ক্রিকেট বিশ্বের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান

২৪শে মার্চ ১৯৮৭ সালে বাংলাদেশের মাগুরা অঞ্চলে জন্ম নেয় এক ফুটফুটে সন্তান। বাবা মা ভালোবেসে নাম দেয় ময়না। ভালো নাম দেয় সাকিবুল হাসান। ভবিষ্যতে যে নাম বিশ্ব জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে সাকিব আল হাসান নামে। ফুটবল খেলোয়াড় পিতার ঘরে জন্ম নেওয়া সাকিবকে কেউই খেলোয়াড় হিসেবে দেখতে চায়নি ভবিষ্যতে। বাবা মা চেয়েছিল ছেলে পুঁথিগত শিক্ষা নিয়ে বড় চাকরি করুক বা ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার উকিল হোক। কিন্তু কথায় আছে ললাটের লিখন অগ্রাহ্য করার ক্ষমতা ঈশ্বর কাউকে দেননি।

ছোটবেলা থেকেই সাকিবের ক্রিকেটের প্রতি মারাত্মক ঝোঁক। দৌড়ে এসে বাঁ হাতে পেস বল যেমন করতে পারে, তেমন ব্যাট হাতে ছেলে একটার পর একটা বল পাঠিয়ে দিতে পারে সোজা বাউন্ডারির বাইরে। স্থানীয় গ্রামাঞ্চলের ক্লাবে ক্লাবে তখন সাকিবের ভীষণ পরিচিতি, নামডাক। আজ এই গ্রামের হয়ে খেলছে তো কাল ওই গ্রামের হয় একটার পর একটা ছক্কা মারছে। এরকমই একটা ম্যাচ খেলতে খেলতে সাকিবের ওপর প্রথম নজর পরে এক স্থানীয় আম্পায়ারের। তিনি সাকিবকে ইসলামপুর পারা ক্লাবে প্র্যাকটিসে ভর্তি করিয়ে দেন। ইসলামপুর ক্রিকেট ক্লাবের হয়ে খেলতে নেমে আক্ষরিক অর্থে জীবনের প্রথম ক্রিকেট বল হাতে পেয়ে প্রথম বলেই উইকেট পায় সাকিব আল হাসান।  অনেকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে নেন ছোট্ট সাকিব। এরপর বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যা কিনা সরকার দ্বারা পরিচালিত সেখানে প্রশিক্ষণ নেওয়ার সুযোগ পান ছোট্ট সাকিব। ছেলের এহেন গুণ দেখে সাকিবের বাবা মাও তখন আর ছেলে কে জোর করে ধরে রাখেননি।

এরপর শুরু হয় সাকিব আল হাসানের জীবনের স্বপ্নের উড়ান। ২০০৩ সালে আরবের বিরুদ্ধে জীবনের প্রথম আন্ডার ১৭ ম্যাচে ৩ উইকেট নেন। ২০০৫ সালে ভারতের বিরুদ্ধে জীবনের প্রথম আন্ডার ১৯ ম্যাচে অভিষেক ঘটে সাকিবের। সেই ম্যাচে ব্যাট হাতে ২৩ বলে ২৪ রান করেন এবং বল হাতে ১০ ওভারে মাত্র ২৬ রান দিয়ে ২খানা উইকেট কেড়ে আনেন ভারতের মতো দুঁদে প্রতিপক্ষ শিবির থেকে। ২০০৫ সালেই অনুর্ধ্ব উনিশ টিমের একটি ত্রিদেশীয় টুর্নামেন্টের ফাইনালে মাত্র ৮৬ বলে ১০০ রান করেন এবং সাথে ৩ খানা উইকেট নিয়ে নিজের দেশকে চ্যাম্পিয়নের তকমা এনে দেন। এরপর একের পর এক বিজয় পালক জুড়তে থাকে রাজার মুকুটে।

