জনগণ চাইছে না! এবার তবে টুইটার থেকে সরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত এলন মাস্কের?

Elon Musk Twitter Poll: সাম্প্রতিক গুজরাত নির্বাচনে অরবিন্দ কেজরিওয়াল তাঁদের দলের তরফে কে মুখ্যমন্ত্রী হবেন, সেই সিদ্ধান্তও এই পদ্ধতিতে নিচ্ছেন।

পৃথিবীতে এক ধরনের মানুষ আছেন, যাঁরা তাঁদের জীবনের যে কোনও সিদ্ধান্ত নেন সামাজিক মাধ্যম দিয়ে। তা সে জীবনসঙ্গী বাছা থেকে শুরু করে, কী চাকরি করবেন, কোন সংস্থায় চাকরি করবেন, কোনটি ছাড়বেন, সমস্ত কিছু সিদ্ধান্তই নেন, সামাজিক মাধ্যমে তাঁর বন্ধু বান্ধবীরা কী বলছেন, তার উপর দাঁড়িয়ে। কোথাও বেড়াতে গেলে, সেই জায়গাটা সম্পর্কে কে কীরকম বলেছেন, কোনও জিনিস কিনতে গেলে, সেই সংস্থার অন্যান্য জিনিস নিয়ে পরিচিত মানুষজন কী রিভিউ লিখেছেন, তা দেখে তাঁরা সব সিদ্ধান্ত নেন। এই ধরনের প্রবণতা আগে ছিল কিনা তা বিতর্কিত প্রশ্ন। থাকলেও হয়তো অন্যভাবে ছিল, তখনও মানুষজন হয়তো এই ধরনের সিদ্ধান্ত নিতেন, অন্য পরিচিত বন্ধুবান্ধবদের থেকে জেনে। কিন্তু সেটা এইরকম ‘অবশেসনে’র পর্যায়ে পৌঁছত কিনা, জানা নেই।

ইদানিং দেখা যাচ্ছে, এই প্রবণতা বাড়ছে, কিন্তু এই প্রবণতা বাড়ার কারণ কী? আসলে মানুষজন ক্রমশই সামাজিক জীবনে একলা হয়ে পড়ছে, আর অন্যদিকে এই একলা হয়েই তাঁরা ক্রমশ ঢুকে পড়ছে সামাজিক মাধ্যমে। সেখানে ঢুকে দেখছে, সবাই এই ধরনের কাজই করছে। এমনকী যাঁরা এই সামাজিক মাধ্যমগুলোর মালিক, তাঁরাই এই ধরনের সিদ্ধান্তই নিচ্ছেন। যেমন ধরা যাক, টুইটারের এখনকার সর্বময় কর্তা এলন মাস্ক। তিনি বিপুল পরিমাণ টাকা দিয়ে টুইটার কিনে বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এই রকম ভোট করেই যে, ব্যবহারকারীরা কী ভাবছেন? ২০২২ সালের মার্চ মাসের ২৫ তারিখ এলন মাস্ক প্রথম যে ‘টুইটার পোল’ করেন, তার বক্তব্য ছিল, "আপনি কি মনে করেন গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাপনা টিকিয়ে রাখার জন্য, টুইটারের মতো সামাজিক মাধ্যমে সাধারণ ব্যবহারকারীদের বাকস্বাধীনতা থাকা জরুরি?" স্বভাবতই উত্তর হয়, হ্যাঁ। কিন্তু তারপরে তিনি যা করতে শুরু করেন, তাকে তাঁর খামখেয়ালিপনা বললে কি সবটা বলা হয়? এরপর তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, এখন থেকে আর কোনও ব্যবহারকারীকে কোনও ঘৃণামূলক পোস্ট বা লেখা
বা বক্তব্যের জন্য আজীবন নির্বাসিত করে রাখা উচিৎ কিনা? সেই নিয়ে একটি ‘টুইটার পোল’ করেন, সেখানে কী ফলাফল আসে তা দেখার জন্য তিনি একদিন সময়ও দেন। তাঁর পরবর্তী কাজ হয় আরও একটি ‘টুইটার পোল’ করা, যা থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে আবারও ফিরিয়ে আনা উচিৎ কিনা!

