'সংখ্যালঘুরা আজও শাসকের কাছে শুধুই ভোটব্যাঙ্ক': নৌশাদ সিদ্দিকি
Exclusive interview of Nawsad Siddiqui: ইনস্ক্রিপ্ট-এর সঙ্গে বিশেষ কথোপকথনে নৌশাদ সিদ্দিকি।
২০২১। রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনের ইতিহাসে নজিরবিহীন পরিস্থিতি। একদিকে দুর্নীতি-সহ একাধিক অভিযোগ, অন্য দিকে মুকুল-শুভেন্দু কাঁটায় জর্জরিত তৃণমূল প্রশান্ত কিশোর-ছোঁয়ায় ভোটযুদ্ধে অবতীর্ণ। বিজেপি-র ক্ষমতায় আসা সোশ্যাল দুনিয়ায় প্রায় নিশ্চিত! এমন এক আবহেই বিতর্ক বাড়ালেন এক সিদ্দিকি (Abbas Siddique)। নাহ্, দক্ষিণ ভারতের ওয়াইসি (Asauddin Waisi) নন। এই সিদ্দিকি এই রাজ্যের। ওই বছরই জানুয়ারির হিমেল পরশে বঙ্গ-রাজনীতির মঞ্চে আবির্ভূত হন আব্বাস সিদ্দিকি। নুসরত জাহান (Nusrat Jahan) বিতর্কে পরিচিত এই মুখ, 'ইন্ডিয়ান সেক্যুলার ফ্রন্ট'-এর আদলে শুরু করলেন নতুন ইনিংস। অবিশ্বাস্য হলেও রাজনীতিতে সব সম্ভবের সম্ভাবনা সত্যি করে একদা 'কট্টরপন্থী' আব্বাসের নতুন দলের সঙ্গে জোট বাঁধল বামেরা। গেল গেল রব উঠল চারিদিকে। কিন্তু সমালোচনা আর বিতর্কিত অধ্যায় কাটিয়ে বাম জোটের মুখ রাখলেন আব্বাসরাই। একমাত্র বিধায়ক দিল আইএসএফ (Indian Seculer Front ISF)। এই সূত্রেই রাজনীতিতে শানদার প্রবেশ বর্তমানে ভাঙড়ের বিধায়ক মহম্মদ নওশাদ সিদ্দিকি-র (Nawsad Siddiqui)। শিক্ষিত, সুশীল, শান্ত, যুবক নওশাদ দাবি করেন, তিনি বরাবর অরাজনৈতিক ছিলেন। আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চশিক্ষার পরে ভাবেননি, এমন লড়াইয়ে নামতে হবে তাঁকে। কিন্তু নেমেছেন, জিতেছেন। এখন পুরোদস্তর রাজনীতিক তিনি। ভাঙড়-সন্ত্রাস, আরাবুল-শওকত থেকে শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি, দুর্গাপুজো থেকে জঙ্গিবাদে মুসলিম-অভিযোগ, সিপিএম থেকে তৃণমূল, উন্নয়ন থেকে কোরআন, সংবিধান থেকে সংখ্যালঘু উন্নয়ন- সব ক্ষেত্রেই অবাধ যাতায়াত তাঁর। আব্বাস কোথায়? বিতর্ক থেকে নিরাপত্তা। এই সব বিষয়েই এবার, Inscript.me-র কাছে মুখ খুললেন ভাঙরের বিধায়ক। যা আগে কাউকে জানাননি, সেই পরিকল্পনার কথা, শনিবার সন্ধ্যায় নিউটাউনের এক পাঁচতারা হোটেলের বারান্দায় দাঁড়িয়ে একমাত্র ইনস্ক্রিপ্ট-এর প্রতিনিধির সামনে খোলসা করলেন নওশাদ সিদ্দিকি।
আরও পড়ুন: ‘বাংলার মাটিতে তৃণমূলকে একটুও ছাড় নয়, দেশজুড়ে লড়াই চলবে বিজেপির সঙ্গে’: দীপঙ্কর ভট্টাচার্য
কেমন আছেন? খুব ব্যস্ত নিশ্চিত। আপনার দলের খবর? না মানে, আইএসএফ-কে কি দেখা যায় আর?
