হলিউড সিনেমার অর্ধেক খরচে ভারতের পকেটে চাঁদ!
Chandrayaan-3 budget: সেকি! যে টাকায় চাঁদে উপগ্রহ পাঠাল ভারত, সেই টাকায় বহু সময়ে সিনেমাও বানাতে পারে না হলিউড।
এ যেন এক ইতিহাস। সিনেমার পর্দায় যেমন দেখায় তার চেয়েও রঙিন। চাঁদের মাটি ছুঁয়ে ফেলল ভারতের পাঠানো মহাকাশযান। সফল ভাবে চাঁদে ল্যান্ডিং করে ফেলল চন্দ্রযান ৩-এর ল্যান্ডার। তার পেট থেকে বেরিয়ে এল রোভার প্রজ্ঞান। আপাতত চাঁদের মাটি খুঁটিয়ে দেখবে সেই রোভার, মাটি পরীক্ষা করে পাঠাতে থাকবে রিপোর্ট। চাঁদের গায়ে লিখে আসবে ভারতের নাম, খোদাই থাকবে সাফল্য গাঁথা। কিন্তু এই সাফল্য তো আর একদিনে আসে না। চার বছরের মনোনিবেশ, হাজার হাজার বিজ্ঞানী, ইঞ্জিনিয়ারের রক্ত জল করা পরিশ্রম, এবং তার পাশাপাশি অর্থলগ্নি, এই সাফল্যের নেপথ্য়ে থাকে আরও অনেক কিছু, যার হদিশ রাখে না সাধারণ মানুষ।
আরও শুনুন: নিন্দার মাঝে উজ্জ্বল নাম! চন্দ্রযানের সাফল্যে যে ভাবে জুড়ল যাদবপুরের নাম
বুধবার চাঁদের মাটিতে পা রেখেছে চন্দ্রযান ৩। গত ১৪ জুলাই শ্রীহরিকোটার উৎক্ষেপণ কেন্দ্র থেকে রওনা হয়েছিল সেটি, গত ৫ অগস্ট পৌঁছয় চাঁদের কক্ষপথে। নানা উদ্বেগ, জল্পনার ভ্রূকূটিকে মিথ্যে করে শেষপর্যন্ত নির্ধারিত দিনেই চাঁদে অবতরণ করেছে চন্দ্রযান। এই গোটা মিশনে খরচ হয়েছে প্রায় ৬১৫ কোটি টাকা। সেই ২০২০ সালে এই মিশনের জন্য বরাদ্দ হয়েছিল ওই বাজেট। সেই টাকার মধ্যেই মিশন শেষও করেছেন ইসরোর বিজ্ঞানীরা। চাঁদে পৌঁছে গিয়েছে ভারত।
৬১৫ কোটি শুনে যাঁরা ভুরু কোঁচকাচ্ছেন, তাঁদের জন্য বলা রাখা ভালো, মহাকাশ গবেষণার কাজ সার্বিক ভাবেই ব্যয়বহুল। যন্ত্রপাতি থেকে শুরু করে মহাকাশযানের প্রায় প্রতিটি অংশ তৈরি করতেই খরচ হতে থাকে প্রচুর টাকাপয়সা। তবু এই যে খরচ, তা আদতে সভ্যতার কল্যাণেই। বিজ্ঞানের সাধনা বন্ধ হয়ে যাওয়ার মতো অভিশপ্ত কিছুই হতে পারে না যে কোনও দেশের জন্য। তৃতীয় বিশ্বের দেশ হিসেবে আমেরিকা, রাশিয়া বা চিনের ধারেকাছেও দাঁড়ায় না ভারতের অর্থনীতি। তবু সেই সব বাধা বন্ধকতা সত্ত্বেও যে বিজ্ঞান গবেষণা থমকে দাঁড়ায় না এদেশে, তাই ভারতকে জগৎসভায় শ্রেষ্ঠত্বের আসন এনে দিয়েছে যুগ যুগ ধরে।
সম্প্রতি এ বিষয়টির দিকেই আলোকপাত করেছেন ধনকুবের এলন মাস্ক। তিনি টুইটার তথা অধুনা এক্সের মালিক এবং স্পেসস্টেশন সংস্থা স্পেসএক্সেরও প্রধানও বটে। সেই এলন মাস্ক কার্যত অবাক হয়েছেন, ভারতের চন্দ্রাভিযানের সামগ্রিক বাজেটের দিকে তাকিয়ে। যে টাকায় চাঁদে উপগ্রহ পাঠাল ভারত, সেই টাকায় বহু সময়ে সিনেমাও বানাতে পারে না হলিউড। হলিউডের বিখ্যাত ছবি 'ইন্টারস্টেলার' বানাতে এর চেয়ে দ্বিগুণ টাকা ব্যায় করেছিলেন প্রযোজক। ক্রিস্টোফার নোলান নির্মিত ছবি 'ইন্টারস্টেলার'-এর বাজেট ছিল ১৬৫ মিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি। টাকার হিসেবে যা দাঁড়ায় ১,৩৬১ কোটি টাকার ধারেকাছে। অর্থাৎ যে টাকায় চাঁদজয় করে ফেলল ভারত, তার দ্বিগুণ টাকা ব্যয় করে সিনেমা বানায় প্রথম বিশ্বের দেশগুলি। সে-ও হয়তো কম পড়ে কোনও কোনও ক্ষেত্রে।
আরও শুনুন: চাঁদের মাটিতে ভারতীয় তেরঙার ছবি আঁকা দিয়ে শুরু, এবার কী করবে প্রজ্ঞান?
ভারতের এই ভূমিকার প্রশংসা করেছেন এলন। ভারতের জাতীয় পতাকার একটি ইমোজি পোস্ট করে নিজের মাইক্রোব্লগিং সাইট এক্সে সে কথা লিখেওছেন তিনি। আর তার পরেই সোশ্যাল মিডিয়ায় দারুণ ভাইরাল হয়ে গিয়েছে বিষয়টি। আপাতত নেটদুনিয়ায় সবচেয়ে চর্চিত বিষয় এটি। প্রতি বছর কোটি কোটি টাকা খরচ করে বলিউড, হলিউডে বানানো নয় গুচ্ছ গুচ্ছ সিনেমা। তার মধ্যে বহু ছবিই পাতে দেওয়ারও যোগ্য নয়। সেখানে ওই বাজেটে চাঁদে মহাকাশ যান পাঠিয়ে দিল ভারত। যা কেবল চাঁদ ছুঁয়েই থেমে থাকবে না, চাঁদের মাটি থেকে বিভিন্ন নমুনা সংগ্রহ করে তা বিশ্লেষণ করে ডেটা পাঠাতে থাকবে ইসরোর কাছে। যা খুলে দেবে নতুন নতুন গবেষণার পথ, জানিয়ে দেবে এমন অনেক অনাবিষ্কৃত তথ্য, যা আগে জানত না মানুষ। আর ছোট্ট ছোট্ট পায়ে এগিয়ে যাবে দেশ। আরও উন্নতি, আর অগ্রগতির দিকে। আর বিজ্ঞানের পথেই একমাত্র সেই অগ্রগতি সম্ভব। ভবিষ্যতে পৃথিবীর জন্য যে নতুন কোনও শক্তিভাণ্ডারের খোঁজ দেবে না এই গবেষণা, তা-ই বা কে বলতে পারে!