মাত্র একজন ভোটাদাতার জন্য গড়া হয়েছিল বুথ! কে এই 'বিশেষ' ভোটার?

Polling Booth for Single Voter: একজনের ভোট নিয়েই যে চটজলদি বাড়ি ফিরে যাবেন এমনটাও না, ইসির নির্দেশিকা অনুযায়ী কর্মীদের সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত বুথেই থাকতে হয়েছে

ভোট দিয়ে হবে টা কী? ভারতের সাম্প্রতিককালের রাজনীতির চর্চা অধিকাংশ ভারতীয়র মনে এই প্রশ্ন তোলেই। ভোটের প্রতিশ্রুতির প্রহসন, ভোট চলাকালীন রাজনৈতিক হিংসা, ভোট পাওয়া ব্যক্তিদের টাকার বিনিময়ে কিনে নেওয়া- সবটাই গণতন্ত্রের প্রতি এক ঔদাসীন্যকেই প্রবল করে তুলছে। তাও, অস্বীকার করা যাবে না, নির্বাচনই ভারতের গণতন্ত্রের সবচেয়ে বড় উৎসব! আর এই উৎসবের আভাস থেকে শুরু করে, উৎসবের আয়োজন, উৎসবের পরবর্তী নানা ঝঞ্ঝাট সবটা মিলেই ভারতবর্ষ এক এমন ঘটনাপ্রবাহের মধ্যে দিয়ে চলে, যাতে আখেরে যে মানুষদের লাভের কথা বলে অঞ্জলি দেওয়ানো হয় তাঁদের ভাগে পড়ে থাকে অনন্ত না পাওয়া। তাই উৎসবে গা না ভাসানোর সিদ্ধান্ত নেন অনেকেই, প্রতিটি নির্বাচনী মরসুমেই অনেক ভোটারই বিভিন্ন কারণে ভোট না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। ভোটের সঙ্গে গণতন্ত্র, অধিকার এসবের বিশেষ সম্পর্ক তাঁদের ভাবিত করে না। তবু ভারতের নির্বাচন কমিশন দেশের একেবারে প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের আঙুলে গণতন্ত্রের দাগ দিতে বদ্ধ পরিকর। এতটাই দায়বদ্ধ নির্বাচন কমিশন যে, একজন ভোটার থাকলেও তাঁর জন্য নির্বাচনী বুথের বন্দোবস্ত করা হয়! ২০১৯ সালের নির্বাচনে ঘটেছিল এমনই!

ওই বছর তৃতীয় দফায় নির্বাচনের জন্য গুজরাতে ৫১,০০০-এরও বেশি ভোট কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছিল। এই বুথগুলির মধ্যেই একটি ছিল গির অভয়ারণ্যের ঘন জঙ্গলের মধ্যে ৭০ কিলোমিটার ভিতরে! মজার বিষয় হলো, ভারতের নির্বাচন কমিশন শুধুমাত্র একজন ভোটারের জন্য এই বুথ স্থাপন করেছিল।

গির অরণ্যের ভিতরে বাস করতেন মহন্ত ভারতদাস বাপু। তাঁর ভোটটি আদায়ের জন্যই এই বিপুল আয়োজন, এমন ঘন জঙ্গলে ভোট কেন্দ্র স্থাপন। সোমান্থ জেলায় অবস্থিত বানেজ হচ্ছে জুনাগড় লোকসভা কেন্দ্রের অংশ। সেবার গুজরাতের অন্যান্য ২৫টি লোকসভা আসনের সঙ্গে এই আসনেও ছিল ভোটগ্রহণ। ঠিক সময় মতোই নির্বাচনের তিন দিন আগে, পাঁচজন পোলিং অফিসার গুজরাতের গির অরণ্যের ভিতরে ভারতদাস বাপুর জন্য ভোট কেন্দ্র স্থাপন করতে ৭০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দেন।

আরও পড়ুন- নির্বাচনে ডাহা ফেল বাম-কংগ্রেস-তৃণমূল, এই মাস্টারস্ট্রোকেই ত্রিপুরায় বাজিমাত বিজেপির

মহন্ত ভারতদাস দর্শনদাস ওরফে ভরতদাস বাপু ছিলেন এক প্রাচীন শিব মন্দিরের একজন পুরোহিত। এই শিবমন্দিরটি আসলে গির অভয়ারণ্যের ভিতরে অবস্থিত এক বিখ্যাত তীর্থস্থানও। শুধু যে বাপুর ভোট নিয়ে পাততাড়ি গুটিয়ে চলে আসেন নির্বাচন কর্মীরা এমন নয়, ঘন জঙ্গলের এই একমাত্র ভোটার বাপুকে ফুলের তোড়া দিয়ে অভ্যর্থনা জানানো হয়েছিল। এমন ঘন বনের মধ্যে নানা প্রতিকূল পরিস্থিতিতে ভোটের আয়োজন করে হয়েছিল ভোট কর্মীদের। বন বিভাগের অফিসে বুথ স্থাপনের সময় ভোটগ্রহণ কর্মকর্তারা মোবাইল নেটওয়ার্কের অভাবের মতো সমস্যার মুখে পড়েন। একজনের ভোট নিয়েই যে চটজলদি বাড়ি ফিরে যাবেন এমনটাও না, ইসির জারি করা নির্দেশিকা অনুযায়ী তাদের সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত বুথেই থাকতে হয়েছে।

যার জন্য এই বিপুল আয়োজন, সেই পুরোহিত বাপু অবশ্য বেজায় আনন্দ পেয়েছিলেন। তিনি "ভোট দিয়ে কী হবে" গোত্রে পড়েন না, নিজের নির্বাচনী অধিকার প্রয়োগের সুযোগ হাতছাড়া করেন না। ২০০৭ সাল থেকে অনুষ্ঠিত সমস্ত বিধানসভা এবং লোকসভা নির্বাচনে ভোট দিয়েছেন তিনি। তবে প্রতি ভোটারের মতোই তারও দাবিদাওয়া রয়েছে কিঞ্চিৎ। সেই সময় সত্তর ছুঁইছুঁই এই বৃদ্ধ জানিয়েছিলেন জনগণের জন্য ভালো রাস্তা, বিদ্যুৎ এবং পানীয় জল সবচেয়ে জরুরি। নির্বাচন কমিশন তাঁর ভোট নিয়েছে, দাবিপূরণ হয়েছে কিনা ভারতে এই জাতীয় প্রশ্ন করাটা খুব একটা যুক্তিযুক্ত হয় সম্ভবত।

More Articles