নওশাদ: ভালোই আছি। নিজের এলাকা নিয়ে ব্যস্ত থাকি। কাজ থাকে অনেক। আচ্ছা, কেন দেখা যাবে না! আমার দল আছে বলেই তো আমরা আছি। দল আর মানুষের জন্যই তো আমি।
আপনি বাম-জোটের একমাত্র বিধায়ক। ভাঙড় নিয়ে ব্যস্ত। একার পক্ষে দল চালানো সম্ভব! মাত্র এক বছরেই এই হাল কি সেইজন্যই?
নওশাদ: দেখুন, আপনারা যেটা ভাবছেন তেমন নয়। দল চালানো যাবে না কেন? আমি বিধায়ক। কিন্তু দলের সংগঠন যদি ঠিক থাকে, বুথ স্তর থেকে যদি নেতা তৈরি করা যায়, তাহলে দল অবশ্যই চলবে।
আপনি বলছেন আইএসএফ-এর অস্তিত্ব বাড়ছে। বুথে বুথে নেতা তৈরি করে ফেলেছেন! ভাঙড় ছাড়া আর কোথায় আছেন আপনারা?
নওশাদ: কেন! যান, খবর নিন। মুর্শিদাবাদে খোঁজ নিন। আমরা আছি কি না। দক্ষিণ দিনাজপুর, সাম্প্রতিক সময়ে হলদিয়ায় খোঁজ নিন। দেখুন, কী হচ্ছে সেখানে।
আপনি নাকি ভীতু, পুরনো গাড়ি নিয়ে ভাঙড় যান। কীসের ভয়? গাড়ি ভাঙবে? আরাবুল, সওকত?
নওশাদ: কাউকে ভয় করলে রাজনীতি করা যায় না। হামলা তো হয়েছে। নির্বাচনে প্রচারে বাধা এসেছে। কিন্তু লড়াই করেছিলাম তো। আমার সঙ্গে আমার এলাকার মানুষ আছেন তাই ভয় নেই। কাউকে ভয় নেই।
আপনি যে দলের প্রতিনিধি। সেই দলের প্রতিষ্ঠা আজ বিলুপ্ত! তাঁর খবর কী? আব্বাস কি আজ নিখোঁজ! আব্বাস সিদ্দিকি-কে কৌশলে সরিয়ে দিলেন আপনি?
নওশাদ: এটা মিথ্যা রটনা। কেন তা হবে! দাদা এখন অরাজনৈতিক প্রচারে ব্যস্ত। সংগঠনের প্রচারে। দলের প্রচার কাজেও ভালই আছেন। প্রতিদিন তাঁর কর্মসূচি থাকছে। হাজার হাজার মানুষ উপস্থিত হচ্ছেন। আমাদের দায়িত্ব মানুষকে সচেতন করা।
কোথায় হচ্ছে সেই প্রচার? একটা জায়গা বলবেন তাহলে আমরাও দেখতে যাব!
নওশাদ: (পাশের একজনের দিকে তাকিয়ে) কোন জায়গায় যেন, নামটা বল? দেখুন, দলের হয়ে সব কাজ লোক দেখিয়েই যে করতে হবে এমন নয়, তিনি দলের হয়েও কাজ করছেন সব সময়ে। সচেতন করছেন মানুষকে। আমাদের দলের প্রধান তিনি। তিনি ছাড়া কিছু নেই।
দেখুন, একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে মানুষকে সচেতন করাও একটা কাজ। আমার দাদা আব্বাস সিদ্দিকি সেটাই করছেন। আর এই সচেতনতা নেই বলে আজকে দেশের এই অবস্থা। সংখ্যালঘু শুধু একটা ভোটব্যাঙ্ক- এমন করে রেখে দিয়েছে। ইদের শুভেচ্ছা জানিয়ে দিয়ে শেষ। আদিবাসীদের উৎসবে শুভেচ্ছা জানিয়ে শেষ। কিন্তু তাদের সচেতন করতে, উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন যে শিক্ষা। সেটারই মারাত্মক অভাব।
এই উন্নয়ন কি শুধুই সংখ্যালঘুদের জন্য? এই দাবি করছেন?