২০০৬ সালের ৬ আগস্ট প্রথম ওয়ান ডে ইন্টারন্যাশনাল খেলতে মাঠে নামেন ৭৫ নাম্বার জার্সি পরা ছেলেটা। ব্যাট হাতে করেন ৩০ রান এবং বল হাতে একটি উইকেট। ওই একই বছরের ২৮শে নভেম্বর টি টোয়েন্টি ক্রিকেটেও অভিষেক ঘটে সাকিবের। এরপর ৬ই মে ২০০৭ সালে ভারতের বিরুদ্ধে টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেক হয় সাকিবের। জীবনের প্রথম টেস্টে ১৯ ওভারে ৬২ রান দিয়ে, ব্যাট করতে নেমে ৩০ রান সংগ্রহ করে।

আর ঘুরে তাকাতে হয়নি এই বিশ্বখ্যাত অলরাউন্ডার কে। খেতাবের পর খেতাব পায়ের কাছে এসে জমা হওয়া ছিল এরপর শুধু সময়ের অপেক্ষা। ২০০৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাথে টেস্ট সিরিজ চলাকালীন ক্যাপ্টেন মুর্তজার চোটের কারণে অনুপুস্থিতিত প্রথম অধিনায়কত্বের দায়ভার তুলে দেওয়া হয় সাকিবের এর ওপর। অসাধারণ দক্ষতায় ক্যাপ্টেন্সি করে প্রথম বিদেশ থেকে সিরিজ জিতে ফেরে বাংলাদেশ। জানুয়ারি ২০০৯ থেকে এপ্রিল ২০১১ অবধি এবং আবার মার্চ ২০১২ থেকে জানুয়ারি ২০১৩ অবধি একদিনের ক্রিকেটে সাকিব বিশ্বের সেরা অলরাউন্ডারের স্থান অধিগ্রহণ করে রেখেছিলেন ICC Ranking এ। ডিসেম্বর ২০১১ তে সাকিব বিশ্বের সেরা টেস্ট অলরাউন্ডারের জায়গা করে নেন। ডিসেম্বর ২০১৪ সালে সাকিব বিশ্বের সেরা অলরাউন্ডারের তকমা পান টেস্ট ক্রিকেটেও। বর্তমানে সাকিব এমন একমাত্র ক্রিকেটার যিনি ICC এর সমস্ত ক্রিকেট ফরম্যাট তালিকায় প্রথম তিনজনের মধ্যে আছেন।

ক্রিকেট বিশ্বের সেরা অলরাউন্ডারের নাম নিতে গেলে সবার প্রথমে সারিতে সাকিব আল হাসানের নাম থাকবেই। সাকিব আল হাসান পৃথিবীর সব থেকে দ্রুততম অলরাউন্ডার যিনি টেস্টে ৩০০০ রান এবং ২০০ উইকেট নেন। মাত্র ৫৪টি ম্যাচে। উনি প্রথিবীর সবথেকে দ্রুততম অলরাউন্ডার যিনি ওয়ান ডে ক্রিকেটে ৫০০০ রান এবং ২৫০টা উইকেট নেন। টিটোয়েন্টি ক্রিকেটেও ৪০০০ রান এবং ৩০০ উইকেট গ্রহণ করেছেন সাকিব। সাকিব বাংলাদেশের প্রথম প্লেয়ার হিসাবে ৪০০০ রান গ্রহণ করেন ওয়ান ডে ফরম্যাটে। সাকিব নিজের দেশের প্রথম বোলার যিনি ৫০০টা আন্তর্জাতিক উইকেট গ্রহণ করেছেন।

ক্রিকেট বিশ্ব ইতিহাসে বাংলাদেশ টিমটা একদিন নিজের ক্যারিশমা দেখাবে ঠিকই, কিন্তু তারও বহু আগে সাকিব আল হাসান নামে বাংলাদেশের এক বাঘের বাচ্চা, গোটা ক্রিকেট দুনিয়াকে শিখিয়ে দিয়ে যাচ্ছে, ব্যাটিং আর বোলিং দুই দিয়েই কীভাবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটীয় সিংহাসনে বসে রাজকীয় হুঙ্কার দিতে হয়, মিষ্টি হাসি হাসতে হাসতে...

 

Source : cricket.info.com

More Articles