নির্বাচনে ডাহা ফেল বাম-কংগ্রেস-তৃণমূল, এই মাস্টারস্ট্রোকেই ত্রিপুরায় বাজিমাত বিজেপির
Tripura Assembly Election 2023 : রাস্তায় রাস্তায় গেরুয়া আবির নিয়ে নেমে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। বিজেপি নেতা থেকে প্রার্থী, প্রত্যেকের মুখেই চওড়া হাসি।
বিদ্রোহ, বিরোধিতা – ছিল অনেককিছুই। বিরোধীদের লাগাতার প্রচারও ছিল। গর্জন, পাল্টা গর্জনে ভোটের আগেই উত্তাপ বেড়েছিল উত্তর-পূর্বে। কিন্তু শেষমেশ হাসি ফুটল গেরুয়া শিবিরের মুখে। হাজার চিন্তা, অজস্র বিনিদ্র রজনী পেরিয়ে ফের একবার ত্রিপুরায় ক্ষমতা দখল করল বিজেপি। রাস্তায় রাস্তায় গেরুয়া আবির নিয়ে নেমে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। বিজেপি নেতা থেকে প্রার্থী, প্রত্যেকের মুখেই চওড়া হাসি। বিজয়ীর সার্টিফিকেট নেওয়ার সময় সেই হাসির ঝলক দেখা গেল বিদায়ী মুখ্যমন্ত্রী ডঃ মানিক সাহার মুখেও।
আপাতদৃষ্টিতে ত্রিপুরার ছবি এটাই। প্রবল বিরোধিতা সত্ত্বেও এই রাজ্যে বিজেপির মুখেই শেষ হাসি ফুটল। দীর্ঘ বহু বছর ক্ষমতায় থাকার পর এবার ফিরে আসার হুংকার দিয়েছিল বামেরা। পশ্চিমবঙ্গের মতো ত্রিপুরাতেও বাম-কংগ্রেস জোট হয়েছিল। সেইসঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসও সমস্ত শক্তি দিয়ে ত্রিপুরার বিধানসভা নির্বাচনে নেমেছিল। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে শুরু করে একের পর এক হেভিওয়েট নেতা-মন্ত্রীরা প্রচারে এসেছেন। কিন্তু ত্রিপুরাবাসী যে এখনও বিজেপির ওপরেই ভরসা করে, সেটা বৃহস্পতিবার, ২ মার্চের ফলাফলেই বোঝা গেল।
আরও পড়ুন : ‘নোটা’র কাছেও গো হারা হারল তৃণমূল! কেন ত্রিপুরায় এমন ভরাডুবি হল জোড়াফুলের?
বাম-কংগ্রেস-তৃণমূল, তিন বিরোধী শক্তিই কার্যত দাঁত ফোটাতে পারেনি। অথচ নির্বাচনের আগে থেকেই লাইমলাইটে ছিল ত্রিপুরা। কারণ? ত্রিপুরায় বিজেপির দলের ভেতরেই জোর কোন্দল। গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব তীব্র হচ্ছিল, মন্ত্রিসভার ভেতরেও চলছিল বিভিন্ন উত্তপ্ত আলোচনা। সেইসঙ্গে জাতীয় বিভিন্ন ইস্যু তো ছিলই। তবুও ৬০টি আসনের মধ্যে ৩৪টি আসন জিতে সংখ্যাগরিষ্ঠতা বজায় রাখল বিজেপি। কীভাবে হল এই কাজ? কী স্ট্র্যাটেজি ছিল বিজেপির। সমস্ত কিছুর মূলে রয়েছে একটাই নাম – ডঃ মানিক সাহা।
বামেদের দীর্ঘদিনের রাজত্ব ভেঙে ত্রিপুরায় গেরুয়া ঝড় তুলেছিলেন বিপ্লব দেব। তিনিই ছিলেন ত্রিপুরা বিজেপির প্রথম মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু তারপরই একটু একটু করে দলের ভেতর অসন্তোষ বাড়ে। সেসব সামলাতে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছিলেন বিপ্লব দেব। তাঁর প্রতি সাধারণ মানুষ থেকে দলের নিচু কর্মী সবারই ক্ষোভ বাড়ছিল। একটু একটু করে ব্যাকফুটে চলে যাচ্ছিল গেরুয়া শিবির। এমনই পরিস্থিতিতে বিপ্লব দেবকে মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ার থেকে সরানো হয়। সেখানে আনা হয় মানিক সাহাকে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এটাই ছিল মাস্টারস্ট্রোক।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের আরও বক্তব্য, মাত্র কয়েক মাস আগে গুজরাত নির্বাচনের আগেও মুখ্যমন্ত্রী বদল করেছিল বিজেপি। তারপর সেখানেই সমস্ত রেকর্ড ভেঙে জয়লাভ করে তারা। এখানেও কার্যত সেই ফর্মুলাই কাজ করে গেল। মানিক সাহা দায়িত্ব নেওয়ার পর ত্রিপুরায় বিজেপির ভেতরের দ্বন্দ্ব একটু একটু করে কমতে থাকে। কিন্তু গুজরাতের মতো ভোটের ‘সুনামি’ দেখল না ত্রিপুরা। বিজেপি সেরকম দাবি করলেও, ত্রিপুরার ফলাফলের ভেতর যে শঙ্কাও লুকিয়ে রয়েছে, সেটা বলাই বাহুল্য।
আরও পড়ুন : ১০ বছরের ঘাসফুল দুর্গে ভাঙন! সাগরদিঘিতে কোন মন্ত্রে তৃণমূলকে হারাল বাম-কংগ্রেস জোট?
কেন এমন মত? ২০১৮ সালের ত্রিপুরা নির্বাচনের কথা ভাবুন। ৫১টি আসনে লড়াই করেছিল বিজেপি। জিতেছিল ৩৫টিতে। আর এবার সেটি কমে দাঁড়াল ৩৪। মানিক সাহা, জিষ্ণু দেববর্মার মতো হেভিওয়েট নেতারাও কম মার্জিনে জিতেছেন। বিপদটা যে একেবারে কান ঘেঁষে বেরিয়ে গিয়েছে, সেটা মানছেন গেরুয়া শিবিরের নেতারাও। একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলেও, ভোটের সুনামির ধারেকাছেও নেই বিজেপি। যা দেখেছিল গুজরাত। সেইসঙ্গে ত্রিপুরার নতুন রাজনৈতিক দল তিপ্রা মথার উত্থান অন্যান্য বিরোধী দল ও বিজেপি – দুই পক্ষকেই এবার বিপদে ফেলেছে। বাম-কংগ্রেস ১৪টি আর তিপ্রা মথা ১২টি আসন পেয়েছে। ২০২৪ লোকসভা নির্বাচন, কিংবা পরবর্তী ত্রিপুরা বিধানসভা নির্বাচনের জন্য যা একটু হলেও বিপদের সংকেত দিয়ে রাখল বিজেপির কাছে।