নওশাদ: না। আমি সেই কথা বলছি না। সংখ্যালঘু, আদিবাসী সর্বস্তরের মানুষ। আমি সবার কথা বলছি। তাঁরা শিক্ষা পেলে, সচেতন হলে আর কেউ বোকা বানাতে পারবে না।
কারা বোকা বানাচ্ছেন?
নওশাদ: রাজনীতির লোকরা।
আপনিও তো রাজনীতির লোক, তাহলে বোকা বানাচ্ছেন জনতাকে?
নওশাদ: কেউ কেউ বানাচ্ছেন। সকলে নন। সকলে যদি এমন করেন, তাহলে তো কিছুই হতো না। আমি মনে করি, সকলের পাশে থাকা দরকার। সাংবিধানিক অধিকার যাদের হরণ হচ্ছে, সবার পাশে থাকা দরকার।
সব বুঝলাম। কিন্তু আর কি ভোটে জিতবেন? এবার ভবিষ্যত বাঁচাতে কী করবেন আপনি। এই দলবদলের ধারায় নাম লেখাবেন?
নওশাদ: হ্যাঁ জিতব। মানুষ সঙ্গে থাকলে জয় হবে। মানুষ না চাইলে নয়। আর শুনুন, নির্বাচনে জেতার পরপরই তৃণমূলের শীর্ষ নেতাদের থেকে প্রস্তাব দেওয়া হয় তাঁদের দলে যোগ দেওয়ার জন্য। দলবদল করব না। মানুষের জন্য আমাদের দল। তার ভবিষ্যৎ ঠিক করবেন মানুষই।
তাহলে পুরনো জোটসঙ্গী সিপিএম বা কংগ্রেস, অথবা বিজেপির সংখ্যালঘু মুখ হচ্ছেন না যুবক নওশাদ?
নওশাদ: নাহ্! নিশ্চিত থাকুন এই খেলায় যাচ্ছি না।
বিজেপি বিধায়করা দাবি করেন, তাঁরা এলাকার জন্য উন্নয়নের টাকা, বিধায়ক তহবিলের টাকা সরকারের কাছ থেকে লড়াই করে আদায় করেন। কেউ কেউ পান না ঠিকঠাক। কিন্তু নওশাদ সিদ্দিকি বিরোধী বিধায়ক হয়েও সহজে তা পান। সত্যি?
নওশাদ: বিজেপি বলছে জানি। কিন্তু দেখুন, ভাঙড় বিধানসভায় দু'টি ব্লক। তার জন্য আমি বিধায়ক তহবিলে যে প্রাপ্য টাকা পাব সেটাও জনগণের করের টাকা। কেন পাব? জনগণের কাজের জন্য। তাই, ওই প্রাপ্য অধিকার থেকে কেউ আটকে রাখতে পারবেন না।
তাহলে নওশাদ সিদ্দিকি আর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলের তলায় তলায় 'সেটিং' চলছে? তার জন্য কোনও চাপ নেই? মমতা কি আপনাকে 'বিপদ' বলে মনে করেন না?
