কবরে ঝোলানো তালা! ভুয়ো খবরের নেপথ্যে থাকা আসল যে সত্য স্তম্ভিত করবে...

Truth of Locked Grave in Hyderabad: কবরটি আসলে পাকিস্তান নয়, এই ভারতেরই তেলেঙ্গানার হায়দরাবাদে অবস্থিত।

কবরের উপরে লোহার গ্রিল, তাতে আটকানো তালা। এমন আজব কবরের ছবি সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় অভাবনীয় বিতর্কের ঝড় তুলেছে। কবরে তালা ঝোলানো অদ্ভুত ঘটনা নিঃসন্দেহে তবে সেই কবর, কোথাকার, কেনই বা তালা ঝোলানো হচ্ছে- এসব নিয়ে ভুয়ো খবর উড়তে উড়তে হানা দিয়েছে পাকিস্তান! হায়দরাবাদের কবর হয়ে গিয়েছে পাকিস্তানের কবর। এমনকী মৃতের সঙ্গে কী কী ঘটেছে তা নিয়ে অযৌক্তিক কাহিনিও গড়া হয়েছে! গুজব রটিয়ে দেওয়া হয়েছে, প্রয়াত যুবতী কন্যার বাবা-মা লোহার গ্রিল দিয়ে তাঁদের প্রিয়জনের কবরে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছেন। কেন? পাকিস্তানে কবর রক্ষক এবং অন্যরা নাকি 'নেক্রোফিলিয়া'র সঙ্গে যুক্ত! অর্থাৎ মৃতদেহের সঙ্গে ধর্ষণ, যৌনতা! তাই মৃত মেয়েদের বাঁচাতে বাবা-মায়েরা কবরে তালা লাগাতে বাধ্য হচ্ছেন! সমস্তটাই মন গড়া! আসল সত্য কী?

কবরটি আসলে পাকিস্তান নয়, এই ভারতেরই তেলেঙ্গানার হায়দরাবাদে অবস্থিত। তেলেঙ্গানার প্রাচীন শহর হায়দরাবাদের মদনাপেটের দারব জং কলোনির পাড়ায় মসজিদ ই সালার মুল্ক নামে একটি মসজিদের পাশের একটি কবরস্থানে এই কবরটি তৈরি করা হয়েছিল। প্রায় বছর দুয়েক আগে সংশ্লিষ্ট কমিটির অনুমতি না নিয়েই কবরটি তৈরি করা হয়েছিল। কবরটি একজন মহিলার৷ কবরস্থানে ঢোকার মুখেই সেই কবর খোঁড়া হয়। ফলে কবরস্থানে ঢুকতে গেলে ওই কবর মাড়িয়েই ঢুকতে হবে। সেই জন্যই মৃত মহিলার ছেলে কবরের উপর একটি গ্রিল বসিয়ে দেন, যাতে পথচারীরা কবরের উপর দিয়ে হাঁটতে না পারেন। শুধু এই নয়, অনেকেই জায়গা না থাকায় পুরনো কবরেই নতুন মৃতদেহ কবর চাপা দিয়ে দেন। গ্রিল আর তালা লাগানো থাকলে সেই বিষয়টি আর সম্ভব হয় না, জানাচ্ছেন ওই মসজিদের মুয়াজ্জিন মুক্তার সাহাব।

আরও পড়ুন- মৃত্যুর পরেও মেলেনি কবর! কীভাবে আত্মহত্যা করেছিলেন রহস্যময়ী ক্লিওপেট্রা?

