ত্বকে সাদা দাগ উপেক্ষা করছেন, জানেন কোন বিপদ ডেকে আনছেন অজান্তেই?

অনেক মানুষের ক্ষেত্রে অবশ্য কুষ্ঠ হলেও এই ধরনের উপসর্গ দেখা যায়। তবে যদি কোনও মানুষের কুষ্ঠ হওয়ার কারণে সাদা সাদা ছোপ বা দাগ পড়ে, তবে এক্ষেত্রে তার কোনওরকম জ্বালাভাব কিংবা সেনশেশন থাকে না।

 

ত্বক নিয়ে সবসময়ই আমরা যত্নশীল। এই প্রসঙ্গে সামান্য কোনও খামতি আমাদের বেশ চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। ত্বকের নানা স্থানে সাদা সাদা দাগ কিংবা ছোপ পড়া মানেই তা আমরা 'শ্বেতী' বলে ভেবে নিই। তবে এক্ষেত্রে প্রধান সমস্যার ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায় এই যে, অনেকেই লজ্জার কারণে এটিকে লোকচক্ষুর সামনে আনতে চায় না কিংবা চিকিৎসা করাতেও ভয় পায়। ফলে দীর্ঘ সময় ধরে লুকোনোর কারণে স্বাভাবিকভাবেই তা বৃদ্ধি পায়। সেই দাগের পরিমাণ এতটাই বৃদ্ধি পেয়ে যায় যে, পরবর্তীকালে তার চিকিৎসা করা একপ্রকার অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়। এমনকী, কখনও কখনও হাত থেকে শুরু করে মুখ কিংবা গলাতে পর্যন্ত একাধিক সাদা ছোপ পড়তে দেখা যায়। এই প্রসঙ্গে আমাদের জ্ঞানের অভাবে তা আরও বৃদ্ধি পায়।

চিকিৎসকদের মতে, এই সাদা দাগগুলো অনেক সময় 'ছুলি'-জাতীয় সমস্যা হতে পারে। এছাড়াও অনেকসময় বাইরে থেকে কোনও সংক্রমণ ঘটতে পারে, যার কারণে ত্বকে এহেন সাদা ছোপ দেখা যায়। বিশেষ করে ছোট ছোট শিশুদের চোখে, মুখে, হাতে এবং পায়ে এই ধরনের সংক্রমণ ঘটতে পারে। তবে শুধু তা-ই নয়, মাথায়, বুকে, যৌনাঙ্গে এমনকী, শরীরের যে-কোনও প্রান্তে এই রোগ ধরা পড়লে অবাক হওয়ার কিছুই নেই। তবে আপনি যদি এর চিকিৎসা করাতে দেরি করেন, তবে পরবর্তীকালে গিয়ে এই সমস্যার সমাধান হতে অনেক সময় লেগে যায়। তাই দেরি না করে রোগ নিরাময়ে ডাক্তার দেখানোই শ্রেয়।

তবে এই শ্বেতী কেন হয়?
আসলে মানুষের ত্বকে এক ধরনের বিশেষ কোশ থাকে, যার নাম মেলানোসাইট। এই বিশেষ কোশগুলি একটি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যায়, যার নাম 'মেলানোজেনেসিস' এবং এর প্রধান কাজ হলো মেলানিন নামে এক ধরনের রঞ্জক আমাদের শরীরে তৈরি করা। এই রঞ্জকটির পার্থক্য হওয়ার কারণেই মানুষের গায়ের রং বিভিন্ন রকমের হয়ে থাকে। ফলে এটা বলাই যায় যে, আমাদের ত্বকের রং প্রধানত মেলানোসাইট নামে কোশটির ওপর নির্ভর করে। তবে শরীরে আচমকাই যদি রোগ-প্রতিরোধ ব্যবস্থা সমস্যা সৃষ্টি করে, তবে আমাদের রক্তে টি-লিম্ফোসাইট নামক এক ধরনের শ্বেতকণিকা বৃদ্ধি পায়। চিকিৎসকদের মতে, এই শ্বেতকণিকা পরবর্তীকালে মেলানোসাইট কোশগুলিকে ধ্বংস করে দেয়। ফলে স্বাভাবিকভাবেই মেলানিন রঞ্জক তৈরি হওয়ার সুযোগ পায় না এবং পরবর্তীতে আমাদের ত্বকে সাদা সাদা দাগ ধরা পড়ে।