নওশাদ: (হাসি) বিপদ কি না, তিনি (মমতা) বলতে পারবেন। আর সেটিং এখনও হয়নি, যদি হয় জানাব। আমার লক্ষ্য বঞ্চিত মানুষের জন্য কাজ করা। তাদের অধিকার পাইয়ে দেওয়া। এটাতেই থাকব।
ধরা যাক, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল আপনাকে 'হাইজ্যাক' করে নিল, তখন লড়াইয়ের কেন্দ্র ঘুরে যাবে তো? এসব আর মনে থাকবে?
নওশাদ: আমি তো যাব না ওই দলে। তাই চিন্তাও নেই। ১০০ শতাংশ নিশ্চিত করছি যাব না তৃণমূলে।
বিজেপি আপনাকে প্রস্তাব দিলে যাবেন?
নওশাদ: বিজেপি প্রস্তাব দেবে না কোনও দিন। আমি যাচ্ছি না ওখানে। প্রশ্নই নেই।
জোট হচ্ছে? বামেদের সঙ্গে আবার? সামনেই পঞ্চায়েত নির্বাচন। তারপর লোকসভা।
নওশাদ: আমি নিজেও জোট-রাজনীতিতে বিশ্বাস করি। আলোচনা চলছে। এখনও কিছু সিদ্ধান্ত হয়নি। দেখা যাক।
নির্বাচনের দেরি নেই। কিন্তু আইএসএফ জানে না কী হবে। তাহলে কি বামেদের তরফে পজিটিভ কোনও বার্তা নেই?
নওশাদ: (খানিকটা এড়িয়ে গিয়ে নওশাদ সিদ্দিকি-র উত্তর) আলোচনা চলছে। আমার মূল লক্ষ্য, আমাদের দলের সংগঠনে। যেখানে যেখানে আমরা আছি। সেখানেই নজর।
রক্তদান শিবির করে ভাইরাল হয়েছিলেন সম্প্রতি। সামনের পরিকল্পনা?
নওশাদ: শনিবার সন্ধ্যায় আপনাকে প্রথম জানাচ্ছি। আমার ইচ্ছা আছে, আগামী কিছুদিনের মধ্যেই ভাঙড়ের সাধারণ মানুষকে বিনামূল্যে দেশের সংবিধান পুস্তিকা দেওয়ার। ব্যক্তিগত অর্থনীতির অবস্থা অনুযায়ী আমার বিধানসভা কেন্দ্রের মানুষের মধ্যে এই কর্মসূচি নেব। এই প্রথম কোনও বিধায়ক (রাজ্য) হিসেবে।
কেন?
নওশাদ: মানুষ জানুন। আমাদের দেশ, আমাদের অর্থাৎ সকল ধর্মের, জাতির মানুষকে কী দিয়েছে । নিজের অধিকার জানুক জনতা। এসব জানে না বলেই তো অনেকে বঞ্চিত। সংখ্যালঘু, অনগ্রসর, কৃষক, মহিলা, ছাত্র। প্রত্যেকে জানুক তাদের কী অধিকার আছে!
আপনি সংবিধান, অধিকারের কথা বললেন। একটা বিতর্ক হয় বারবার। অধিকাংশ জঙ্গি কার্যকলাপ, সন্ত্রাসের অভিযোগের সঙ্গে, অপরাধের সঙ্গে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বেশি যোগ থাকে বলে দাবি করা হয়। কখনও একজন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের শিক্ষিত প্রতিনিধি হিসেবে লজ্জিত বা বিরক্ত বা কষ্ট লাগে?
