চাকরি নেই, টিকা নেই, বেহাল জনজীবন! জিরো কোভিডের লক্ষ্যে কোন ফাঁড়া ডেকে আনল চিন?
Zero Covid, China : জিরো কোভিড নীতি প্রত্যাহার করে কি ভুল করল চিন সরকার?
চলতি বছরের হংকং এর জের এবার চিনেও। যদিও আশঙ্কা করা হচ্ছে, চিনের পরিস্থিতি নাকি আরও ভয়ংকর দিকে এগোবে। এতদিন চিনে বলবৎ ছিল জিরো কোভিড নীতি। দেশকে করোনা মুক্ত করার লক্ষ্যে যে পদক্ষেপ চিনা সরকার গ্রহণ করেছিল তার জেরে সার্বিক ভাবে ভেঙে পড়ে দেশের অর্থনীতি। সাধারণ মানুষের জীবন যাত্রা ক্রমেই খারাপ থেকে খারাপতর হতে দেখা যায়। পাশাপাশি সব দেশে যখন করোনা কাটিয়ে নিউ নর্মালের সঙ্গে মানিয়ে উঠছে মানুষ তখন চিন পড়ে পুরনো গর্তে। নিয়মের বেড়াজালে জীবন ঘরবন্দি। এতে একদিকে যেমন ব্যাহত হয়েছে স্বাভাবিক ছন্দ অন্যদিকে মানুষের শরীরের সাধারণ ইমিউনিটি সিস্টেমটাও তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। উপরন্তু টিকাকরণের নিরিখেও অন্যান্য সমস্ত দেশের থেকে অনেকটা পিছিয়ে রয়েছে চিন।
অথচ পেটের দায় মহা দায়। তাই দীর্ঘদিন নিয়ম জারি রাখলে জনতার বিক্ষোভ-রোষের মুখে পড়েতেই হতো। সম্প্রতি তার জেরেই করোনাবিধি শিথিল করতে বাধ্য হয় চিনের প্রশাসন। কিন্তু করোনাবিধি শিথিল করার পর থেকেই হু হু করে বাড়ছে করোনা সংক্রমণ। একে এতদিন ঘরবন্দি জীবন, তায় আবার টিকাকরণ অনিশ্চিত। পরিস্থিতি ক্রমেই ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পরে বলেই ধারণা করছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। সম্প্রতি চিনের এই ঊর্ধ্বমুখী করোনা সংক্রমণের তরফে প্রকাশিত একটি রিপোর্ট এই উদ্বেগ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। লন্ডনের একটি স্বাস্থ্য সংস্থার সেই রিপোর্টে বলা হয়েছে, লন্ডনের একটি স্বাস্থ্য সংস্থার রিপোর্টে বলা হয়েছে, এখনই করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে যদি চিনা সরকার কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ না করে, তবে ২০২৩ সালে চিনে করোনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াবে ১০ লক্ষের কাছাকাছি। শুধু তাই নয়, উদ্বেগ আরও জোরালো হয় মৃতের সংখ্যার দিক তাকালেই। এপ্রিল মাসের মধ্যে ৩ লক্ষ ২২ হাজার জনের মৃত্যু হতে পারে বলেও আশঙ্কা করেছে উক্ত সংস্থাটি।
আরও পড়ুন - করোনার পর ফের মহামারীর সামনে পৃথিবী? কারণ দেখিয়ে ভয়াবহ ইঙ্গিত বিজ্ঞানীদের
প্রশ্ন উঠেছে, তবে কি জিরো কোভিড নীতি প্রত্যাহার করে ভুল করল চিন সরকার? গত দুই বছরে জিরো কোভিডের অধীনে আরোপিত লকডাউনগুলি ইতিমধ্যেই চীনের অর্থনীতিকে দুর্বল করেছে, এপ্রিলে সাংহাইয়ের আর্থিক পরিস্থিতি যে বেহাল পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছে তার জেরে বিশ্বব্যাপী রপ্তানি ব্যবসাও ব্যাহত করেছে। এর ফলে ভেঙে পড়েছে চীনের অর্থনৈতিক ভিত। শুধু তাই নয় ভেঙে পড়েছে নাগরিকদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রাও। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, চলতি বছরের শুরুতে ১৬ থেকে ২৪ বছর বয়সী প্রতি পাঁচজন চীনা নাগরিকের মধ্যে একজন করে বেকার ছিল। সাম্প্রতিক ব্লুমবার্গ রিপোর্ট বলছে, এই সংখ্যাটি আগামী বছর আরও খারাপ হবে। প্রায় ১১.৬ মিলিয়ন গ্র্যাজুয়েট কর্মহীনতায় ভুগতে পারেন বলেও আশঙ্কা করা হয়েছে।
এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় একমাত্র উপায় প্রয়োজনীয় হারে টিকাকরণ। হংকয়ের উদাহরণ সামনে রেখে টিকাকরণের ওপর জোর দিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। প্রথমে বয়স্কদের দিয়ে প্রক্রিয়া শুরু করে করিনি দেশের সমস্ত জনগণের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে হবে প্রথম, দ্বিতীয় এবং বুস্টার ডোজ। এবং অতি সত্ত্বর। নচেৎ পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যাবে। দীর্ঘ দিনের বন্দি দশায় জনসাধারণের মধ্যে যে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস পেয়েছে তা ফিরিয়ে এনে সংক্রমণের হার কমাতে একমাত্র লক্ষ্য তাই সার্বিক টিকাকরণই।