শ্বেতী আসলে অটো-ইমিউন ডিজিজ
আপনার যদি এহেন রোগ হয়, তবে আপনি অটো-ইমিউন ডিজিজের রোগী। তবে এই 'শ্বেতী' নামক অটো-ইমিউন ডিজিজের সঙ্গে 'ছুলি'-র বহু অংশে পার্থক্য রয়েছে। ত্বকের বিভিন্ন স্থানে সাদা দাগ যদি ছুলির কারণে হয়, তবে এটি এক ধরনের সংক্রমণজনিত রোগ। মহিলাদের ক্ষেত্রে সিঁদুর, আলতা ও বিভিন্ন ধরনের প্রসাধনীতে ব্যবহৃত রাসায়নিক কিংবা অন্যান্য ক্ষেত্রে চুলে রং করার ফলেও এই ধরনের সাদা সাদা দাগ সৃষ্টি হতে পারে। শুধু তাই নয়, ফাংগাল ইনফেকশন থেকেও আপনার ত্বকে সাদা ছোপ পড়তে পারে। এইগুলি সংক্রমণজনিত রোগ বলে বিবেচিত করা হয়। ফলে এক্ষেত্রে চিকিৎসাই হলো প্রধান অস্ত্র।

অনেক মানুষের ক্ষেত্রে অবশ্য কুষ্ঠ হলেও এই ধরনের উপসর্গ দেখা যায়। তবে যদি কোনও মানুষের কুষ্ঠ হওয়ার কারণে সাদা সাদা ছোপ বা দাগ পড়ে, তবে এক্ষেত্রে তার কোনওরকম জ্বালাভাব কিংবা সেনশেশন থাকে না। শুধুমাত্র সেই স্থানটি অসাড় হয়ে যায়। যেমন চিমটি কাটলে কিংবা আঘাত করলে সেখানে আপনার ব্যাথা করবে না।

শ্বেতী সম্পর্কে ভ্রান্ত ধারণা
এক্ষেত্রে এবার আসা যাক, অপর একটি ভ্রান্ত ধারণা সম্পর্কে। আমাদের মধ্যে অনেকেই এটা মনে করেন যে, শ্বেতী হলে সেটা এক ব্যক্তির থেকে তৎক্ষণাৎ অপর ব্যক্তির হতে পারে, অর্থাৎ এটি ছোঁয়াচে। কিন্তু তা একদম নয়, বরং যদি আপনি ছুলি-তে আক্রান্ত হন, তবে সেটি ছোঁয়াচে হতে পারে। ফলে এবার থেকে সাদা দাগ ধরা পড়লে বাড়িতে না লুকিয়ে কিংবা লজ্জায় না ভুগে দ্রুত ডাক্তার দেখানোই উচিত। এছাড়া নারকেল তেল ব্যবহার করা যেতে পারে এক্ষেত্রে। অনেক ক্ষেত্রে তাতে সুরাহা মেলে কিংবা সেনসেশন থেকেও মুক্তি পাওয়া যায়।

রোগের প্রতিকার
তবে আপনার যদি ছুলি হয়, তবে এটি ছোঁয়াচে হওয়ার কারণে আপনার ব্যবহৃত চিরুণি থেকে শুরু করে জামাকাপড় এবং অন্যান্য জিনিসপত্র পৃথক করে রাখা উচিত। এটি সংক্রামক হওয়ার কারণে এক ব্যক্তির থেকে অন্য ব্যক্তির রোগ ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা থাকে। ফলে সাবধান থাকার পাশাপাশি তৎক্ষণাৎ ভালো ডাক্তারের সাহায্যে চিকিৎসা করা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে আমরা বিভিন্ন রকমের ঘরোয়া টোটকাও অবলম্বন করে থাকি। অনেকের মতে, এক্ষেত্রে লাল মাটি ব্যবহার করা যেতে পারে। লাল মাটির সঙ্গে সামান্য আদা মিশিয়ে এ-সকল সাদা স্থানে লাগাতে পারলে উপকার হয়। আরাম হওয়ার পাশাপাশি এক্ষেত্রে ছুলি কিংবা অন্যান্য সংক্রমণ থেকে মুক্তিও মিলতে পারে। তবে এক্ষেত্রে বাড়িতে কোনওরকম চিকিৎসার পথে না হেঁটে ত্বকের কোনও ভালো ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়ার কথাই বলেন বিশেষজ্ঞরা।

More Articles