নওশাদ: না। কারণ, আমি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের। মুসলিম। সেখানে সন্ত্রাসে অভিযুক্ত কেউ মুসলিম না কি তাকে সাজানো হয়েছে, সেই প্রশ্ন যেমন থাকে। তেমনই যারা বিনা দোষে মানুষ মারে, তারা কি ধর্ম জানে? পড়েছে ধর্মের গ্রন্থ? আচারে কী আছে ওরা জানে? আমি জানি। আমি জন্মগত মুসলিম। আমি আমার ধর্ম জানি। ধর্মের গ্রন্থ পড়েছি। আমি জানি আমার ধর্মে কী বলা আছে। আমাদের ধর্মগ্রন্থের এক জায়গায় বলা আছে, বিনা অপরাধে কোনও প্রাণীকে হত্যা, প্রাণের ক্ষতি অর্থাৎ পৃথিবীর সমস্ত প্রাণকে হত্যা! সেই কাজ যদি কেউ করে, আমি তো তাকে সমর্থন করতে পারি না।
(প্রশ্নকর্তাকে থামিয়ে)... দেখুন, আমার ধর্মের গ্রন্থে বলা আছে, ইসলামের মধ্যে শ্রেষ্ঠ কাজ কী। আজকে বিশ্ব খাদ্যসংস্থা যা বলছে, অভুক্তকে খাওয়ানোর কথা। অনেক বছর আগেই ইসলাম ধর্মের প্রবর্তক সেই কথা বলে গিয়েছেন। ''শ্রেষ্ঠ কাজ অভুক্তকে খাওয়াও। ক্ষুধার্তকে অন্ন দাও।'' আমি তাঁর আদর্শ মানি। আমি তাঁর কথা জানি।
কিন্তু একটা প্রচার চলে যে, কেউ বিধর্মী হলে, কাফের হলে তাকে মারো! এটা?
নওশাদ: হ্যাঁ এমন প্রচার করা হয়। সবটা অপব্যাখ্যা। আমি বলে দিই, 'কাফের' মানে অস্বীকারকারী, আর কিছুই নয়। পাশাপাশি তো মুসলিম মানেই সন্ত্রাসী, এই তথ্য চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। মিডিয়া ট্রায়াল হচ্ছে। বিজেপি, আরএসএস-কে ঢুকিয়ে দিয়ে এই প্রচার চলছে।
কিন্তু এই প্রচারের কারণ তো আছে। এর দায় কার? কেন এই অভিযোগে বারবার বিদ্ধ হতে হবে?
নওশাদ: একদম ঠিক। জানেন তো, এর জন্য দায়ী এই রাষ্ট্র পরিচালনা করছেন যাঁরা। এঁরা এই অবস্থা তৈরি করেছেন।
কেন?
নওশাদ: মুসলমানদের একটা বড় অংশের হাতে বই-খাতা তুলে না নিয়ে অশিক্ষিত করে রাখা হয়েছে। দেশ তাঁকে কী দিচ্ছে, দেশের জন্য তাঁর কী দায়। এসব জানে না। অশিক্ষার ফলে হতাশা গ্রাস করছে একটা বড় অংশকে। আর এই সুযোগ কাজে লাগাচ্ছে এক একটি এক্সট্রিম গ্রুপ (চরমপন্থী কোনও গোষ্ঠী)! যারা হতাশাগ্রস্তদের তুলে নিয়ে ব্রেনওয়াশ করে নিচ্ছে। তাকে ভুল পথে চালিত করছে।
অর্থাৎ, আপনি বলছেন রাষ্ট্রপ্রধানরা সংখ্যালঘুদের একটা অংশকে বঞ্চিত করছে। তাঁরা বঞ্চিত হয়ে এই কাজ করছেন?
নওশাদ: হ্যাঁ। যখনই কেউ বঞ্চিত হচ্ছে। হতাশার মধ্যে আসছে। আর সেখানেই ওঁত পেতে আছে ওই এক্সট্রিম গ্রুপ। সুযোগ কাজ লাগাচ্ছে।
এক্সট্রিম গ্রুপ বলতে শুধুই সংখ্যালঘু বলছেন?
নওশাদ: না। সব ধর্মের মধ্যেই এরকম সংগঠন আছে। আমি তাদের শুধুই জঙ্গি বলে মনে করি।
জম্মু ও কাশ্মীর। ৩৭০ ধারা বিলোপ। বিজেপি সরকারের উদ্যোগ। কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল। আগের এবং বর্তমান কাশ্মীর নিয়ে কী বলবেন?
