বে হাওড়া আর কলকাতা। মাত্র ৪৫ সেকেন্ড। তার মধ্যেই গঙ্গা নদী পেরিয়ে যাবেন যাত্রীরা। খুব শীঘ্রই এই পরিষেবা শুরু হবে বলে জানিয়েছে মেট্রো রেল কর্তৃপক্ষ।
বেশ কয়েক বছর ধরেই ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর কাজ চলছে। তথ্যপ্রযুক্তির প্রাণকেন্দ্র সেক্টর ফাইভ থেকে এই মেট্রোর রাস্তা সোজা চলে যাবে হাওড়ায়। ইঞ্জিনিয়ারদের মতে, স্থলপথে নিয়ে গেলে অনেক সমস্যার মুখে পড়তে হতো। নতুন করে পিলার তৈরি করা, মেট্রোর লাইন বসানো, রাস্তা খোঁড়া – যানজটের সমস্যা আরও কয়েক গুণ বাড়ত। তার মধ্যে কলকাতা আর হাওড়ার মধ্যে রয়েছে গঙ্গা নদী। মেট্রোর জন্য নতুন ব্রিজ তৈরি, নয়তো হাওড়া সেতুর ওপরেই নতুন করে পাততে হবে মেট্রোর লাইন। দুটো কাজেই ঝক্কি অনেক, ক্ষতির আশঙ্কাও থেকে যাচ্ছে। নদী তো বটেই, হেরিটেজ ব্রিজটিরও ক্ষতি হতে পারে।
শেষমেশ উপায় বের করা হল। নদীর মধ্যে দিয়েই নিয়ে যাওয়া হবে মেট্রোর লাইন। এসপ্ল্যানেড থেকে হাওড়া অবধি নতুন সুড়ঙ্গ তৈরির কাজ শুরু হল। টানেলের ভেতরের দেওয়াল ২৭৫ মিলিমিটার পুরু উচ্চমানের কংক্রিট দিয়ে তৈরি করা হয়েছে। কংক্রিটের মধ্যে মেশানো হয়েছে ফ্লাই অ্যাশ ও মাইক্রো সিলিকা। ফলে নদীর জলের সংস্পর্শে থাকলেও খুব বেশি ক্ষতি হবে না। মোট ছয়টি অংশ দিয়ে সুড়ঙ্গের বৃত্তাকার অংশ তৈরি করা হয়েছে। সবগুলোই আনা হয়েছে কোরিয়া থেকে। সেখানে বিশেষ প্রযুক্তিতে তৈরি হয়েছে এই টানেলের অংশগুলি।
সেইসঙ্গে সুদূর জার্মানি থেকে আনা হয়েছিল দুটি উন্নত প্রযুক্তির বোরিং মেশিন। এই মেশিনগুলির সাহায্যেই সুড়ঙ্গ খোঁড়ার কাজ করা হয়েছে। সেইসঙ্গে লাইনার থেকে যাতে জল খসে বড়সড় দুর্ঘটনা না হয়, সেজন্য নিওপ্রিন ও হাইড্রোফিলিক অক্সিলিয়ারি গ্যাসকেট লাগানো আছে। জলের সংস্পর্শে এলেই এটি ফুলে উঠবে। ফলে যে সূক্ষ্ম ফাঁকগুলো থাকবে, সেগুলোও ঢাকা পড়ে যাবে। মোট দুটি টানেল করা হয়েছে, একটি আপ মেট্রোর জন্য, অন্যটি ডাউনের। টানেলের ভেতরের ব্যাস ৫.৫৫ মিটার, বাইরের ব্যাস ৬.১ মিটার।
ইতিমধ্যেই নদীর নিচে সুড়ঙ্গ বসানোর কাজ শেষ হয়ে গিয়েছে। এখন নবনির্মিত শিয়ালদহ মেট্রো স্টেশন থেকে এসপ্ল্যানেড অবধি যোগাযোগ সম্পূর্ণ হলেই পুরোদমে চালু হয়ে যাবে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো। ২০২৩-এর ডিসেম্বরের মধ্যে এই কাজ শেষ হয়ে যাবে বলে মনে করছে মেট্রো রেল কর্তৃপক্ষ। ৫২০ মিটার লম্বা এই বিশেষ সুড়ঙ্গের জন্য শহরের যানজট অনেকটাই কমবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। শিয়ালদহ আর হাওড়ার মধ্যে আরও সহজে ও দ্রুত যাতায়াত করা যাবে। আপাতত সেই দিনটির আশায় বসে আছে কলকাতা ও হাওড়াবাসী। সব ঠিক থাকলে, নতুন বছরেই বাংলা সাক্ষী থাকবে এক আশ্চর্যের।