যেহেতু এই সময়ে এই ধরনের সামাজিক মাধ্যমগুলো ঘৃণা ও বিদ্বেষ ছড়ানোর উৎসস্থল, তাই এই দু'টি ক্ষেত্রেই দেখা যায়, বেশিরভাগ ব্যবহারকারী
ফিরিয়ে আনার পক্ষে রায় দিয়েছেন। এলন মাস্ক নিজে টুইট করে বলেছিলেন, এই ‘টুইটার পোলে’র যা সিদ্ধান্ত তা টুইটার মেনে চলবে। কথা মতোই আমেরিকার প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ফিরিয়েও দেওয়া হয় তাঁর টুইটার অ্যাকাউন্ট।

আরও পড়ুন- টুইটারে ‘ভোট’ চেয়ে নিজেকে বড় বিপদের মুখে ফেললেন এলন মাস্ক?

এর মধ্যে এলন মাস্ক আরও বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নেন। তবে এবার আর জনতা জনার্দনের ভোটে চেয়ে নয়, এবার আর ‘টুইটার পোল’ করে নয়। প্রচুর কর্মী ছাঁটাই করেছেন এলন মাস্ক কোনও রকম পূর্বাভাস ছাড়াই। অর্থাৎ যে সিদ্ধান্ত নিলে তাঁর সংস্থার আর্থিক ক্ষতি হবে না, সেই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এককভাবে। আর যে সিদ্ধান্ত নিলে তাঁর আর্থিক ক্ষতি হবে না, উল্টে ব্যবসা বাড়তে পারে, সেই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি ভোটের মাধ্যমে। তবে অতি উৎসাহে, মানুষ বেশ কিছু ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন। সেই রকমই আরও একটি ‘টুইটার পোলে’ তিনি ব্যবহারকারীদের অংশ নিতে বলেন, তাতে
লেখেন, "কী মনে হয়, টুইটারের সর্বোচ্চ পদ থেকে আমার সরে যাওয়া উচিৎ?" তিনি এও লেখেন, তিনি এই সিদ্ধান্ত মেনে চলবেন। ঘটনাচক্রে দিনের শেষে দেখা যায়, ৫৭ শতাংশ মানুষ বলেছেন, তাঁর সরে যাওয়াই উচিৎ। আসলে ঘৃণা এমন এক রিপু, যা কার বিরুদ্ধে কখন প্রয়োগ হবে, কেউ জানেন না। যাঁরা হয়তো ডোনাল্ড ট্রাম্পকে বা কঙ্গনা রানাওয়াতকে ফিরিয়ে আনার পক্ষে রায় দিয়েছেন, তাঁদের অনেকেই হয়তো এলন মাস্কের সরে যাওয়ার পক্ষেই রায় দিয়েছেন।

ইদানিং রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বরাও এই ধরনের ‘টুইটার পোল’ করে মুখ্যমন্ত্রী বাছাই করছেন! সাম্প্রতিক গুজরাত নির্বাচনে অরবিন্দ কেজরিওয়াল তাঁদের দলের তরফে কে মুখ্যমন্ত্রী হবেন, সেই সিদ্ধান্তও এই পদ্ধতিতে নিচ্ছেন। কিন্তু এই সামাজিক মাধ্যমের বাইরেও তো বড় একটা সমাজ পড়ে থাকে, সেইখান থেকেও তো মতামত আসা উচিৎ। বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যখন, তা অনেক বিচার বিবেচনা করেই নেওয়া উচিৎ, কিন্তু সবটাই সামাজিক মাধ্যম দিয়ে করতে গেলে, সমস্যা বাড়ে ছাড়া কমে কি? অন্তত টুইটার মালিক এলন মাস্কের ‘টুইটার পোলে’র ফলাফল দেখে তাই মনে হচ্ছে। এবার দেখা যাক, তিনি কি এই সিদ্ধান্ত মেনে চলবেন, নাকি...

More Articles