নওশাদ: দেখুন, আমাদের দেশ ভারতের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ জম্মু ও কাশ্মীর। কোনও মতেই সেটা আমরা অন্য দেশের হাতে দিতে পারি না। আমরা চাইব, আমাদের দেশের নাগরিকদের নিয়ে কীভাবে শান্তিতে থাকি। কাশ্মীর একটা সীমান্তবর্তী রাজ্য। সতর্ক থাকা প্রয়োজন সকলের। কারণ, ওখানকার মনকে যেন কেউ ডাইভার্ট (বিপথগামী) করতে না পারে। সারা পৃথিবীর পর্যটকরা ওখানে যান। আমাদের কাছে ভূস্বর্গ। ওখানে শান্তি রাখা আমাদের দায়িত্ব। দেশের রাষ্ট্রপ্রধানদের উচিত যার যা প্রয়োজন, দেখে আলোচনা করে শান্তি বজায় রাখার চেষ্টা করা।
কাশ্মীর নিয়ে বিজেপি সরকারের সিদ্ধান্ত সমর্থন করছেন?
নওশাদ: আমি তো ওই রাজ্যের বাসিন্দা নই। ওখানকার নাগরিকদের অভাব, অভিযোগ আছে। কেন্দ্রের সরকারের উচিত সেগুলো সমাধান করা।
দুর্গাপুজোতে প্রতিটি ক্লাবকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার ৬০ হাজার টাকা করে দেবে বলে ঘোষণা করা হয়েছে। আদালতে মামলা হয়েছে। আপনি একজন বিধায়ক হিসেবে সমর্থন করেন এই উদ্যোগ? ইদেও দাবি করবেন?
নওশাদ: দুর্গাপুজোয় দেওয়া হয়েছে বলে ইদেও দিতে হবে- এটা পছন্দ করি না। ওটা রেষারেষি। কোনও উৎসবে সরকারের তরফে সাহায্য নিয়ে আমার আপত্তি থাকা উচিত নয়। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার এটা করছে একমাত্র কারণে। সরকারের গায়ে এখন অনেক ঘা, সেটাই কিছুটা মলম লাগানোর চেষ্টা হচ্ছে। দুর্নীতির ঘা। আগেও তো ঘটা করে দুর্গাপুজো হয়েছে। হঠাৎ কী প্রয়োজনে এত টাকা দিতে হচ্ছে?
পার্থ চট্টোপাধ্যায়, অর্পিতা, টাকা উদ্ধার। শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতিতে আপনার অবস্থান?
নওশাদ: সবাই দেখছেন কী হচ্ছে। ৫২০ দিনের বেশি চাকরিপ্রার্থীরা আন্দোলন করছেন। মাননীয়ার উচিত বিষয়টি মেটানো। নজর দেওয়া।
অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়? শিক্ষক নিয়োগে তাঁর উদ্যোগ? দুর্নীতি-অভিযোগ?
নওশাদ: উনি (অভিষেক) এই বিষয়ে কী করবেন!
এই নিয়োগ দুর্নীতি এবং অন্যান্য ক্ষেত্রের দুর্নীতির অভিযোগে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম নিয়ে আক্রমণ শানাছে সিপিএম, বিজেপি। অভিষেকের বিরুদ্ধে উঠছে অভিযোগ। আপনার বা আপনার দলের অবস্থান?
নওশাদ: একের পর এক তৃণমূল নেতার নাম সামনে আসছে। যদি উনি (মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়) জড়িত থাকেন, তাহলে ওঁর নামও আসবে। আর অভিষেক সম্পর্কে কিছু বলব না। সবটাই আদালতের বিচারাধীন, এই বিষয়ে মন্তব্য করব না।
সাক্ষাৎকার: রমেন দাস