এই সহজ বিষয়টি থেকে কীভাবে পাকিস্তান-নেক্রোফিলিয়া এসব গুজব রটে গেল? 'দ্য কার্স অব গড - কেন আমি ইসলাম ছেড়েছি' বইয়ের লেখক হারিস সুলতান প্রথম এই ছবিটি টুইটারে শেয়ার করেন এবং লেখেন যে, পাকিস্তান এমন একটি যৌন হতাশ সমাজ তৈরি করেছে যে মানুষজন কবরেও তালা লাগাতে বাধ্য হচ্ছেন যাতে তাদের মৃত কন্যাদের ধর্ষণ না করা হয়।" জিহাদ ওয়াচের পরিচালক রবার্ট স্পেন্সারও টুইটারে লেখেন, "পাকিস্তান: নেক্রোফিলিয়া প্রতিরোধে মৃত কন্যাদের কবরে তালা ঝোলাচ্ছেন বাবা-মা।" ভুয়ো খবরের সূত্রপাত ঘটে ঠিক এখান থেকেই। তবে মূল ছবিটি তুলেছিলেন আশিষ নামের এক ব্যক্তি। তাঁর কথায়, কয়েক বছর আগে কবরস্থানে গিয়েছিলেন তিনি এবং সেখানে লোহার গ্রিল আর তালা দেওয়া বিরল কবরটি দেখেন। তখনই সেটির একটি ছবি তুলে রাখেন এবং নিজের সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে পোস্ট করেন। সেই ছবিই এখন ভাইরাল হয়ে যায়। "ছবিটি ভারতের তেলেঙ্গানার হায়দরাবাদের একটি কবরের। এটা পাকিস্তানের কোনও কবর নয়,” সাফ জানিয়েছেন আশিষ।

আরও পড়ুন- দাহকাজ না কবর, শেষ সৎকারের কাজে কোনটি পরিবেশের জন্য ভালো? খোলসা করলেন বিজ্ঞানীরা

আসলে, কবর স্থানে ঠাঁই নাই ঠাঁই নাই। কোঠি, বারকাস, নামপল্লী, সায়দাবাদ, ফিসালবান্দা, তালাব কাট্টা, মোগলপুরা, মিসরি গুঞ্জ, আলাইবাদ, হুসেনিয়ালাম, ইয়াকুতপুরা, গোলকুন্ডা এবং মদনাপেট এমন কয়েকটি এলাকা যেখানে কবরস্থান খুঁজে পাওয়াই দুরূহ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এমনটা যে হবে, গ্রেটার হায়দরাবাদ মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশনের কর্মকর্তারা তা কয়েক বছর আগেই অনুমান করেছিলেন। বর্তমান এবং ভবিষ্যত জনসংখ্যা বৃদ্ধির কথা বিবেচনা করে শহরের আশেপাশের এলাকায় প্রায় ১,০০০ টি কবরস্থানের প্রয়োজন ছিল। অথচ পার্শ্ববর্তী এলাকায় কবরস্থান রয়েছে মাত্র ২৯১টি। হায়দরাবাদের পূর্ববর্তী মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশন এলাকায় ৬৯৯টি কবরস্থান ছিল, সেই কবরস্থানগুলিই ৯০ শতাংশেরই জমি পাঁচ একরের নিচে এবং ২৯১ টি কবরস্থান ছিল আশেপাশের পৌরসভা এলাকায়। মোট ৩৮৭ টি কবর ব্যক্তিগত জমিতে তৈরি এবং স্থানীয় কমিটি দ্বারা পরিচালিত।

২০১১ সালে পাকিস্তানে একটি নেক্রোফিলিয়ার ঘটনা প্রকাশ্যে আসে। করাচির উত্তর নাজিমাবাদ থেকে মহম্মদ রিজওয়ান নামে একজন কবর রক্ষককে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। জেরাতে সে ৪৮ জন মহিলার মৃতদেহ ধর্ষণের কথা স্বীকারও করেছিল। তবে এই ভাইরাল হওয়া ছবির ঘটনাটির সঙ্গে 'বিকৃতকাম' জড়িয়ে নেই মোটেও। বরং জড়িয়ে আছে, শহরে মৃতদের জায়গা না পাওয়ার অদ্ভুত সমস্যা! শহরে পুরনো কবরে শুয়ে থাকা প্রিয়জনকে বাঁচাতে তাই সন্তান এসে তালা বন্ধ করে যাচ্ছেন মৃত মা-কে। ভুয়ো খবর, পাকিস্তানের গরম গরম উত্তেজনা, যৌনতার হিংসার অনেক উর্ধ্বে যে সমস্যা ভাবাচ্ছে প্রশাসনকেও।

More Articles